পৃথিবীর বুকে এক খন্ড হীরক

শাহবাগ,
নীলক্ষেতের মোড়,
আর ওদিকে দেখা যায় হাইকোর্ট।
প্রতিটা ইট, প্রতিটা কদমে
জুতোর সাথে লেগে থাকে বালু কণা,
কালের সাক্ষ্মী, মহাকালের সাক্ষী।

পাবলিক লাইব্রেরী।
সিঁড়ির ধাপে ধাপে জমে আছে,
যুক্তির তুবড়ি ছোটানো,
লাখো ছাত্রের বাক্যবান।

চারুকলা।
প্রতিটি মড়মড়ে পাতা,
প্রতিটি ঝরে যাওয়া পাতা,
প্রতিটি বৃক্ষের জটা,
মিশে আছে বিশুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা।
মিশে আছে রবি, লালন, নজরুল, কাইয়ুম,
মিশে আছে রঙ এর আড়ালে হাজার বছরের ইতিহাস,
হাজারো নতুন সৃষ্টির উল্লাস।

অপরাজেয় বাংলা।
লাখো যোদ্ধার উন্নত শিরের নাম তুমি।
রনাঙ্গীনি, মমতাময়ী – উভ নারী চরিত্রের মিশ্রন তুমি,
আমি খুঁজে পাই তোমাতে,
স্বাধীন লোভী অপরাজেয় রুমীকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
জন্ডিস রঙ এর উদাস ইটের দালান গুলো,
মনে করিয়ে দেয় রক্তের লাল রঙ।
রক্তে ছড়িয়ে দেয় উন্মাদ নাঁচন।
চোখ মুদলেই দেখতে পাই,
গলার রগ ফুঁলিয়ে গগন বিদারী কন্ঠ
“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”,
আমি আমতলার মোড়ে রিকশা থামাই,
ফিনাইলের ঝাঝালো গন্ধে,
আমি ‘৫২ মাখা রক্তের মাতালতা খুঁজে পাই।

ছাত্র-ছাত্রী হলগুলোতে,
আমি খুঁজে পাই
নোংরা দেওয়াল, নাক জ্বালা করা পিশাবধারী বাথরুম
যক্ষা রোগীর মতো ধুকে ধুকে মৃত্যুশয্যা পেতে নেয়া ইলেক্ট্রিক পাখা,
আর প্রচন্ড গরমে ঘর্মাক্ত মানুষগুলোর
বই এর পেছনে লুকানো
হাজারও দুঃখ-কান্না।
সে কান্না অভাবের,
সে কান্না ভেঙ্গে যাওয়া প্রেমের।
হয়তো সে কান্না যুদ্ধে শহীদ প্রেমিকের জন্য,
কিংবা, আত্মহত্যা করা বীরাঙ্গনা প্রেমিকার জন্য।

রাজু ভাস্কর্য।
আমার রক্তে আগুনের ফুলকি খেলা করে উঠে,
প্রতিটি রোম মাথা তুলে সুঠাম হয়ে দাড়িয়ে রয়,
আমি প্রতিবাদ করতে শিখি।
ভাষা আর স্বাধীনতার জন্য আমার কান্নাকে
আমি শক্তিতে পাল্টাতে শিখি।

আর? টিএসসি?
এ এক আজব মেলা,
যেখানে জন্ম নেয় সহস্র শতাব্দীর সেরা কবিতা
মুকুল ছেড়ে ফুটে উঠে মুক্তচিন্তা গুলো,
ধারালো ক্ষুরের মতো কেটে ফেলে
সব কুসংস্কারের বুনানো জাল।
হারিয়ে যাওয়া শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার গুলো
এখানকার বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
টিএসসি, আমার দেখা পৃথিবীর সেরা মেলা।
সে মেলা লাখো মগজের নিউরনে খেলা করা
তরঙ্গের মেলা।
এখানে, প্রতিটা নোংরা কাপের চুমুকে মিশে আছে,
হতে পারতো মহাকাব্য কিংবা মহাজাগতিক আবিষ্কার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
রাস্তার প্রতি ইঞ্চিতে আমি খুঁজে পাই
দুর্ণিবার তারুন্য, শানিত মেধা
হার না মানা মনোবল, বজ্রকঠোর প্রতিবাদ
ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিটি রক্তকণিকার সাক্ষ্য।
পৃথিবীর বুকে এক খন্ড হীরক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ বায়েজিদ আখতার
লিংকঃ রাজু ভাস্কর্য

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে কবিতা, চিন্তাভাবনা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

10 Responses to পৃথিবীর বুকে এক খন্ড হীরক

  1. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    এই শহরে বন্ধুদের আড্ডা দিতে ঢাবি ক্যাম্পাস আমা সবচেয়ে প্রিয় :happy:

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    অনেক দিন পর লিখলা! খুব সুন্দর। 🙂

    ফরম্যাটটা ঠিক করা লাগবে মনে হয়। ‘প্যারাগ্রাফ’ দিয়ে দাও।

  3. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ফায়ারফক্সে সমস্যা করবে।

    এইভাবে দেখতে ভালো লাগলেও। পড়া যাবে না। paragraph ফরম্যাট জরুরি।

    • বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

      পৃথিবীর বুকে এক খন্ড হীরক
      ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

      কবিতা অভারাল ভালো লাগছে। অতি আবেগি অবশ্য। আমি সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান নিয়ে ভাবছিলাম।
      গত ২০ বছরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তো খারাপ অবদান আছেই, পাশাপাশি রিসার্চ বা অন্য ভাবে দেশের জন্য অবদান কতটুকু?
      এই পোস্ট এর সাথে যায় না বলে দুঃখিত

      লাখো ছাত্রের বাক্যবান।
      – এই জায়গা ক্লিশে হয়ে যায়! আধুনিক কবিতায় একটু বেমানান না? 😛

      তারুণ্য সাক্ষ্য বানান ভুল 😛

  4. অনাবিল বলেছেনঃ

    অনেক বড় কবিতা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখি পুরোই ঝরঝরে!

  5. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    শিরোনাম টার জন্য অনেকগুলো প্রিয়।

    তবে, আশা ছিল অনেক বেশী।হিরক খন্ডের উপর শুভ্র আলো নেই তো দেখি।

  6. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    কবিতার আবেগটা খুব ভালো লেগেছে। চমৎকার!

  7. একুয়া রেজিয়া বলেছেনঃ

    কবতে ভাল লেগেছে 🙂

  8. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    তুখোড় হয়েছে নিশম! দারুণ! :huzur:

    বানানটা আরেকটু ধরে ধরে শিখানো লাগবে মনে হচ্ছে তোকে। কবে যে আমার হাতের থাবড়া খাস, ঠিক নাই! :haturi:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।