একাশি গম্বুজ বিশিষ্ট ষাট গম্বুজ মসজিদ ……বাগেরহাটের পথে পথে !!!

 

শুধু গোপালগঞ্জের ওসিরাই ক্ষমতাবান, কথাটা ঠিক না, গোপালগঞ্জের মানুষরাও ক্ষমতা বান। ব্যাপারটা পুরোপুরি টের পেলাম যখন দেখলাম খুলনায় বন্ধুর বিয়ে খেতে যাবার জন্য বাস ট্রেনের কোন টিকেট না পেলেও সৌভাগ্যবশত গোপালগঞ্জের একজন ক্ষমতাবান মানুষ ট্রেনের এসি কামরার টিকেট যোগাড় করে দিলেন। কৃতিত্ব দিদারের, তার এই লিংকের কারনে এখন থেকে ট্যুর ম্যানেজারের পোস্টটি তাকে দিয়ে দেয়া হল ট্রেনে বসেই । ব্রডগেজ লাইনে এটাই ছিল প্রথম ভ্রমন এবং বেশ আরামদায়ক বটে। যমুনার উপর দিয়ে প্রথম বারের মত ট্রেনে চেপে পাড়ি দিলাম। দেখা হয়ে গেল অনেকগুলো জংশন- ঈশ্বরদী, দর্শনা, পোড়াদহ………না দেখেই পাড়ি দিলাম হার্ডিঞ্জব্রীজ ।

খুলনায় গিয়ে কম খরচে থাকার তাপানুকূল রুমে থাকার জন্য সবচেয়ে ভাল প্রেসক্লাবের গেস্ট হাউজ।

কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের বিখ্যাত স্বর্ণকমল এর সামনে দিয়ে আমরা চলে গেলাম সোনাডাঙ্গা বাসস্টেশনে , সেখান থেকে বিভিন্ন দিকে খুলনার বাস ছেড়ে যায়। বাঘেরহাট বাসে করে যেতে লাগে এক ঘন্টা বিশ মিনিট।

বাগেরহাটে পৌছে সবসময় মাথায় যে জিনিষটি ঘুরঘুর করছিল সেটা হল কয়েকদিন আগে ঢাকায় উদ্ধার হওয়া তিনটি বাঘের বাচ্চার কথা । পশুক্লেশ নিবারন কারী কোন ক্লাবের মেম্বার না আমি, কিংবা পশুসম্পদ রক্ষার জন্যও কখনো কোন উদ্যেগে ছিলাম বলে মনে পরেনা। কিন্তু কেন জানি, কিংবা বলা যায় বাবা হবার পর থেকে আমার চেতনার জগতে একটা বিশাল পরিবর্তন এসে গেছে। রাস্তায় অসহায় ছেলে পেলে দেখলে আগেও খারাপ লাগত , কিন্তু এখন কেন জানি অপরাধ বোধে ভুগি তাদের এই দূরাবস্হা দেখে , মনে মনে ভাবি অমনতো হবার কথা ছিলনা ঐ শিশুটির। হোটেলে যে শিশুটি কাজ করে, আমাদেরকে পানি দিয়ে যায়………….তার সামনে দেখার মত কোন স্বপ্নই দেয়ার ক্ষমতা নেই আমার, আমাদের।
তেমনি বাঘের বাচ্চাগুলোকে দেখার পর থেকে আমার খালি মনে পড়ছিল বাঘিনীর কথা। মাতৃত্ব কি জিনিস আর মা যে কি সেটা আমি এখন অনেকটা টের পাই। নিজের বাচ্চা গুলোকে না দেখে বাঘিনীর যে কি দশা সেটা কিছুটা কল্পনা করে খুব খারাপ লাগছিল, আর আমরা মানুষরা যে সবচেয়ে হিংস্র পশু বারবার এটাই মনে পড়ছিল।

রাস্তার এপারে আর ওপাড়ে পাশাপাশি দুটো মসজিদ। একটি একগম্বুজ বিশিষ্ট শিংগাইর মসজিদ আর আরেকটি ৮১ গম্বুজ বিশিষ্ট হলেও ষাট গম্বুজ নামেই পরিচিত দেশের অন্যতম বিখ্যাত পূরাকৃর্তী যা পনের শতকের কোন এক সময়ে তৈরি । সেখানে আছে একটি জাদুঘর, খান জাহান আলী মাজারের বিখ্যাট কালাপাহাড় কুমিরটির মমি বানিয়ে সংরক্ষন করা আছে জাদুঘরে , আরো আছে পনেরশতকের নানা মুদ্রা আর তৈজশপত্র ।

 

নষ্ট না করে আমরা রক্ষা করতে পারিনা, এখানেও তাই । মসজিদের সবগুলো পিলার ঢেকে দেয়া হয়েছে সিমেন্ট বালি দিয়ে শুধুমাত্র একটা রেখে !!! কেনরে ভাই, এমন কোন পদ্ধতি কি খুজে পাওয়া যেতনা এটাকে অবিকৃত রেখে দেয়ার। তারপর বিবরনী বিলবোর্ডটা কি একদম সামনেই দিতে হবে যাতে কেউ মসজিদটির পূর্ণাঙ্গ কোন ছবি তুলতে না পরে, বিদ্যুতের কেবল এমন দৃষ্টিকটু ভাবে ঝুলিয়ে না নিলেই কি নয় ??

বাগেরহাটের আরেকটি দর্শন যোগ্য জায়গা হল খানজাহান আলীর মাজার। যদিও তেমন আকর্ষনীয় কিছু নয়, তবু সেখানে গেলে টের পাওয়া যায় মাজার ব্যবসা কি করে জেঁকে বসে আছে আমাদের সমাজে। শুক্রবারে জুমআর নামাজের চেয়ে দেখলাম খাদেমদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল মাজারের টাকা পয়সার হিসেব, লেনদেন আর কালেকশন। কুমির নিয়েও আরেক রমরমা ব্যবসা, অশিক্ষিত গরীব লোকজনকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে দেয়া হয়, কুমিরের কাছে মানত করার জন্য , যেখানে ইসলামে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে কোন কিছু চাওয়াকে সরাসরি বাতিল করে দেয়া আছে। আফসোস আমাদের কখনো বোধদয় হবেনা, এই মাজার কখনো মুক্তির দিশারি হতে পারেনা । 

বিবাহ আর বাবা হবার পর ইদানিং যে বিষয়টি খেয়াল করলাম সেটা হল ঢাকার বাইরে গিয়ে বেশী সময় ধরে কেন জানি থাকতে ইচ্ছে করেনা। ঢাকায় থাকলেই যে সবসময় বাসায় থাকি তাত না, তবুও মনে হয় কাছাকাছি আছি । আর বাইরে গেলে মনে হয় কত দূরে । আর এই সমস্যার কারনে সমস্যায় পড়ে আমার ট্যুরমেটরা । কেউ একজন রাজি না থাকলে আমরা সে পথে নরমালি যাইনা । ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখে (বাংলাদেশে এই জায়গাটায় আমার বাকি ছিল দেখার , দেখা হয় নাই এমন খুব বিখ্যাত আর কোন জায়গা নেই ) রাতে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষেই আমার ফিরে আশার কথা । বাকিদের মনটা খারাপ দেখে রয়ে গেলাম। পরিকল্পনা ছিল সকালে সবাই মিলে যশোর যাব। বিয়ে বাড়িতে ধুম মজা করার পর রাতে বসলাম জার্মানী গ্রীসের খেলা দেখতে , অনেকদিন পর বন্ধুরা সব একরুমে আড্ডা দেয়ার দারুন সুযোগ। সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন এগারটা । সকালের নাস্তা আর নানা হিসেব নিকেশ করে দেখা গেল যশোর আর যাওয়া হচ্ছেনা ।অবশ্য ট্যুর মানে খাওয়া দাওয়া, আর এবারও সেটার কোন কমতি ছিলনা , আমাদেরকে খাবাররত অবস্হায় দেখলে যেকেউই ভাববেন এরা না জানি কতদিন না খেয়ে আছে।

অপেক্ষায় থাকুন বিদ্যাসাগর, দেখা হবে ইনশাআল্লাহ আগামীর কোন দিনে………

 

 

 

 

 

 

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা, ফটোগ্রাফি-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

8 Responses to একাশি গম্বুজ বিশিষ্ট ষাট গম্বুজ মসজিদ ……বাগেরহাটের পথে পথে !!!

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    এখনও যাই নি 🙁
    বিশাল মিস।

    ছবিগুলা বেশ লাগল।

    বাবা হবার পর থেকে আমার চেতনার জগতে একটা বিশাল পরিবর্তন এসে গেছে
    এই রকম অভিজ্ঞতার কথা আগেও বেশ শুনেছি। আমার বড় বোন এবং আরও অনেকের কাছ থেকে।

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    দারুণ ভাইয়া। যেতে হবে দেখছি! 🙂

  3. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    ছবিগুলো দৃষ্টিনন্দন, সাথে ঝরঝরে বর্ননা! এক কথায় চমৎকার! :happy:

    ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখতে যাওয়া হয়েছিল অনেক আগে, অনেকটা ঝটিকা সফরের মত করে। খুব বেশি সময় নিয়ে দেখার সুযোগ পাই নি। এখানে ছবিগুলো আরেকবার দেখে তাই খুব ভালো লাগলো। 🙂

    অফটপিক:
    বানান! বানান!!

    • শামসীর বলেছেনঃ

      বানান নিয়ে আমার আর হবেনা, লিখতে গেলে সবসময় দ্বিধান্বিত থাকি :(:( & ভুলটায় লিখি :(:(

      অনেক ধন্যবাদ । জায়গাটা এখন বেশ গুছিয়ে বাগান করে সুন্দর করে রাখা হয়েছে।

      • ফিনিক্স বলেছেনঃ

        আপনি আমার থেকে গুরুজন, তাই আমি জোর করবো না।
        কিন্তু ভাইয়া বানান বিভ্রাটের এই পেইজে (http://shorob.com/tag/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9F/) মাত্র পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে ঘুরে যদি ‘বানান বিভ্রাট ১, ২, ৩’ এই তিনটা পর্ব পড়তেন, তাহলে বোধহয় দ্বিধা অনেকটাই কেটে যেত আপনার।

        খুব বড় কোন নিয়ম মনে রাখার ঝক্কি নেই।
        ব্যাকরণ নিয়েও ঝামেলা নেই খুব।
        ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। এই যে মন্তব্যে আপনি লিখলেন, “বানান নিয়ে আমার আর হবেনা”>> এখানে ‘না’ নেতিবাচক অর্থ আলাদা করে প্রকাশ করছে।
        কিন্তু আপনি যদি বলেন, ‘নিশানা, মানা, জানা’ এই শব্দগুলিতে ‘না’ এর আলাদা কোন অর্থই নেই।
        দুটো ‘না’ তবে কি এক হতে পারে?

        তাই ‘না’ যখন আলাদা করে নেতিবাচক অর্থ প্রকাশ করছে তখন আগের শব্দ থেকে একটা স্পেস দিয়ে একে আলাদা শব্দ হিসেবে লেখা উচিত। যেমন, পারি না, হবে না, যাব না ইত্যাদি।

        অনেক জ্ঞান ঝেড়ে ফেললাম।
        আশা করি, বিরক্ত হবেন না, হলেও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

        আসলে বাংলা ভাষায় মনের ভাবটা লিখছি কিন্তু সেটার জন্য কোন মমতা নেই, লিখলাম আর হয়ে গেল বলে ভাষাটাকে আমরা কখনোই আলাদাভাবে আদর করব না, ভালোবাসব না, এটা ভাবতে আমার খুব কষ্ট হয়। 🙁

  4. অনাবিল বলেছেনঃ

    অনেক ভালো লাগলো…. ইচ্ছে আছে নিজ দেশটা পুরো ঘুরে দেখার…… 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।