মেয়েটি আমার পাশের চেয়ারেই বসেছিল পুরোটা সময়। তার পরনে ছিল লাল কামিজ আর কালো রঙের সালোয়ার। বাম হাতে ছিল চমৎকার একটা ঘড়ি আর চোখে ছিল সোনালী ফ্রেমের চশমা। প্রতিটা গানের শুরুতে সে হাততালি দিচ্ছিল।
আমি একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখলাম।
তারপর আরেকবার।
তারপর আরেকবার- দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এইবার মেয়ের হাতে ধরা পড়ে গেলাম। আমার বুক ধড়ফড় করে উঠলো, কপালের দু পাশে শিড় শিড় করে উঠলো। প্রচন্ড গরম লাগতে লাগলো। পানির পিপাসা পেল খুব। কিছুক্ষনের মধ্যে আমি ঘেমে গেলাম।
মেয়েটার দিকে আমি আর তাকাতে পারলাম না।
আমি খুব ভীতু ছেলে। সেই ক্লাস সেভেনে থাকতে সেকেন্ড গার্ল পারভীন আমাকে বলেছিল- ” তুই একটা ভীতুর ডিম”। তার গোলাপ ফুলটা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম- আম্মু বকবে বলে। সেই থেকে আমি জানি আমি খুব ভীতু। আমি সেটা মেনে নিয়েছি।
আমার খুব ইচ্ছে করছিল মেয়েটার দিকে আরেকবার তাকাই। তার নাম জিজ্ঞেস করি।
কোথা থেকে এসেছে?
কোথায় পড়ে?
অনুষ্ঠানের গান ভাল লাগছে কি না?
তার হাতে একটা পানির বোতল। আমি কি একবার পানি খেতে চাইবো?
না থাক- মেয়েটা আবার কি মনে করে?
মেয়েটার মোবাইল বেজে উঠেছে। কে যেন তাকে কল করেছে। এই শব্দে সে কিভাবে ফোনের ওপাশের কথাগুলো শুনবে?
আমি একবার তার মোবাইল নাম্বারটা চাইবো?
মেয়েটা উঠে চলে গেল। আর ফিরে এলো না।
প্রতিটা গানের শুরুতে মেয়েটা হাততালি দিচ্ছিল। গানের সাথে সাথে ঠোট মিলাচ্ছিল। এই মেয়েটা কোথা থেকে এসে আমার পাশে কিছুক্ষণ বসে আবার কোথায় চলে গেল। তার নামটাও জানা হলো না। আর কোনদিন যদি মেয়েটার সাথে দেখা না হয়? এই মেয়েটি কি জানবে তাকে নিয়ে আমি এত কিছু ভেবেছি? তাকে নিয়ে আমি গল্প লিখছি?
না, মেয়েটি কোনদিন জানবে না।
চলে আসার সময় দেখি তার সিটের এক পাশে ছোট্ট একটা নোটবুক পড়ে আছে। আমি হাত বাড়িয়ে তুলে নেই।নতুন নোটবুক। একদম কিছুই লেখা নেই, সম্পূর্ন সাদা। গোটা গোটা মেয়েলি অক্ষরে নাম লেখা ‘সামিয়া’
মেয়েটা কি তার মোবাইল নাম্বারটা লিখে রাখতে পারতো না?
আমি ভাবি প্রথম পাতায় একটা কবিতা লেখা থাকলে অনেক সুন্দর হয়। পকেট থেকে কলম বের করে লিখে দেই-
মেয়েটি কখনো জানবে না
যুবকের বুকের কোনে- সযতনে
কত বিষাদ ঘেরা যাতনা
যে কথা বহুদিন জমিয়ে রেখে
যুবকের কখনো হয় নি বলাসে কথা মেয়েটি আর কোন দিন জানবে না!
তারপরে ডাইরিটা যথাস্থানে রেখে বেরিয়ে যাবার জন্যে পা বাড়াই।
২.
একটা সিগারেট ধরানোর খুব তেষ্টা পেয়েছিল। বাইরে বেরিয়ে এসে চায়ের দোকান থেকে একটা সিগারেট নিয়ে মনের সুখে টান দিচ্ছিলাম।
লোকটা আমার পাশে এসে দাড়ালো। মাঝবয়েসী, মাথায় ঝাকড়া চুল। হালকা ভুরিও আছে।
কনসার্টে এসেছেন?
আমাকে বলছেন? আমি লোকটার দিকে তাকাই। লোকটাকে দেখে কোন মতলব-বাজ মনে হয় না।
জ্বী, আপনি?
আমিও কনসার্টে এসেছি।
এই বয়সে এই জাতীয় কনসার্টে? আমি জানতে চাই।
আসি, ইচ্ছে হয়। আপনি কেন আসেন? বলে সিগারেটে একটা দীর্ঘ টান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে সে ধোয়া দিয়ে রিং বানিয়ে বানিয়ে ছাড়তে থাকে।
কেন আবার? গান শুনতে।
সেটা তো বাড়িতেই শুনতে পারেন। এত টাকা দিয়ে কনসার্টে আসেন কেন?
আপনি কেন আসেন? আমি জানতে চাই।
লোকটা আমার দিকে তাকায়। সিগারেটে আরেকটা দীর্ঘ টান দিয়ে ফিল্টারটা ছুড়ে ফেলে দেয়।
তারপরে বলে- চিৎকার করতে। মাঝে মাঝে মনে হয় বুকটা ভারী হয়ে আছে, তখন খুব জোড়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করে জান্তব স্বরে। মনে হয় সজোরে একটা চিৎকার দিলে মনের সব কষ্ট শব্দের সাথে সাথে ভেসে ভেসে বেরিয়ে আসবে বুক থেকে, এই বুকটা একটু হালকা হবে। কনসার্টে চিৎকার করতে খুব সুবিধা, কেউ আমার দিকে খেয়াল করবে না। কেউ আমাকে পাগল ভাববে না।
আমি তাই চিৎকার করার জন্যে কনসার্টের টিকিট কাটি।
লোকটা ভেতরে চলে গেল।
আমি আস্তে আস্তে কনসার্টের দিকে পা বাড়াই। আমাকেও আজ অনেক অনেক চিৎকার করতে হবে। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জান্তব চিৎকার। এমন জোড়ে চিৎকার দিতে হবে যাতে ইথারে ভেসে ভেসে আমার মনের না বলা সব কথাগুলো মেয়েটির কানে গিয়ে পৌছায়। আমাকে বলতেই হবে কারন মেয়েটির যে এই কথাগুলো শোনা খুব প্রয়োজন!
আমি না গল্পটা বুঝি নাই! প্রথম টুকু আগ্রহ জাগাইছিলো। ২য় টা পড়ে ত কনফিউজড হলাম!
আবার পড়তে হবে
পড়েন, নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন।
মেয়েটি কখনো জানবে না
যুবকের বুকের কোনে- সযতনে
কত বিষাদ ঘেরা যাতনা
যে কথা বহুদিন জমিয়ে রেখে
যুবকের কখনো হয় নি বলা এই লাইনগুলো ভাল লাগলো বেশ। তবে গল্পের শেষটা ধোঁয়াটে লেগেছে…মনে হল যেন হুট করেই শেশ হয়ে গেছে।
কবিতাটা সুন্দর।
গল্প কেমন জানি লাগলো :thinking:
গল্পটা আরেকটু বড় হলে আরও ভালো হত।
ভালো লেগেছে।
পড়লুম!
কনফিউজড