বিকেল সন্ধ্যা হয়ে আসে। রোদটা ঠান্ডা, নরম আর সোনালী হয়ে আসে।
সূর্যটা ধীরে ধীরে পশ্চিমে হেলে পড়ে।
ডিপার্টমেন্টে পদধ্বনিগুলো হারিয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে।
নৈঃশব্দে ভরতে থাকে চারপাশ।
সবার ঘরে ফেরার তাড়া।
আমারো………।
না, ঠিক তাড়া নয়, তবে এই ক্লাস, ল্যাব, টুকিটাকি কাজ, পুনঃ পুনঃ খোঁজ আর টানে না দিনশেষে।
কিন্তু চাইলেই এইসব ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না………।
কানের খোঁজে চিলের পিছে ছোটে সবাই, সদলবলে। সেজন্য মিটিং চলতেই থাকে।
কান পেয়ে উদযাপন আর থামেই না।
সমাবেশ হয়, উদযাপনের নিমিত্তে………।
ডিপার্টমেন্টের দোতলার করিড়র থেকে এক টুকরো আকাশ দেখা যায়। সেই আকাশ হঠাৎ কোন এক বিশাল পাখি ধূসর ডানা দিয়ে ঢেকে দেয় ।
হাওয়া বয়…… সজোরে………
-এই যে! দাঁড়িয়ে আছো যে! যাবে না মিটিং-এ?
হঠাৎ ডাক শুনে চমকে উঠি। অনির্বাণ স্যার।
-জ্বি, যাবো।
হাসতে চেষ্টা করি একটু।
-চলো তাহলে।
– এইতো, একটু কাগজপত্র গুছিয়ে নামবো । একটু পরেই আসছি…
হাওয়া বয়…… সজোরে……
রিমঝিম ঝিম ছাইপাশ বৃষ্টি……ঝর…ঝর… ঝরে অঝোরে…… শ্রাবণ আসার আগেই…………।
মুঠোফোনটা বেজে ওঠে টুং টাং শব্দে। আপ্পিয়ামণি।
-হ্যালো…
-বাবু তোর কি খবর??
-ভালো খবর…
-কোথায়??
-ডিপার্টমেন্টে…
-কেন?? এখনো??
-মিটিং আছে যে…
-ওহ, আচ্ছা!!
-ওক্কে, মিটিং করে দেশ উদ্ধার করো তাহলে!!
-ঠিক আছে, খোদা হাফেজ…
-বাইইই…
হঠাৎ-ই বিষন্ন লাগে খুব।
হাওয়া বয়……সজোরে……
সিদ্ধান্ত নিই- আজ বৃষ্টিতে ভিজবো।
ঠান্ডা লাগবে? লাগুক না হয় একদিন………
কি এসে যায়…
করিডর থেকে রুমে ঢুকি। বই খাতাগুলো কিছু গুছিয়ে রাখি। মুঠোফোনটা আবার বাজে। টুং টাং টুং টাং…। আম্মু।
– আম্মুউ!
– কি রে মামণি, মিটিং-এ গিয়েছিস?
– এখনো যাই নি আম্মু।
– কখন যাবি? সময় হয়ে গেছে না?
– এই তো এখুনি যাবো আম্মু…
– বৃষ্টিতে ভিজিস না সোনা…
– একটু ভিজি আম্মু, প্লিইইইজ……
– না রে মামণি… ভিজিস না। জ্বর আসবে, ঠান্ডা লেগে যাবে, তোর কাল আবার ক্লাস আছে না…
– আচ্ছা, আচ্ছা আম্মু। ভিজবো না।
– খোদা হাফেজ, মিটিং শেষে ফোন দিস।
– আচ্ছা দেব। খোদা হাফেজ।
লাইট-ফ্যান অফ করি। রুমে তালা লাগাই।
ভীষণ অনিচ্ছায় ছাতাটা বের করি। একটু বাঁকা করে ধরি ছাতাটা।
এলোপাথাড়ি বৃষ্টি ঝরে। আমার ডান হাত, কাঁধ পুরো ভিজে যায়। প্রচন্ড ঠান্ডা হাওয়া আমার ভেতরে কাঁপন ধরায়। ভীষণ ঠান্ডা লাগে।
লাগুক!
ডিপার্টমেন্টের সামনে সারি বাঁধা দেবদারুর সারি ও নীরব। দেবদারুগুলো যেন ঠান্ডায় জড়াজড়ি করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তাদের নীরবতাই কত কথা বলে যায়…… একদিন দোয়েল পাখি এই পথে………
ওয়ার্কশপের প্রকান্ড দরোজায় তালা। এই বৃষ্টিবেলায় কারো কাজে মন নেই বুঝি। এরপর সার বাঁধা কড়ই, তারাও আমার মতো ঠান্ডায় কাঁপে। বড় বড় বৃষ্টিফোঁটা কড়ই পাতায় পড়ে, জলপতনের নীরবতা কী যে ভীষণ শব্দপ্রবণ লাগে। দিনের আলো নিভু নিভু প্রায়……
খেয়ালী কেউ এই ঝুম বরষায় জানালা পাশে দাঁড়িয়ে আছে কি ?
চলো বৃষ্টিস্নাত হই………।
আধাভেজা হয়ে মিটিং রুমে ঢুকি। চেয়ারগুলো তখনো অনেক ফাঁকা।
-হা—ই! বসো, বসো! ভিজে গেছো তো! মাহাদীব বলে। আমি একটু হাসি।
মিটিং চলতে থাকে। বাঘা বাঘা মানুষেরা কথায় নিস্তব্দতা ভাঙ্গে।
কথা চলতেই থাকে।
আকাশ রঙ বদলায়। বৃষ্টিটাও থেমে আছে রুমের ভেতরে থেকেও টের পাই। কী যে তীব্র লাল-সোনালী রঙ আকাশের! এক কথায় এই রঙকে কী বলে?
জানি না।
মুঠোফোনে বিপ শব্দ হয়। মেসেজ এসেছে। সৌরেন।
‘ এতো ভদ্রতা করিস কেন? মিটিং-এ থাকার কী এমন দরকার! আমি এখন আরামে ঘুম দেব…’
আবার বিপ! নুহাজ।
‘আজকে মিটিং-এ কী বলছে রে? আমাকে জানি ও… এই মিটিং গুলো কেন যে হয়……’
হাসি পেয়ে যায়। উত্তর আমি নিজেও জানি না।
কথা চলতেই থাকে। আকাশ ও রঙ বদলাতেই থাকে। হাওয়া বয় কিনা বুঝতে পারি না।
প্রার্থণার সময় হয়। জেসিন ম্যাডাম বলেন,
-যাবে ডিপার্টমেন্টে? প্রার্থণা সেরে আসি?
– জ্বি যাবো। চলেন।
রুম থেকে বের হই। চারিদিক কী ভীষণ শান্ত আর নীরব। ঝিরি ঝিরি হাওয়া বয়। গাছের পাতায় পাতায় আঁধার জমে। দৃষ্টিনন্দন ল্যাম্পপোস্ট গুলোতে আলো জ্বলে ওঠে নি এখনো। আলো আঁধারিতে হেঁটে যাই। আধাভেজা আমি ঠান্ডায় একটু কেঁপে উঠি।
কিচ্ছু হবে না।
সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নময় মনে হয়। গল্প ও কল্পের জাল বুনি। জাল বুনতে বুনতে হাঁটতে থাকি। ঝিরিঝিরি হাওয়া বয়। হাওয়া বইতেই থাকে……
অতীব সুন্দর! 🙂
আপনার লেখার স্টাইল দারুণ লাগে আপু।
আপনাকে বাবু ডাকে কে? 😛
আপনি আসলেই বাবু, হাহা! বাবু টীচার। 😀
টিটকারী দিও না খবরদার!!
প্রধান বাবু ডাককারী- আমার ছোটবোন। রিলেটিভ, ফ্রেন্ড, টিচার…অনেকেই মাঝে মাঝে ডাকে……… 🙁
ব্যাপক পচানি খেয়েই দিন পার করি…… 🙁
“আকাশ রঙ বদলায়। বৃষ্টিটাও থেমে আছে রুমের ভেতরে থেকেও টের পাই। কী যে তীব্র লাল-সোনালী রঙ আকাশের! এক কথায় এই রঙকে কী বলে?
জানি না।”– মিটিং এর মাঝে এসব ভাবলে হবে? অ্যাঁ? 😀 😛 😛 😛
EEE’র টিচারদের সাহিত্য-রস-জ্ঞান সম্পর্কে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করার দায়িত্ব কিন্তু আপনার! 😀 লেখাগুলো অসম্ভব ভালো লাগে! :love:
মিটিং এর কথা যে আমার এ্যন্টেনা রিসিভ করতে চায় না… :p 😀
দায়িত্ব গ্রহণ করলুম, দোয়াপ্রার্থী……আর ভালো লাগার জন্য থেঙ্কু 😀
বাংলা বিহার উড়িষ্যার আকাশে ভবিষ্যৎ বিখ্যাত সাহিত্যিকের উদয় । লেখার স্টাইল সম্পর্কে বলার কিছুই নাই , ভাষাহীন ।
নতুন ধারার লেখিকা ………
অনেক ভালো লাগছে …… :love: :happy:
আহ, লজ্জা পেলুম……
দোয়াপ্রার্থী, যেন মঙ্গলগ্রহের আকাশেও উদিত হতে পারি 😛
আপু,
তোমার লেখা যে আমার কী পরিমাণ ভালো লাগে, তুমি জানো না।
লেখালেখির ভিতরে (মানে একটা গল্প/কবিতা/যা কিছুর সাথে আরেক যা কিছুর) প্রেম সম্ভব হলে আমি সামিরা আর তোমার লেখা নিয়ে স্বপ্ন বুনতাম! 😐
লেখা প্রিয়তে নিলাম। :beshikhushi:
:love:
লেখাটা পড়তে পড়তে একদম হারিয়ে গিয়েছিলাম… কথার মাঝে বুদ হয়ে ছিলাম…খুবই ভালো লাগলো পড়ে…
অনেক অনেক ধন্যবাদ স্পঞ্জ!
পাঠে কৃতজ্ঞতা…… 🙂
লেখার ধরনটা বেশ লাগল আপি।
“ওয়ার্কশপের প্রকান্ড দরোজায় তালা। এই বৃষ্টিবেলায় কারো কাজে মন নেই বুঝি। এরপর সার বাঁধা কড়ই, তারাও আমার মতো ঠান্ডায় কাঁপে। বড় বড় বৃষ্টিফোঁটা কড়ই পাতায় পড়ে, জলপতনের নীরবতা কী যে ভীষণ শব্দপ্রবণ লাগে। দিনের আলো নিভু নিভু প্রায়……
খেয়ালী কেউ এই ঝুম বরষায় জানালা পাশে দাঁড়িয়ে আছে কি ?
চলো বৃষ্টিস্নাত হই………।” :huzur:
চলো বৃষ্টিস্নাত হই… 😀
ভীষণ অনিচ্ছায় ছাতাটা বের করি। একটু বাঁকা করে ধরি ছাতাটা।
আমিও ঠিক একই কাজ করি
আমি আমার আম্মুকে মাঝে মাঝে বাবু ডাকি।
ভালো লেগেছে। :love:
আম্মুকে বাবু? বাহ! 🙂
:love:
খুবই দারুন লেখা.
অন্যরকম ছন্দ এই গদ্যের মাঝেও! স্বপ্নময়, কুয়াশাচ্ছন্ন যেন!
বেশি সুন্দর লেখা… বেশি সুন্দর…
অনেক অনেক ধন্যবাদ……… 🙂
পড়তে পড়তে মনটা কেমন খালি হয়ে গেল বাবু!
আপুউউউউউউউ…… :love:
অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ায়……
মনে আছে অনেক খালি-খালি মন নিয়ে লিখেছিলাম আমি………