বাবা,বাবা,আমার পুতুল এনেছো?
ঘরে ঢুকতে না ঢুকতে আমার মেয়ের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলাম। কতোদিন ধরে মেয়েটা একটা বারবি ডল-এর জন্য আমার কাছে বায়না ধরেছে। আমি শুধু ভুলে যাই। সেই সকাল বেলা অফিসের জন্য বের হই আর রাতের বেলা ফিরি,এর মধ্যে সময়ই বের করতে পারছি না। আগামীকাল যেভাবেই হোক মেয়েটাকে পুতুল কিনে দিবোই।
আমার ফ্যাকাশে মুখ দেখে ঠিকই বুঝে নেয়,তার ভুলোমন বাবা আজকেও পুতুল আনেনি। মুখটা একটু মলিন হয় আমার পুতুলটার………
অবনী,আমার ছোট্ট মেয়ে,আমার খেলার পুতুল। আমার সারাদিনের ক্লান্তি কেটে যায় আমার মেয়েটাকে দেখে। আমি বাসায় আসলেই, “বাবা এসেছে” বলে এক চিৎকার দিয়ে আমার কোলে চড়ে বসে। তারপর শুরু হয় কথা বলা…… “বাবা,আম্মু না আজকে আমাকে বকা দিয়েছে। আমি কিচ্ছু করিনি,শুধু একটা গ্লাস ভেঙে ফেলেছি”………“জানো বাবা,আমি অ,আ পড়তে পারি,তুমি শুনবে?”………“তুমি অফিসে কেন গিয়েছিলে? আমাকে নেওনি কেনো?”
বাসায় ফিরেই সিগারেটটা ধরিয়ে বসি। অফিসে সারাদিন সিগারেট খাওয়া হয়ে উঠে না,বাসাই ভরসা। এক হাতে সিগারেট নিয়ে খাটের কিনারে বসে পড়ি। আমার শান্তির ঘর………
-বাবা,সিগারেট দাও,কাবো…
আমি হাসি অবনীর কথা শুনে,এখনো খাবো বলতে পারে না ও।
আমি চুপচাপ বসে বসে আমার মেয়ের কথা শুনি। ৩ বছর বয়সেই কত কথা বলে যে অবনী! মাথা নাড়াতে নাড়াতে গল্প বলে,দুটি ঝুটি দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটতে থাকে ঘরের ভেতর। অবনী ঘুমিয়ে থাকলে আমি মাঝে মাঝে ওর নরম তুলতুলে গাল দুটোতে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেই। লক্ষী মেয়েটা আমার……
সকালের ঘুম ভেঙে দেখি অবনী আমার গলা জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আমার খেলার পুতুলটাকে ধরে আমি আরো কতক্ষণ শুয়ে থাকি। অফিসে দুই-একদিন দেরী হলে কিছু হবে না। অবনীকে ছেড়ে যেতে পারবো না এখন।
এক সপ্তাহ পর……
অবনীর জ্বর ৫দিন ধরে। জ্বর,কাশি………ডাক্তার সন্দেহ করছে নিউমোনিয়া। আমি অফিসে না গিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় বসে থাকি,সিগারেটের পর সিগারেট ধ্বংস করতে থাকি। এতোদিন ধরে মেয়েটা কাশছিলো কেনো আমি তেমন খেয়াল করিনি? নিজের ভেতর কষ্টটা বাড়তে থাকে।
আজ ডাক্তার রিপোর্ট দেখে কথা বলবে। রিপোর্ট নিয়ে দেখা করতে যাচ্ছি ডাক্তারের সাথে। কিছু যেনো না হয় আমার পুতুলটার……
অবনীর ফুসফুসে “অ্যাকিউট রেসপিরাটরি ইনফেকশন” ধরা পড়েছে। তিন বছর ধরে আমার সিগারেটের ধোঁয়া ওর ছোট্ট ফুসফুসটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আমার খেলার পুতুলটা আমার সাথে আর খেলতে পারবে না!? আমাকে আর ‘বাবা’ বলে ডাকবে না!? আমি ১৫ বছর আগে কি ফিরে যেতে পারি না? যেদিন প্রথম সিগারেট খেয়েছিলাম,সে দিনটাতে গিয়ে নিজের হাত থেকে টান দিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিতে কেনো পারছি না? ১৫ বছরের সবগুলো সিগারেট আমাকে যে আনন্দ দিয়েছে তার চেয়ে আমার অবনীর একটু হাসি যে আমাকে অনেক বেশী শান্তি দেয়।
আমি অবনীর পাশে বসে আছি,ওর চোখ বন্ধ। মা,একটু হাসো। একটু হাসো,মা। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসে,আমার পুতুলটা হাসে না……
আমাদের একটু সচেতনতাই পারে অনেক কিছু পালটে দিতে…
শুধু দরকার বোধটা…
তোর অবনী সবার ভিতরকার বোধটা তুলে আনুক, এই কামনা। :huzur:
“আমাদের একটু সচেতনতাই পারে অনেক কিছু পালটে দিতে…
শুধু দরকার বোধটা…” :clappinghands:
এটাই সবার বোঝা দরকার,কিন্তু কেউ বুঝতে চায় না :mathagorom:
বুঝবে, বোঝাতে হবে আমাদেরই…
দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিতে হবে, আর পালানো যাবে না।
এটা সত্যি কথা। আমাদেরকেই দায়িত্ব নিয়ে মানুষকে সচেতন করে দিতে হবে। তোর এই পোস্ট যখন অনেক মানুষ পড়বে তখন অনেকেই বুঝতে পারবে, দেখিস।
মানুষ বুঝতে পারবে সেটাই আশা করি………
ভাই নতুন ব্লগ লেখা অপশন পাচ্ছিনা। add new / post তাও পাচছিনা।
এখন পারবেন,চেষ্টা করে দেখুন……
সিগারেট খুব দ্রুত একটা শিশুর জীবন ধ্বংস করে দেয়। পিতা ধূমপায়ী হলে, সন্তান ক্ষণজন্মা হয়। এই পরীক্ষিত সত্য যদি আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ জানতো! তাহলে আর পরে অবনীর বাবার মত করে অন্তত কাউকে আফসোস করতে হতো না। 🙁
অবনীর বাবার মতো কাউকেই যেন আফসোস করতে না হয়…… :nono:
স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ
না হয়……না হয়……না হয়…… :nono: :nono: :nono:
এত সুন্দরভাবে, এত বাস্তবধর্মী উপায়ে ধূমপানের কুফলটি তুলে আনার জন্য সাধুবাদ জানাই। খুবই ভালো লেগেছে লেখাটি। :dhisya:
আশা করি, অন্ততপক্ষে প্রিয়জনের কথা চিন্তা করে হলেও জনসম্মুখে ধূমপান থেকে বিরত থাকবে।
ধন্যবাদ…… 🙂
“আশা করি, অন্ততপক্ষে প্রিয়জনের কথা চিন্তা করে হলেও জনসম্মুখে ধূমপান থেকে বিরত থাকবে।” :nono:
অবনীর জন্য লেখা গল্প, অবনীদের জন্য লেখা গল্প।
ভালো লাগল।
অবনীদের এভাবে চলে যাওয়া চাই না……
এত সুন্দর! :huzur:
সিগারেটের কুফল নিয়ে অনেক কথার চাইতে এরকম ইমোশনাল একটা লেখাই অনেক বেশি কাজের।
আপনার গল্প বলার ক্ষমতা দেখে হিংসিত! আমি একটাও গল্প লিখতে পারলাম না এখনো। :mathagorom:
থ্যাংকু 🙂
তুমি হিংসিত শুনে তো খুশি হয়ে গেলাম 😛
“আমার পুতুলটা হাসে না……”
আমরা সব পুতুলের মুখে হাসি চাই।
চমৎকার তোর হাত!
চলুক,কলম চলুক।। :fire:
ধইন্যা 😀
“আমরা সব পুতুলের মুখে হাসি চাই। “
ছোট্ট একটা লেখা। তার মাঝে অনেক, কথা অনেক আবেগ।
ভালো লাগলো খুব।
আপনার এই লেখাটা আমার বিড়িখোর বন্ধুদের ওয়ালে পোস্ট করে দিচ্ছি এখনি।
কিন্তু ভাইয়া গল্পে একটা ছোট সমস্যা আছে। ৩ বছরের বাচ্চার ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। ফুসফুসের ক্যান্সার হয় বয়স্কদের । নিউমোনিয়ায় ঠিক ছিল। বাচ্চাদের যে অসুখটা বেশি হয় সেটা হলো- অ্যাকিউট রেসপিরাটরি ইনফেকশন।
সরি পণ্ডিতি মনে হয় একটু বেশিই হয়ে গেছে।
আমি জানি। কিন্তু,ভয়াবহতাটা মানুষকে বোঝানোর জন্য এভাবে লেখা। ক্ষতি তো হচ্ছে,সেটা যে রোগেই হোক। 😐
গল্প ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগলো। 😀
বাবা মেয়ের সামনে টানা ৩ বছর সিগারেট খেলেও ৩ বছর বয়সের মেয়ের ফুসফুসের ক্যান্সার হবে না। আর যদি হয়েও যায় সেটা বাবা ধূমপায়ী হবার জন্য নয় বরং সেটা হবে জেনেটিক কারণে। বাবা ধূমপায়ী হলে যে রোগের কারণে বাচ্চা মারা যেতে পারে সেটা হলো ‘অ্যাকিউট রেসপিরাটরি ইনফেকশন’ অথবা ‘অ্যাকিউট রেসপিরাটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম’। এবং বর্তমান পরিসংখ্যানে এই রোগগুলো বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ।
ভাইয়া, আপনার লেখা ভালো লাগে তাই দ্বিতীয়বার মন্তব্য করলাম। এত চমৎকার একটি গল্পের মাঝে ইনফরমেশন গ্যাপ থাকবে এটা আমার ভালো লাগছিল না। আশা করছি রাগ করবেন না।
চেঞ্জ করে দিলাম 🙂
এমন পাঠকই তো চাই! :beshikhushi: নিজেদের ক্রমশ ভালো থেকে উত্তম করতে হবে আমাদের!
:dhisya:
ধন্যবাদ স্বপ্নবিলাস ভাইয়া।
@মুবিনঃ তোমাকেও ধন্যবাদ,সংশোধন করে দেবার জন্য…… 🙂
অনেক ভাল লেগেছে লিখাটা । :huzur:
এরকম ইমোশনাল লিখা পরে যেকোনো ধূমপায়ী ব্যক্তিরই ধূমপান ছেরে দেয়ার ইচ্ছে হবে বলে আমার ধারনা…… তাই আমার জানা যেসব বন্ধু ধূমপায়ী তাদের ওয়াল এ পোস্ট করে দিয়ে আসলাম । তাদের ইচ্ছে যাতে তারা কাজে লাগায়………
অবনীর বাবার মতো কাউকেই যেন আফসোস করতে না হয়…… :nono:
🙂
অবনীর বাবার মতো কাউকেই যেন আফসোস করতে না হয়…… :nono:
দুর্দান্ত তোর লেখার হাত! :clappinghands:
ছোট গল্প, কিন্তু হৃদয় ছোঁয়া। আবেগ আছে, আছে গঠনমূলক বক্তব্য।
কারও পরিনতি যেন অবনীর মত না হয়।
“আমরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি”… অবনীর মত হাজারও ফুল বেঁচে থাকুক আমাদের ছোট্ট একটু প্রচেষ্টার মাধ্যমে। (আসলে যারা ধূমপান করেন তাদের জন্য এটা যুদ্ধেরই সামিল)
“আমরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি”… অবনীর মত হাজারও ফুল বেঁচে থাকুক আমাদের ছোট্ট একটু প্রচেষ্টার মাধ্যমে। :clappinghands:
লেখাটা পড়ে আমার এক বন্ধু বলেছে সে সিগারেট ছেড়ে দিবে। :yahooo:
এমন করে সবাই যদি বুঝতে পারতো ………
কি বলিস! কথাটা শুনে কি যে ভাল লাগল!! :clappinghands:
😀
🙁
🙁