বাবাদেরও স্যার থাকে!!!…(১)

 

গ্রামের একটি ছোট্ট স্কুল থেকে সর্বোচ্চ রেজাল্ট করে যখন এই ইট-পাথরের ঢাকা-শহরে পা রাখি, তখন দু’চোখ জুড়ে এক বিশাল স্বপ্ন। দেশের সেরা কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন। প্রতিযোগিতার নানা স্তর পেরিয়ে একসময় সত্যি হলো সেই স্বপ্ন। তারপর পদে পদে কঠোর নিয়ম-কানুন আর পড়াশুনার প্রচণ্ড চাপে বুঝেছিলাম স্বপ্নপূরন কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি! তবে সেই সাথে দিকনির্দেশনাও পেয়েছিলাম পরবর্তী স্বপ্ন দেখার।

পুরো কলেজজীবনে যেমন প্রাপ্তির আছে অনেককিছু, তেমনি অপ্রাপ্তির সংখ্যাটাও খুব একটা কম না। তবু আজ প্রাপ্তির গল্পই বলবো। অপ্রাপ্তির খাতাটা না হয় আপাততঃ বন্ধই থাক…

প্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই মনে পড়ছে কিছু অসাধারণ শিক্ষকের মুখ, যাঁদের স্নেহমাখা শাসনের সান্নিধ্যে আমি ধন্য হয়েছি। নাম বলতে গেলে হয়তো অনেক নামই বাদ পড়ে যেতে পারে, তবু কিছু নাম না বললেই নয়। জহরলাল স্যার, আজমল স্যার, সুশান্তস্যার, প্রয়াত বিদ্যাসাগর স্যার, গুহ স্যার কিংবা আদি-রসাত্বক মুখতার স্যার- তাঁরা প্রত্যেকেই আজো আমার কাছে এক অন্য উচ্চতার মানুষ। তবু আজ আমার এই লেখার মূলচরিত্র তাঁদের কেউ নন। আজ আমি লিখতে বসেছি এক তরুণ, প্রাণোবন্ত, বন্ধুবৎসল শিক্ষকের কথা।

মোঃ রেজাউল করিম (রেজা স্যার) – আমার অসম্ভব প্রিয় একজন শিক্ষক এবং অসম্ভব প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষ। আমরা যখন তাঁর ক্লাস পাই, তিনি তখনো খণ্ডকালীন(বর্তমানে স্থায়ী) শিক্ষক হিসেবেই ক্লাস নিতেন। একই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র হওয়াতে ছাত্রদের চিন্তাভাবনা আর কলেজের কঠোর নিয়মকানুন দুটোর সাথেই বেশ দ্রুত তাল মিলাতে পেরেছিলেন। সেই সাথে প্লাসপয়েন্ট হিসেবে তাঁর এপিয়ারেন্সটাও ছিল মুগ্ধ করার মত।

ক্লাসে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে অনেক মজার মজার গল্প করতেন। কখনো অন্যের, আবার কখনো বা নিজের জীবনের গল্প বলতেন। সুন্দর সুন্দর ছড়া বলতেন; শুধু ছেলেদের কলেজ হওয়ায় সেই ছড়ার ইঙ্গিত কখনো সখনো এদিক থেকে ওদিকে চলে গেলেও আমরা মাইণ্ড করতাম না;) আর প্রায়শই এমন কোমল করে কথা বলতেন যে মনে হত আমরা কোনো কলেজে নয়, নার্সারিতে আছি! ক্লাসে চকোলেট, ক্যান্ডি নিয়ে আসতেন; পড়া বলতে পারলেই চকোলেট, ক্যান্ডি!! ক্লাসে যদি বেশি শব্দ হত তখন বলতেন, “এই যে বাবুরা, আমার সবাই এবার চুপ করি!”

নিজের জীবনের স্বপ্ন, পাওয়া, না পাওয়া- অনেককিছু আমাদের সাথে শেয়ার করতেন। স্যারের বাসা ছিলো আজিমপুর-পলাশীর কাছাকাছি। তো, তিনি বাজার করতেন পলাশীর বুয়েট মার্কেট থেকে।

এদিকে আমাদের কলেজ থেকে প্রতিবছর প্রচুর ছেলে বুয়েটে চান্স পায়(কলেজের নাম?!)। আর বাজার করতে গিয়ে কখনো দেখা হয়ে যেত নিজের কলেজের বন্ধুদের সাথে। আর স্যারেরও একসময় স্বপ্ন ছিলো বুয়েটে পড়ার, কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটা আর হয়ে উঠে নি(সেসব নিয়েও বলেছিলেন, সেটা অন্য একদিন…)। আর সেজন্যই হয়তো আমাদেরকে বুয়েটে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে অনেক উৎসাহ দিতেন। হয়তো নিজের জীবনের আক্ষেপটাকে পূরন করতে চাইতেন ছাত্রদের মাধ্যমে।

একদিন ক্লাসে কথার ফাঁকে বলছিলেন, “জানো, আমি মাঝে মাঝেই খুবই অদ্ভূত একটা কথা ভাবি; তোমরা যখন অনেক বড় হবে, অনেক ভালো চাকরি করবে, তখন একদিন তোমাদের কারো সাথে হটাৎ পথে দেখা হয়ে গেলো। হুমম…ধরো, আজ থেকে ১০-১৫ বছর পরে। হয়তো তোমার সাথে থাকবে বিপরীত লিঙ্গের বিশেষ একজন আর ছোট্ট একটা বাবু(এই বাবু শব্দটা মনে হয় স্যরের অনেক পছন্দের, গলায় অনেক আদর ঢেলে বলতেন)! তখন তুমি আমার সাথে সেই বিপরীত লিঙ্গের বিশেষ একজনকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলবে, ইনি আমার স্যার।

আর বাবুটা তখন অবাক হয়ে ভাববে, বাবাদেরও স্যার থাকে!”(চলবে…)

বাংলামায়ের ছেলে সম্পর্কে

বাইশবছরের তরুণযুবা, যে স্বপ্ন দেখে আকাশছোঁয়ার, পথ চলে অফুরান আত্মবিশ্বাসে। ভীষণ ভালোবাসে এই দেশটাকে, চেষ্টা করে রাজনীতি সচেতন থাকার। ভালাবাসে লেখালেখি করতে। কখনো কখনো মুখভর্তি দাঁড়ি-গোঁফে হেঁটে ফিরে চাঁদনী রাতে কিংবা ভরদুপুরে, পিচঢালা রাস্তায় কিংবা গেঁয়ো মেঠোপথে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি জড়িত আছে বেশকিছু দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে। এইতো---
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে স্মৃতিচারণ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

6 Responses to বাবাদেরও স্যার থাকে!!!…(১)

  1. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    হা হা। মজা পেলাম।
    পরের পর্বের অপেক্ষায়। 😀

    অফটপিক-
    বানানের দিকে খেয়াল রাখতে আরেকটু সময় দেয়া যায় কি? লেখাটা তাহলে আরও বেশি ভালো হত। 🙂

    • বাংলামায়ের ছেলে বলেছেনঃ

      ধন্যবাদ। পরের পর্ব শীঘ্রই আসছে…

      অঃটঃ বানান ভুল হয় মূলত দুই কারণে- অজ্ঞতাবশত ও অসতর্কতাবশত। সঠিক বানানেই লেখার চেষ্টা করি, তবু ভুল হয়ে যায়। ডিটেইলসে ধরিয়ে দিলে উপকৃত হবো।

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    মজার ব্যাপার! আমিও পিচ্চিকালে এই রকম ভাবতাম! আমাদের বাবাদের আছে। আমাদেরও থাকবে! আমাদের বাবুরা (ইনশাআল্লাহ :P) অবাক হবে!!

    হাহা ভাল লাগছে।

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    দারুণ তো! শেষটা খুব মজার। 😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।