ত্রাতিনা মহাকাশযানের জানালা দিয়ে দূরের লাল নক্ষত্রটা দেখতে থাকে। কালো আকাশের মাঝে হাজারো নক্ষত্রের মাঝেও ‘সূর্য’ নামের নক্ষত্রটাকে তার খুব আপন মনে হয়। একে কেন্দ্র করেই যে মানুষের সৃষ্টি হয়েছিল তা সে জানে। যদিও সূর্য ও পরিত্যক্ত পৃথিবীর সাথে মানুষের এখন আর কোন সম্পর্ক নেই, তবুও তাদের প্রতি ত্রাতিনা প্রচণ্ড আকর্ষণ অনুভব করে।
কুরু মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রণকক্ষে ঢুকে দেখে ত্রাতিনা স্থির হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ত্রাতিনার বিষণ্ণ মুখ দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে সে। বিশ বছর ধরে দু’জন একই মহাকাশযানে থাকলে সহজেই বুঝতে পারে, কখন কথা বলা উচিত আর কখন চুপ করে।
ত্রাতিনা হঠাৎ ঘুরে কুরুকে দেখতে পেয়ে চমকে ওঠে।
-কখন এসেছো?
-এইতো, কিছুক্ষণ।
-কিছু বলবে?
-আমাদের পরবর্তী গন্তব্য কোথায়?
কুরুকে দেখলে কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই, সে একজন চতুর্থ মাত্রার রোবট। তার বুদ্ধি এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা কোনভাবেই একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে কম না হলেও, প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মহাকাশযানের কমান্ডারের অনুমতি লাগে। ত্রাতিনা এই মহাকাশযানের কমান্ডার এবং একমাত্র মানুষ।
ত্রাতিনা নিজে একজন জীববিজ্ঞানী। কিন্তু, মহাকাশযানে চালানো কিছু জিনিসও তাকে শিখতে হয়েছে। যদিও ইনিকা-৪ মহাকাশযানের মতো আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তার করার মতো কিছুই নেই। বিভিন্ন গ্রহে ঘুরে ঘুরে সেখানের পরিবেশ আর জীব সম্পর্কে জেনে মানুষের বসতি স্থাপনের যোগ্য কিনা সে রিপোর্ট করতে হয়। প্রায় দশ হাজার বছর আগে মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে আসার পর এটা অনেকটাই রুটিন কাজকর্মের মধ্যে পড়ে।
-কুরু, তুমি কতদিন ধরে বেঁচে আছো?
-আমাদের জীবন নেই ত্রাতিনা, তাই বেঁচে থাকার প্রশ্নই আসে না।
-না মানে, আমি জানতে চাইছি, তুমি অ্যাকটিভেট হয়েছো কতদিন ধরে?
-৩১৭ বছর।
-তোমার বেঁচে থাকতে কষ্ট হয় না?
-আমি আগেই বলেছি, ত্রাতিনা। আমাদের বেঁচে থাকা বলে কিছু নেই।
-আমি প্রায় ৪৫০ বছর ধরে বেঁচে আছি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি।
কুরু চুপ করে ত্রাতিনার কথা শোনে। কোন জবাব দিতে পারে না।
-কুরু, পৃথিবীতে সর্বশেষ মানুষ কবে গিয়েছে?
-৬৩৮৭ বছর আগে।
-চল, এবার পৃথিবীতে গিয়ে দেখি!
কুরু ত্রাতিনার কথা শুনে চমকে ওঠে। পৃথিবীতে এতোদিন ধরে কোন মানুষ যায় নি। তাছাড়া সেখানে পৌছাতে সময় লাগবে প্রায় তিন বছর আরো। প্রত্যেক মহাকাশযানকে প্রতি ২৫ বছরে একবার ফেরত যেতে হয় মূল ঘাঁটিতে। কিন্তু, পৃথিবীতে গেলে সেটা অনেক দেরী হয়ে যাবে।
কিন্তু, মহাকাশযান কমান্ডারের নির্দেশ সে মানতে বাধ্য!
***
তিন বছর পর……
পৃথিবীর চারপাশে ঘরতে ঘুরতে ইরিনা-৪ এর জানালার কাছে বসে ত্রাতিনা মুগ্ধ হয়ে গ্রহটাকে দেখতে থাকে। একসময় নাকি এই গ্রহটা নীলচে রঙের ছিল। সেখানে নীল রঙের আকাশ ছিল, সেখানে সাদা মেঘ ভেসে বেড়াতো। গাঢ় সবুজ পাহাড় ছিল। কখনো কখনো ঝুম বৃষ্টি হতো।
এখন সেটা কালো একটা বিষণ্ণতার চাদরে ঢাকা।
-আমাদের নামতে কতক্ষণ সময় লাগবে?
-আর দু’ঘণ্টা, ১৮ মিনিট।
পৃথিবীতে নামতে ইরিনা-৪ এর কোন সমস্যাই হলো না। ত্রাতিনার বুকের ভেতর একটা প্রচণ্ড উত্তেজনা। নিরাপদ পোশাক পরে সে বের হয়ে আসে মহাকাশযান থেকে।
ত্রাতিনা ভেবেছিল, হয়তো এতো বছরে পৃথিবীতে আবার আগের পরিবেশ ফিরে এসেছে। কিন্তু, তার আশা যে পুরোটাই দুরাশায় পরিণত হয়েছে তা সে বের হয়ে ভালোই বুঝতে পারে। মানুষ পৃথিবীকে এমন অবস্থায় এনে রেখে গেছে, এটার আর আগের জায়গায় ফিরে যাবার কোন আশা নেই। ত্রাতিনার বুকের ভেতরটা দুঃখে ভরে ওঠে।
ত্রাতিনা হঠাৎ লক্ষ্য করে, আকাশ থেকে নেমে আসছে অজস্র পানির ফোঁটা! এটাই কি বৃষ্টি! যে বৃষ্টির কথা মানুষের গল্পে, গানে শুনেছে বারবার।
ত্রাতিনার মনে হয় তার দীর্ঘ জীবনের সব বিষন্নতা, দুঃখ ধুয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ধারায়।
এসিড বৃষ্টি নিরাপদ পোশাক ছেদ করে স্পর্শ করতে থাকে ত্রাতিনার শরীর। ত্রাতিনা স্থির দাঁড়িয়ে থেকে আলিঙ্গন করে বৃষ্টিকে।
মানব জাতির এই গন্তব্য এড়ানোর কোনো উপায় আছে কি? :wallbash:
এখনো ঠিকভাবে চলতে পারলে আছে নিশ্চয়ই……
WALLE মুভিটার কথা মনে পড়ে গেল। ওরকম করে যদি আসলেই সমাপ্তিটা হত, কিন্তু হওয়ার সম্ভাবনা মরতেই বসেছে। :crying: তবু মনে হয় এখনও কি সময় আছে হয়তো…
ভালো লেগেছে , তবে গল্পটা আরেকটু লম্বা হলে আরও ভালো লাগত, আরও পড়ার ইচ্ছে জেগেছিল। 🙂
এরপর লেখার সময় আরেকটু বড় করে লেখার কথা মাথায় রাখবো 🙂
সরব ব্লগে কল্পবিজ্ঞান লেখকের বেশ অভাব বোধ করছিলাম বেশ কিছু দিন। নিজে লিখতে পারি না বলে বেশ হা-হুতাশে ছিলাম। আপনি সেই থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। একটা সিরিজ চালু করলে কেমন হয়?
জোর দিয়ে বলছি কিন্তু! আরও চাই।
একমত। সিরিজ চাই। :clappinghands:
ইয়েপ্পি সিরিজ সিরিজ :happy:
কল্পবিজ্ঞান নিয়ে আগে কখনো লেখার কথা ভাবিও নি। তবে, চেষ্টা করবো আরও লিখতে…… 🙂
কল্পবিজ্ঞানের একখানা সিরিজের আবেদনপত্র জমা পড়েছে দেখলাম, আমিও একটা দিলাম।
মানবজাতির এই অবধারিত গন্তব্য এড়ানোর উপায় জানতে পারলে হতো। হয়ত উপায় আমরা জানি, কিন্তু কেউ মানবে কিনা সেই সন্দেহ আছে।
হায় আমাদের পৃথিবী, আর এই বৃষ্টি!!
আবেদন রাখার চেষ্টা করা হবে। এই তো মাত্র প্রথম কল্পবিজ্ঞান নিয়ে কিছু লিখলাম………
ভালো হয়েছে… 😀 ভালো লাগতো, আর জাফর ইকবালের ধাঁচ লাগলো কিছুটা, অবশ্য আমাদের জাফর ইকবাল এতো পড়া যে তার ছোঁয়া থাকাটা স্বাভাবিক……
আসিমভ পড়েছো নিশ্চয়ই, তার ধরন টা আমার বেশ লাগে…… 🙂
সিরিজ দাবিতে হাত তুললাম আমিও…… 😀
জাফর ইকবাল স্যারের বাংলা সাইন্স ফিকশন এ অবদান এতো বেশি যে এটা থেকে বের হতে হয়তো একটু সময় লাগবে……
সিরিজের চেষ্টা হবে 🙂
ওহ হো, বলতে ভুলে গেছি, আমি প্রচুর সাই-ফাই স্বপ্ন দেখি, গতকাল ও একটা দেখছিলাম, সেইরকম স্বপ্ন, কিন্তু বেরসিক স্যার সকাল বেলাতে ফোন করে ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে দিয়েছিল, তাই এলিয়েন দের সাথে মিট করাটা আর হলো না……
দুঃখ!!
দুঃখ, দুঃখ
সবাই জাফর ইকবালরে ফলো করলে ক্যামনে হইবো?
চেষ্টা করবো এরপর থেকে নিজস্ব ধারা তৈরী করেই লিখতে। ধন্যবাদ 🙂
সাইফাই স্বাগতম 😀 :beshikhushi:
তবে ১০০% জাফর ইকবালিয় হয়ে গেলো না?
(আমি আরও ভালো, ইউনিক লেখার আশায় বলছি)
ইউনিক লেখার চেষ্টা অবশ্যই করবো। মাত্র তো শুরু করলাম, তাই হয়তো পুরোই জাফর ইকবাল স্যারের মতো হয়ে গেছে 😳
না না। এটাই ত স্বাভাবিক।
শুরু তো হলো!
দেশে আইসা ফাটায়া লিখতে হবে। এই খানে কিছু সমস্যা হয় লিখতে 🙁
তাড়াতাড়ি দেশে আয় :dhisya:
আমার কাছে মনে হচ্ছিলো জাফর ইকবাল পড়ছি 🙂
সিরিজের জন্য হাত তুললাম, আর আশায় থাকলাম সামনের দিনে কোন সাইফাই পড়লে হয়তো মনে হবে, “আররে, এইটা তো পুরা ‘স্বপ্ন বিলাস’…” :dhisya:
😛
দেখা যাক 😀
8) 8) 8)
:thinking:
জাফর ইকবাল হোক আর যেই হোক, আমি কোন রকম করেই সাইফাই লিখতে পারি না। তাই কাউকে লিখতে দেখলে যথারীতি হিংসিত হই। 😛
অন্যান্য লেখকদের সাইফাই পড়তে শুরু করলে আপনাতেই স্টাইল তৈরি হয়ে যাবে আপনার নিজের, আমার ধারণা। অনলাইনেই প্রচুর থাকার কথা গল্প।
আমাদের বাসায় ‘কল্পবিজ্ঞানের গল্প’ নামে একটা বই আছে (সম্ভবত সেবা প্রকাশনীর), ঐ বইয়ের সাইফাই গল্পগুলো প্রথমবার পড়ে এত অবাক হয়েছিলাম! পুরোই অন্যরকম, কিছু বিদেশি গল্পের ছায়া আর কিছু অরিজিনাল গল্প ছিল ওখানে।
হঠাৎ করে সাইফাই লেখার একটা বিশাল আগ্রহ জেগেছে মনে। দেখা যাক, কতটুকু এগুতে পারি :thinking:
আরেকটু লম্বা হলে ভালো হত। বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল।
এটা সম্ভবত সরবের ২য় সাই-ফাই। প্রথমটা ছিল ব্লগার নিশমের।
আরো সাই-ফাই আশা করছি আপনার কাছ থেকে।
এরপর থেকে লিখলে মাথায় রাখবো ব্যাপারটা………
ফিনিক্স এর একটা সাই-ফাই আছে……
সিরিজ চাই! সিরিজ চাই! 😀
গল্প খুব সুন্দর হয়েছে 🙂
ছোট মুখে একটা বড় কথা বলি, ভাইয়া- আমার নিজের জাফর ইকবাল স্যারের সাই-ফাই বইগুলোর মতন নামগুলোর ব্যবহার না দেখতেই ভালো লাগে! নতুন কোন স্টাইল দেখতে বেশ ইচ্ছে করে- সাই-ফাই পড়লেই নামগুলো কেমন জানি খোঁচা দ্যায়! আমি নিজেও স্বতন্ত্রভাবে লেখার চেষ্টা করেছি এককালে, খুব বেশি না, দুয়েকটা- জাফর ইকবাল স্যারের বই এত্ত বেশি পড়ি, তার ধারা থেকে বের হওয়া কিছুটা মুশকিলের কাজই বটে। ভবিষ্যতে পুরনো লেখাগুলো সরব-এ লেখার আশা রাখি।
নিয়মিত সায়েন্স ফিকশন লিখবেন 🙂
আচ্ছা ভাইয়া! চেষ্টা করবো 🙂
সিরিজ পিলিজ ……… :crying:
সবার দেখি সিরিজ চায় :thinking: