এক নতুন প্রজন্মের ছেলেদের মুখোমুখি হচ্ছে আজ পৃথিবী। তারা সামাজিকভাবে মিশতে পারছে না, স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না, এমনকি জীবনের প্রতি পদে সামনে আসা বাঁধাকেও এড়িয়ে যেতে চাইছে।
কেন এই উল্টো পথে যাত্রা? কী আছে এই ছেলেদের ভবিষ্যৎ এ?
স্ট্যানফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্ট দিয়ে বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট ফিলিপ জিম্বার্ডো এবং আর এক বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট নিকিতা ডানকান লিখেছেন এই প্রশ্ন নিয়েই ‘The Demise of Guys: Why Boys Are Struggling and What We Can Do About It’ বই-এ।
ছেলেদের এ পরিবর্তিত অবস্থার পেছনে অনেক বড় কারণ হিসেবে বিস্ময়কর দু’টো তথ্য বেরিয়ে আসে।
১. গেমিং
২. পর্নোগ্রাফি
সাদা চোখে দেখলে এর ক্ষতিকারক দিকগুলো হয়তো তেমন চোখে পড়বে না। কিন্তু, একটু গভীরে চিন্তা করলে ফুটে উঠে এর ভয়াবহতা।
গেমিং এবং পর্নোগ্রাফি সম্পূর্ণ দুই মেরুর জিনিস হলেও এদের মধ্যে একটা মিল হলো এর ‘সারপ্রাইজিং ফ্যাক্টর’। প্রতিটা নতুন গেম বা নতুন পর্নো একটা মানুষ নতুন কিছু দেখার আশায় শুরু করে। আর কোন কিছুতেই এতো পরিবর্তন পাওয়া যায় না, যতটা পাওয়া যায় এ দু’টোতে।
ধীরে ধীরে নেশার মত শুরু হয় গেম খেলা বা পর্নোগ্রাফি দেখার অভ্যাস।
কেমন হতে পারে এ নেশা?:
সেংসুব লি নামের দক্ষিণ কোরিয়ান এক ব্যক্তি ২০০৯ সালে একটানা ৫০ ঘণ্টা ধরে ‘Starcraft’ খেলে এরপর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। ((http://news.bbc.co.uk/2/hi/technology/4137782.stm))
২০০৯ সালে MTv তে ‘True Life’ নামে অনুষ্ঠানে দেখানো হয়, অ্যাডাম নামে এক লোককে তার স্ত্রী ঘর থেকে বের করে দেয় তার ভয়াবহ পর্নো আসক্তির কারণে। এই দম্পতির চারটা সন্তান ছিল।
সামাজিক ও শারীরিক প্রভাব:
নরওয়েতে গণহত্যা ঘটানো আন্দ্রেস বেহরিং আদালতে তার বিচারের সময় বলেন, এই হত্যা করার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে তিনি প্রস্তুতি নিয়েছেন “Call of Duty: Modern Warfare 2” গেম এ গুলি করে হত্যা অনুশীলন করে। তিনি এমনকি একটানা ১৬ ঘণ্টা ধরে “World of Warcraft” গেম খেলার কথাও বলেন। ((http://edition.cnn.com/2012/04/19/tech/gaming-gadgets/games-violence-norway-react/index.html))
বিখ্যাত গেম “Grand Theft Auto”, যেখানে খেলোয়াড় খুন করে পুলিশ অফিসার, চুরি করে গাড়ি। এ সব কখনোই সমাজের ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না।
গেমাররা আজকাল গেম নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত থাকে, তা তাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে। তারা পরিবারকে সময় দিচ্ছে না ঠিকমতো, আগের মতো বই পড়ছে না, ভ্রমণ ও শারীরিক পরিশ্রমের ব্যাপারেও উদাসীন হয়ে যাচ্ছে।
সংখ্যায় ভাবনা:
এমন কিছু কি আছে, যেটা আসলে গেমিং বা পর্নোগ্রাফি থেকে কাজে লাগছে?
১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৭৬% নারী এবং ২৬ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ৭৮% নারীই মনে করেন ছেলেদের গেমিং বা পর্নোগ্রাফির অভ্যাস তাদের ‘immaturity’ এর লক্ষণ!
আঁধারের মেঘ:
পর্নোগ্রাফিতে আসক্তরা সামাজিক সাধারণ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরিতে সক্ষম হচ্ছে না। একই সাথে তারা তাদের স্কুল বা কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগে ঠিকভাবে সক্ষম হচ্ছে না। একই সাথে অনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে মানসিক ভাবনা ঘিরে ধরছে তাদের।
ফলাফল হিসেবে সাধারণ যেভাবে বেড়ে ওঠার কথা ছিল একটা ছেলের সেভাবে সে মোটেই বেড়ে উঠছে না।
গেমিং ও পর্নোগ্রাফিতে এ আসক্ত ছেলেরা শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাভাবিক বৃদ্ধি লাভ করতে পারছে না। ফিটনেসের অভাব, আগ্রাসী চিন্তাভাবনা এবং মানসিকতার পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে সামাজিক পরিবেশের উপর।
এখনই সময়:
আমরা নিশ্চয়ই চাই না এমন একটা প্রজন্মের মুখোমুখি হতে, যারা স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারছে না, সামাজিকভাবে চলতে পারছে না, পিছিয়ে পড়ছে কাজের ক্ষেত্রে। শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে গড়ে ওঠা ছেলেদের যদি আমরা দেখতে চাই, তবে নিশ্চয়ই নতুন করে ভাবার সময় এসেছে গেমিং ও পর্নোগ্রাফি নিয়ে।
[১. The Demise of Guys: Why Boys Are Struggling and What We Can Do About It বইটির স্যাম্পল লিংক।
লিংকের ছবিতে ক্লিক করলে বইটি পড়া যাবে।
২. এই বিষয়ে TED Talk এ ফিলিপ জিম্বার্ডো। ভিডিও লিংক]
এই ব্যাপারটা আমাকে নিয়ত ভাবায়, খুব বেশি ভাবায়। গেমিং আর পর্ণ আজকাল ডালভাতের মত ব্যাপার হয়ে গেছে যেটা প্রচণ্ড অস্বস্তিকর এবং alarming. আমার ছোটভাইটা কল অফ ডিউটির পোকা ! 🙁
এই ছেলেগুলো একেকটা রত্ন, এদেরকে মানুষের মত মানুষ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের, সময় নেই আর বসে থাকার। 🙁 স্বপ্ন বিলাসকে অসংখ্য ধন্যবাদ চলমান সময়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ব্যাধিটি নিয়ে সরব হওয়ার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
সময়োপযোগী পোস্ট।
কিন্তু আরও কিছু তথ্য আশা করছিলাম।
পপুলেশন রিসার্স আর কিছু ইনফোগ্রাফিক্স দেখালে বেশি ভালো করতি।
তবু এই ব্যাপার নিয়ে যে পোস্ট দিয়েছিস, এটাও কম নয়। একটু সমৃদ্ধ হলে বেশি ভালো হত, এই আরকি।
(আমি যখনই ব্লগপোস্ট দেয়ার কথা চিন্তা করি, তখনই হয় তুই, নয় বোহেমিয়ান নয়ত সামিরা কেউ না কেউ একটা পোস্ট দিবি-ই দিবি। দুইদিন ধরে বসে থেকেও ভাত পাই না। দিমু না আজকে পোস্ট!! :wallbash: )
হুম! আরও কিছু তথ্য হয়তো দেয়া যেত।
আমি আজকে পোস্ট দিলাম ১৬ দিন পরে। আজকেই তুই দিতে চাইলি :thinking:
মনে হয় তুই একটু তাড়াহুড়ো করেই পোস্টটা দিয়েছিস।
ব্যাপার না। পারলে পোস্ট আপডেটেড করে ফেল। সহজ সমাধান! 😀
তুই ১৬ দিন পরে দিছিস আর আমি তিন মাস পরে পোস্ট দিতে চাইছি। এইবার কী বলবি বল, হুহ! 8)
আপডেট করলাম কিছুটা……
লেখা দিয়ে দিস কালকে……
গুড, এইবার পোস্টটা আরেকটু সমৃদ্ধ লাগছে! :clappinghands:
দেখি, কাল আবার ব্যস্ততায় ডুবে যেতে হতে পারে। 🙁
তোর ঠেলাঠেলিতেই আপডেট 😛
কালকে ব্যস্ত থাকলে আজকেই পোস্ট দিয়ে যা………
গেমাররা আজকাল গেম নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত থাকে, তা তাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে। তারা পরিবারকে সময় দিচ্ছে না ঠিকমতো, আগের মতো বই পড়ছে না, ভ্রমণ ও শারীরিক পরিশ্রমের ব্যাপারেও উদাসীন হয়ে যাচ্ছে।
– নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি এমনটা।
চমৎকার তথ্য সমৃদ্ধ তবে আরও রেফারেন্স থাকা উচিৎ ছিল মনে হচ্ছে।
টেড এর লিঙ্কটা সরাসরি যুক্ত করা উচিৎ। মানে ভিডিও হিসেবেই। লিঙ্ক দিলেই তো আসার কথা।
একটা লেখায় পড়েছিলাম, পর্ন স্ত্রী/ গার্লফ্রেন্ড এর সাথে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে।
ভিডিও লিংক দিলে আসবে কিনা নিশ্চিত ছিলাম না।
গেমিং ও পর্নোগ্রাফি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে……
লেখা ভালো লাগলো। প্রতিটি বক্তব্যের সাথেই একমত।
এর পাশাপাশি আরেকটি ব্যাপার মনে ভাবনা জাগায়… কিছুদিন আগে ফেইসবুকে একটি টিভি প্রতিবেদন ভিডিও দেখলাম যাতে শিশুদের মাঝেও পর্ণোগ্রাফীর প্রতি আসক্তি তুলে ধরা হয়েছে। অবস্থা যথেষ্ট ভয়াবহ।
সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরী। চাই না এই দেশটাও তাদের মত পেডোফাইলে ভরে উঠুক।
“চাই না এই দেশটাও তাদের মত পেডোফাইলে ভরে উঠুক।”
সহমত!
পর্ণোগ্রাফি নিয়ে আসলে কোনই দ্বিমত নাই, একদম পয়েন্টে পয়েন্টে কথা বলেছেন, কিন্তু গেমিং এর বিষয়ে একটাই বক্তব্য, গেমিংটা যেন নেশা না হয়ে যায় সেটাই দেখার বিষয় আগে, সত্যি বলতে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে গেমিংটাকে পজিটিভ একটা ভাবেও দেখা যায়, TEDx ঢাকায় কিন্তু এরকমই একটা প্রেজেন্টেশন ছিলো……
আরেকটু গোছানো একটা লিখা আশা করেছিলাম আপনার কাছ থেকে……
কিন্তু ভাবনাটা চমৎকার……
গেমিং নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, অতিরিক্ত গেমিংটা ভালো না। এতোটাই গেমিং এ আসক্তি যে, অন্য সব কাজকে তুচ্ছ মনে করা।
আরেকটু গুছিয়ে লিখতে পারলে আমারও ভালো লাগতো……
ভাল লেগেছে ভাইয়া। দারুণ।
গেমিং, মানে অতিরিক্ত গেমিং আসলেই খুব খারাপ জিনিস – নিজেই দেখেছি। আর পর্নোগ্রাফি নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। মুভিতে যেই হারে পর্নোগ্রাফিক অংশ বাড়ছে, সেটাও দুশ্চিন্তার বিষয়। 🙁
ধন্যবাদ 😀
সিনেমাতে আপত্তিকর দৃশ্য নিয়ে আসলেই চিন্তা করা দরকার………