ধর, তুমি তোমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলে, ‘কয়টা বাজে?’
তোমার বন্ধু তোমাকে বলল, “৪৫৩ কোটি ১৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩৭৮ বছর ১৯৫ দিন ১৭ ঘণ্টা ২৩ মিনিট ১২ সেকেন্ড”কেমন লাগবে তখন? :thinking:
পৃথিবীর শুরুর দিন থেকে হিসাব করে আসলে হয়ত এরকম করেই সময় হিসেব করতে হত আমাদের। কিন্তু আমরা সৌভাগ্যবান যে এভাবে আমাদের সময় হিসেব করতে হয়না। 😀
তো চল, এবার সেই মজার বিষয়টার গল্প বলি যেটার কারণে এই বাড়তি কষ্টটা করতে হচ্ছে না। এর জন্য একটু কষ্ট করতে হবে।
তোমার বাসার দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাও। একবার চিন্তা করে দেখ, প্রতি ১২ ঘণ্টা পর পর তুমি কি করছ? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ। আবার একই জায়গায় ফিরে আসছ। ১১:৫৯ বাজার পর ই তুমি তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আবার 00:00 করে দিচ্ছ। একটা অদৃশ্য চক্রের মত।
অনেকটা এরকম চিন্তা থেকেই গণিতের রাজপুত্র গাউস নাম্বার থিওরিতে কনগ্রুয়েন্স এর ধারণা দেন।
কনগ্রুয়েন্স বা মডুলার এরিথমেটিক বা অনুসমতা হল নাম্বার থিওরির সবচাইতে চমৎকার বিষয়গুলোর একটি। কাঠখোট্টা নাম হলেও একেবারেই সহজ এই বিষয়টা। শুধু গুণ-ভাগের ধারণা থাকলেই যে কাউকে এর বেসিকটা বুঝিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু সহজ হলেও এর গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে, অনেক কঠিন একটা হিসেব যেটা সাধারণভাবে করতে গেলে হয়ত তোমাকে সুপার কম্পিউটারের সাহায্য নিতে হবে সেটা তুমি এই অনুসমতার ধারণা ব্যবহার করে খুবই সহজে করে ফেলতে পারবে। :happy:
এবার আরেকটু চিন্তা কর। তোমাকে আমি বললাম ২০ কে ৬ দিয়ে ভাগ করতে। তুমি বললে, ভাগফল ৩ আর ভাগশেষ ২, এই ভাগশেষেই সব কাহিনী আসলে। (সবখানে ভাগফল কাজে লাগে আর এখানে ভাগশেষ! একদমই উল্টো অবস্থা! 😛 )। এটাই সবচাইতে আকর্ষণীয় ব্যপার। কনগ্রুয়েন্সের ক্ষেত্রে একটা বিষয় তোমাকে মনে রাখতে হবে, যে এখানে ভাগফল নিয়ে মাথাব্যথার কিছু নাই। যত মাথাব্যথা সব হল ভাগশেষ নিয়ে। 😛
তো যেটা বলছিলাম, ২০ কে ৬ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ ২, আবার ২৬ কে ৬ দিয়ে ভাগ করলেও ভাগশেষ ২! আগেই বলেছি আমাদের যত মাথাব্যথা সব ভাগশেষ নিয়ে। এই দুই ব্যক্তির (২০ আর ২৬ 😛 ) ভাগশেষ যখন একই তখন এদের একটা ফ্যামিলি বানিয়ে ফেলা যাক! এখন থেকে এরা ২ জন হচ্ছে একে অপরের ভাইভাই। শর্ত একটাই, এদের ভাজকটা একই হতে হবে। মানে এরা ততক্ষণই ভাই-ভাই যতক্ষন এদের ৬ দিয়ে ভাগ দেয়া হচ্ছে। শুধু এরাই না, কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ একই হয় এরকম যত সংখ্যা আছে দুনিয়ায়, তাদের সবাই একে অপরের ভাইভাই। এই ভাতৃত্বের নামই হল অনুসমতা বা কনগ্রুয়েন্স। আর এরা ২ জন একে অপরের ভাই, মানে হল একে অপরের অনুসম বা কনগ্রুয়েন্ট।
অনেক প্যাঁচাল পারলাম, এবার সংজ্ঞায় আসি। গাণিতিকভাবে কনগ্রুয়েন্স দেখতে কেমন সেটা দেখি চল।
মনে কর, a আর b দু’টো সংখ্যা যাদের মধ্যে a বড় আর m আবার আরেকটা সংখ্যা যেটা দিয়ে a কে ভাগ করলে ভাগশেষ হয় b. এটা থেকে একটা বিষয় আগেই দেখে রাখ। মানে সেকেন্ড পার্ট আরকি! সেটা হল a-b, m দিয়ে বিভাজ্য। সহজ ব্যাপার, a কে m দিয়ে ভাগ করলে যদি b বাকি থেকে যায়, তাহলে সেই বাকি অংশ ফেলে দিয়ে (মানে বিয়োগ করে) রেখে দেয়া অংশকে m দিয়ে ভাগ করলে তো এবার কিছু বাকি থাকবে না। অর্থাৎ সেটা বিভাজ্য হবে।
প্রথম কথাটাকে এত বড় করে না বলে একটা ছোট্ট ইকুয়েশন দিয়ে লেখার একটা নিয়ম আছে। তো, ইকুয়েশনটা দেখতে এরকম,
a ≡ b (mod m)
অ্যাঁ!! এইটা আবার কিরকম ইকুয়েশন? পাশে আবার ব্র্যাকেটে কি লেখা?? 😯
হ্যাঁ বলছি। আমরা এতক্ষন যেটা বাংলায় এত্ত বড় বড় লাইনে পড়ে আসলাম সেটাই এই সমীকরণে ছোট্ট করে বলা আছে। এটা পড়তে হয় এভাবে, “a equivalent to b, modulo m”। অর্থাৎ, a আর b ভাই-ভাই (মানে অনুসম বা কনগ্রুয়েন্ট) যখন এদের m দিয়ে ভাগ দেয়া হচ্ছে (এইযে শর্তটা :D) । আরেকটু সহজ করে এভাবে বলা যায়, a আর b দুজনকেই m দিয়ে ভাগ করলে একই ভাগশেষ থাকবে। এখানে b, m এর চাইতে ছোট হতে পারে।
বইয়ের ভাষায় এই সমীকরণটাকে বলে কনগ্রুয়েন্স আর এখানের ভাজক-সাহেব মানে m কে বলা হয় এর মডুলাস। আমাদের কথাবার্তার একটা সেকেন্ড পার্ট ছিল না? হ্যাঁ। “a-b, m দিয়ে বিভাজ্য”এখন সেটাও এই সমীকরণ থেকে বের করে ফেলি চল। কিভাবে? আগের সমীকরণকে এভাবে লিখে,
a-b ≡ 0 (mod m)
সাধারণ একটা সমীকরণের মতই ডানপক্ষের b কে বামপক্ষে নিয়ে এসেছি। এটা কনগ্রুয়েন্সের বেসিক কিছু জিনিসের একটা।
এবার আমাদের সেই ঘড়ির উদাহরণে ফিরে আসি। আর কনগ্রুয়েন্সের ইকুয়েশন যেহেতু শিখেই গেছ তাহলে ঘড়ির সময় দেখার ব্যাপারটাকে ইকুয়েশন দিয়ে লেখার চেষ্টা করি। এবার অবশ্য তোমাকে ঘড়ি হাতে না নিলেও চলবে! 😛 যেহেতু আমরা ১২ ঘন্টা পর পর আবার আগের হিসেবে ফিরে যাই, তাই আমরা ভাগও করব ১২ দিয়ে। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে আমাদের সেই শর্ত হল ১২!
তাহলে যখন রাত 00:00 বাজে, তখনকার জন্য, 00 ≡ 00 (mod 12)
কারণ শূন্যকে ১২ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ থাকে শূন্য! 🙂
রাত ৩টার জন্য, 03 ≡ 03 (mod 12) [এখানেও একই ঘটনা]
বেলা ১১টার জন্য 11 ≡ 11 (mod 12) [একই ঘটনা]
কিন্তু বেলা ১২টার জন্য 12 ≡ 0 (mod 12)
কারণ ১২ কে ১২ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ হল শূন্য।
এবার আবার বেলা ১৩টার জন্য 13 ≡ 1 (mod 12)
অর্থাৎ যেই ১৩টা বাজছে (!?) সেই আমরা একে ১৩ থেকে আবার ১ বানিয়ে দিচ্ছি!!
এটাই হল কনগ্রুয়েন্সের মজা! একটু গুণ-ভাগ কাজে লাগিয়ে কত সহজে হিসেব করে ফেলা যায়!
এই পর্যন্ত ছিল একেবারে প্রাথমিক কিছু ধারণা! আপাতত এই পর্যন্তই থাক। এর পরের পর্বে কনগ্রুয়েন্সের মৌলিক কিছু স্বীকার্য নিয়ে কথা বলব। সবার জীবন পাইয়ের মত সুন্দর হোক। 😀
[[আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এমনকি HSC তেও এই মজার বিষয়টা নেই। আমি প্রথম যখন এই সুন্দর একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম তখন খুব আফসোস হয়েছিল যে কেন এটা আমাদের স্কুল-কলেজেই পড়ানো হয়না!যাই হোক, এই আফসোসের বিষয়টা মাথায় রেখেই ছোট ভাইবোনদের (বিশেষ করে যারা এখন SSC বা HSC লেভেলে আছ কিন্তু কনগ্রুয়েন্স বোঝোনা তাদের) বোঝার মত করে একটু ব্যখ্যা করার চেষ্টা করেছি। আমি নিজেও যেহেতু অনেক কম জানি তাই হয়ত ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। বড়রা দেখিয়ে দিলে ভালো লাগবে। 🙂 ]]
কনগ্রুয়েন্স একটু একটু বুঝি। আন্ডারগ্র্যাডে পড়েছিলাম মনে হচ্ছে 😛
লেখাটা ভালো হয়েছে। এই ধারণাটুকু পাওয়াও অনেক বড় ব্যাপার। ম্যাথের কোন জ্ঞানই কখনও মাইর যায়না সেইটা আমি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি জীবনে।
কষ্ট করে এই লেখা উপহারের জন্য ধন্যবাদ। :huzur:
আপনাকেও ধন্যবাদ। 😀
এইরকম লেখা আরও চাই।
মানে এটার পর্বগুলো চলতে থাকলে ভালো লাগত।
অনেক কিছু শেখার আছে।
যদিও আমি এই ব্যাকগ্রাউন্ডের নই।
চলবে আশা করি। 😀
থ্যাংকুস তিষাপু! :happy: :happy:
এই লেখাটা আমি প্রথমদিনেই পড়ছিলাম, কমেন্টও করছিলাম, কিন্তু সেটা পোস্ট হয় নাই! 🙁
দারুণ লেখা আপু, সিরিজ চলুক। 😀
অনেক অনেক ধইন্যাপাতা! :happy: :happy:
অসাআআআআআআধারন 🙂 🙂 🙂 :happy: