[তুরস্কের বিখ্যাত লেখিকা এলিফ শাফাক ((http://en.wikipedia.org/wiki/Elif_%C5%9Eafak)) তুর্কী আর ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেন। এ পর্যন্ত বারোটি বই লিখেছেন তিনি, যার মধ্যে আটটি হল উপন্যাস। ত্রিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর লেখা। ২০১০ সালে TED অক্সফোর্ডে তাঁর দেওয়া বক্তৃতার অনুবাদ এটা।]
আমি একজন গল্পকার। আমার কাজই এটা – গল্প বলা, উপন্যাস লেখা। আজও তাই করবো, আপনাদেরকে গল্প বলার শিল্প আর অতিপ্রাকৃত এক সৃষ্টি ‘জ্বিন’দের নিয়ে কিছু গল্প শোনাবো। তবে তার আগে, নিজের জীবনের কিছু গল্প ভাগাভাগি করে নিতে চাই আপনাদের সাথে। সেজন্য শব্দ তো বটেই, ‘বৃত্ত’ নামের অতিপরিচিত এক জ্যামিতিক আকৃতির সাহায্যও নেব আমি। তাই আমার আজকের বক্তব্যে আপনারা বেশ কিছু বৃত্তের দেখা পাবেন।
ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে এক তুর্কী পরিবারে আমার জন্ম। জন্মের পরপরই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়, আর আমি মা-র সাথে তুরস্কে ফিরে আসি। তখন থেকেই একলা মায়ের(single mother) একমাত্র সন্তান হিসেবে বড় হই আমি – সত্তুরের দশকে আঙ্কারায় যেটা কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। আমাদের চারপাশে সব বড় বড় পরিবার, যেগুলোর কর্তা ছিলেন বাবারা – তাই মাকে আমি শুরু থেকেই দেখেছি একটা পিতৃতান্ত্রিক পরিবেশে থাকা ডিভোর্সি হিসেবে। পুরোপুরি বিপরীত দু’ধরনের নারীত্ব দেখে বড় হয়েছি আমি; যেখানে একদিকে ছিলেন আমার মা – শিক্ষিত, সেক্যুলার, আধুনিক, পশ্চিমা চিন্তাচেতনার এক তুর্কী নারী; অন্যদিকে ছিলেন নানী (মায়ের পাশাপাশি তিনিও আমার দেখাশোনা করতেন) – অপেক্ষাকৃত আধ্যাত্মিক, কম শিক্ষিত আর অবধারিতভাবেই কম যুক্তিবাদী একজন মানুষ। যিনি কফির তলানিতে ভবিষ্যদ্বাণী খুঁজতেন আর অশুভ শক্তিকে তাড়াতে সীসা গলিয়ে অদ্ভুত সব আকৃতি দিতেন।
আমার নানীর কাছে অনেক লোক আসতো; কারো মুখভর্তি ব্রন, কারো হাতভরা আঁচিল। প্রত্যেকের বেলাতেই তিনি আরবিতে কী সব যেন বলতে বলতে একটা লাল আপেল নিয়ে, তাতে যতগুলো আঁচিল সারাতে চান ঠিক ততগুলো গোলাপের কাঁটা গুঁজে দিতেন। তারপর গাঢ় কালিতে আঁকা বৃত্ত দিয়ে ঘিরে দিতেন প্রতিটা কাঁটাকে। এক সপ্তাহ পর রোগীরা আবার ফিরে আসতো, উন্নতি হয়েছে কিনা সেটা দেখাতে। এখন ব্যাপার হচ্ছে, যদিও এতজন বিজ্ঞানী আর উচ্চশিক্ষিত লোকের মধ্যে আমার এমন কথা বলা ঠিক হবে না, কিন্তু আমি কখনোই কোন মানুষকে আমার নানীর কাছ থেকে অসন্তুষ্ট কিংবা পুরনো অসুখ নিয়ে ফিরে যেতে দেখি নি। কীভাবে এমনটা করেন, সেটা আমি জিজ্ঞেস করেছি নানীকে। কারণটা কি প্রার্থনার শক্তি কিংবা এমন কিছু? “প্রার্থনার সুফল তো আছেই,” তিনি উত্তর দেন, “তবে বৃত্তের গুণাগুণকেও অস্বীকার করার জো নেই।”
তাঁর কাছ থেকে আরও অনেক কিছুর সাথে এই মূল্যবান জিনিসটাও শিখেছি আমি – জীবনে যদি কোন কিছুকে ধ্বংস করে দিতে চান, সেটা ব্রন হোক, আঁচিল হোক কিংবা একজন জলজ্যান্ত মানুষের আত্মা, তবে দরকার হচ্ছে তাকে পুরু একটা দেওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা। ভেতরে সে তখন শুকিয়ে মরে যাবে। আজকাল আমরা সবাই কোন না কোন সামাজিক অথবা সাংস্কৃতিক বৃত্তের ভেতরে থাকি। একটা নির্দিষ্ট পরিবার, জাতি, শ্রেণীতে আমাদের জন্ম। কিন্তু এই গণ্ডির বাইরে আরও যে সব পৃথিবী, সেগুলোর সাথে যদি আমাদের কোন যোগাযোগ না থাকে – তাহলে আমরাও হয়তো একসময় সেরকম শুকিয়ে মারা পড়বো। আমাদের কল্পনার জগৎ সঙ্কুচিত হতে থাকবে, হৃদয়ের ব্যাপ্তি কমে যাবে, মনুষ্যত্বেরও ক্ষয় হবে – যদি আমরা নিজেদের সংস্কৃতির বলয় থেকে বের হতে না পারি। আমাদের বৃত্তের ভেতরের সব মানুষ – পরিবার, প্রতিবেশী, সহকর্মী, বন্ধু – সবাই যদি ঠিক আমাদের মতই হয়, তার মানে আমরা আয়নাঘেরা একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।
তুরস্কে আমার নানীর মত নারীরা আরও একটা কাজ করতেন – সেটা হচ্ছে মখমল দিয়ে আয়না ঢেকে রাখা কিংবা দেওয়ালে উলটো করে আয়না ঝুলিয়ে রাখা। এই রীতির উৎস হচ্ছে পুরনো একটা পুবদেশীয় বিশ্বাস – যে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে খুব বেশি সময় তাকিয়ে থাকা ভাল নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজকের এই বিশ্বায়িত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপদগুলোর একটা হচ্ছে এই – সমমনাদের ভিড়ে বেঁচে থাকা। মুক্তমনা বলেন আর রক্ষণশীল, সংশয়বাদী কিংবা বিশ্বাসী, ধনী অথবা দরিদ্র, পূর্ব কি পশ্চিম – সবখানেই হচ্ছে এমনটা। শুরুতে আমরা নিজেদের মিলের ওপর ভিত্তি করে কিছু দল তৈরি করি, আর তারপর অন্য সব দল সম্পর্কে একটা গৎবাঁধা(stereotyped) মতামত দিতে থাকি। আমার মতে, এসব সাংস্কৃতিক গণ্ডিকে তুচ্ছ করার একটা উপায় হচ্ছে গল্পবলার শিল্প। গল্প সীমানা ভাঙতে পারে না সত্যি, কিন্তু আমাদের মানসিক দেওয়ালে ছিদ্র তৈরি করতে পারে। যেই ছিদ্র দিয়ে আমরা বাইরের পৃথিবীর ঝলক দেখতে পাই, কখনো হয়তো সেটা পছন্দও করি।
আট বছর বয়স থেকে গল্প লিখতে শুরু করি আমি। মা একদিন ফিরোজা রঙের একটা ডায়েরি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন, জানতে চাইলেন আমি দিনলিপি লিখতে ইচ্ছুক কিনা। যদ্দুর মনে পড়ে, আমার মানসিক সুস্থতা নিয়ে তাঁর কিছুটা উদ্বেগ ছিল সে সময়ে। বাসায় আমি সারাক্ষণ গল্প বলতাম ভাল কথা, কিন্তু সেই গল্প শোনাতাম আমার কল্পিত বন্ধুদেরকে – যেটা আশঙ্কার কারণ ছিল। আমি এতটাই অন্তর্মুখী বাচ্চা ছিলাম যে কিনা রঙপেন্সিলদের সাথে গল্প করতো আর কোন জিনিসের সাথে ধাক্কা খেলে সেটার কাছে দুঃখ প্রকাশ করতো। মা তাই ভেবেছিলেন আমার প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা আর অনুভূতিগুলো লিখে ফেললে হয়তো কিছুটা কাজে দেবে এ অবস্থায়। তিনি যা জানতেন না, তা হচ্ছে আমার প্রচণ্ড একঘেয়ে এই জীবন নিয়ে আমি আর যাই করি – এটার কথা লিখতে চাই না। এর বদলে আমি অন্য মানুষদেরকে নিয়ে, আর এমন সব ঘটনা নিয়ে লিখতে শুরু করলাম যা আগে কখনো ঘটে নি। গল্পলেখার যে আজীবন আসক্তি আমার, তা তখন থেকেই শুরু হল। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, গল্প আমার জন্য শুরু থেকেই যতটা না নিজের জীবনের ছাপ নিয়ে, তার চাইতে অনেক বেশি অন্য সব জীবনে, অন্য সব সম্ভাবনায় আমার যাত্রা নিয়ে। আর একটু অপেক্ষা করুন, একটা বৃত্ত এঁকেই আমি আবার এইখানে ফিরে আসছি।
ঠিক এ সময়েই আরেকটা ঘটনা ঘটলো। মা একজন কূটনৈতিক হয়ে উঠলেন। ফলে নানীর এই ছোট্ট, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, মধ্যবিত্ত গণ্ডি থেকে আমি চলে এলাম মাদ্রিদের একটা অভিজাত, আন্তর্জাতিক স্কুলে, সেখানকার একমাত্র তুর্কী শিক্ষার্থী হিসেবে। আমি যেটাকে “বিদেশি প্রতিনিধি(representative foreigner)” বলি, তার সাথে আমার এখানেই প্রথম পরিচয়। আমাদের ক্লাসে সব দেশেরই ছেলেমেয়ে ছিল, তারপরও এই বৈচিত্র্য কোন বিশ্বজনীন(cosmopolitan), সাম্যবাদী ক্লাসরুম গণতন্ত্রের কারণ হতে পারে নি। বরং তা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছিল যেখানে কাউকে স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে দেখা হত না, ভাবা হত আরও বড় কিছুর প্রতিনিধি হিসেবে। আমাদের এই ছোটখাটো জাতিসংঘের মত অবস্থাটা বেশ মজার ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন জাতি কিংবা ধর্মকে নিয়ে পৃথিবীর কোথাও নেতিবাচক কিছু ঘটতো। কারণ তখন, ঐ গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী বাচ্চাটাকে অবিরাম নির্মম টিটকারি আর অপমানের শিকার হতে হত। ব্যাপারটা আমি খুব ভাল করেই জানি, কারণ ঐ স্কুলে থাকার সময় আমার দেশে সামরিক শাসন শুরু হয়, আমার জাতির এক বন্দুকধারী আরেকটু হলেই পোপকে মেরে ফেলছিল আর ‘ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায়’ তুরস্কের পাওয়া পয়েন্ট ছিল শূন্য।
ঐ দিনগুলিতে আমি প্রায়ই স্কুল ফাঁকি দিতাম, আর নাবিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। সাংস্কৃতিক একীকরণ (stereotype) কেমন হয় সেটাও আমি তখনই জেনেছি। অন্য বাচ্চারা আমাকে “মিডনাইট এক্সপ্রেস” ((http://en.wikipedia.org/wiki/Midnight_Express_(film))) ছবিটার কথা জিজ্ঞেস করতো যেটা আমি কখনো দেখি নি; জানতে চাইতো আমি দিনে কতগুলো সিগারেট টানি (তাদের ধারণা ছিল তুর্কী মাত্রই মারাত্মক ধূমপায়ী); আর ভাবতো কত বছর বয়স থেকে আমি চুল ঢাকতে শুরু করবো। জানলাম, আমার দেশকে নিয়ে মূল তিনটা স্টেরিওটাইপ হচ্ছে এই – রাজনীতি, সিগারেট আর পর্দা। স্পেনের পর আমরা জর্দান, জার্মানি আর শেষে আবার আঙ্কারায় ফিরে গেলাম। যেখানেই গেছি, আমার মনে হয়েছে কল্পনাই হচ্ছে একমাত্র স্যুটকেস যেটাকে আমি যেখানে খুশি নিয়ে যেতে পারি। শেকড়, চলমানতা আর সংলগ্নতার শিক্ষা দিয়েছে আমাকে গল্প, যার কোনটাই আমার আগে কখনো ছিল না।
আমার বয়স যখন পঁচিশ-ছাব্বিশ, তখন আমি প্রিয় ইস্তাম্বুল শহরে থাকতে শুরু করি। ওখানকার দারুণ প্রাণবন্ত আর বৈচিত্র্যময় একটা এলাকায় থাকার সময় বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছি আমি। ১৯৯৯এর ভূমিকম্পের সময়েও ইস্তাম্বুলে ছিলাম আমি। রাত তিনটায় দৌড়ে যখন বিল্ডিং থেকে বের হচ্ছি, তখন কিছু একটা দেখে থেমে গিয়েছিলাম সেদিন। এলাকার বদরাগী বুড়ো মুদি দোকানি (যে অ্যালকোহল বিক্রি করতো না আর সংখ্যালঘুদের সাথে কথা বলতো না), তাকে দেখলাম এক হিজড়ার পাশে বসে আছে – মাথায় লম্বা কালো পরচুলা, চোখ দিয়ে মাশকারা মেশানো পানির ধারা নেমে আসছে যার। বুড়োকে দেখলাম কাঁপা কাঁপা হাতে প্যাকেট খুলে একটা সিগারেট সাধছেন তাকে – সেই ভূমিকম্পের রাতের ঐ দৃশ্যটাই গেঁথে আছে আজ আমার মনে – রাস্তার পাশে এক রক্ষণশীল মুদি দোকানি আর এক ভেজা চোখের হিজড়া একসাথে ধূমপান করছে। মৃত্যু আর ধ্বংসের মুখে সেদিন অল্প কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও আমাদের তুচ্ছ ভিন্নতাগুলো মিলিয়ে গিয়েছিল, আমরা সব এক হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের ওপর গল্পের প্রভাবও যে এরকম – সেটা আমি সবসময়েই বিশ্বাস করে এসেছি। বলছি না যে গল্পের ব্যাপ্তি একটা ভূমিকম্পের সমান, কিন্তু একটা ভাল উপন্যাস যখন আমরা পড়তে বসি, তখন আমরা নিজেদের ছোট্ট আরামদায়ক বাসাটা পেছনে ফেলে একলা রাতে বেরিয়ে পড়ি আর এমন সব মানুষকে চিনতে শুরু করি যাদের সাথে আগে কখনো দেখা তো হয়ই নি, যাদের ব্যাপারে হয়তো মনে মনে খারাপ ধারণাও পুষে রেখেছি এতদিন।
এর অল্প কিছুদিন পরেই বোস্টনের এক মেয়েদের কলেজে যোগ দেই আমি, তারপর মিশিগানে। এটা আমার জন্য যত না ভৌগোলিক স্থানান্তর, তার চাইতে বেশি ভাষাগত। আমি তখন ইংরেজিতে গল্প লিখতে শুরু করি। প্রবাসী, শরণার্থী কিংবা নির্বাসিত না হয়েও কেন এমনটা করছি – এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি তখন। আমার উত্তর হচ্ছে, এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় যাত্রা আমাকে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের সুযোগ দেয়। দারুণ কাব্যিক আর আবেগময় বলে যেমন তুর্কীতে লিখতে আমার ভাল লাগে, তেমনি ইংরেজিতে লিখতে ভালবাসি কারণ এই ভাষাটা আমার কাছে খুবই গাণিতিক লাগে, সেই সাথে যৌক্তিকও। অর্থাৎ প্রত্যেকটা ভাষার সাথে আমার সম্পর্ক আলাদা। পৃথিবীর অগণিত মানুষের মত আমার জন্যও ইংরেজি হচ্ছে আহরিত (acquired) ভাষা। কোন ভাষায় নবাগত হলে যা হয়, আপনি সবসময় একটা অস্বস্তি আর হতাশার মধ্যে থাকেন। নবাগত হিসেবে আমরা সবসময়েই বেশি বলতে চাই – আরও ভাল কৌতুক করতে চাই, আরও ভাল কথা বলতে চাই, কিন্তু মন আর জিভের অবধারিত যে ফারাক, তার কারণে শেষমেশ অল্প বলেই তুষ্ট থাকতে হয়। এই ফারাকটা খুব ভয়-জাগানিয়াও বটে। কিন্তু কোনভাবে যদি আমরা ভয়কে জয় করতে পারি, তাহলে এটা অনেক অনুপ্রেরণারও। বোস্টনে থাকতে আমি এটাই আবিষ্কার করেছি – ভয় ক্ষেত্রবিশেষে প্রেরণারও উৎস।
এই সময়ে নানী (আমার জীবনের হালচাল দেখে যাঁর উদ্বেগ উত্তরোত্তর বাড়ছিল) নিয়মিত প্রার্থনা শুরু করলেন যেন আমি তাড়াতাড়ি বিয়ে করি আর চিরতরে থিতু হয়ে যাই। আর স্রষ্টা যেহেতু তাকে ভালবাসেন, আমার আসলেই বিয়ে হয়ে গেল। তবে থিতু হওয়ার বদলে অ্যারিজোনায় চলে গেলাম আমি। এদিকে আমার বর ইস্তাম্বুলে থাকায় আমি অ্যারিজোনা আর ইস্তাম্বুলের মধ্যে যাতায়াত শুরু করে দিলাম, পৃথিবীর বুকে যে দুটোর চাইতে ভিন্ন জায়গা আর নেই বোধ হয়। আমার মনে হয়, আমার একটা অংশ সবসময়েই আত্মিক আর শারীরিক – দু’দিক থেকেই ভবঘুরে ছিল। যেখানে গল্পেরা আমাকে সঙ্গ দেয়, আমার অস্তিত্ব রক্ষায় আঠার মত আমার অংশ আর স্মৃতিগুলোকে একসাথে করে রাখে।
কিন্তু গল্প যতই ভালবাসি না কেন, ইদানিং যেটা মনে হচ্ছে, একটা গল্পকে যখন গল্পের চাইতেও বেশি কিছু হিসেবে দেখা হয় তখন তার আবেদন নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি আপনাদের সাথে, একসাথে চিন্তা করতে চাই। আমেরিকায় যখন আমার ইংরেজিতে লেখা প্রথম উপন্যাস বের হল, এক সাহিত্য সমালোচক বেশ ইন্টারেস্টিং একটা মন্তব্য করলেন। তিনি বললেন, “আপনার বইটা আমার ভাল লেগেছে, তবে আপনি এটা আরেকটু অন্যভাবে লিখতে পারতেন।” আমি জানতে চেয়েছিলাম যে তিনি আসলে কী বোঝাতে চাইছেন। তিনি উত্তর দিলেন, “দেখুন, বইটাতে এত স্প্যানিশ, আমেরিকান, হিসপ্যানিক চরিত্র; অথচ তুর্কী চরিত্র মাত্র একটা, সে-ও আবার একজন পুরুষ।” বোস্টনের একটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পটভূমিতে লেখা উপন্যাসে তুর্কী চরিত্রের চাইতে আন্তর্জাতিক চরিত্রই যে বেশি থাকবে সেটা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল, তবে তিনি যে কী খুঁজছিলেন সেটাও আমি বুঝতে পেরেছি। আর এ-ও বুঝেছি, তাঁকে আমি কখনোই সন্তুষ্ট করতে পারবো না। তিনি ওখানে আমার পরিচয়ের প্রকাশ দেখতে চাইছিলেন। আমি একজন তুর্কী নারী দেখে তিনি চাইছিলেন বইতেও তেমন কোন চরিত্র থাকবে।
গল্প কীভাবে পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে তা নিয়ে আমরা প্রায়ই আলোচনা করি, কিন্তু একটা গল্প কেমন করে ছড়াবে, কেমন করে পড়া হবে, কেমন করে আলোচিত হবে তার ওপর পরিচয়ের রাজনীতি(identity politics) যে কীভাবে প্রভাব ফেলছে সেদিকেও আমাদের নজর দেওয়া উচিত। এই চাপ অনেক লেখকই অনুভব করেন, যারা পাশ্চাত্যের লেখক নন তাদের ওপর চাপটা আরও বেশি। আপনি যদি আমার মত মুসলিম বিশ্বের নারী লেখক হন, তাহলে আপনার কাছ থেকে আশা করা হবে যে আপনি মুসলিম নারীদের গল্প লিখবেন, আরও পরিষ্কার করে বললে অসুখী মুসলিম নারীদের অসুখী গল্প লিখবেন। আশা করে হবে, পরীক্ষামূলক আর প্রগতিশীল গল্পগুলো পশ্চিমা লেখকদের জন্য বরাদ্দ রেখে আপনি লিখবেন তথ্যবহুল, গ্লানিভরা, অন্যরকম সব লেখা। মাদ্রিদের সেই স্কুলে ছোটবেলায় আমি যা দেখেছি ঠিক তা-ই ঘটছে আজকের সাহিত্যজগতে। লেখকদেরকে স্বতন্ত্র, সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে না দেখে ভাবা হচ্ছে যার যার সংস্কৃতির প্রতিনিধি হিসেবে: চীনা লেখক, তুর্কী লেখক, নাইজেরীয় লেখক। আমাদের কাছ থেকে অদ্ভুত না হোক, খুব আলাদা কিছু আশা করা হচ্ছে।
লেখক আর পর্যটক জেম্স বল্ডউইনকে ((http://en.wikipedia.org/wiki/James_Baldwin)) ১৯৮৪ সালের এক সাক্ষাৎকারে বারবার তার সমকামিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছিল। প্রশ্নকর্তা যখন তাকে সমকামী লেখকদের তালিকায় ফেলার চেষ্টা করলেন, বল্ডউইন থেমে গিয়ে বললেন, “কিন্তু আপনি কি দেখছেন না? আমার মধ্যে এমন কিছুই নেই যেটা অন্য কারো মধ্যে নেই, আর অন্যদের মধ্যেও এমন কিছু নেই যেটা আমার নেই।” পরিচয়ের রাজনীতি আমাদের ওপর লেবেল সেঁটে দিতে চাইলে আমাদের কল্পনার স্বাধীনতাই হুমকির মুখে পড়ে। ‘বহুসাংস্কৃতিক সাহিত্য’ বলে বেশ অস্পষ্ট একটা তালিকা আছে, যেখানে পশ্চিমা লেখক ছাড়া বাদবাকি সবাইকে একই কাতারে স্থান দেওয়া হয়। ১০ বছর আগে হার্ভার্ড স্কয়্যারে আমার প্রথম বহুসাংস্কৃতিক মূল্যায়নের কথা আমি কখনোই ভুলবো না। আমরা তিনজন লেখক ছিলাম সেখানে – একজন ফিলিপাইনের, একজন তুরস্কের আর অন্যজন ইন্দোনেশিয়ার – কৌতুকে যেমন থাকে আর কি! আর আমাদেরকে একসাথে করার কারণ এই ছিল না যে আমাদের শৈল্পিক ধরন কিংবা সাহিত্যিক রুচিতে কোন মিল আছে। একমাত্র কারণ ছিল আমাদের পাসপোর্ট। বহুসাংস্কৃতিক লেখকদের কাছ থেকে কাল্পনিক নয়, বাস্তব গল্প আশা করা হয়। ধারণা করা হয়, তারা বাস্তবকেই গল্পের রূপ দেবেন। এভাবে কেবল সেই লেখকরাই নন, তাদের গল্পের চরিত্রগুলোও আরও বড় কিছুর প্রতিনিধি হয়ে ওঠে।
কিন্তু আরেকটা কথাও তাড়াতাড়ি বলে নেয়া ভাল, একটা গল্পকে এভাবে গল্পের চাইতেও বেশি কিছু হিসেবে দেখা শুধু যে পাশ্চাত্যেই দেখা যায় এমন নয়। সবখানেই দেখা যায়। আমার এক উপন্যাসে চরিত্রদের বলা কথার জন্য ২০০৫এ যখন আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল তখন আমি এটা হাতেকলমে বুঝতে পেরেছি। নারীদের চোখ দিয়ে দেখা এক আর্মেনীয় আর এক তুর্কী পরিবার নিয়ে একটা গঠনমূলক, কয়েক স্তরবিশিষ্ট উপন্যাস লিখবো ভেবেছিলাম আমি। আমার নামে মামলা করা হলে এই সামান্য গল্পই একটা বড় ইস্যু হয়ে গেল। তুর্কী-আর্মেনীয় সংঘাত নিয়ে লিখেছি বলে কেউ সমালোচনা করলো, কেউ করলো প্রশংসা। কিন্তু কিছু কিছু সময়ে আমার দু’পক্ষকেই মনে করিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল, এটা একটা গল্প। এটা কেবলই একটা গল্প। ‘কেবল একটা গল্প’ বলছি বলে ভাববেন না আমি নিজের কাজকে খাটো করে দেখতে চাইছি। গল্পকে আমি গল্প হিসেবেই ভালবাসতে আর বরণ করে নিতে চাই, কোন সমাপ্তির মাধ্যম হিসেবে নয়।
লেখকদের গায়ে তাদের রাজনৈতিক মতামতের তকমা লাগানো হয়, বেশ কিছু ভাল রাজনৈতিক উপন্যাসও আছে, কিন্তু গল্পের ভাষা কখনোই দৈনন্দিন রাজনীতির ভাষা নয়। চেখভ বলেছেন, “সমস্যার সমাধান আর সমস্যা নিয়ে ঠিকভাবে প্রশ্ন করা একেবারেই আলাদা দুটো জিনিস, যার মধ্যে দ্বিতীয়টাই কেবল একজন শিল্পীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।” পরিচয়ের রাজনীতি আমাদেরকে বিভক্ত করে। গল্প কাছে টানে। একটা সুযোগ পেলেই সাধারণীকরণ করে। অন্যটা ভিন্নতা দেখাতে আগ্রহী। প্রথমটা সীমানা তৈরি করে। পরেরটা প্রাচীর ভেঙে দেয়। পরিচয়ের রাজনীতি ইটপাথরে তৈরি। আর গল্প হচ্ছে বয়ে যাওয়া পানির মত।
অটোমানদের সময়ে “মেদ্দাহ্” নামে কিছু ভবঘুরে গল্পকথক ছিল। কফি হাউজে গিয়ে তারা মানুষের সামনে গল্প বলতেন, অনেক সময় মুখে মুখেই তৈরি করতেন সেসব গল্প। যে কেউ সেখানে গিয়ে শুনতে পারতো তাদেরকে – সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সুলতান পর্যন্ত, মুসলিম-অমুসলিম সবাই। গল্প সব সীমানা পেরিয়ে যেত, ঠিক যেমন “নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প” মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, বলকান আর এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। আজও গল্প তেমনি করেই সীমা অতিক্রম করতে পারে। ফিলিস্তিনি আর ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা কথা বলার সময় সাধারণত একে অন্যের কথা শোনেন না, কিন্তু এখনো একজন ফিলিস্তিনি পাঠক ইহুদি লেখকের বই পড়েন, কিংবা ইহুদি পাঠক ফিলিস্তিনি লেখকের। পড়েন, আর লেখকের সাথে একাত্ম হন, তাঁর মত করে ভাবেন। সাহিত্যের কাজই হচ্ছে আমাদেরকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া। তা যদি না পারে, তবে ওটা ভাল সাহিত্য নয়।
একসময় আমি যেই চুপচাপ, ভীরু বাচ্চা ছিলাম – বই তাকে বাঁচিয়েছে। তাই বলে বই নিয়ে অতিভক্তির পরিণাম কী হতে পারে তা-ও আমি জানি। আধ্যাত্মিক কবি রুমি যখন তার সঙ্গী তাবরিজের শাম্সের সাথে দেখা করতে গেলেন, শাম্স তখন রুমির বইগুলো পানিতে ছুঁড়ে ফেলে কালির অক্ষরগুলোর মিলিয়ে যাওয়া দেখতে লাগলেন। সুফিরা বলেন, “যেই জ্ঞান তোমাকে নিজের ঊর্ধ্বে নিয়ে যায় না, তা অজ্ঞতার চেয়েও মারাত্মক।” আজকের এই সাংস্কৃতিক বলয়গুলোর কারণ জ্ঞানের অভাব নয় – আমরা একে অন্যের সম্পর্কে অনেক কিছু জানি, অন্তত আমাদের তাই ধারণা – কিন্তু যে জ্ঞান আমাদেরকে নিজেদের ঊর্ধ্বে নিয়ে যায় না: তা আমাদেরকে উন্নাসিক, দূরবর্তী আর অন্য সবার সাথে সম্পর্কহীন করে তোলে। আমার খুব প্রিয় একটা রূপক আছে: ড্রয়িং কম্পাসের মত বেঁচে থাকা। কম্পাসের একটা পা স্থির থাকে এক জায়গায়, আর অন্য পা-টা অনবরত চলতে থাকে, একটা প্রশস্ত বৃত্ত তৈরি করে। আমার গল্পও ঠিক তেমনি। এর একটা অংশ দৃঢ় তুর্কী শেকড় গেড়ে আছে ইস্তাম্বুলে, কিন্তু অন্য অংশটা পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়, নানা সংস্কৃতির সাথে মেলবন্ধন তৈরি করে। ওভাবে চিন্তা করলে আমার গল্পকে আমি বলবো একই সাথে আঞ্চলিক আর বৈশ্বিক, একই সাথে এখানকার আর সবখানের।
আপনারা যারা ইস্তাম্বুলে গেছেন তারা হয়তো ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অটোমান সুলতানদের নিবাস ছিল যে তোপকাপি প্রাসাদ, সেটা দেখেছেন। প্রাসাদে সুলতানের প্রিয় রক্ষিতাদের থাকার জায়গার ঠিক বাইরেই ‘জ্বিনদের সম্মেলন স্থান’ বলে একটা জায়গা আছে। এটা বিল্ডিংগুলোর মাঝখানে – যেটা আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছিল। আমরা সাধারণত আনাচে কানাচে থাকা জায়গাগুলোকে অবিশ্বাস করি। আমরা ভাবি যে ওগুলো হচ্ছে জ্বিনের মত অতিপ্রাকৃত সৃষ্টিদের আস্তানা, যারা ধোঁয়াহীন আগুনের তৈরি আর রহস্যের প্রতীক। কিন্তু আমার মনে হয়, ঐ রহস্যময় অস্পষ্ট জায়গাগুলোই লেখক আর শিল্পীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। গল্প লেখার সময় আমার খুবই আকাঙ্ক্ষার বিষয় থাকে রহস্য আর পরিবর্তনশীলতা। আমি চাই ১০ পৃষ্ঠা পর কী হবে তা আমার অজানা থাকুক। চরিত্রেরা যখন আমাকে অবাক করে, ভাল লাগে আমার। একটা উপন্যাসে আমি হয়তো এক মুসলিম নারীকে নিয়ে লিখবো, খুব সুখের কোন গল্প হবে সেটা, আবার পরের বইতেই নরওয়ের কোন এক সুদর্শন সমকামী অধ্যাপকের গল্প থাকবে। গল্প যতক্ষণ পর্যন্ত হৃদয় থেকে আসছে, ততক্ষণ আমরা যে কোন কিছু নিয়ে, সবকিছু নিয়ে লিখতে পারি।
অড্রে লর্ড ((http://en.wikipedia.org/wiki/Audre_Lorde)) একবার বলেছিলেন, “সাদা প্রভুরা আমাদেরকে বলতে শিখিয়েছেন, ‘আমি ভাবি, তাই আমি আছি।’ আমি বলি, ‘আমি অনুভব করি, তাই আমি মুক্ত।’” একে আমার কাছে দারুণ একটা উপমাবদল মনে হয়। তবুও, আজকের সৃজনশীল লেখার কোর্সগুলোতে আমরা কেন শুরুতেই ছাত্রদেরকে শেখাই, “তা-ই লেখো যা তুমি জানো”? এটা হয়তো একেবারেই ভুল উপায়। কল্পসাহিত্যের মানে এই নয় যে আমরা নিজেরা কী কিংবা আমরা কী জানি অথবা আমাদের পরিচয় কী তা নিয়ে লিখতে হবে। আমাদের উচিত নিজেদেরকে, আর তরুণদেরকে মন খুলে নিজেদের অনুভূতিগুলো লিখতে শেখানো। আমাদের উচিত নিজেদের সাংস্কৃতিক বলয় থেকে বের হয়ে অন্য সব পৃথিবীকে চিনতে শেখা।

এলিফ শাফাক
গল্পেরা বয়ে চলে তুর্কী নর্তকদের(whirling dervishes) মত, বৃত্তের পর বৃত্ত তৈরি ক’রে। পরিচয়ের রাজনীতিকে তুচ্ছ করে সব মানুষকে এক সুতোয় বাঁধতে পারে গল্প – খুশির খবর হচ্ছে এই। একটা পুরনো সুফি কবিতা দিয়ে শেষ করতে চাই আমি: “এসো, একবারের তরে বন্ধু হই; জীবনকে সহজ করে নেই; ভালবাসি আর ভালবাসতে দেই; পৃথিবীকে আর একলা ফেলে না যাই।”
মূল বক্তব্যের লিঙ্ক ((http://www.ted.com/talks/elif_shafak_the_politics_of_fiction.html))
এই লেখা যখন প্রকাশ করলে তার কিছু পরেই সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদ এর মৃত্যু ঘটে! একজন লেখককে নানান বৃত্তে, নানান চাপে চাহিদায় বন্দী করে রাখা হয়।
তিনি জনপ্রিয় তাই তাকে একটি গল্পেই অমুক ঘটনার সব তুলে নিয়ে আসতে হবে। তিনি ঐ সময়ে বেঁচে ছিলেন তাই তাঁকে ঐ সময় নিয়েই লিখতে হবে আমরা যেভাবে চাই সেভাবে!
দারুণ অনুবাদ। দারুণ জরুরি কিছু কথা।
এই লেখাটা যে পড়ল আর যে পড়ে নি (talk টার মূল বিষয় যার জানা নাই) তাঁদের দেখার জানালায় বিশাল ফারাক আছে বলে মনে হয়!
ধন্যবাদ সরব এর অনুবাদ স্বর! দেখার, বোঝার, ভাবার জানালাটা বড় করে দেবার জন্য!
আপনাকেও ধন্যবাদ বোহেমিয়ান! এত চমৎকার মন্তব্যের জন্য। 😀
অনেক অনেক ভালো লাগলো পড়ে । বিশেষ করে এই লাইনগুলোতো একদম অসাধারণ… “আমার মতে, এসব সাংস্কৃতিক গণ্ডিকে তুচ্ছ করার একটা উপায় হচ্ছে গল্পবলার শিল্প। গল্প সীমানা ভাঙতে পারে না সত্যি, কিন্তু আমাদের মানসিক দেওয়ালে ছিদ্র তৈরি করতে পারে। যেই ছিদ্র দিয়ে আমরা বাইরের পৃথিবীর ঝলক দেখতে পাই, কখনো হয়তো সেটা পছন্দও করি।”
মনে হচ্ছিল এইরকম একটা লেখাই যেন আমি খুঁজছিলাম ।
ধন্যবাদ লেখককে, এবং অভিনন্দন অনুবাদক আপাকে ! :clappinghands: :happy:
পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ মুনীরা আপা! 😛
চমৎকার লাগলো পড়ে! 🙂
😀
সার্থক অনুবাদ কোন গুলো?
আমার কাছে সেটাই সার্থক অনুবাদ, সেটা পড়ে বোঝা যাবে না, এটা মূলত অন্য ভাষায় লেখা হয়েছে।
এই লেখার ক্ষেত্রে কয়েকটা জায়গায় পড়ে মনে হয়েছে “এটা অনুবাদ”।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে বেশ সহজ ভাবে লেখা। পড়তে কষ্ট হয়নি।
প্রথম অংশটুকু পড়ে ভাবলাম জ্বীন ভূত নিয়ে কোন লেখা আছে কি না! 🙁
শ্রম সাধ্য লেখাটার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ!
লেখাটা আবার ঘষামাজা করতে হবে দেখি! 😀
অনেক বেশি সুন্দর…
এত বড় একটা লেখা কী অকপটে পড়া গেল, বোঝা গেল !! অথচ এটা নাকি অনুবাদ !!
অনেক ধন্যবাদ অনুবাদক আপাকে
বোধগম্য হয়েছে জেনে আনন্দিত হলুম। 😀
ইদানীং সব বিষয়ই আমার কাছে জটিল মনে হয়। কোন কিছুই সহজ না।
এলিফ শাফাক কী বলতে চেয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত কী বললেন কিছুই পরিষ্কার হল না।
তবে এত বড় একটা লেখা অনুবাদ করতে যে কী পরিমাণ ধৈর্য প্রয়োজন তা চিন্তা করে আপনার প্রতি সম্মান বেড়ে যাচ্ছে।
আচ্ছা মাঝেমধ্যে আগের মতো ছোটছোট লেখা কি অনুবাদ করা যায়? আমার কাছে ওই অনুবাদগুলোই ভাল লাগত।
🙁
আমার অনুবাদের দুর্বলতা যদি না বোঝার কারণ হয় তাহলে দুঃখ পেলুম।
ছোট লেখা তো অবশ্যই অনুবাদ করা যায়। তবে কিনা, যার লেখা অনুবাদ করতাম তার ওপর কিঞ্চিৎ অভিমান হয়েছে। 😛 নতুন কোন লেখকও পাচ্ছি না সুবিধামত। সাজেশনের জন্য আপনাদের মুখ চেয়ে আছি!
কষ্টসাধ্য অনুবাদ, ভাল হয়েছে।
ধন্যবাদ। 🙂
আমার শুধু সেই স্কুলে পড়া একটা কবিতাই মনে পড়ে গেল…
“থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে…”
গল্প বা উপন্যাস পড়ার পাগলামি ভালোলাগাটা চিরকালের। গল্প কোন ভৌগোলিক সাংস্কৃতিক গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকা উচিত না। কম্পাস আর বৃত্তের চিন্তাটা বেশ! এই লেখিকার বই পড়ার ব্যাপক লোভ জেগে গেল!
তবে আমিও ভাবসিলাম জ্বীন টীন নিয়ে কি না কি পড়ব ! 😯
অনুবাদিকাকে ধন্যবাদ আর শুভকামনা :love:
হ্যাঁ অনুবাদ করতে গিয়ে আমিও ভাবলাম, এই লেখিকার বই পড়া দরকার। 😀
জ্বীনের গল্প না লিখে মানুষকে হতাশ করলাম দেখি। 😀
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। :love:
না না হতাশ কর নাই। আমি বরং খুশিই হইসি… :happy: আমি জ্বীন ভূত থেকে একশত হার দূরে অবস্থান করতেই ভালোবাসি 😀
wiki pedia dia ponditi?
ইনার সব কথার সাথে কি তুমি একমত আপু? দু’টো জায়গায় একমত হতে পারলাম না।
একটা গল্পকে যখন গল্পের চাইতেও বেশি কিছু হিসেবে দেখা হয় তখন তার আবেদন নষ্ট হয়ে যায়।
সত্যিই কী? তাই যদি হত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পে দর্শনের এত ছড়াছড়ি কেন? তুমি Twilight টাইপ গল্প অনুবাদ না করে কোয়েলহোর গল্প অনুবাদ কর কেন?
কিছু কিছু সময়ে আমার দু’পক্ষকেই মনে করিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল, এটা একটা গল্প। এটা কেবলই একটা গল্প।
এ কথাটা স্ববিরোধী লেগেছে। কারণ এর কিছুক্ষণ আগেই তিনি গল্পের শক্তিমত্তা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন। নাকি আমি বুঝতে ভুল করছি? :thinking:
না আপু, সব জায়গায় একমত নই। ঐ জায়গাটাতে আমার নিজেরও খটকা লেগেছিল শুরুতে।
তবে তাঁর বক্তৃতায় অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে, আর মূল কথাটা ভাল লেগেছে আমার। এজন্যই অনুবাদ করা। 🙂