চায়ের কাপটা নিয়ে সুবিশাল এপার্টমেন্ট এর বিশাল ফ্ল্যাটের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো নিতু । সচরাচর এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙ্গেনা ওর । গত ৫ বছরে রাতে ঘুম কি জিনিস তা মোটামুটি ভুলে গেছে ও । ৫ বছর আগের স্মৃতি গুলো ফ্লাশব্যাক হয় শুধু ।
এই শোন , আমাদের না ছোট্ট একটা বাসা হবে । এই এতোটুকু , একটা খেলাঘরের মতো । সেটাতে থাকবে ছোট্ট ছোট্ট দুটো রুম , একটা এক চিলতে বারান্দা ।
হুম ।
আর ছোট্ট ছোট্ট সব ফার্নিচার থাকবে । একটা ছোট্ট টিভি , একটা ছোট্ট ফ্রিজ ।
আর একটা ছোট্ট বাবু ও থাকবে তা বললে না ? মুচকি হেসে অয়ন জানতে চাইলো ।
ধুর তোমার খালি ফাজলামো ! লাজুক হাসিতে নীতু ঝলমল করে ।
আচমকা পাশে রাখা ফোনের শব্দে নীতু বাস্তবে ফিরে আসে । এলার্ম টা বাজছে । প্রতিদিন ই বাজে , কিন্তু ওঠা হয় না । সংসারে ব্যতিব্যস্ততা দেখানোর প্রয়োজন ওর কখনোই পড়েনি । বিশাল বিত্তের মাঝে কেমন যেন দম আটকে থাকা অনুভূতি আর সাড়ম্বর ক্ষনস্থায়ী আনন্দ টুকু নিয়ে সময় তো কেটে যাচ্ছে !
এই যে জনাব তুমি এতো রাত জাগো ক্যান ?
ভাবি ।
কি ভাবো ?
ভবিষ্যত্
ভবিষ্যত্ কি ভাবো ?
পরিণতি ।
ঐ তুমি এতো কমকম কথা বলো ক্যানো ? আমার মত বেশি কথা বলতে পারো না ? কিসের পরিণতি ভাবো ?
আমাদের পরিণতি ভাবি নীতু । কি করে কি হবে তা ভাবি । জানো তোমাকে ছাড়া মুহুর্ত গুলো কেমন হবে ভাবতেই কেমন যেন দম আটকে আসে ।
অয়নের হাতটা শক্ত করে ধরে নীতু বলে , তুমি এমন ভাবো কেন ? আমাকে ছাড়াতো তোমার থাকতে হবে না । কোনদিন হবে না । আমি তোমাকে থাকতে দিবো না ।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাস্তবে ফিরে আসে । শক্ত করে বারান্দার গ্রীল ধরে থাকায় হাত টা লাল হয়ে গেছে । আকাশটায় খুব মেঘ করেছে । দু এক ফোঁটা জল নীতুর হাতেও পড়ে ।
এইযে মহারাজ শিগ্গির ক্যাফেটোরিয়ার সামনে এসো ।
এই বৃষ্টি তে ?
হুম । এসো , তাড়াতাড়ি ।
কাকভেজা হয়ে অয়ন আসে ।
কি ব্যাপার এত জরুরী তলব ?
আজ আমরা বৃষ্টিতে ভিজবো । হেসে নীতু জানায়
ধুর আমার ভাল লাগে না ।
আমার লাগে । এই মামা যাবা ? তারপর ।অয়নের হাত ধরে একলাফে রিকশায় ।
নীতু , বৃষ্টিতে ভিজছো কেন ? ঘরে আসো । রুম থেকে কৌশিক ডাকে । তাড়াতাড়ি গ্রীলের ভেতর হাত নিতে যেয়ে লোহায় কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় !
লাল রক্ত ।
কাজি অফিস থেকে লাল শাড়ি পরা টুকটুকে নীতু আর হতভম্ব অয়ন বের হয় ।
নীতু ,কাজটা কি আমরা ঠিক করলাম ?
খুব ঠিক করলাম । এখন আমরা একটা ছোট্ট বাসা নিবো । দু কামরার একটা বাসা । তুমি আর আমি থাকবো ।
আর মা ?
দু রুম কি এমনে বলসি ? গাধা । চলো রিকশা নিই ।
আমি এমনি হতভাগা বিয়ের পর তোমাকে রিকশায় তুলে ঘোরাতে হচ্ছে ।
শোন যে দিন দু চাকার প্রাইভেটকার বের হবে ঐদিন আমাকে গাড়ি কিনে দিবা । তার আগে না ।
তারপর রিকশায় দুজন স্বপ্ন বুনতে থাকে । যতক্ষন না ঘাতক বাসটা পেছন থেকে এসে ধাক্কা দেয় , চোখ বন্ধ করার আগে রাস্তায় রক্তের মেলা দেখে আর্তচিত্কার বেরিয়ে আসে অ-য়-ন !!!
হিস্টিরিয়া রোগীর মত কাঁপতে থাকে নীতু । চিত্কার শুনে দৌড়ে আসে কৌশিক । কৌশিককে জড়িয়ে ধরে কাঁদে নীতু । আমার ছোট্ট বাসাটা ভেঙ্গে গেলো কৌশিক আমার বাসাটা … আমার ছোট্ট একটা বাসা …
নীতু কে ধরে থাকে কৌশিক । কি দেয়নি সে নীতু কে । অর্থ বিত্ত ভালবাসা । তার এতো বড় ফ্লাট থাকার পর ও একটা মানুষ কেমন করে একটা ছোট্ট বাসা কিংবা তার মত একজন কে রেখে একটা অপদার্থের জন্য এত ভালবাসা ধরে রাখে বোঝে না । দরকার ও নেই । শুধু নিতু কে ধরে থাকতে চায় ও । একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নীতুকে আরো শক্ত করে ধরে থাকে কৌশিক।
🙁 এমন করে কত স্বপ্নের মৃত্যু দেখতে হবে আর? মাঝে মাঝে ভাবি, শুধু সড়ক হত্যার (দুর্ঘটনা বলতে আর ইচ্ছা হয় না এখন) কারণে এই দেশে কত স্বপ্নেরা লাশ হয় প্রতিদিন । আশা করি, নীতুরা নতুন করে বাঁচতে শিখুক তবু কৌশিকদের ভালোবাসায় 🙁
নিরাপদ সড়ক চাই!
🙁
🙁
গল্পটা খুব সুন্দর।
ধন্যবাদ 🙁
কেন জানি আশংকা করছিলাম এমন কিছু একটা কষ্ট পাবো, অদ্ভুত একটা বোধ এসে গেছে, কেন জানি মনে হয় এখন আর কোন গল্পের শেষটুকু অন্যরকম হবে না, সবকিছুই একটা মুহুর্তে এসে কষ্টে পালটে যাবে……
লেখার গাঁথুনি ভালো লেগেছে, আরো লিখার অপেক্ষায় রইলাম…
🙁 🙁
আপনার ছোটগল্পগুলো পড়তে বেশ লাগে। এটাতেও ব্যতিক্রম হয় নি।
দুটো লেখাই কষ্টের মায়াজালে শেষ হল! 🙁
এমন গল্প আরও চাই।
ইতিবাচক কোন গল্প বোনা যায় কি?
আপনার লেখনীতে সেরকম কিছু পড়তে ইচ্ছে করছে।
অফটপিক-
আপু, বাংলা বানান যদি আরেকটু যত্ন নিয়ে আপনার গল্পের মত, আপনার স্বপ্নের মত করে বুনতেন, তবে আমার মত আরও পাঠকের স্বপ্নগুলোও শতভাগ পূর্ণতা পেত!
ইতিবাচক লেখার চেষ্টা থাকবে 🙂
বানানে আমি অতিশয় কাঁচা , লক্ষ্য রাখবো এরপর থেকে অবশ্যই , ধন্যবাদ 🙂
গল্পটা ছুঁয়ে গেলো আপু।
কথাগুলো কোট মধ্যে দিলে কোনটা বাক্য কোনটা কোট বুঝতে সুবিধা হত।
এখানে পার্থক্য করা সোজা হয়।
কৌশিককে জড়িয়ে ধরে কাঁদে নীতু । আমার ছোট্ট বাসাটা ভেঙ্গে গেলো কৌশিক আমার বাসাটা … আমার ছোট্ট একটা বাসা …
Our sweetest songs are those that tell of saddest thought – দুঃখের গল্প ভালো পাই!
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
ভালো লাগছে আপু!
😀
চমৎকার মন খারাপ করা গল্প 🙁
খুব সুন্দর গল্প।
আপনার ছোটগল্পগুলো সুন্দর হয়।
অনেক ধন্যবাদ 😀
আপু লেখাটি সত্যি অসাধারন হয়েছে। আরও লেখা চাই
বি:দ্র:
যখন কোন একটা গল্পের অর্ধেকটা পড়ি তখন আমি চিন্তা করি পড়ের কাহীনিটা কি হতে পারে তখন নিজে নিজে চিন্তা করে একটা গল্প দাঁড় করাই । পড়ে বাকিটুকু পড়ি।
এই গল্পটা অর্ধেক পড়ে যা চিন্তা করেছিলাম তার ৮০% মিলে গেছে তা দেখে আমি সত্যি হতবাক।
ধন্যবাদ তুসিন 🙂
দারুণ লিখেছ!
কি খাবা বল ? নাহ থাক এখন তো রোজা !!! 😛
সেটাই!! 😀
লও একটা কোক খাও
:beerdrink:
:haturi:
রোজার দিনে !!