I have learnt silence from the talkative, toleration from the intolerant, and kindness from the unkind; yet strange, I am ungrateful to these teachers.
Kahlil Gibran এর এই কোট টা আমি প্রথম শুনি যখন ইউনিভার্সিটির এক ফ্যাকাল্টির খুব বাজে ব্যবহার পেয়ে আমার মন অসম্ভব খারাপ। এই কথার অপরিমিত শক্তি বোঝার অবস্থা তখন আমার ছিলনা। আমি তখন দুঃখের সাগরে ডুবছি। কিন্তু এর পর থেকে, গত দেড় বছরে, এই কথাগুলো একদিনের জন্যেও ভুলিনি। প্রতিদিন অল্প অল্প করে, একটু আধটু করে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বার বার অনুভব করেছি এর প্রয়োজন।
আমরা কি আমাদের চারপাশ থেকে শিখি? সবাই বলবে শিখি। কেমন করে? এই যেমন ভাল জীবনাচরণের উদাহরণ দেখলে তার মত করে চলার শিক্ষা নেই, কারো আত্মবিশ্বাস আমাদের উদ্বুদ্ধ করে, কারো সৃষ্টিশীলতায় মুগ্ধ হয়ে আমরা অনুপ্রাণিত হই, আমাদের আগামী প্রজন্মও যেন এমন হয় – ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজের জীবনে ঠেকে শিখি সবাই। অনেকে অনেক ঠকেও ধরতে পারেনা ঠিক আর বেঠিকের ফারাক। শিখছি আমরা প্রতিদিনই। কিন্তু কাজে লাগাতে পারছি কতটুকু?
আমরা মানুষেরা বোধহয় জন্মগতভাবেই ভুলোমনা। বড় হওয়ার সাথে সাথে ভুলে যাই কৈশোরের আমাদের মনটা কেমন ছিল। আমরা বোধহয় স্বার্থপরও, নিজেকে আরেকজনের অবস্থানে বসিয়ে কিছুতেই বিচার করতে পারিনা কেন একজন মানুষ ভুল করে। আমার জন্য যেটা খুব সহজ, অপরজনের জন্য তাই হয়ত নিত্যদিনের স্ট্রাগল। আমার এক কাছের মানুষ সময়ের ব্যাপারে খুব বিচক্ষণ, অন্য কেউ সময়ের নড়চড় করলে তার থেকে কর্কশ মন্তব্য শুনতে হবেই। তার কথা হচ্ছে আমি ত কোন কমিটমেন্ট করলে আর সব কিছু সেভাবে প্ল্যান করে নেই, তুমি পার না কেন? সেই একই মানুষ নিত্যনিয়ত স্ট্রাগল করে যাচ্ছে তার বাকযন্ত্র কে সংযত রাখার। প্রতিদিন সে হেরে যায় এখানে, বার বার হারে, একই ভুল প্রতিদিন করে। তবু সে শেখেনি – স্ট্রাগল প্রত্যেকেরই আছে, যার যার নিজের মত, সময়ের হোক অথবা সংযমের।
নিজের সংসার হওয়ার পর থেকে আমি প্রত্যেকটা পরিবারকে খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করি। প্রবাসে থাকি, বাবা মা, শ্বশুরবাড়ি ত নেই, এরাই সব। বেশ অনেকদিন ধরে সংসার করছেন এমন বড়বোনদের সংসর্গে থাকার চেষ্টা করি, যাতে তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা অল্প আয়াসে অর্জন করে ফেলতে পারি। শিক্ষার ধরণটাই এমন, না ছেঁকে নেয়ার উপায় নেই কোন কিছুই। গ্র্যাড স্কুলে এতদিন ধরে আমাদের এটাই অনেক কষ্টে শেখানোর চেষ্টা করছে, কোন পাবলিকেশন বিশ্বাস করবে না, ডাটা যাচাই না করে। একটা সময় বুঝলাম, এই পদ্ধতি শুধু একাডেমিক লাইফে না, সোশ্যাল লাইফেও খুব জরুরি। ছোটবেলা থেকে শিখে এসেছি বাবা মা সবসময় ঠিক, স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক মানে অবিসংবাদিত চরিত্রের অধিকারী, তাদের একটু চ্যুতি দেখলে মুষড়ে পড়তাম। আশ্চর্য ব্যাপার, কেন কখনও কেউ বলে দেয়নি, তাদেরও ভুল হয়, ভুল করতে দেখলে হতাশ না, শিখতে হয়। তেমনি এখনও, সুপারভাইজর কে মাথায় তুলে রাখি, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব সহ নিজেদের পরিবারকে ভাবি সব ভুলের ঊর্ধ্বে, যখন দেখি ভীষণ নীতিবাগিশ মানুষটি জীবনের কোন একটা জায়গায় এসে অন্যায় করে ফেলছে, তখন তার উপর বিশ্বাসটাই চলে যায়। কেন, সে কি ভুল করতে পারেনা? অন্যায় করলেই আমি তার থেকে শেখা বন্ধ করে দেব কেন? তার ভুলটা ত আমিও করতে পারতাম!
অনেকদিন ধরে পরিচয় থাকলে মানুষের ভাল খারাপ সবকিছুই চোখে পড়ে। সমস্যা হচ্ছে, আমি কিছুদিন যাওয়ার পরেই তাকে লেবেল করে ফেলি, ‘আমি একে পছন্দ করি, আমি একে পছন্দ করি না।’ তারপর যাদের পছন্দ করি, তাদের ভাল গুণগুলি খুঁটিয়ে দেখে শিখতে থাকি, আর যাদের পছন্দ করি না, তাদের দোষগুলিও মনের মধ্যে জমা রেখে শিখতে থাকি। উল্টোটা সচেতনভাবে কখনই করতে পারিনা। বিশেষ করে যাকে পছন্দ করিনা, তার গুণগুলো দেখতে আমার ভীষণ এলার্জি। কিন্তু এটা কি ঠিক পথ? আমি না আল্লাহর কাছে দুআ করি উনি যাতে আমাকে সরল পথে রাখেন সঠিক পথে রাখেন? নাস্তিকরা যা বলে তার কি সব খারাপ? ইসলামের দোহাই দিয়ে গালিগালাজ থেকে শুরু করে আর যা কিছু করা হয় তার কি সব ভাল? আমরা ছাঁকতে শিখিনি। বাইনারি ডিজিট এর মত ‘All or none’ এই জায়গাতে এসে থেমে গেছি।
আমি শিখছি, সবই শিখছি, সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার থেকে শুরু করে স্ট্রিং থিওরি – তত্ত্বকথা যত আছে, জীবনের সাথে সামঞ্জস্যহীন – তার সবকিছুতেই আমার খুব আগ্রহ। কিন্তু শিখিনি গৃহস্থালির খুব বেসিক কিছু বিষয়ও, শাক সবজি কীভাবে তাজা রাখা যায়, ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কী কী রুটিন মেনে চলা জরুরি – এগুলো কোন কিছুই আমার কাছে জরুরি মনে হয়নি কোনদিন। একদিন ব্লগে দেখলাম এক ছেলে অহংকার করে বলছে, ‘আমি জীবনে কোনদিন ভাত বেড়ে খাইনি।’ আমরা না পারা, না জানা – এসবও অহংকার করার বিষয় মনে করি। শিক্ষার কী অদ্ভুত বিকলাঙ্গ রূপ!
যাই হোক, এত হতাশামার্কা কথা বলে লেখা শেষ করতে চাইনা। যারা ছাত্রজীবনে আছেন, বিশেষ করে যারা দেশে আছেন, তারা অবসর সময়ে হতাশা চর্চা না করে চলুন একটু বড় বড় চোখ করে চারপাশে তাকাই। যদি বৃষ্টির জন্য বাসা থেকে বের হতে না পারেন, একটু রান্নাঘরে যান, দেখুন মা কীভাবে চটপট রান্না, ধোয়ামোছা সবই খুব স্মার্টভাবে করে ফেলেন খুব অল্প সময়ে। এটা একটা স্কিল। দুপুরে বিছানায় অলস শুয়ে থাকলে চুপচাপ একটু ভাবুন আপনার অপছন্দের কোন মানুষের কথা। তার ভাল দিকগুলো, দোষগুলো – সবকিছু নিয়েই চিন্তা করুন। শেখার অ-নে-ক কিছু পাবেন। বাবাকে যদি সবসময় দেখেন ব্যাংকে বিল দিয়ে আসলেই মেজাজ খারাপ থাকে, তাহলে একদিন তার সাথে যান, শেখা হয়ে যাবে মেজাজ ঠিক রাখতে হলে কোন কোন জিনিসগুলো সহ্য করতে শিখতে হবে। শেখার কি শেষ আছে? অল্প কথায় কী করে অনেক কথা বলা যায় – তাও একটা শেখার মত জিনিস, আমাকে যেটা শিখতে হবে খুব শীঘ্রই।
শেখার আসলেই কোন শেষ নাই, কবরে যাবার আগ পর্যন্ত শিখতে শিখতেই চলি আমরা। অসাধারণ আপু! বরাবরের মত আপনার লেখা ভালো লাগল 🙂
bon, khub bhallaglo tomar comment pore. shorober shob pathok der moddhe akta simplicity achhe, kono barti kotha na, moner chinta ta khub shoja shapta kore bole.
ধন্যবাদ আপু 🙂
জাস্ট অসাধারণ একটা লেখা আপু।
প্রিয়তে নিচ্ছি। 😀
jak, bhoye bhoye chhilam, tumi bolo kina… etao pore felechhi 😀
হাহা আপু। 😀
আসলেই শেখার কোনও শেষ নেই। প্রতিদিন চলাফেরা করতে গিয়ে শিখছি অনেক কিছু! যে কারো কাছ থেকেই, সে কোনও শিশু হোক অথবা কোনও বৃদ্ধ। এতো সুন্দর একটা লেখার দেবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু। 😀
tomakeo onek dhonnobad apu! madhobilota k bolchhilam, shorob er reader der moddhe shorol akta bhab achhe, jeta onno kono blogei paina.
এই লেখা প্রিয়তে না নিলে আমার আফসোস থেকে যাবে।
অসাধারণ! 😀 😀
eita k? daran apnar blog ghure ashi.
হা হা। আপু আমি আপনার অনেক অ-নে-ক ছোট। আপনার তুলনায় পুরাই পিচ্চি। আমাকে ‘আপনি’ করে ডেকে লজ্জা দেবেন না আপু।
আপনার লেখাগুলো আমার খুব ভালো লাগে পড়তে।
আপনার এই পোস্টের ঠিক এই কথাগুলোই আমি কত ভেবেছি। আমি আমার অপছন্দের মানুষগুলোর ভালো দিকগুলো সময় পেলেই খোঁজার চেষ্টা করি। যে সব মানুষ আমাকে নিন্দা করে, আমার কেন যেন তাদের সাথেই বন্ধুত্ব পাতাতে ভীষণ ইচ্ছে হয়! :love:
এতদিন নিজেকে ভাবতাম ‘পাগল মস্তিষ্কের একজন’।
আপনার লেখা পড়ে মনে হল, নাহ, আমি ঠিক-ই আছি। এইটকু পাগলামি স্বাস্থ্যের জন্য অন্তত ভালো। 😛
আমার ব্লগ ঘুরে কিছু পেলেন আপু?
আমি তো আপনার মত এত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারি না। 🙁
আপনার অভ্র নেই?! ইংরেজিতে বাংলা লেখা দেখতে ভালো লাগে না!
আর ফিনিক্স ইচ্ছে করে একটু ভাব নিলো! যেন ওর প্রশংসা করেন বেশি বেশি!
আমি এখনও বিজয় কীবোর্ডে লিখি। নতুন অভ্র বিজয় লেআউট বাদ দিয়ে দেয়ার পর থেকে খুব মুশকিলে আছি।
আমার প্রশংসা করার মত কিছু নাই আমার।
যা আছি ভালো আছি। তুমি মোটেও বানায়ে বানায়ে কথা বলবা না ভাইয়া। 🙁
ফিনিক্স: না না, তোমার লেখা পড়েছি ত আগে! সচেতন মানুষের লেখা। এসব লেখা পড়ে মনে হয় লেখকের বয়স জানি কত! তারপরে যখন শুনি আমার চেয়ে অনেক ছোট… গালে হাত দিয়ে বসে থাকি, হায় খোদা! এরা আমাদের বয়সী হলে কী করবে? সব ত তারিক রামাদান হয়ে বের হবে!
সচেতন মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি এখনো আপু। বোহেমিয়ান, সামিরা এরা জানে, আমার সাথে থাকার বিপদ কী! গল্প করতে করতে ঘাস ছিঁড়ল কী চানাচুরের ঠোঙ্গাটা মাটিতে ফেলে দিল ওমনি আমার ঝাড়ি খাবে! 😛
আপু দোয়া করবেন আমার জন্য। বয়সে আপনার সমান হতে হতে যেন আরও একটু সচেতন, মনের দিক থেকে আরও পরিণত আর সুন্দর-সুস্থ মানসিকতার একজন মানুষ হতে পারি। চেহারা নিয়ে চিন্তা করি না। 🙂
অদ্ভুত সুন্দর লেখা.
অনেককিছু শেখার একটা প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম নিজের সাথে 🙂
কী শিখলেন আমাদের সাথে শেয়ার করবেন
জ্বি আপু, আশা রাখি আগামীতে কখনো হবে সেটা 🙂
বরাবরের মতোই চমৎকার একটা লেখা আপু।
আমি সবসময়-ই শেখার চেষ্টা করি… সবার কাছে থেকেই, কিন্তু একটা ব্যাপারে আমার খুব কষ্ট হয়– আমার কাছের মানুষ দের মাঝে কোন ভুল দেখতে পেলে আমার অসম্ভব রকমের খারাপ লাগে, আমার সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়……
আমার শুধু মনেহয় আমি তোহ তাদের কাছের মানুষ ভাবি তাদের ভালো কাজের জন্যই, তাদের কেন এমন ভুল থাকবে?? কিন্তু মানুষ তোহ কেউই পুরো শুদ্ধ নয়……… সব কেমন যেন এলোমেলো মনেহয়………
খুব সত্যি কথা!
শিখতে চাওয়ার শিক্ষা পেলাম।
আর আপু একটা জিনস খেয়াল হল পড়তে পড়তে, আসলে কোনো শেখাই ফেলনা না।
আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তাই বলে ঃ)
নতুন করে যেন শিখতে ইচ্ছা করছে আপু্ ।
অসাধারন লেখা। 🙂
:love:
আপাতত এখন রান্নাটা শিখতে চাই :thinking: