ছায়ামূর্তির আড়াল

“ও পিয়াসু! যাচ্ছো কোথায়?”
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে আসে প্রশ্নটি।
বারবার করাঘাত করতে থাকে কানের পর্দায়,
আর ক্ষুধার্ত বাঘিনীর তাড়া খেয়ে ছোটা বনমোষের মতো ছুটতে
থাকে মানুষটি, জোরে আরও জোরে।
হাঁটু ছড়ে যায়, ঠোঁট কেটে গলগল করে বেড়িয়ে আসে কালচে নোনা রক্ত;
আজ মুক্তি চাই, মুক্তি।
নিজের আত্মা ছিঁড়ে আত্মদেহ মরা শকুনীকে খাওয়ানোর মত মুক্তি।
বুকের খাঁচা ভেঙ্গে ভেঙ্গে পিশাচ হাঙ্গরের মুখে ছেড়ে দেয়ার মত মুক্তি।
“কিন্তু কিভাবে পাবো তা? কিভাবে?”

“ওরে ও পিয়াসু! থামো না একটিবার শুধু
দেখো, রক্তকমল এনেছি তোমার জন্য”
বিষ মাখানো তীর ছুটে আসে মৃতবৎ মানুষটির দিকে-
গুলি খাওয়া সিংহের মতো পৃথিবী কাঁপানো হুংকার দিয়ে
লুটিয়ে পরে সে;
মাটি খামচে শেষ বিন্দু জল খাওয়ার জন্য হাঁচড়ে-পাঁচড়ে
লোভ জাগানিয়া দীঘির পাড়ে যায় সে,
আজলা ভরা জল নিতে গিয়ে চোখে পরে
দীঘির জলে শেষ মধ্যাহ্নের আলোয় জ্বলজ্বল করছে একটা মুখ;
ভীষণ রিক্ত, ঠোঁট বেয়ে নেমে আসা কালচে দাগে ছাওয়া সে মুখ-
এ কী সেই? আট বছর আগের ব্যস্ত শহরে শার্ট-প্যান্ট
পরে ঘুরে বেড়ানো ছেলেটি?
তবে কেন পালিয়ে বেড়ানো আর?
এই জলছাপ তো সেই একই মানুষের প্রতিরূপতার প্রমাণ!
তবে কি এই পিয়াসু ডাক, এই নিরন্তর ছুটে যাওয়া– সব মিথ্যে?
এই তো মুক্তি! এই তো সে!

walk_alone_by_str4y

বহু কষ্টে পিছন পানে ফেলে আসা পথের দিকে ফিরে চাওয়া,
হঠাৎ আর্তচিৎকার করে উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌঁড়াতে শুরু করে ছেলেটি-
“ও পিয়াসু! যাচ্ছো কোথায় আমায় ফেলে?”
পেছন থেকে নিজের ছায়া প্রশ্ন করে উঠে।
“বাঁচতে দাও আমায়, আমি বাঁচতে চাই,
তোমাকে তো আমি চিনি না! দূর হয়ে যাও তুমি আমার থেকে”
“চেন না? তবে পালিয়ে যাচ্ছো কেন?
আয়নায় নিজের মুখখানা দেখে তো অমন করে পালিয়ে যাও না;
অথচ আট বছর ধরে শুধু আমার ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো?”
“হ্যাঁ! হ্যাঁ! কারণ এই তুমি আমি না!
এ অন্য কেউ, অন্য কোন মানুষ!”
“না গো! এ তোমার ছায়া এ-ই তো তুমি!
নিজেকে দেখা ভদ্র প্রতিচ্ছবির আড়ালে তোমাকে খুন করা তুমি!
দেখ দেখ, ভাল করে, শুধু একটিবার, তবেই তো মুক্তি তোমার!”
দেহের প্রতিটি কোষ খুবলে খুলে বেরিয়ে আসে চিৎকার
যেন নিজের হৃদপিণ্ড থেকে দেহের সব রক্ত এক পলকে
ছলকে আসে মুখে; ঠোঁট বেয়ে যেন জন্ম দেবে রক্তসায়র তট-
আর পিছন থেকে ভেসে আসে রিনরিনে হাসির শব্দ,
“ও পিয়াসু…!!!”

 

 

( অনেক পুরনো একটি লেখা দিয়ে এই ব্লগে আমার যাত্রা শুরু করলাম আজ থেকে। সবাই আমার পোস্টটি কীভাবে গ্রহণ করবেন, জানি না। সবার বোঝার সুবিধার জন্য একটি ছোট সারমর্ম করে দিচ্ছিঃ

আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরে দুটো করে ছায়া থাকে। একটা শুধু সে নিজে দেখতে পায় আর অন্যটা আর সবাই দেখে। নিজের ভেতরের ছায়াটা মাঝে মাঝেই আমাদের হানা দেয়, ছোট-বড় যেকোন ভুল-ত্রুটি তুলে নিয়ে এসে চোখের সামনে হাজির করে। নিজেদের অজান্তে করে যাওয়া ছোট ভুলগুলোও মাঝে মাঝে একাকী রাতে মূর্ত হয়ে ওঠে, আমাদের কষ্ট দেয়। যখন ভুল শোধরাবার আর কোন উপায় থাকে না তখন সেই ছায়া আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়, বিবেকের অনলে দগ্ধ করে। এই সেই ছায়ার গল্প। ছায়ার হাত থেকে পালিয়ে বেড়ানো, আড়ালের এক মূর্তির গল্প। )

অহর্নিশ অশ্রুস্মিতা সম্পর্কে

যে নারী অহর্নিশি চোখে জল নিয়েও হাসতে পারে, সকল পরাজয়ের গ্লানিকে উড়িয়ে দিয়ে অশ্রু মাঝেও স্মিতা হয়- আমিই সেই নারী; 'অহর্নিশ অশ্রুস্মিতা'
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে কবিতা, সাহিত্য-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

18 Responses to ছায়ামূর্তির আড়াল

  1. দুর্দান্ত সেই ভালোলাগাটা, তোর লিখার যে আলাদা ভাবটা ছিলো সেটা আবারো খুঁজে পেলাম! ভালো লাগলো ভীষণ! :huzur:

  2. বোকা মানুষ বলেছেনঃ

    তোমাদের ভালো লেখা এখনও আমাদের চোখে জল আনে!
    তোমাদের ভালো লাগা এখনও স্বপ্ন আনে
    আমাদের ঝাপসা চোখে……………।।

  3. কৃষ্ণচূড়া বলেছেনঃ

    অসাধারণ! এত সুন্দর লিখেন কিভাবে! :clappinghands:

  4. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    “না গো! এ তোমার ছায়া এ-ই তো তুমি!
    নিজেকে দেখা ভদ্র প্রতিচ্ছবির আড়ালে তোমাকে খুন করা তুমি!
    দেখ দেখ, ভাল করে, শুধু একটিবার, তবেই তো মুক্তি তোমার!”

    :clappinghands: :clappinghands:

    তুই চইলে আসছিস 😀

    :welcome:

  5. সাদামাটা বলেছেনঃ

    “চেন না? তবে পালিয়ে যাচ্ছো কেন?
    আয়নায় নিজের মুখখানা দেখে তো অমন করে পালিয়ে যাও না;”

    পুরোটা এককথায়- দুর্দান্ত :clappinghands:

  6. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    এ অন্য কেউ, অন্য কোন মানুষ!

    ভালো লেগেছে।

    :welcome: সরবে স্বাগতম 😀 😀

  7. সামিরা বলেছেনঃ

    খুব ভাল লেগেছে। পরিচিত অনুভূতি। 🙂
    সরবে স্বাগতম! :welcome:

  8. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    সরবে স্বাগতম। :welcome:
    নিয়মিত লেখা পাবার আশা করছি। 🙂

  9. নিশম বলেছেনঃ

    দুর্দান্ত কবিতা !

    ফিনিক্স পাখির কাছে বানান ভুল ধরবার ব্যাপারটা আশা করেছিলাম !

    • ফিনিক্স বলেছেনঃ

      একটা বানান জনিত ঘটনায় কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত (আসলে মেজাজ গরম)। অচেনা কাউকে তাই প্রথমবারেই এখন আর কিছু বলে বসি না (আমার যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে)। :haturi:
      প্রথমবার হিসেবে অহর্নিশ অশ্রুস্মিতার পারফর্মেন্স তবু ভালো! 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।