বিস্ময়বালকের গল্প……

ছেলেটার বয়স সবেমাত্র ৫ হয়েছে। এই বয়সী ছেলেরা যা করে তাই করে বেড়ায়। বাবা কাজ করেন স্টিল কোম্পানিতে,মা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বাবা শখের বসে স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলিতে কোচের কাজও করেন। কি হলো একদিন,কে জানে! ছেলের মাথায় ফুটবল খেলার ভূত চেপে বসলো। বাবাও নামিয়ে দিলেন নিজের দলে খেলতে। প্রবল ভালোবাসায় খেলাটিকে আপন করে নিলো ছোট্ট ছেলেটি।

বয়স ৮ হতে না হতেই যোগ দিলো নিজের শহর এর ক্লাব নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ-এ। স্বপ্ন অনেক বড় খেলোয়াড় হবে।

স্বপ্ন পূরণের পথে অনেক বড় একটা ধাপ পেয়ে গেলো কিছুদিন পরেই। বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব রিভারপ্লেটের স্কাউট দল তার প্রতিভা দেখে তার ব্যপারে আগ্রহ জানালো। ছেলেটার খুশি আর ধরে না!

কিন্তু,জীবনের সব কিছু যে নিজের স্বপ্নমতো হয় না,তা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগলো না। ১১ বছর বয়সেই হরমোন স্বল্পতা দেখা গেলো শরীরে। চিকিৎসার জন্য দরকার প্রতি মাসে ৯০০ ডলার! রিভার প্লেট ক্লাব জানালো এতো টাকা দেয়া সম্ভব নয় তাদের পক্ষে।

কি করবে ছেলেটি? এতোদিনের স্বপ্ন,অনেক বড় ফুটবলার হবে সে। অনেক মানুষ তার খেলা দেখবে। সব স্বপ্ন কি ধূলিসাৎ হয়ে যাবে?

কার্লেস রেক্সাচ তখন বার্সেলোনা দলের স্পোর্টিং ডিরেক্টর। ছেলেটির প্রতিভার কথা শুনতে পেয়ে ছেলেটি আর তার বাবাকে একটা ট্রায়ালের সুযোগ দিলেন……

খেললো ছেলেটি……মূগ্ধ নয়নে দেখলেন কার্লেস রেক্সাচ………

হাতের কাছে কোনো কাগজ না পেয়ে সেই মূহুর্তেই একটা ন্যাপকিনের উপর চুক্তি তৈরী করে ছেলেটাকে বার্সেলোনার যুব দলে অর্ন্তভূক্ত করলেন রেক্সাচ। তার সব চিকিৎসার ব্যয় বার্সেলোনা ক্লাব দেবে বলে জানানো হলো। নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে ফিরে এলো ছেলেটি। সবসময় মুখে লেগে থাকা হাসিটা আবার ফিরে এলো তার ঠোঁটে।

ফুটবল বিশ্বে আবির্ভাব হলো নতুন এক বিস্ময়ের……লিওনেল মেসি!

১৩ বছর বয়সে নিজের দেশ আর্জেন্টিনা ছেড়ে পাড়ি জমালেন স্পেনে। যোগ দিলো বার্সেলোনার বিখ্যাত যুন প্রকল্প “ল মেসিয়া” তে।

বার্সেলোনার প্রথম একাদশে জায়গা করে নিতে খুব বেশি সময় নেয়নি মেসি। ১৬ই নভেম্বর ২০০৩ সালে, ১৬ বছর ১৪৫ দিন বয়সে এক প্রীতি ম্যাচে খেলা শুরু করে বার্সেলোনার মূল দলে। স্প্যানিশ লিগের সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়ার হিসেবে খেলা শুরু করতে আর এক বছরও সময় নেয়নি মেসি।

নিজের দেশ ছেড়ে চলে আসলেও দেশের কথা ভুলে যায়নি। আর্জেন্টিনার হয়ে অনূর্ধ্ব ২০ দলে খেলা শুরু করে ২০০৪-এ। ২০০৫-এ জয় করে ফিফা যুব বিশ্বকাপ।

২০০৫ সালেই স্পেনের নাগরিকত্ব পেয়ে গেলো মেসি। কিন্তু,জাতীয় দলের জার্সি যে আর্জেন্টিনারটাই সব সময় তার গায়ে দেখা যাবে এটা জানাতে একটু দ্বিধা করেনি।

এবার এলো ২০০৬ বিশ্বকাপ। দেশের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ খেলতে নামার রেকর্ড হয়ে গেলো তখনই। আর সার্বিয়া মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বকনিষ্ট গোলদাতাও সেবার মেসি!

২০০৬-০৭ মৌসুম থেকেই বার্সেলোনার মূল দলে নিয়মিত খেলা শুরু করলো মেসি। প্রথম মৌসুমেই ২৬ ম্যাচে ১৪ গোল!

২০০৮ এ এসে আর্জেন্টিনার হয়ে জয় করলেন অলিম্পিক।

একই সাথে শুরু হলো বার্সেলোনার হয়ে দূর্দান্ত খেলা। ২০০৮-০৯ মৌসুমে ৩৮ গোল! পরের মৌসুমে ৪৭ গোল! তারপরের মৌসুমে? ৫৩ গোল!!! যেন নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যাবার লড়াই! মেসি দলে থাকলেই অপর দলের খেলোয়ারদের অসহায় করে তোলে। অসাধারণ ড্রিবলিং,নিঁখুত লক্ষভেদ করার ক্ষমতা তাকে নিয়ে এলো অন্য এক উচ্চতায়।

আগে প্রশ্ন ছিলো,মেসি কি এই সময়ের সেরা ফুটবলার?

আর এখন প্রশ্ন,মেসি কি সর্বকালের সেরা ফুটবলার?

সেই ছোট্ট ছেলেটি যখন বছর বয়সে মনের আনন্দে ফুটবল খেলা শুরু করেছিলো তখন কি তার স্বপ্ন ছিলো এতদূর আসার? ফুটবল সম্পর্কে সামান্য কিছু জানে এমন প্রতিটা মানুষের প্রিয় খেলোয়ার হবার।

শুধু যে ভালো খেলোয়ার না,ভালো মানুষ হবার প্রত্যয়ও যে দেখা যায় তার মধ্যে। তাই ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন ২০০৭ থেকে।

আর্জেন্টিনার হয়ে ২০০৫ থেকে ২০১০ এর মধ্যে এক বছর বাদে বাকি বছরগুলোতে হয়েছে বর্ষসেরা ফুটবলার। ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার ২০০৯ ও ২০১০-এ। সম্ভবত প্রথম বারের মতো টানা ৩ বার এই পুরস্কার জিততে যাচ্ছে মেসি।

বয়স কতো হলো মেসি-র? মাত্র ২৪! আরো অনেক বছর মানুষকে ফুটবলের জাদুতে মুগ্ধ করে রাখতে চায় ছেলেটি। তার স্বপ্ন তো আরও অনেক দূর যাবার……এখনো তো আরও অনেক পথ বাকি………

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

20 Responses to বিস্ময়বালকের গল্প……

  1. ইয়াদ বলেছেনঃ

    মেসিকে ভালোই লাগে!
    আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ওর কুফা লাগসে নাকি !!
    অনেক ভালো ভালো সুযোগ মিস করে।
    লীগে গিয়ে আবার ধুমায় গোল দেয়! :dhisya:

    ওর acceleration অস্বাভাবিক বেশি! এটাই ওর জন্য অনেক বড় একটা প্লাস পয়েন্ট! আরেকটা প্লাস পয়েন্ট হলো রানিং অবস্থায় ডিরেকশনটা হঠাৎ পরিবর্তন করতে পারে!
    🙂

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      ওর ড্রিবলিং ক্ষমতা অসাধারণ। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে তো ওর তুলনাই হয় না………
      :dhisya:

      আর্জেন্টিনার হয়ে পারফর্মেন্স ওই তুলনায় ভালো না। কিন্তু,ইদানীং অন্যদের দিয়ে যেভাবে গোল করানো শুরু করেছে,নিজের গোল পেতেও মনে হয় বেশিদিন বাকি নেই
      🙂

  2. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    এই বিস্ময়বালকের গল্প আগে থেকেই জানতাম, তবু আবারো পড়লাম। ভালো গল্প, অদম্য স্বপ্নের পূর্ণতার কাহিনী পড়তে কার না ভালো লাগে? 🙂

  3. মুবিন বলেছেনঃ

    মেসির তুলনা মেসিই

  4. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    MESSI merized হয়ে যাই! 😀

    আগের প্রশ্নের উত্তর “মেসি আমাদের সময়ের সেরা খেলোয়াড় কিনা- সেটা তো হ্যাঁ”
    আর এখনকার প্রশ্নের উত্তর কী হবে?

    আমার কাছে হ্যা!
    বিশ্বকাপ জেতালে সেরা খেলোয়াড় না জেতালে না- এই টাইপের সমীকরণ পছন্দ না।

    তর্ক বিতর্ক চলুক সমস্যা নাই।
    কিন্তু খেলার নান্দনিকতাকে যেন আমরা না ভুলে যাই!

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      আমার উত্তরও হ্যাঁ,কারণ ওর মতো কোনো খেলোয়াড় আমি এখন পর্যন্ত দেখি নাই।
      :dhisya:
      আর আগের পেলে,ম্যারাডোনাদের সাথে এখনকার খেলোয়াড়দের তুলনা করতে আমি নারাজ। তখনকার খেলা আর এখনকার খেলা এক মানের না। :balancin:

  5. কিনাদি বলেছেনঃ

    দারুণ লাগলো। সুন্দর করে লিখেছেন। 🙂

  6. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    ধইন্যবাদ 😀

  7. কৃষ্ণচূড়া বলেছেনঃ

    “হাতের কাছে কোনো কাগজ না পেয়ে সেই মূহুর্তেই একটা ন্যাপকিনের উপর চুক্তি তৈরী করে ছেলেটাকে বার্সেলোনার যুব দলে অর্ন্তভূক্ত করলেন রেক্সাচ”… কি অদ্ভুত! কি অদ্ভুত!

    ভাল লেগেছে। অনেক না জানা কথাই জানা হল।

    স্বপ্নই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সপ্নেরই জয়গান!

  8. প্রজ্ঞা বলেছেনঃ

    পোস্টের টাইটেলটা দেখেই বুঝতে বাকি ছিল না এ কোন বিস্ময়বালকের জীবনের গল্প। 😀

    আমি তো পুরাই মেসির পাংখা। :penguindance:

    অফটপিকঃ মেসি যেদিন করে গোল দেয়, সেদিন করে আমাদের বাসায় জটিল খাওয়া-দাওয়া হয়। হাজার হোক, আব্বুর প্রিয় খেলোয়াড় বলে কথা। আর এজন্যই আমি নামাজে বসে দোয়া করি- আল্লাহ, মেসি যেন আজকে অন্তত একটা গোল দেয়! 😳

  9. নিশম বলেছেনঃ

    সেরাদের মধ্যে তুলনা হয়না। মেসি সেরা, তবে সর্বকালের সেরা, এটা বলাটা মুশকিল না, আসলে আমার কাছে এটা মনেই হয়না ! আমি তাহলে রোনালদিনহো আর জিদান এদের কোথায় স্থান দেবো?

    মেসির গল্প পড়ে অবাক হয়ে গেলাম, সে তার বাবার মান রেখেছে, এবং সে কি তা দেখিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতির একটা স্বল্পতাকে সে শক্তিতে রুপান্তরিত করে আজ অন্য একটা মাত্রায় উঠে এসেছে, এ জন্য সে অবশ্যই অসাধারনত্বের দাবীদার 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।