আমি এই ব্যাপারটা এর আগেও লক্ষ্য করেছি। যখনই পকেটে টাকা থাকে না তখনই জুতো ছিঁড়ে যায়, ছাতা হারিয়ে যায়। আর ছাতা হারিয়ে গেলেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে। আজ সকাল থেকে তেমনি বৃষ্টি হচ্ছে। জুতোটা কয়েকদিন আগেই ছিঁড়ে গেছে আর ছাতাটা যে গতকাল কোথায় ফেলে আসলাম কিছুতেই মনে করতে পারছি না।
নতুন এই মেসে দুই মাস হলো উঠেছি। আমার রুমের সিলিঙে বিচিত্র সব ছবি আঁকা। রঙ পেন্সিলে আঁকা ছবি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে সিলিঙের ছবিগুলোর মর্ম উদ্ধার করার চেষ্টা করছি সেই সকাল থেকে।
ছবিগুলো কিভাবে আঁকা হয়েছে?
টেবিলের উপর চেয়ার তুলে নাকি বিছানায় শুয়ে শুয়ে লম্বা পেন্সিল দিয়ে?
একজন ইংরেজ লেখক ছিলেন যিনি এভাবে বিছানায় শুয়ে শুয়ে লম্বা পেন্সিল দিয়ে সিলিঙে ছবি আঁকতেন। এখন নামটা মাথায় আসছে না। কাছে এসেও দূরে চলে যাচ্ছে। যখন দরকার নেই তখন হয়তো হুট করে নামটা মনে হবে।
আজ বাইরে বেরুতেই হবে। টিউশনিতে যেতে হবে। দু’টো টিউশনিতেই। মাস শেষ হয়ে গেছে কয়দিন আগেই। এখনো একটা টিউশনির টাকাও পাই নি। মেসের টাকা বাকি। বুয়ার টাকা বাকি। পত্রিকার টাকা বাকি। তার থেকেও বড় বিষয় হাতে কিছু টাকা না পেলে এই মাসেও লিটল ম্যাগটা বের করতে পারব না। লেখা হাতে জমা পড়ে আছে প্রায় ৩ মাস ধরে।
বিকেল হয়ে গেছে। বৃষ্টিও কমে এসেছে। ছেঁড়া জুতোটা নিয়ে বাত ব্যাথার রোগীর মত পা টেনে টেনে বড় রাস্তার মোড়ের দিকে এগুলাম। একটা মুচি বসে সেখানে। জুতোটা সেলাই করে পাঁচ টাকা দিলাম মুচিকে। পকেটে আর বিশ টাকা আছে মাত্র। মুচি পাঁচ টাকা পাওয়া মাত্র দুইটা আগরবাতি কিনে তার বাক্সের সামনে এনে রাখল। সালাম করল। আমার এইসব বিশ্বাস-সংস্কৃতি দেখার সময় নেই। শুধু আক্ষেপ তার জন্য যে পাঁচ টাকা রোজগার করে দুই টাকা আগরবাতির জন্য খরচ করে।
প্রথম ছাত্রের বাসার সামনে আসতেই বুঝলাম আজ পড়াতে হবে না। বাসার সামনে অনেক গাড়ি। দরজা-জানালা লাগানো থাকলেও ভেতরের হৈ চৈ বাইরে আসছে। খারাপ ঘটনা হতে পারে আবার ভালো ঘটনাও হতে পারে। হয়তো কেউ মারা গেছে, কেউ মারাত্নক অসুস্থ কিংবা কারো জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী। যাই হোক আমার টিউশনির টাকা দরকার। সাহস করে কলিং বেলে টিপ দিলাম।
ড্রয়িংরুম ভর্তি লোকজন। আজ আমার ছাত্র ফাগুনের জন্মদিন। সবার পরনে পরিষ্কার ভাঁজহীন পোশাক। আমার শার্টটা ময়লা আর কোঁচকানো। প্যান্টের নিচের দিকে কাদা লেগে আছে। বৃষ্টির জন্য আর আলসেমির জন্য গত কয়েকদিন কোন কাপড় ধোয়া হয় নি। ড্রয়িংরুমের ভিড় এড়িয়ে ফাগুনের পড়ার ঘরে গেলাম।
‘স্যার, আপনি জানেন না আজ আমার জন্মদিন?’ ঝড়ের গতিতে ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করল আমার ১২ বছর বয়সী ছাত্র ফাগুন। ‘আপনি ময়লা জামা-কাপড় পরেই চলে এসেছেন? আমার জন্য গিফট এনেছেন?’
এটা বোধহয় আধুনিক সৌজন্যতা। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কেউ ভুল করে আসলেও তাকে গিফট আনতে হবে। আমার ভাবলেশহীন চেহারা দেখে ফাগুন মুখটা একদিকে বাঁকা করে চলে গেল।
আধঘণ্টা ধরে ফাগুনের পড়ার ঘরে বসে আছি। জানি আজ পড়বে না। তবুও ওর বাবা কিংবা মায়ের সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারোরই দেখা নেই। এদিকে একেবারেই কেউ আসছে না। কয়েকটা ছোট ছোট বাচ্চা অবশ্য এসেছিল। দরজার পর্দার পিছনে দাঁড়িয়ে আমার সাথে ‘টুকি-ঝা’ নামক লুকোচুরি খেলার চেষ্টাও করেছিল। যখন বুঝল এই খেলায় আমার আগ্রহ নেই তখন চলে গেছে। হঠাৎ ফাগুনের বাসার কাজের ছেলেটাকে দেখতে পেয়ে জোরে ডাক দিলাম।
‘জ্বি স্যার। হামাক ডাকিচিন?’ কাজের ছেলেটার কথায় উত্তরবঙ্গের টান। বাড়ি হয়ত নওগাঁ-জয়পুরহাট কিংবা বগুড়া হবে।
‘ফাগুনের আব্বুকে গিয়ে বলো আমি উনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছি।’
‘খালু তো এখনো বাসাতই আসেনি। খালাম্মাক ডাকে দিমো?’
‘ঠিক আছে তোমার খালাম্মাকেই গিয়ে বল।’ কথা শেষ হওয়ার আগেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল ছেলেটি। আজ তার অনেক ব্যস্ততা।
‘আপনি তো আগামী পরশু আবার পড়াতে আসছেন। সেদিন না হয় আপনার এই মাসের টাকাটা নিয়েন।’ আমি এই অসময়ে টাকা চাওয়ায় ফাগুনের মা কিছুটা বিরক্ত।
‘আন্টি, কিছু টাকা আজ হাতে না পেলেই নয়। এমনিতেই অনেক ধার-দেনা হয়ে গেছে।’ কথাটা বলে কি ভুল করলাম কি না বুঝলাম না। এভাবে আর কখনো কোথাও টাকা চাই নি।’
‘ফাগুনের বাবা তো এখনো বাসায় আসে নি। আমার হাতেও খুব একটা টাকা নেই। যা ছিল আজকের প্রোগ্রামে খরচ হয়ে গেছে। দেখছেনই তো অবস্থা।’ কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে মহিলার আজ টাকা দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই।
কিন্তু আমারও জেদ চেপে গেছে। ‘ আমি তাহলে আন্টি, আঙ্কেলের জন্য অপেক্ষা করি?’
‘আপনার ইচ্ছা।’ মহিলার কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি। ‘আপনি তাহলে এখানেই অপেক্ষা করেন। ওদিকে যাওয়ার দরকার নেই।’ আমার জামা-কাপড়ের অবস্থা দেখে হয়ত মহিলা সঙ্কোচবোধ করছেন।
পাওনাদারের টাকা বাকি রেখে মানুষেরা এখন চিন্তামুক্তভাবে আনন্দ উৎসব উদযাপন করে। সামাজিকতা রক্ষা করে। অথচ আজকের প্রোগ্রামে একটা খাবার আইটেম কম রাখলেই আমার পাওনা টাকাটুকু মিটিয়ে দিতে পারত ওরা।
ফাগুনদের বাসা থেকে বেরুতে বেরুতে বেশ রাত হয়ে গেল। আজ আর আরেকটা টিউশনিতে যাওয়া যাবে না। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মেঘও ডাকা শুরু করেছে। মেসের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। দোকান-পাট বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তায় মানুষও খুব একটা নেই।
‘এক্সিউজ মি ভাইয়া।’ পেছন থেকে ডাক শুনে ফিরে তাকালাম। দুইটা ১৬-১৭ বছর বয়সী ছেলে। বেশ স্মার্ট। জিন্স-টি শার্ট পড়া। একজনের টি শার্টে আমেরিকার ফ্ল্যাগ আরেকজনেরটায় চে-গুয়েভারা। এই দুই মেরু কিভাবে বিষুবরেখায় এসে মিলিত হল ঠিক বুঝতে পারলাম না।
‘আপনার বাসা কি এইখানে?’ প্রশ্ন করল চে। ভাবলাম হয়ত কোন বাসা খুঁজে পাচ্ছে না।
‘না।’ হাসিমুখে উত্তর দিলাম।
‘তাহলে এত রাতে এখানে কি করেন?’ কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করল আমেরিকা।
কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি দুইপাশে আরো দুইজন এসে দাঁড়িয়েছে। খালি হাতে নয়। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় চাকুর তীক্ষ্ণ ফলা চিক চিক করছে।
‘মোবাইলটা ভদ্দরলোকের মত দিয়া দ্যান।’ বলল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমেরিকা।
‘আমার মোবাইলটা কমদামি। বেচে বেশি টাকা পাবেন না।’ জীবনে প্রথমবারের মত ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সত্যি বেশ ভয় লাগছে।
‘অই মিয়া বাড়তি কথা কন ক্যান? আপনারে কইছি আমাগো বেশি টেকা লাগব? তাড়াতাড়ি মোবাইল বাইর করেন।’ ধমক দিয়ে উঠল আমেরিকা। ‘দ্যাখতো পকেটে আর কিছু আছে কি না।’ আমেরিকার কথা শুনে চে আমার পকেটে হাত ঢুকাল। দুইপাশে দুই চাকুওয়ালার জন্য নড়াচড়া করতেও ভয় লাগছে।
চে গুয়েভারা ডান পকেট থেকে মোবাইল আর বাম পকেট থেকে ফাগুনের বাবার দেয়া টিউশনির টাকার খাম ও খুচরা ২০ টাকা বের করল। খাম খুলে চে, আমেরিকা দুইজনের চোখই আনন্দে চকচক করতে লাগল।
মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের ছেলেরা বৃষ্টিতে ভিজে না। আমিও না। কারণ তাদের পকেটে মোবাইল ফোন থাকে। টাকা থাকে। মোবাইল ফোনে বৃষ্টির পানি ঢুকলে নষ্ট হয়ে যাবে। আমার পকেটে আজ কোন মোবাইল ফোন নেই। টাকা নেই। তাই বৃষ্টিতে ভিজতেও কোন বাধা নেই। কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া সবকিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমি যখনই কিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি তখনই অন্য একটি বিষয় মনে পড়ে যায় যা আগে মনে হচ্ছিল না। সেই ইংরেজ লেখকের নাম মনে হয়েছে। যে শুয়ে শুয়ে সিলিঙে ছবি আঁকত। জি.কে. চেস্টারটন।
বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে গেছে। আজ সন্ধ্যায় ডান পায়ের জুতোটা সেলাই করিয়েছিলাম। পানিতে ভিজে এখন বাম পায়ের জুতোটা ছিঁড়ে গেছে। বাত ব্যথার রোগীর মত বাম পা টা টেনে টেনে সামনে এগুচ্ছি। খালি রাস্তায় একা বৃষ্টিতে ভিজে।
আমি জানি, আমার জীবন সিটি কর্পোরেশনের সুয়ারেজ লাইনের মত সোজা চলবে না। নদীর মত একেঁবেকেঁ চলবে। শুধু ভুলে যাই, যে নদীতে বাঁক যত বেশি সে নদীতে ভাঙ্গনও তত বেশি।
জন্মদিন নামক বিশেষ দিবসটির প্রতি আমার কেন যেন কোন মোহ কাজ করে না । আজকালকার তথাকথিত সভ্য বিত্তবানদের হরেক রকমের বিলাসী জীবনযাত্রায় বারংবার হতবাক হই। আর ওদিকে বস্তির ভুখা শিশুটা জীবনের প্রহসনে কাতরাতে কাতরাতে মানিব্যাগ আর মোবাইল ছিনতাই করাকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে বড় হতে থাকে। প্রথম আলোর বদলে যাওয়ার বদলে দেয়ার চিন্তা শোভা পেতে থাকে কেবল বিলবোর্ডেই। তবু বলব আমি, ছোট ছোট বিন্দুকণার মত করে হলেও বদলাতে হবে, হবেই। নদীর মতই বেঁকে চলুক জীবন, আর সেই নদীর স্রোত ভেঙ্গে চলুক সমাজে রক্তচোষা জোঁকের মত আটকে থাকা সকল জগদ্দল পাথর ।
হায় হায় কত বকবক করি আমি! 😳 জীবনমুখী এই গল্পটির জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
“নদীর মতই বেঁকে চলুক জীবন,
আর সেই নদীর স্রোত ভেঙ্গে চলুক
সমাজে রক্তচোষা জোঁকের মত আটকে থাকা সকল
জগদ্দল পাথর।”
ভালো বলেছেন।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
অসাধারণ সুন্দর একটা লেখা !! ভাই, অসাধারণ লেখার হাত আপনার
প্লিজ আরো চাই এমন সুন্দর গল্প
:clappinghands:
কষ্ট করে পড়ার জন্য ও আরো একটু বেশি কষ্ট করে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
এই ছেলের গল্প লেখার হাত এতো ভালো!
প্রতিটা গল্প পড়ে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই……… :clappinghands:
আর স্বপ্ন বিলাসের গল্প পড়ে আমি মুগ্ধতার শীর্ষে পৌছে যাই :love:
😳
প্রিয়তে নিলাম, ফেবুতে আমার বন্ধুরা গণহারে শেয়ার করেছে দেখলাম…
সত্যিই এত সুন্দর গল্প আমি খুব কম পড়েছি
সুন্দর স্রোতের মতন আবেগ বয়ে গেল, অনুভুতি পাঠক নিজের মতন করে তৈরী করলো.. মুবিন ভাই, প্লিজ চালিয়ে যান
চালাতে তো ভাই চাই কিন্তু আমি হচ্ছি ঠেলাগাড়ির মতো। কেউ ঠেলা দিলে চলি না দিলে জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি
:love:
এই ছেলে কেন এত কম লিখে!
ছুঁয়ে যাওয়া লেখা
হাতের লেখা স্লো তাই 🙂
অনেক সুন্দর একটা লেখা। সবসময়ের মতই।
মানুষকে ভাল গল্প লিখতে দেখলে এমন হিংসা হয়!
🙂
বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না, বলতে পারি শুধু– বড্ড ছুঁয়ে গেলো!
এত্তো চমৎকার লিখেন আপনি, ভেতরটা একদম ভিজে যায়!
ধন্যবাদ 🙂
প্রতিটা শব্দ একটা আলাদা অনুভূতির জন্ম দেয়। খুবই সুন্দর লেখা। :love:
ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও মন্তব্য করার জন্য 🙂
আপনার এত কম লেখার কারণটা কী বলেন তো?
যে মানুষ এত্ত ভালো লিখে, তার তো প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটা করে ব্লগপোস্ট করা উচিত।
আপনার লেখার ভঙ্গিটা কোন লেখকের মত যেন, নামটা কাছে এসেও দূরে চলে যাচ্ছে। কাজের সময় কিছুতেই কাজের জিনিসগুলো ধরা দেয় না! 🙁
অগটপিক:
‘না’ বোধক শব্দগুলো আলাদা শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেমন, পাই নি, যাব না, পারছি না।
এই ব্যাপারটা এরপর থেকে একটু খেয়াল রাখবেন ভাইয়া।
ধন্যবাদ ভুলগুলো ধরিয়ে দেবার জন্য। শুধরে নিলাম।
ভালো লাগলো 🙂
ধন্যবাদ পড়ার জন্য 🙂
কেন যে এতদিন এ লেখাগুলো না পড়ে জমিয়ে রেখেছিলাম, তাই আজ ভাবছি। আমি হয়তো তেমন বিশ্লেষণধর্মী পাঠক নই, আর তাই মন্তব্যও হবে সাদামাটা। আপনার লেখাগুলোতে একধরণের নেশা আছে। পড়া শুরু করলে রেখে দেয়া যায় না। শেষ করেই উঠতে হয়।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
স্তব্ধ… মুগ্ধ…
ধন্যবাদ।
বেশী ভালোলাগা —
যখনই পকেটে টাকা থাকে না তখনই…
শুধু আক্ষেপ তার জন্য যে পাঁচ টাকা রোজগার করে দুই টাকা আগরবাতির জন্য খরচ করে…
জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কেউ ভুল করে আসলেও তাকে গিফট আনতে হবে…
আমার জীবন সিটি কর্পোরেশনের…
🙂