শুকনো পাতাগুলোর ঝরে যাওয়া

এই অদ্ভূত চিন্তাটা কোথা থেকে কথাটা মাথায় ঢুকেছিলো জানিনা; কৃষ্ণজীবনের আইডিয়া ছিলো নাকি সেটা? শীর্ষেন্দুর পার্থিবে ছিলো কি? হতে পারে, আবার নাও পারে। হবে হয়তো কোথাও পড়েছিলাম বা শুনেছিলাম। তবে মনে আছে, জীবনটাকে কে যেন বৃক্ষের মতন করে অনুভব করেছিলেন। আজ আমার মাথায় ভর করেছে সেই চিন্তা!

শেকড় গজিয়ে যাওয়া, ডালপালা ছড়িয়ে যায়… কখনো দুলতে থাকে বসন্তের হাওয়ায়। স্পন্দন ছড়িয়ে যায় পুলকের কখনো কখনো, আবার ভিজে যায় বর্ষায় — কান্না হয়ে ঝরে যায় কষ্টগুলো। অনুভূতিরা কি পাতার মতন? নতুন পাতা জন্মে গাছে নতুন ঋতুতে। সবুজ প্রাণের দ্যোতনা ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। সেই পাতার সাথে বন্ধুত্ব হয়, সেই পাতার ক্লোরোফিল বাঁচিয়ে রাখে সবুজতাকে, আর সেই সবুজতাই সৃষ্টিচরাচরের অক্সিজেন সরবরাহ করে যায়… পাতার সাথে আমিও দুলে যাই।

বসন্তের হাওয়া আসে, উদ্দাম আনন্দের শিহরণে শিউরে উঠি। স্নিগ্ধতা স্বপ্ন জাগায়… এ এক অন্যরকম পৃথিবী, এ এক অন্যরকম স্বপ্নময়তা… স্বপ্নেরা দুলতে থাকে একটানা, ধীর লয়ে, রুদ্ধশ্বাসে। আচ্ছা, স্বপ্নের দোলা কেউ দেখেছে কখনো? আমি দেখেছি। স্বপ্নেরাও উদ্বেল হয়, বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে এক কাল্পনিক জগতের বাস্তব হবার উত্তেজনায় এই স্বপ্নেরাও উদ্বেল হয়।

সহসাই কেমন সব বদলে যায়। প্রকৃতির এক অকৃত্রিম অংশ বলেই কি অমন করে মিলিয়ে যায় সবকিছু? আমি আবার শীতের শুষ্কতা টের পাই, আমি টের পাই রুক্ষতা। সময় বদলে যায়, বদলে যায় চারপাশ। প্রাণের স্পন্দন আর পাইনা সবুজতায়। সেই পাতার কোমলতা হারিয়ে ধূসর হতে থাকে। স্বপ্নেরাও বদলে যেতে থাকে ক্রমশঃ

অনেক চেষ্টা করেও এই পাতাকে ধরে রাখা যায়না। একদিন, ফাল্গুনের প্রারম্ভে, নতুন প্রাণ আসে প্রকৃতিতে, আসে নতুন এক ঝলক বাতাস। হারিয়ে যায় সেই শুকনো পাতার দল। একসময় যে সবুজ হয়ে প্রাণের বার্তা এনেছিলো — আজ সে হতাশা আর শূণ্যতা ছড়িয়ে হারিয়ে যায় অন্য অনেক হারিয়ে যাওয়া পাতাদের মাঝে। দূর আরেক ঝলক বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে চলে যায় বহুদূরে…

আবারো পাতা গজানোর কথা ছিলো। অথচ এই ডালগুলো, এই অস্তিত্বের কাঠামো কেন যেন ম্লান হয়ে থাকে। তাতে আর নতুন সুন্দরের বার্তাবাহী সবুজ আসে না। কেন এই কৃত্রিম জগতের বিষময়তা? আজ প্রাণের সম্ভাবনাও ম্লান হয়ে গেলো কি? শুকিয়ে যাওয়া বৃক্ষের কান্না কেউ শুনেনা। ম্লান হয়ে যাওয়া ডালে আর আসেনা প্রাণের স্পন্দন।

অমন করে স্বপ্ন ঝরে যায়, হয়ত দুঃখগুলো ঝরে যেতে পারতো। অমন করে আশা ঝরে যায়, হয়ত হতাশারা ঝরে যেতে পারতো। অমন করে দূরে চলে যায় শুকনো পাতারা, হয়ত অমনি করে চলে যেতে পারতো জীর্ণ-শীর্ণ অমঙ্গলের সংবাদগুলো।

ফাল্গুনী হাওয়ায় যদি কোন নতুন শুভবারতা আসে — সেই প্রতীক্ষায় কি কেটে যায় কোন কোন বৃক্ষের জীবন?

Photo Courtesy: moberggallery dot com

নোঙ্গর ছেঁড়া সম্পর্কে

"খুঁজো না তাহারে গগন-আঁধারে– মাটিতে পেলে না যাকে।"
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে স্মৃতিচারণ, হাবিজাবি-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

8 Responses to শুকনো পাতাগুলোর ঝরে যাওয়া

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    ভাল লেগেছে। 🙂

  2. অনাবিল বলেছেনঃ

    কথামালা চমৎকার লাগলো , কিন্তু একটু হতাশার ছোঁয়া!
    স্বপ্নভঙ্গে বিষন্নতা আসে সত্যি, মনখারাপের দলেরা মাঝে মাঝে বড্ড ছুঁয়ে যায় যদিও, আশায় বসতি গড়তেই ভালো লাগে…………

  3. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    লেখাটায় যখন ঢুকে পড়েছি, তখন একটা প্যারায় এসে বের হয়ে আসলাম । মান তে না পেরে।

    ‘আবারো পাতা গজানোর কথা ছিলো। ‘- কথা তো আর থেমে যায় নি। আসবে পাতা…ফুল.. পাখি.. কিচিরমিচির..

    লেখা চলুক।

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    একটা চমৎকার দৃশ্যপট চোখের সামনে দিয়ে ভেসে গেল, পলক ফেলতেই কেমন উধাও হল আবার!
    মনে হল, এত সুন্দর একটা ছবি এইটুকুতেই শেষ হয়ে গেল? এও কি মানা যায়?

    স্বপ্নের বৃক্ষরা বেঁচে থাকুক সহস্র বছর।

    অফটপিক-
    বানান নিয়ে আরেকটু সতর্ক হলে আরও ভালো হয়। 🙂

    • নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

      দৃশ্যপট তৈরি করতে চেয়েছিলাম, সেটি করতে পেরেছি জেনে যারপরনাই আনন্দিত হলাম।

      বানান সতর্ক তো হতে চাই, যা হয়না তা জ্ঞানের অভাবে, আমি যথেষ্টই চেষ্টা করি! 🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।