আপুকে প্রায়ই দেখতাম বালিশে মাথা রেখে কান্না করত। মাঝে মাঝে দেখতাম বারান্দায় দাড়িয়ে কি যেন ভাবত। মাঝে মাঝে যখন বৃষ্টি হত, দেখতাম আপু লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করত কেউ কাছে আসলে চোখের পানি মুছে ফেলত।
ব্যাপারগুলো বাসার কেউ বুঝতে পারত না। কিন্তু আমার চোখে ঠিকই ধরা পড়ত। কখনো আপুর কাছে জানতে চাইতাম না কি হয়েছে আপুর। ভাবতাম আপুর কাছে যদি জানতে চাই তাহলে আপুর হয়ত মন খারাপ হয়ে যাবে আরও বেশি। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমার অনেক জানতে ইচ্ছা করত কি হয়েছে আপুর??
আমার সাথে আপুর বয়সের ব্যাবধান ৭ বছরের। আপু তখন ভাসিটিতে তৃতীয় বছরের পড়ছে তখনকারা ঘটনা। আপুকে যখন কাঁদতে দেখতাম তখন আমার অনেক কান্না পেত। কেন যেন নিজের অজান্তে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ত। আপনজন কাউকে কাঁদতে দেখলে বেশি খারাপ লাগে। আর আমার পরিবারে আপুই আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করত। তাই আপুর প্রতি আমার বিশেষ মায়া ছিল। আমি যা চাইতাম আপু আমাকে তা কিনে দিত। আমি যদি খুব দামি কোন খেলনা চাইতাম আপু নিজের টাকা জমিয়ে জমিয়ে আমাকে কিনে দিত। এক কথায় ধরতে গেলে আপুই আমার পৃথিবী। কিন্তু আপুর হঠাৎ এই চুপচাপ ভাবে থাকাটা আমার সহ্য হচ্ছিল না। আগে আপু কত হাসত এখন আমার কথায় উওর হ্যা হু-এর মধ্যে সীমাবন্ধ করে রাখছে আপু। আগের ঘুমানো সময় আপুর কাছে গল্প শুনে ঘুমাতে যেতাম । এখন গল্প শুনতে বললে আপু বলে,”আমি গল্প ভুলে গেছি”
মন খারাপ করে ঘুমাতে যেতাম। আর ভাবতাম আপুর কি হয়েছে? আমার এত ভাল আপুটার কি হয়েছে? বাসার অন্য সবার সাথে আপু এত বেশি মিশত না। সারা দিন নিজের রুমে পিসি সামনে বসে থাকত না হলে পড়াশুনায় মগ্ন থাকত।
একদিন আমি ক্লাস থেকে বাসায় আসলাম । আপুর জন্য ডেইরী মিল্ক নিয়ে এসেছিলাম। আপু চকলেট খেতে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাই ভাবলাম চুপি চুপি আপুর রুমে গিয়ে বালিশের নিচে চকলেট রেখে দিব। আপু যখন দেখবে তখন অবাক হয়ে যাবে। 😯 তাই আমি আস্তে আস্তে আপুর রুমে গেলাম। দরজা একটু ফাঁকা করতে দেখি আপু পিসিতে বসে আছে। আমি আস্তে আস্তে দেখলাম আপু ফেসবুকে চ্যাট করছে। আমি আবাক হয়ে দেখলাম আপু কী-বোর্ডে লিখছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমার আসার শব্দ শুনে আপু তাড়াতাড়ি রুমাল দিয়ে চোখে মুছে বলে,” ওহ তুই ??” এরপর তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল। যাওয়ার সময় আপু ফেসবুক থেকে লগআউট হয়নি। আমি এই সুযোগে আপুর ফেসবুকে দেখলাম একটি ছেলের সাথে চ্যাট করছে। ছেলেটি নাম লিখা “নীল রহমান “ আমি চ্যাট গুলো পড়া শুরু করলাম।
সবশেষে লেখাটি আপু লিখছে ”তুমি কি সত্যি আমাকে রেখে চলে যাবে??”
নীল ,” হ্যা আজ থেকে আমাদের ব্র্যাক-আপ”
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না আসলে কী হয়ছে। আপুর মন খারাপের তাহলে এইটাই কারন। হঠাৎ আপু চলে আসল এবং আপু বুঝে ফেলল আমি আমার ফেসবুকে চ্যাটগুলো পড়েছি।
আমার আমার কাছে এসে আমাকে একটা চড় দিয়ে বলল, “যা বাগ এখান থেকে”।
আমি আপুর চোখ দু’টোর দিকে তাকালাম। আপুর চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে। দেখিই বুঝা যাচ্ছে আপু অনেক কান্না কাটি করছে । আপু এই প্রথম আমাকে মারল। কখনো আমার গায়ে হাত দেয়নি আপু। সত্যি আমার অনেক খারাপ লাগব। নিজের রুমে এসে অনেকক্ষন কাঁদলাম। একটা ছেলের জন্য আপু আমাকে মারল, আমি কি এত খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি কত কিছু মাথায় আসা শুরু করল। সেই দিনের পর থেকে আপুর সাথে আমার দুরত্ব বাড়তে থাকল।
এর দু’মাস পরের ঘটনা।
আগে আপুর জন্য বিয়ে দেখলে আপু বলত আমি এখন বিয়ে করব না। আগে পড়াশুনা শেষ করি। আমার কি কোন পছন্দ থাকবে না ইত্যাদি টাইপের কথা বলত। কিন্তু এখন আপু সেই রকম কোন কথা বলে না । আম্মু – আব্বু যদি বলে আজ তোকে ছেলে দেখতে আসবে আপুর দেখতাম কোন ফিল ছিল না। বলত ,”ওহ আচ্ছা”।
এর কিছুদিন পর আমার আপুটির বিয়ে হয়ে গেল ব্যাংকার একটা ছেলের সাথে। বাবা -মা যা বলছে তাই করেছে। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি আপুর চোখে –মুখে সেই আনন্দ মাখা অনুভূতিটা নেই। এখনো মনে আছে বিয়ের
আগের দিন রাতে আপু কিছু সময়ের জন্য ফেসবুকে বসেছিল এবং ফেসবুক থেকে উঠে আপু ওয়াশরুমে গেল। বুঝতে বাকি রইল না আমার। সবার সামনে কান্না করার ভয়ে ওয়াশরুমে গেল। ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পর আমি দেখি আপুর দু’চোখ লাল হয়ে আছে । সত্যি সেই দিন অনেক খারাপ লাগল। আপু সেই কান্না মাখে মুখটা আমি আজও ভুলতে পারব না। এরপর যথারীতি আপু চলে গেল অন্যের বাড়িতে। আমি বাসায় একা। আপুর সাথে মাঝে মাঝে ফেসবুকে কথা হয়। কিন্তু কখনো জানতে চাই না । বুঝতে পেরেছে ফেসবুকে কাউকে আপু খুব বেশি ভালবাসত। সেই ছেলেটির জন্য বেশি আসফোস হচ্ছে আমার আপুটির মত একজন ভাল মানুষকে হারাল। আমার সেই আগের আপুটিকে ফিরে পেতে চাই এখনো। যে আপুটি আমাকে গল্প বলে ঘুম পাড়াবে। আমার জন্য টাকা জমিয়ে খেলনা এনে দিবে। বাবা বকা দিলে আমার চোখের পানি মুছে দিবে। যখন রেজাল্টা খারাপ করতাম আপুর কাছে এসে হাউমাউ করে কান্না করতাম। আর আপু চোখের পানি মুছে দিয়ে বলত দূর বোকা কাঁদতে হয় নাই। পরের বার ভাল করবি। এটা ফেইসবুকের ঘটনা কেমন করে যেন আপুকে আমার কাছে থেকে দূরে নিয়ে গেল ।
বি:দ্র = লেখাটা র সময় অনেক আগের আপুর সেই পুরানো ঘটনাগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে আসল । আর অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আল্লাহ তুমি আমার আপুটিকে ভাল রেখ। আর সবাইকে প্লীজ অনুরোধ কাউর জন্য নিজের মন খারাপ করে নিজেকে কষ্ট দিবেন না। বিশেষ করে করে আমার মত ছোট ভাইদের যারা আপুদের একটু আদর, একটু ভালবাসা একটু গল্প শুনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে। যারা আপুটি কান্না মাখা মুখে দেখতে চায় না। দেখতে চায় আপনি হাসবে , গল্প করবে
পূর্ব প্রকাশ:এখানে
ফন্টের এর কারণে পড়তে সমস্যা হচ্ছে!
(বাকিদেরও মনে হয় সেইম কেইস!)
@বোহেমিয়ান
আমার এখানে তো কোন সমস্যা হচ্ছে না??
লেখা কি ছোট ছোট দেখা যাচ্ছে??
🙁
আপুর জন্য দোয়া, শুভকামনা।
ফন্ট অনেক বড় আর অন্যরকম লাগছে। কারণ বুঝলাম না।
কয়েকটা প্যারা দিয়ে লেখলে আর বানানের দিকে একটু খেয়াল রাখলে হয়ত আরও দৃষ্টিনন্দন হত।
লেখালেখি চলতে থাক।
ফন্ট ছিল এই ফরম্যাটে। ঠিক করে দিয়েছি।
দেখুন ঠিক আছে কি না।
ভাল লাগল আপনার মন্তব্য পেয়ে।
এবার ঠিক আছে।
তবে পরেরবার থেকে কয়েকটা প্যারায় লেখা দিলে পাঠকের পড়তে সুবিধা হত।
পরবর্তী পোস্ট পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। 🙂
ফিনিক্স@ ধন্যবাদ আপনাকে চেষ্টা করব প্যারা দিয়ে লিখতে।
ভাল থাকুন। অবশ্যই চেষ্টা করব লিখতে।
লেখাটা মনে হয় আগেও কোথাও পড়েছিলাম- যাই হোক, আপনার আপুর জন্যে শুভকামনা। মূলত প্রেম ভালোবাসার ফ্যান্টাসিতে থাকার সময় অনেক মানুষই ভুলে যায় তাদের আসল জীবনটাকে। আর যখন সেন্স আসে তখন আসলেই অনেক দেরী হয়ে যায়।
একুয়া রেজিয়া@ লেখাটি আগে “টেক প্রিয় ফেইসবুক জীবনী প্রতিযোগিতায় প্রকাশিত হয়েছিল” প্রকাশিত হয়েছিল।
“যখন সেন্স আসে তখন আসলেই অনেক দেরী হয়ে যায়।” কথথাটি ঠিক বলেছেন। আসলে আমরা যেন তখন মরিচীকার পিছনে ছুটতে থাকি। 🙁
অনলাইনের এইসব কাল্পনিক জগতে ভেসে যাওয়া মানুষগুলো সুস্থ হয়ে উঠুক,
লেখার ফন্ট বড় লাগছে বেশ. ঠিক করে দিলে সুবিধা হত
ঠিক করে দিয়েছি।
অনলাইনের এইসব কাল্পনিক জগতে ভেসে যাওয়া মানুষগুলো সুস্থ হয়ে উঠুক,
এই কামনাই করি
লিখাটা পড়েছি আগে কোথাও, তখনো কষ্ট লেগেছিলো, এখনো তেমনই বোধ হলো, আসলে আমরা খুব বেশি যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন……
কাল্পনিক জগত থেকে বেরিয়ে আসুক মানুষ সুস্থ হয়ে……এই কামনায়।
লেখাটি আগে “টেক প্রিয় ফেইসবুক জীবনী প্রতিযোগিতায়”প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে পড়ে থাকতে পারেন।
http://priyo.com/blog/2012/06/15/fb4779.html
🙁
🙁