অপমানব

১.

৩২১৮ সাল

রকিব জানালা দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে তাকিয়ে আছে। যদিও আজকাল জানালা বলে ঘরে সত্যিকারের কিছু থাকে না, তবুও ঘরের দেয়ালে হলোগ্রাফিকভাবে তৈরি কৃত্রিম জানালা দিয়ে সবুজ প্রকৃতি দেখতে তার খুব ভালো লাগে।

তীক্ষ্ণ একটা শব্দ হতেই রকিব হাতের দিকে তাকালো। হাতের চামড়ায় জ্বলজ্বল করতে থাকা অক্ষরগুলোতে দেখানো সময় রাত ২টা। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে করা যায় না এমন কিছুই নেই এখন। বহু বছর আগেই সময় দেখার প্রয়োজনীয়তাটাকে হাতের চামড়ায় জ্বলজ্বল করতে থাকা অক্ষরের মাধ্যমে দূর করা হয়েছে।

রকিব নিজে একজন জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ার। সমাজের সবচেয়ে উঁচুতলার মানুষ। ইচ্ছেমত মানুষের জিনেটিক পরিবর্তন করার বিদ্যাটা মানুষের নাগালে আসে অনেক আগেই। তবে তার পরেও বহু শত বছর পার হয়েছে একে নিখুঁত করতে।

আজ খুব বড় একটা পরীক্ষা করতে যাচ্ছে রকিব। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা সুদর্শন যুবকের দৃঢ় মূর্তি যেন স্থিরতার প্রতিমূর্তি। ভিতরে বয়ে যাওয়া ভাবনার ঝড় এক বিন্দুও প্রকাশ পাচ্ছে না তাঁর চেহারায়।

জিনেটিক এ পরিবর্তন ঘটানোর পরীক্ষার পদ্ধতিটি নিয়ে কথা বলা বিজ্ঞানীরা এড়িয়ে চলে। হয়তো বিবেকের তাড়না থেকেই। টাইম মেশিন আবিষ্কারের পর থেকেই অতীতে গিয়ে কোন মানুষের মধ্যে পরিবর্তন ঘটিয়ে আসা হয়। কয়েক বছর পর গিয়ে দেখা হয় পরিবর্তনের প্রভাব।

অনেক সময়ই এ পরিবর্তনে তৈরি হয় ভয়াবহ মানুষ। এজন্যই হয়তো মানুষের বিবেক তাড়িয়ে বেড়ায় এ কাজ করার আগে।

ভোর বেলা রকিব ধীর পায়ে এসে ঢোকে টাইম মেশিনে। হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে সময় ঠিক করে ১৯৬০ সাল।

 

২.

বিছানায় শুয়ে আছে এক ছোট্ট বালক। পাশে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রকিব। বালকের ডিএনএ তে পরিবর্তন ঘটাতে খুব বেশি সময় লাগে না।

গভীর ঘুমে থাকা ছেলেটি কিছুই টের পায় না।

 

রকিব  টাইম মেশিনে ২০১২ ঠিক করে।

 

৩.

লালচে ইটের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে রকিব। দোতলার বারান্দা থেকে নিচে ক্লান্ত মানুষের ভিড়টা টের পাওয়া যায় গভীর রাতেও। তবে মানুষগুলোর ভেতরের উত্তাপটুকুও ছুঁয়ে যায় তাঁর অনুভূতিকে।

সেই ছেলেটার অবস্থানের কাছেই নিয়ে এসেছে তাকে নিয়ে এসেছে টাইম মেশিন। নিজের কাজের ফলাফল দেখার জন্য উত্তেজনায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায় রকিবের। ডিএনএ তে পরিবর্তন এনে লজ্জা ও বিবেকবোধ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে এলে কী পরিবর্তন হয় চোখের সামনেই দেখতে পাবে সে।

রকিব ঘুরে সেই ছেলেটির রুমের দিকে তাকায়। দরজায় উপরের ভাষাটি অনুবাদ করে দেয় কম্পিউটার।

কালো কালিতে লেখা:

“ভাইস চ্যান্সেলর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়”

[গল্পে উল্লিখিত সকল চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক]

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প, রম্য, সায়েন্স ফিকশান-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

28 Responses to অপমানব

  1. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    জটিল বাঁশ! :clappinghands:
    ভীষণ মজা পাইছি রে। :yahooo:

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    অপ্রত্যাশিত আর সুপার্ব হইছে শেষটা। 😀

  3. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    =))

    মারাত্মক

  4. লাবণ্য বলেছেনঃ

    মধু মধু।

    অনেক মজা পেলাম, যেই রকম সুন্দর শব্দচয়ন সেই রকম চোঁখা বাঁশ :penguindance:

  5. বিলীন অরণ্য বলেছেনঃ

    অমানবিক।
    আপনার “কাল্পনিক” ভিসি অমানুষ হইতে পারে, আপনে তো ভালো মানুষ। এমনে পচাইলেন !! :voypaisi:

    😛 :happy:

  6. নূরবাহার ঈয়াশা বলেছেনঃ

    সেইরকম!!
    আবার কেমন যেন খারাপও লাগতেসে!! 🙁

  7. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    সেইরকম দারুণ ফিনিশিং। তাজ্জব হয়ে গেলাম 😀

  8. মুবিন বলেছেনঃ

    সেইরকম হয়েছে পুরাই :dhisya:

  9. শারমিন বলেছেনঃ

    অসাধারণ
    😀

  10. নূহা চৌধুরী বলেছেনঃ

    হি হি হি
    হাসতে হাসতে গড়াগড়ি …

    🙄

  11. ইতস্তত বিপ্লবী বলেছেনঃ

    :dhisya: :dhisya: :dhisya:
    ফান্টাবুলাস হইসে!!
    🙄 :yahooo:

  12. মাশুদুল হক বলেছেনঃ

    হে হে 😛
    দেরি হয়ে গেল পড়তে

  13. অক্ষর বলেছেনঃ

    :love:

    শেষটা পড়ে মজা পাইছি । =))

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।