তোমরা যারা আজ HSC পরীক্ষার রেজাল্ট পেলে, তাদের জন্যে………………………

1.

আজ তোমাদের HSC পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।

বর্ষণমুখর এই মেঘলা দিনে  হলে  বসে ভাবছি- দেখতে দেখতে কিভাবে ৫ টি বছর পেরিয়ে গেল। আজ থেকে ৫ বছর আগের এই রকম কোন দিনে তোমাদের মত আমাদেরও HSC পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছিল। আজকের মত সেদিনও বেশ বৃষ্টি ছিল, কলেজে রেজাল্ট আনতে গিয়ে ভিজে একদম চুপচুপে হয়ে গিয়েছিলাম। নোটিশ বোর্ডের সামনে আমরা যখন প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে রেজাল্ট দেখছি সেই সময়ে সেকেন্ড ইয়ারের ছেলেরা ব্যস্ত দলবেঁধে “V” সাইন দেখাতে আর টিভি ক্যামেরার সামনে একের পর এক ইন্টারভিউ দিতে।

নটরডেমে প্রতিবছর এই ঘটনাই ঘটে। কারন এখানে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস থাকে বিকেলে- রেজাল্ট প্রকাশের সময় ছেলেরা দলবেঁধে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে। তারপরে পিঠে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে উল্লাস প্রকাশ করে, চিৎকার চেঁচামেচি করে- ভাল রেজাল্টে নিজের অনুভূতি জানিয়ে ইন্টারভিউ দেয়-

“প্রথমেই আমার ভাল রেজাল্টের জন্যে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি—-আমি প্রতিদিন ১৫ ঘণ্টা করে পড়তাম—নিয়মিত বই পড়াই আমার সাফল্যের কারন—- “

০৬ ব্যাচের ভাইয়াদের সময় আমি তিনটা টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিয়েছিলাম। তার একটা দেখে আমার এক দুঃসম্পর্কের মামা খুব কষ্ট নিয়ে ফোন দিয়ে বলেছিলেন-“ এত বড় একটা খুশির খবর, তাও টিভি দেখে জানতে হয়- একটা ফোন করেও জানালি না- আমরা কি এতই পর?”

সেদিন ধাক্কাধাক্কিতে আমার হাতের ঘড়ি হারিয়েছিল, পায়ের স্যান্ডেল ছিঁড়েছিল আর পেছন থেকে কেউ একজন টান দিয়ে খোদ পরনের জামাটাই ছিঁড়ে দিয়েছিল। সেই ছিঁড়া শার্ট, খালি পা নিয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় যখন বাসায় পৌঁছলাম তখন আমার ফুফুর প্রথম প্রশ্নটাই ছিল-“ কিরে কার সাথে মারামারি করে এলি?”

আর আমাদের সময় এর কিছুই করি নি। রেজাল্ট দেখে আস্তে করে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এলাম। তারপরে ৬ নাম্বার বাসে চেপে বসলাম ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে। সমস্ত কলেজে জুনিয়র ছেলেরা যখন আমাদের হয়ে উল্লাস করছে তখন আমি মালিবাগ মোড়ে বিশাল জ্যামে। আলো ঝলমলে সন্ধ্যায় জ্যামে বসে বসে তখন আমি ভাবছিলাম- রেজাল্ট তো পেলাম, বুয়েট চান্স হবে তো? বুয়েটে না হোক, ঢাকা ভার্সিটি? ভালো কোথাও ভর্তি না হতে পারলে তো এই রেজাল্ট বৃথা হয়ে যাবে।

2.

যারা ভাল করেছো তাদের অভিনন্দন।

অনেকে তোমাদের সাফল্যকে ম্লান করে দিতে চাইবে- বলবে এই সব প্রথাগত পরীক্ষা দিয়ে মেধা যাচাই হয় না, এতে এই সমস্যা, সেই সমস্যা। তারা পুঁথিগত বিদ্যার অসারতা তুলে ধরার জন্যে রবীন্দ্রনাথ বা অন্য অনেকের উদাহরণ দেবে। তাদেরকে কথাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নিজের সাফল্যের আনন্দকে মাটি করে দিও না। মনে রেখো সবাই রবীন্দ্র- নজরুল নয়, প্রতিঘরে প্রতিদিন এই সব মহাপুরুষ জন্মায় না। আমরা সাধারণ মানুষ- আমাদের সাথে বার বার তাদের তুলনা যথার্থ নয়।

সাফল্য- হোক সে কোন ক্লাস-টেস্টে কিংবা স্কুলের কোন রচনা প্রতিযোগিতায়- তা সবসময়ই আনন্দের, সফল সবসময় প্রশংসার দাবিদার। তুমি ভাল করেছো মানে তুমি ব্যাপারটা জানো- এবং সুন্দর করে লিখতে পেরেছ। অন্য অনেকেই তোমার চেয়ে ভাল জানতে পারে- কিন্তু তারা সেটা ঠিকমতো লিখতে পারে নি- সেটা তাদের ব্যর্থতা।শুধু জানাটাই সব নয়- অর্জিত জ্ঞান ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারাটাও শিক্ষার একটা অংশ।

আজ যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা এর যোগ্য বলেই পেয়েছে- খাতায় না লিখে কেউ জিপিএ-৫ পায় না। তোমাদের কারো সাফল্যকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। মনে রেখো, তোমাদের গত দুই বছরের অনেক সাধনা, অনেক ত্যাগ আর অনেক কষ্টের ফল এই রেজাল্ট। তোমরা যখন টেবিলে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা  পড়েছ তখন অনেকে খেলাধুলা, আড্ডাবাজি কিংবা ফেসবুকিং করে সময় নষ্ট করেছে। আজ যেমন তোমরা ভাল করেছো- তেমনি তারা কেউ কেউ খারাপ করেছে। তারা তোমার চেয়ে মেধাবী হতে পারে কিন্তু তারা অমনোযোগী, পড়ালেখার ব্যাপারে সিরিয়াস না- তারা নিয়মানুবর্তী না। মনোযোগ, সিরিয়াসনেস, সময়ের মূল্য বুঝতে পারাও মানুষের খুব প্রয়োজনীয় গুণাবলী- শুধু মেধা দিয়ে কিছু হয় না।

তবে এই সাফল্যে একদম আত্মহারা হয়ে গেলে চলবে না। দু একদিন আনন্দ করে আবার খুব দ্রুত জীবনে ফিরে আসো।

আমাদের জীবনটা একটা চলমান পরীক্ষাগার। এখানে থেমে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রতি মূহুর্তে আমাদের ছুটে চলতে হয়- যে একটু ঢিল দেয়, যে একটু থেমে যায়- সেই পিছিয়ে পড়ে। তোমরা যখন কম্পিউটারে গেম খেল দেখবে সেই সব গেমে বিভিন্ন লেভেল থাকে। এক লেভেল কমপ্লিট হলে আরেক লেভেল শুরু হয়। কেউ যদি এক লেভেল খুব ভাল খেলে তারপরে পরবর্তী লেভেলে কম গুরুত্ব দেয় তাহলে সে সেখান থেকেই ছিটকে পড়ে যায়- আর সামনে যেতে পারে না। এখানে প্রতিটি লেভেল তোমাকে নেক্সট লেভেলে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে। একজন দক্ষ এবং সফল খেলোয়াড় প্রতিটি লেভেলকে সমান গুরুত্ব দিয়ে খেলে। এটাই তার সফলতার রহস্য।

এই রকম আমাদের জীবনেও বিভিন্ন ধাপ থাকে। এক ধাপের সাফল্য তোমাকে  আরেকটি নতুন ধাপে পৌঁছে দেয়- আরেকটি নতুন পরীক্ষার মুখোমুখি করে। শুরু হয়েছিল ভালো স্কুলের জন্যে ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করার লক্ষ্য নিয়ে। তারপরে SSC তে ভাল করতে হয়েছে- এস এস সি এর ভাল রেজাল্ট তোমাকে ভাল কলেজে ভর্তির সুযোগ দেবে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে সেই আশায়। কলেজের দুই বছর তোমার এই রেজাল্ট মুখ্য ছিল। এখন আবার H.S.C এর রেজাল্টের পরে সেটা গৌণ হয়ে যাবে। ভার্সিটিতে ভর্তির পর সবাই তোমার তখন কার সিজিপিএ জানতে চাইবে- এখন কিন্তু কেউ আমার কাছে আমার এস এস সি কিংবা এইচ এস সি এর রেজাল্ট জানতে চায় না, বুয়েটের রেজাল্ট জানতে চায়।

শুধু মাত্র একটা এইচ এস সি পরীক্ষার ভাল রেজাল্টের সুদে তোমার সারাজীবন কাটবে না- শুধু জীবন যুদ্ধে কিছুটা সময়ের জন্যে তোমাকে এগিয়ে রাখবে।

তোমার সাফল্যের জন্যে অভিনন্দন। এই সফলতা তোমাকে অহংকারী না করুক- অলস না করুক। বরং আগের চেয়ে আরও কঠোর পরিশ্রমী আর উচ্চাভিলাষী করুক। সামনের পরীক্ষাগুলোর জন্যে এর চেয়ে ভাল প্রিপারেশন নিতে আগ্রহী করুক- সেই কামনা থাকলো।

 3.

যারা ভালো করতে পারো নি তারা ভেঙ্গে পড়ো না।

মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু বেশিক্ষণ মন খারাপ করে থেকো না। একটা পরীক্ষায় খারাপ করা মানে না যে তুমি খারাপ ছাত্র। যারা ভাল করেছে তারা সবাই ভাল- কিন্তু যারা খারাপ করেছে তাদের সবাই খারাপ নয়, তাদের ভেতরেও অনেক ভাল রয়েছে। হতে পারে তুমি সেই একজন।

ধরো তুমি খুব ভাল দৌড়াও, কিন্তু তোমার পাড়ায় একটা দৌড় প্রতিযোগিতার আগের দিন তুমি পায়ে ব্যথা পেলে। পরের দিন সেই ব্যথা পায়ে দৌড়ে খারাপ করে কি হতাশ হয়ে পড়বে? নাকি পরবর্তী প্রতিযোগিতার আগের দিন সাবধান থাকবে যাতে ব্যথা না পাও? দ্বিতীয়টাই মনে হয় করা উচিত।

আমার একটা বন্ধু ছিলো- তুখোড় ভাল ছাত্র। ক্লাস ফাইভে, এইটে ট্যালেন্ট-পুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এস এস সি তে গোল্ডেন। এইচ এস সি পরীক্ষার কয়েকদিন আগে তার গার্ল-ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেক আপ হয়েছিল। এইচ এস সি তে সে জিপিএ- ৪.৫ পেয়েছিল। এরকম এক্সিডেন্ট যে কারোই হতে পারে।

তোমার রেজাল্ট খারাপের পেছনে এরকম শত কারন থাকতে পারে। প্রাইভেট টিউটর ভাল ছিলো না, কলেজে পড়ায় নি, অসুস্থ ছিলে, মনোযোগ ছিলো না। বাবা মা ছেড়ে মেসে ছিলে, মেসের পরিবেশ ভাল ছিলো না এই রকম অনেক কারন হয়তো ছিলো। আমি জানি তোমার যা রেজাল্ট তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করার ক্ষমতা তোমার আছে। এই বার সে ক্ষমতা দেখাতে পারো নি তো কি হয়েছে- সামনে তো আরও অনেক সুযোগ আছে, তখন দেখিও।

রাজু নামে একটা ছেলেকে আমি চিনি। রংপুরের খুব প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে। প্রথমবার সে ঠিকমতো পড়ালেখা না করার কারনে সে মাত্র জিপিএ-৪.০০ পায়। রেজাল্টের পরে তার খেয়াল হয় যে ভুল করে ফেলেছে।এলাকার এক কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েও পরের বার পরীক্ষা দিয়ে সে জিপিএ-৫ পায় এবং বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় ও প্রথমদিকে অবস্থান করে নেয়।

আরেকটি ছেলেকে চিনি -মাসুম, যার বুয়েটে ভর্তির পয়েন্ট আসে নি- কোন কারনে রেজাল্ট খারাপ হয়েছিল। কিন্তু সে হতাশ হয়নি। ঢাকা ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় সে প্রথমদিকে ছিল এবং এখনো সেখানে তার রেজাল্ট ভালো।

এগুলোকে উদাহরণ হিসেবে নাও। কখনো হতাশ হবে না। রাজু যদি হতাশ থাকতো তা হলে তার অবস্থান হতো রংপুরের প্রত্যন্ত এক ডিগ্রী কলেজে। নিজের উপর বিশ্বাস ছিলো- সে কঠোর পরিশ্রমে আজ দেশ সেরা এক বিদ্যাপীঠে-সারা পৃথিবীর দরজা তার সামনে খুলে গেছে। সে তার জীবনকে তার মত করে বদলে নিয়েছে- তোমার জীবনকেও তুমি বদলে নাও। মাসুম যদি রেজাল্ট পেয়ে হতাশ হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দিতো সে হয়তো ঢাকা ভার্সিটিতে এত ভাল সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারতো না।

প্রাচীন ভারতে এক মুনি আর এক শীষ্য ছিলো। শীষ্যটি কোন ভাবেই জ্ঞানার্জন করতে না পারায় মুনি তাকে ত্যাগ করে দিল। তখন দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে সে হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে এক পুকুর-ঘাটে বসে পড়লো। সেই পুকুর-ঘাটের বাধানো মেঝেতে একটা গোলাকার গর্ত দেখে সে কৌতূহলী হল। কিছুক্ষণ পরে এক গৃহবধূ কলসি নিয়ে ঘাটে আসলে সে তাকে ঐ গর্তের কারন জিজ্ঞেস করলো। বধূটি জানালো যে প্রতিদিন কলসিতে পানি ভরে সে ওখানে রাখে। অনেক দিন যাবত কলসির ঘষা খেয়ে ঘাটের এই গোলাকার গর্ত। শীষ্য ভাবল অনেক দিন ধরে যদি একটি কলসির ঘষায় পাকা মেঝেতে এই রকম গর্ত হতে পারে তাহলে পরিশ্রম করে লেগে থাকলে আমি কেন বিদ্যার্জন করতে পারবোনা? এর পরে সে মুনির কাছে ফিরে গেলো এবং পরবর্তীতে সে অনেক বিদ্বান হয়েছিল।

হতাশা জীবনী শক্তি-নাশিনী- হতাশ হওয়া যাবে না। দেখো তোমাদের জন্যে বিল গেটস কি বলেছে-

I failed in some subjects in exam, but my friend passed in all. Now he is an engineer in Microsoft and I am the owner of Microsoft.”

― Bill Gates

খারাপ করেছো বলে হাল ছেড়ে দিও না। ফাইট ইট ব্যাক। আজ যারা খারাপ করার কারনে তোমায় পাত্তা দিচ্ছেনা, সামনে তাদের দেখিয়ে দাও-

জীবনে সাফল্য ব্যর্থতা থাকবেই। যে আজ ব্যর্থ সে প্রতিবার এমন ব্যর্থ হবে, আজ যে সফল সে চিরদিন সফল থাকবে এটা ভুল ধারনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা চিরস্থায়ী কিছু নয়। ওয়াল্ট ডিজনিকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল তার ক্রিয়েটিভিটি নেই বলে। পরবর্তীতে ডিজনীল্যান্ড তৈরি করে সে দেখিয়েছে তার ক্রিয়েটিভিটি অন্য অনেকের চেয়ে অনেক বেশি।বিল গেটস অনার্স পাস করতে পারে নি- আজ অনেক অনার্স  ফার্স্ট ক্লাস তার অধীনে চাকরি করে- সে লেখাপড়ায় ব্যর্থ হয়েছিল কিন্তু ব্যবসায় নয়। আমেরিকার বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন  আটবার নির্বাচনে হেরেছিলেন।

আব্রাহাম লিংকন সম্বন্ধে এই লেখাটা পড়:

Abraham Lincoln Didn’t Quit

Probably the greatest example of persistence is Abraham Lincoln. If you want to learn about somebody who didn’t quit, look no further.

Born into poverty, Lincoln was faced with defeat throughout his life. He lost eight elections, twice failed in business and suffered a nervous breakdown.

He could have quit many times – but he didn’t and because he didn’t quit, he became one of the greatest presidents in the history of our country.

Lincoln was a champion and he never gave up.

খ্যাতিমান বাস্কেটবল খেলোয়াড় মাইকেল জর্ডান কে ভার্সিটি টিমে খেলতে নেয়া হয়নি শুধুমাত্র সে পর্যাপ্ত লম্বা নয় এই অজুহাতে- পরবর্তী জীবনে সে বাস্কেটবলের এত বড় তারকা হয়েছে যে এখন বাস্কেটবল আর জর্ডান সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Winston Churchill  তার ভাষণে Harrow School এর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন:

‘Never give in. Never give in. Never, never, never, never–in nothing, great or small, large or petty–never give in, except to convictions of honor and good sense. Never yield to force. Never yield to the apparently overwhelming might of the enemy.’

আমিও তাই বলি- “নেভার গিভ ইন”- হাল ছেড়ো না বন্ধু।

 4.

সবার জন্যে:

কয়েক বছর আগে কোন এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হয়েছিল তাদের জীবনের লক্ষ্য কি? সবাই উত্তর দিয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, বিজ্ঞানী এইসব। কিন্তু একজন বলেছিল সে জীবনে ভাল মানুষ হতে চায়- ভালো মানুষ হওয়াটাই তার জীবনের লক্ষ্য।

আমিও তাই বলি- জীবনে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার যাই হও না কেন, ভাল মানুষ হতে চেষ্টা করো। এটাই আসল। আমাদের দেশে প্রতিভাবান প্রফেসর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা অনেক আছে- তারপরেও আমরা পিছিয়ে আছি শুধু এই ভাল মানুষীর ঘাটতির কারনে। তুমি বিদ্ধান হয়ে যদি সুজন হতে না পারো- তা হলে সব নষ্ট। তুমি হবে সেই ইঞ্জিনিয়ার যে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে দেয়, সেই ডাক্তার যে ক্লিনিক থেকে টাকা খেয়ে মাথা ব্যথায় পায়ে এক্সরে করতে দেয়।আজ যেমন তু্মি তাদের ঘৃণা করো- সেদিন এমন সবাই তোমাকে ঘৃণা করবে, আর মানুষের ঘৃণা নিয়ে বেচে থাকা ভাল কিছু নয়।

সফল হও কিংবা ব্যর্থ হও- দিন শেষে আনন্দে থাকার, সুখে থাকার চেষ্টা করো। জীবন একটা উপহার। উপহারটা দু হাত বাড়িয়ে নাও- উপভোগ করো। সাফল্য, ব্যর্থতা এসব থাকবেই- মন ভারী করে রাখার কিছু নেই। ঠিকমতো কাজ গুলো করো- সফল হও কিংবা ব্যর্থ হও, চিন্তিত হয়ো না।

ভালর কোন শেষ নেই- এটা একটা আপেক্ষিক বিষয়। তোমাদের কেউ কেউ আছে যে পাস করতে পারলেই খুশিতে একাকার হবে, আবার কেউ কেউ গোল্ডেন মিস হল বলে মন খারাপ করে বসে থাকবে। আমার মনে হয় যে গোল্ডেন মন খারাপ করে দেয় তার চেয়ে আনন্দদানকারী পাসও অনেক ভাল। কুড়ে ঘরে থাকি আর প্রাসাদে থাকি আমার ব্যক্তিগত সুখটাই আসল।

দিনশেষে এই সুখে থাকাটাই দরকার-বাকি সব মিছে।

 

—————————-

মিজানুর রহমান পলাশ
নজরুল ইসলাম হল, বুয়েট
facebook/logical.palash

মিজানুর রহমান পলাশ সম্পর্কে

এখানে রাত্রি নামে, উড়ে যায় সাদা বক/ জোনাক পোকায় চড়ে স্বপ্ন আলো/ দেখেনা সে মালতী লতা, পলাশ ফুলের শোভা/ কিশোরীর কালো চোখ, আধার কালো !/
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে ইতিবাচক, চিন্তাভাবনা, সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

9 Responses to তোমরা যারা আজ HSC পরীক্ষার রেজাল্ট পেলে, তাদের জন্যে………………………

  1. মিজানুর রহমান পলাশ বলেছেনঃ

    hsc -2012 যারা বিভিন্ন ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেবে তাদের জন্যে আমার আগের একটি লেখাঃ
    HSC- 2012, যারা ভর্তি হতে চাও বুয়েট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি সহ অন্য কোথাও—

  2. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    অসাধারণ । অসাধারণ লাগল। এমন লেখা অনেকদিন পড়ি নি।

    নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা আসলে জুনিয়রদের প্রচন্ড উদ্যমী করে দিতে পারে। আমার নিজেরই এখন একটা কিছু করে ফেলবো বলে মনে হচ্ছে।

    আসলে তো নিয়ম ওটাই। ব্যক্তিগত সুখ। তবে স্বপ্নটা হওয়া চাই অনেক বড়।
    এতটা বড়, যাতে সেই স্বপ্নের দিকে তাকালেই মন ভাল হয়ে যায়

    (আগের লেখার লিংকটা লেখার সাথে দিলে বোধহয় আরো ভাল হতো। এসব লেখার আকর্ষন কখনো ফুরিয়ে যায় না)

  3. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    অসাধারণ লেখা…ভালো মানুষ হতে চাওয়ার ইচ্ছা থাকাটা সবচেয়ে বড়।

  4. মুবিন বলেছেনঃ

    সময়োপযোগী এই লেখাটার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

  5. সামিরা বলেছেনঃ

    খুব ভাল লাগলো ভাইয়া। কাচ্চাবাচ্চাদের কাজে লাগবে আশা করি। 😀

    আপনাদের কলেজের কাহিনীটা তো সেইরকম! 😛

  6. নিলয় বলেছেনঃ

    দারুণ লেখা! 😀

  7. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ক।

    সবাইকে অনুরোধ করি ছড়িয়ে দিতে।

  8. শিমন বলেছেনঃ

    অসাধারণ, অসাধারণ একটা লেখা।
    প্রচন্ড ইন্সপায়ারিং এবং এনালিটিকাল । চালিয়ে যাও। :guiter:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।