“ বাবা, এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এইটায় ভালো করতে পারলেই হল এরপর আর কোন চিন্তা নেই, এরপরের পড়াশোনা অনেক সহজ। আর পড়তেই হবে না!!”
আমার আম্মুর খুব কমন একটা ডায়ালগ এইটা। সেই ক্লাস ফাইভ থেকে, ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষা গেলে এইটের বৃত্তি পরীক্ষাই হল শেষ কঠিন পরীক্ষা, এইট গেলে এস.এস.সি। এস.এস.সি টা কই পার হয়ে গেলাম তখন শুনি এইচ.এস.সিই নাকি একেবারে শেষ পরীক্ষা, এটাতে ভালো করলেই কেল্লা ফতে। বাবাজি মহা আনন্দে এইচ.এস.সি’র রেসাল্ট নিয়ে বাসায় আসতেই “ভর্তি পরীক্ষা”য় ভালো না করলে আসলে সব বৃথা শুনে ফেললাম। বলাই বাহুল্য যে আজও আসলে সেই শেষ পরীক্ষাটা আমি দিতে পারলাম না। (বিশাল এক দীর্ঘশ্বাস হবে)
মূলত যে কারণে নোটটা লিখতে বসা তা হল কাল এইচ.এস.সি’র রেসাল্ট। অনেকের মুখে যেখানে বিস্তৃত হাসি থাকবে অনেকের মুখ সেখানে থাকবে মলিন। হাসি-কান্নার এক মিশ্র অনুভুতির দিন হবে কাল। আমার মত অনেকেই হয়ত ধরেই নিয়েছে এইটাই জীবনের শেষ পরীক্ষা। যারা ভালো রেসাল্ট করবে তাদের জন্য আসলে কিছু বলার নেই, তাদের শুধু অভিনন্দনই জানাই আগে থেকে, তবে যারা এই তথাকথিত শেষ পরীক্ষাটায় হয়ত তেমন ভালো করবে না যা সে করতে পারত তাদের জন্য আমার কিছু কথা তো থাকবেই।
আমরা আসলে পড়াশোনা কেন করি? আচ্ছা ধর একজন ছেলে সে আসলে খুব মেধাবী। এখানে মেধাবী বলতে ক্লাসে স্যারের বলে দেওয়া লাইনটা হুবহু খাতায় কপি পেস্ট করা ‘মেধাবীর’ কথা আমি বলছি না, তারাও মেধাবী তবে আমি যেই মেধাবী ছেলের কথা বলছি সে আসলে ক্লাসের সবচেয়ে বাজে ছাত্রটি। ফিজিক্স বা ম্যাথের সেই কঠিন কঠিন ইকুয়েশনগুলো তার মাথায় ঢোকে না, ক্যামিস্ট্রির বিক্রিয়া লিখতে গেলে নিজেই জারিত হয়ে যায়, ইতিহাস বা হিসাব বিজ্ঞানের হিসাব সে কখনই মেলাতে পারে না। তো এই ছেলেটি মেধাবী কি করে হয়??
আচ্ছা কোন জায়গায় লেখা আছে এই সব বিষয় না পারলে ছেলের মেধা নাই? তুমি কি করতে পারো তা আরেকজন কিভাবে যাচাই করবে। তোমার ক্লাসের ফার্স্ট বয় হচ্ছে বিজ্ঞানের চলন্ত জাহাজ, বিজ্ঞানে তার সাথে পেরে ওঠা ভীষণ দায় কিন্তু তার মানে তো এই না যে সে তোমার মত খুব ভালো কবিতা লিখতে জানে। তাহলে তার সাথে তোমার তুলনা কিভাবে হয়? তুমিও মেধাবী সেও মেধাবী। দুজনের রাস্তাটা ভিন্ন। এখন যদি সমাজের চাপে পরে তুমিও ওর রাস্তায় হাটতে থাক তাহলে তোমার আর মেধার অপচয় হবে আর তুমিও “তুমি” হয়ে উঠতে পারবে না কখনই। আরেকটা ছেলের মত হতে গিয়ে নিজস্বতা বিকিয়ে ফেলবে। তাহলে কেন আর এই রেসাল্ট নিয়ে ফালতু চিন্তা, রেসাল্টটাকে কলেজের ঐ চার দেয়ালের মাঝেই রেখে বাসায় চলে এস। জীবনটা তোমার, শত সহস্র পরীক্ষা পরে আছে তোমার সামনে যেগুলো একান্তই তোমার পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষাগুলোতেই ভালো করাটা তোমার কাজ।
শেষ কিছু কথা-
আমাদের বাংলা স্যার একদিন বলছিলেন যে তাদের সময় নাকি যেদিন রেসাল্ট দিত তখন রেইল চলাচল বন্ধ থাকত। কারণ জিজ্ঞাস করলে বলেছিল যে যারা ভালো রেসাল্ট করত না তারা যাতে আত্মহত্যা করতে না পারে। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম রেসাল্ট ভালো না করলে এইটা কেন করবে? আমি জানি আমরা স্যারদের সময়ের ঐ বোকাগুলোর চেয়ে অনেক ভালো বুঝি, আমাদের কাছে এখন এইটা একটা সামান্য পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু না। রেসাল্ট কি হল তা দিয়ে কোন দিন কিছু যাবে আসবে না। পৃথিবীতে কোন দেশেই স্কুল কলেজে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তার ৫% ও কাজে আসে না। শিক্ষার উদ্দেশ্যই যে ঐটা না!! তুমি কি রেসাল্ট করলা শিক্ষা কি আসলে ঐটা দিতে চায়?? কখনই না। এর উদ্দেশ্য ভিন্ন। অন্য কোন একদিন এইটা নিয়ে বলব নে। আপাতত তোমাদের জন্য অনেক শুভ কামনা আর দোয়া।
স্বপ্নগুলো একান্ত তোমার, আমি বা সে কেউই এ স্বপ্নে মূখ্য না। মূখ্য হচ্ছ তুমি। নিজের স্বপ্নগুলো নিয়ে চুপচাপ এগিয়ে চল। দেখবে সফল হবেই।
রেল ঘটনা আগে কার কাছ থেকে যেন শুনেছিলাম। অনেক দিন পরে শুনে আবার মজা পেলাম। শুরু এই পরীক্ষা কেন, পৃথিবীর কোন ফর্মাল পরীক্ষা মেধার সঠিক মূল্যায়ন করে বলা যায় না। কারণ, স্রেফ কিছু পুঁথিগত বিদ্যাকে পুঁজি করেই গড়ে উঠা এই্ শিক্ষা ব্যবস্থা।
একজন সাধারণ ছাত্রের বুকে লুকিয়ে থাকা অমিত সাহস আর সম্ভাবনা মাপবে তা কোন স্কেলে?
বেশ কিছুদিন ফেসবুকে আইনস্টাইনের এক বাণী প্রচারিত হতে দেখলাম।
“প্রত্যেকেই প্রতিভাবান। কিন্তু যদি তুমি একটা মাছকে তার গাছে চড়ার ক্ষমতা দিয়ে বিচার করো, তবে সে বেচারা সারাজীবন নিজেকে এক বুদ্ধু-ঘটিরাম মনে করেই বেঁচে থাকবে।”
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
(আমাদের উচিৎ, যারা কৃতকার্য হতে পারবে না তাদেরকেও অভিনন্দন জানানো, পুনরায় চেষ্টা করবে, এই জন্য।)
“প্রত্যেকেই প্রতিভাবান। কিন্তু যদি তুমি একটা মাছকে তার গাছে চড়ার ক্ষমতা দিয়ে বিচার করো, তবে সে বেচারা সারাজীবন নিজেকে এক বুদ্ধু-ঘটিরাম মনে করেই বেঁচে থাকবে।”
অসাধারণ কথা যদিও আইনস্টাইন বেচারা এই কথা বলেছিলেন কিনা কে জানে ? :happy:
🙂
আমারও সন্দেহ আছে। তবে নিশ্চিত হবার কোন তরিকা জানা নেই। 🙁
শুরুটা দারুণ। আন্টির কথা শুনে মজা পেলাম। 😀
তোমার লেখা পড়ে তো ফাঁকিবাজির ইচ্ছা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো! পরীক্ষায় এরপরে লাড্ডুগুড্ডু হলে সবাইকে বলবো অক্ষরের দোষ। 😛
😛
ভালো লিখেছো,তোমার লেখার হাত ভালো,চালিয়ে যাও :)।
অনেক থ্যাঙ্কস ভাইয়া 🙂
:yahooo:
সুন্দর একটা লেখা হইছে
ছবি প্যারা ঠিক ঠাক করে দিলে অনেক ছাত্রের কাছে পৌঁছাবে!
ধন্যবাদ ভাইয়া , কিন্তু ছবির কথাটা ঠিক বুঝলাম না ! 🙂