পিঁপড়ার দল:
পিঁপড়াদের আমার হিংসা হয়। জন্মের শুরু থেকেই তারা জানে, কোন কাজের জন্য তারা পৃথিবীতে এসেছে, এবং নিখুঁতভাবে করে যেতে থাকে। আমরা আমাদের স্বকীয়তা বুঝতেই অনেক দেরি করে ফেলি, আর আমাদের স্বকীয়তা সমাজের নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ডের বাইরে গেলে তা প্রকাশ করতে ভয় পাই।
অথচ প্রতিটা মানুষের স্বকীয়তা যে ভিন্ন, আর খুব খুব গুরূত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিশেষ করে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে। এই যেমন, ‘ইন্টেলেকচুয়াল হিউমিলিটি’, এই বিষয়টা সমাজের প্রতিটা স্তরে পৌছে দেয়ার জন্য এক শ্রেণীর মানুষ তারস্বরে চেঁচালেই হবে না। প্রতিটা আইডিয়া সমাজে ইমপ্লিমেন্ট করার জন্য অনেকগুলো লেভেলের বক্তা লাগে। প্রথম স্তরের দার্শনিকরা এই হিউমিলিটির তত্ত্বীয় দিক নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করতে পারেন, আমি বুঝব না। কারণ আমি কর্মী শ্রেণীর পিঁপড়া। আমাকে আমার ফিলোসফি পড়া বন্ধুর সাহায্য নিয়ে সে আইডিয়া বুঝে সহজ ভাষায় লিখতে হবে। সে লেখা ফেসবুকে, ব্লগে ভাইবোনেরা পড়ে নিজের জীবনে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা মাথা খাটিয়ে বের করবে। তারা আবার আরেক ধাপ সহজ করে ছড়িয়ে দেবে মুরুব্বীদের কাছে, যাদের ইন্টারনেট, বা ব্লগের সাথে খুব একটা সংযোগ নেই। উনাদের কাছে এই কনসেপ্ট পৌছাতেই হবে, কারণ সমাজের, পরিবারের হর্তাকর্তা উনারাই। অবাধ তথ্যপ্রবাহের এত এত সুফল তাঁরা প্রয়োগ করতে পারছেন না কেবল নতুন প্রজন্মের প্রতি বিরাগমিশ্রিত অশ্রদ্ধার কারণে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই যে একেকটা স্তর, এর প্রতিটা স্তরেই যোগ্য অনেক ভাইবোন আছেন। কিন্তু তাঁরা নিজেদের যোগ্যতা নিয়ে এতই সন্দিহান, আর চারপাশের ঋণাত্বক আবহাওয়া নিয়ে এতই অভিযোগমুখর, তাঁদের ধরে বেঁধে কোন এক শ্রেণীতে দাঁড় করিয়ে দিলেও বিনয়ে নত হয়ে আরো নিচের স্তরে নেমে যেতে চান। এতে করে কাজের কাজ কিছু হচ্ছেনা, পুরো প্রক্রিয়াটা স্থবির হয়ে যাচ্ছে।
এ কারণেই এই অধমের ‘আর্ট অব এপ্রিসিয়েশন’ নিয়ে এত লেখালেখি। আমাদের ভাইয়া আপুরা যদি দ্বিধার খোলস থেকে বের হয়ে একটু সাহস করে এসে বলত, ‘আমি আছি, কী করতে হবে বলেন।’ তাহলে সমাজের চিত্রটা অন্যরকম হত।
গিরগিটি:
গিরগিটি তার চার হাত পা দিয়ে বিভিন্ন পাথর আঁকড়ে ধরে উপরে উঠে যায়। আমি পাহাড় চড়ার সময় প্রায় ওরকম করেই উঠতে হয়েছে। কোন আড্ডায় ঠিক মনমত পরিবেশ না পেলে সেখানে আমি এই গিরগিটি থেকে অনুপ্রেরণা নেই। অনেক কিছুই হয়ত ভাল লাগেনা, কিন্তু একটা না একটা ভাল দিক থাকেই, হয় একটা কথা, নাহয় একটা চিন্তা, না হয় অন্যের একটা দোষ দেখে নিজেকে সতর্ক করা – তখন এ আড্ডায় এলাম কেন – অমন না ভেবে, ভাবি, এ আমার নিজেকে পরিশুদ্ধ করার একটা ধাপ। এই পাথরটায় এক মুহূর্তের জন্য আমাকে থামতেই হত, আরো একটু শেখার জন্য, আত্মশুদ্ধির গন্তব্যটাতে পৌছানোর জন্য।
হলদে পাতা:
পেছন ফিরে সম্পর্কের জাল ঘাঁটতে গিয়ে দেখি, অনেক যোগাযোগই ফিকে হয়ে এসেছে সময়ের কারণে, বা চিন্তাভাবনার ভিন্নতার কারণে। কিছু বন্ধন ছেঁড়ায় নাড়ি ছেঁড়ার মত কষ্ট হয়েছে। তবু মনে হয়, গাছের পাতা চিরকাল থাকে না, সময় এলে তাকে বিদায় নিতে হয়ই। আমার প্রিয় মানুষগুলো, যাদের সাথে অনেক হাসির, অনেক ভালবাসার বাঁধন ছিল, তাদের অপরিচিত হওয়াকেও তাই মনে হয়, প্রয়োজনের দাবি ফুরাতে যে যার গন্তব্যে যাত্রা করেছি। এতে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। জোর করে ধরে রাখতে গেলে অবাঞ্ছনীয় হবার বোধটাই আরো প্রকট হত। leaves don’t stay.
নিউরন:
মস্তিষ্কের কোষগুলো বেশ আজব উপায়ে কাজ করে। একটির সাথে আরেকটি হাত পা ছড়িয়ে জালের মত তৈরি করে, যা দিয়ে মস্তিষ্ক কাজের জন্য সিগন্যাল পাঠায়। যত বেশি নেটওয়ার্ক, তত বেশি করিৎকর্মা হয়।
নলেজ আর উইজডম (বাংলায় জ্ঞান আর প্রজ্ঞা) আমার কাছে মনে হয় আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনের জালের মতই। আমরা যে জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা আহরণ করি, তা একেকটা ছাড়া ছাড়া কোষের মত। প্রজ্ঞা বা উইজডম পেতে এর মধ্যে নেটওয়ার্ক করতে হয়। যে যত বেশি নেটওয়ার্ক করতে পারে, অর্থাৎ একটা অভিজ্ঞতার সাথে আরেকটা জ্ঞান – এভাবে জোড়া লাগিয়ে নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারে, সে তত বেশি প্রজ্ঞাবান। উইজডম এর পুরো ব্যাপারটাই এই। সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক পরিবেশেও কেবলমাত্র পর্যবেক্ষণ ও চিন্তার জোরে শেখার মত কিছু একটা খুঁজে বের করা সম্ভব। আর একবার এ ব্যাপারটা আয়ত্ত হয়ে গেলে সে মানুষটার উচিৎ নতুন নতুন পরিবেশে যাওয়া। একটা নতুন অভিজ্ঞতা মানে অনেক গুলো নতুন কোষ, আর তার মানে লক্ষ কোটি নতুন নতুন কানেকশন (উপলব্ধি।) এই প্রক্রিয়ায় পুরনো অনেক উপলব্ধি মুছে যাবে। কিন্তু সেগুলো মোছারই দরকার ছিল, কারণ তার বদলে আরো ভাল কিছু এসে জায়গা করে নিয়েছে যে!
অসাধারণ আপু। আপনার লেখা পড়ে পিঁপড়াদেরকে হিংসা করা শুরু করলাম।
আমাদের সবকিছু ওরকম প্রি-প্রোগ্রাম্ড না বলেই বোধহয় আমরা আলাদা। যা কিছু করি, যা কিছু পাই – সবকিছুর দায় নিজেদের।
আমি আছি, কী করতে হবে বলেন। 😀
shundor comment. apu tomar fb account theke amake akta message koro, ami add kore nibo
ওয়াও!!! 😯 এভাবে তো কখনও ভেবে দেখিনি!!
সবকয়টি উদাহরণই চমকপ্রদ, আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে নিউরণেরটা। “যে যত বেশি নেটওয়ার্ক করতে পারে, অর্থাৎ একটা অভিজ্ঞতার সাথে আরেকটা জ্ঞান – এভাবে জোড়া লাগিয়ে নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারে, সে তত বেশি প্রজ্ঞাবান।”— দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণ!! :love:
apni lekhalekhi ato kom koren kano?
🙁
জ্ঞান আর প্রজ্ঞা ……
সুন্দর!!!! :love:
jantam shorob e shobcheye beshi inspiration pabo. 🙂
আমি আপনার ভাবনাগুলোকে রীতিমত শ্রদ্ধা করতে শুরু করেছি আপু।
এভাবে কেমন করে ভাবেন?
আমিও জ্ঞান আর প্রজ্ঞা এক করতে চাই।
সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক পরবেশেও নতুন কিছু খুঁজে পেতে চাই।
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি অবিরত।
cheshta chalachho? hoye jabe! ashole hoye gechhei already, tomar charpasher manush realize korbe.
কতটুকু হয়ে গেছে জানি না আপু।
তবে নিজের ভেতরে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন টের পাই।
অভ্যাস চালিয়ে যাচ্ছি একে স্থায়ী করার জন্য।
আজকে নাবিল ভাইয়ার সাথে কথা হল। একসাথে ইফতারি করলাম। আপনাদের উদ্যোগটা শুনে আগ্রহ হল খুব আপু।
o nabil k cheno naki? oke chinlei hobe! o thele shobaike egiye niye jabe. he is a great organizer mashaAllah.
itibachok poriborton ta kibhabe ashlo mone achhe? likhe falo, khub dorkar!!
হুম, চিনি ভাইয়াকে, অবশ্য বেশিদিন হয় নি।
আসলেই অনেক বেশি ভালো মানুষ। 🙂
এই পরিবর্তনের গল্প ব্লগে করা একটু রিস্কি আপু! ব্যক্তিগত প্রচার মনে হতে পারে। তাই নিজের ভেতরের জ্ঞানের সমন্বয়কে অন্যরকম প্লটে লেখালেখির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে চাই।
আমার পোস্টগুলো কেউ খেয়াল করে পড়লে সেটা একটু হলেও টের পাবার কথা। আমি আমার প্রতিটা পোস্টেই একটা সূক্ষ্ম মেসেজ দিই সাধারণত। 🙂
তবে আপনার মত করে এতটা গুছিয়ে সার্বজনীন প্রকাশ করতে পারি না, তবু আপনি যখন উৎসাহ দিচ্ছেন চেষ্টা করে দেখব আপু। 🙂
চমৎকার চিন্তাভাবনা! বরাবরের প্রকৃতিপাগল আমি, প্রকৃতির মাঝে কতকিছুই না দেখার, শেখার আছে! ছোট্ট পোকা থেকে শুরু করে বিশালকায় তিমি, আল্লাহ কতকিছুই না বানিয়ে রেখেছেন… :thinking:
সাহস করে এসে বলতে চাই, ‘আমি আছি, কী করতে হবে বলেন।’ 🙂
amader facebook e akta group achhe, okhane add kore nichhi. amake fb te message kore din. naam diye search dile peye jaben
লেখাটা পড়ে অনেকটা সময় চুপ মেরে বসেছিলাম,চারপাশটা তো আমিও দেখি,ভালোও লাগে কিন্তু এভাবে তো কখনো ভাবি নাই 🙁
লেখার ধরণটা অসাধারণ :love:
আপু ,‘আমি আছি, কী করতে হবে বলেন।’ 🙂
prothome amake amar facebook e knock korte hobe, ami amader group e add kore nibo. amar naam diye search dile paharer shamne akta meyer chhobi shoho j profile ta dekhba sheta amar.
আপু, ভীষণ ভাল লাগলো লেখাটা! :clappinghands:
“আমরা আমাদের স্বকীয়তা বুঝতেই অনেক দেরি করে ফেলি, আর আমাদের স্বকীয়তা সমাজের নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ডের বাইরে গেলে তা প্রকাশ করতে ভয় পাই।”
:clappinghands: :clappinghands:
প্রতিটা লাইন এক কথায় অসাধারণ!
onek thanks apu! 🙂
ভাল লেগেছে আপু। 😀
আমার জানা অনেক জটিল বিজ্ঞান সমস্যা “প্রকৃতির মডেল” বিবেচনা থেকেই সমাধান করা সহজ হয়েছে, মানুষ সিমিলারিটিতে সমাধান খুজে 😀
এভাবে তো ভাবি নাই! দারুন রকমের পোস্ট!
শুধু এই ডাক টার অপেক্ষায় ছিলাম। 🙂
‘আমি আছি, কী করতে হবে বলেন।’ 😀
ফেবুতে পাঠিয়ে দিয়েছি। নাম ‘ফারিহা ফারি’
tomra shorob er chhelemeyera to akekta gem! dekhle jane pani pai.