একদিন ভাগ্নে কে বললাম, “আয় তোকে ভর্তা বানাই”। পিচ্চি হাসতে হাসতে শেষ। বলে, “দেখো বখ্খা কী বলে! আমাকে নাকি ভর্তা বানাবে”। বড় ভাগ্নীটা গভীর মনযোগ দিয়ে গল্পের বই পড়ছিলো। হঠাৎ বই থেকে মুখ তুলে বলল, “লবণ মরিচ ঠিকমতো দিও, নইলে খেতে পারবানা, ও যা বিচ্ছু ছেলে!” 8)
ভাগ্নেটার ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা সব ‘গাড়িময়’ হয়ে গেছে। সব কিছুকে গাড়ির সাথে তুলনে করবে। নুডল্স খাচ্ছিলো, প্লেটের বাইরে একটা নুডল্স পড়ে গেছে। সে উৎফুল্ল হয়ে বললো, “দেখো একদম গাড়ির চাকার মতো হয়ে আছে”। কিংবা কোথাও চুড়ি দেখলো তাহলেই একটা বক্স নিয়ে সেটার নিচে চুড়িগুলো জুড়ে দিয়ে গাড়ি বানানোর চেষ্টা করবে। সুতা রাখার বক্স টা নিয়ে সেটার নিচে সুতার গুটিগুলো জোড়া দেয়ার চেষ্টা করলো কিছুক্ষণ, কিংবা খাতা কলম পেলেই ইয়া বড় বড় কয়েকটা গাড়ি এঁকে বসে থাকবে। ওর তিন চার সেট লেগো দিয়ে বিশাল এক ট্রেন বানালো। তারপর ট্রেনের পাশে শুয়ে মেপে দেখে চিৎকার দিয়ে বললো, “ইয়াহু! আমার সমান ট্রেন!” :love: :love:
স্কুলে নতুন ভর্তি হওয়ার পর আর্ট ক্লাসে সব পিচ্চিদের ব্ল্যাকবোর্ডে নিয়ে যার যার খুশীমতো ছবি আঁকতে দিল। সব পিচ্চিরা ফুল-ফল কিংবা কুঁড়েঘর এর ছবি আঁকলো। আর ভাগ্নে পুরো ব্ল্যাকবোর্ডের যতটা ওর হাতের নাগালে পেল সবটুকুতে গাড়ি এঁকে ভরিয়ে ফেললো।
একদিন দেখি বাসার সব বালিশ ওর দখলে চলে গেছে। সব বালিশ সাজিয়ে ট্রেন বানিয়ে রেখেছে। সামনের দিকে দেখি স্কেল একটা বাঁকা করে আটকে রেখেছে বালিশ দিয়ে। আমাকে বলে, “গাড়ির ই আছে না! ওইটা বানিয়েছি”। মানে গিয়ার আরকি!
পিচ্চি তার সব লেগো দিয়ে গাড়ি বানিয়ে রেখেছে। আমি ওর গাড়িময় চিন্তা থেকে ওকে একটু বের করার চেষ্টা করলাম। এজন্য একটা বিল্ডিং বানিয়ে দিলাম। এটা ওর খুবই পছন্দ হলো। সে বিল্ডিংটা নিয়েই ছাদের রেলিং দিলো, ছাদে পানির ট্যাংকি বসালো। তারপর বাড়ির সামনে রাস্তা দিলো। সেই রাস্তায় একটা গাড়ি।
কিছুক্ষণ পর গিয়ে দেখি পুরো বিল্ডিংটার নিচেই চাকা লাগিয়ে দিয়েছে।
আরেকবার বানালাম বন্দুক। সেটা পেয়ে সবাইকে গুলি করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ঘর পুরো রণক্ষেত্র! তিন ভাই বোন মিলে ইয়া ঠিশা! ইয়া ঠিশা! করছে। ওদের গুলির শব্দে ঘরে টেকা দায়।
যা বাবা, তোর গাড়িই ভালো। :thinking:
আমার পিচ্চি ভাগ্নীটা সুযোগ পেলেই আপুর কোলে উঠে বসে থাকে। আমি ফোনে বলি, “কোলে উঠবে না কিন্তু, নিজে নিজে হাঁটবে আম্মুর সাথে সাথে”। প্রথম প্রথম কোলে উঠবে না বলার সাথে সাথেই সে বলতো, “না উঠবো”। এখন একটু বুদ্ধি হয়েছে তো! খুব সুন্দর করে বলে, “আমি কোলে উঠি না তো এখন!” একদিন রাতে আমি ওর সাথে অনেক গল্প করছিলাম। হঠাৎ সে বলে উঠলো, “বখ্খা, আমি এখন আর কোলে উঠি না, আম্মুর সাথে সাথে হাঁটি”। আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম কারণ ও একটু আগেই ওর মার কোলে ছিল। আমার হাসি দেখে পিচ্চির সে কী রাগ!
আপু একদিন অনেকক্ষণ কোলে রেখে শেষে বিরক্ত হয়ে নামিয়ে দিয়ে বললো,”তুমি খালি কোলে উঠো, তোমার বখ্খা কে ফোন করে বলে দিব কিন্তু!” পিচ্চি ক্ষেপে গিয়ে বললো, “আমি কি এখন কোলে উঠসি? এখন কি কোলে আছি? এখন তো আমি চেয়ারেই বসছি!” বলে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে রইলো। আপু এমন টাসকি খাইসিলো যে বেশ কিছুক্ষণ পর্যন্ত কিছুই বলতে পারেনাই। 😯
আজকালের পিচ্চিগুলো মুরগী রান্না করলে রান ছাড়া কিছুই খেতে চায় না। আমার ভাগ্নে-ভাগ্নী তিনজন তাই বেশীরভাগ সময় বড় ভাগ্নীটা ছোট দুইটার জন্য মুরগীর রান রেখে দেয়। একদিন রাতে ভাগ্নে তার মা কে বললো, “আম্মু, আমি রান দিয়ে ভাত খাবো”
আপু বললো, “একটা মুরগীতে কয়টা রান থাকে?”
-“দুইটা”
-“দুপুরে যে দুইজন মিলে খেয়েছো, এখন তাহলে রান কোথায় পাবো?”
পিচ্চি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, “তাহলে হাতের রান দাও!”
ভাগ্নীঃ একটা গল্প বলি, শুনবে? মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে কিন্তু!
ভাগ্নেঃ আচ্ছা বলো।
ভাগ্নীঃ গল্পটার ৪টা পার্ট।
ফার্স্ট পার্টঃ রাজা গেল শিকারে। একটা ঘুঘুর দিকে খুব ভালো করে নিশানা করলো। কিন্তু তীরটা যেই ছুঁড়লো ঘুঘু উড়ে চলে গেলো। রাণী বললো, “ভালো করে নিশানা করলে ঘুঘুটা শিকার করতে পারতে।” রাজা রাণীকে থাপ্পড় দিয়ে বললো, “শিকার আমি করছি নাকি তুমি করছো?”
সেকেন্ড পার্টঃ রাণী রাজাকে খেতে দিয়েছে। রাজা খেয়ে বললো, “তরকারীতে লবণ কম হয়েছে।” রাণী রাজাকে থাপ্পড় দিয়ে বললো, “রান্না আমি করেছি নাকি তুমি করেছো?”
এরপর ফোর্থ পার্ট…
ভাগ্নেঃ থার্ড পার্ট কোথায় গেল?
ঠাআআআশ্শ্শ্! ( থাপ্পড়ের শব্দ) :slap:
ভাগ্নীঃ গল্প আমি বলছি নাকি তুমি বলছো? 😐 :babymonkey:
কিছুক্ষণ পর গিয়ে দেখি পুরো বিল্ডিংটার নিচেই চাকা লাগিয়ে দিয়েছে।>> 🙄 🙄
তিন ভাই বোন মিলে ইয়া ঠিশা! ইয়া ঠিশা! করছে। ওদের গুলির শব্দে ঘরে টেকা দায়। >> :dhisya: :dhisya:
থাপ্পড়ের গল্পটার কথা শুনে নিজের পিচ্চিকালের কথা মনে পড়ে গেল। পিচ্চিকালে আমিও এই গল্প করতাম! 😛 😛
কত্তদিন পড়ে তোর এই পোস্ট! এতদিন শুধু অপেক্ষা করছিলাম! :love:
বাচা ভয়ঙ্কর কাচ্চা ভয়ঙ্কর! এই কিউট কাচ্চাবাচ্চাদের জন্য ভালোবাসা! :beshikhushi:
তবে কিনাদি, এতদিন পরেও তোর বানান ভুল দেখলে কিন্তু সত্যি কষ্ট হয়! :crying:
থ্যাংকিউ আপু :love:
কই কই কী কী ভুল করসি তাও জানিনা :crying:
তুলনে, বক্স টা, পারেনাই >> তুলনা, বক্সটা, পারে নাই (এগুলো টাইপো, বুঝতে পেরেছি)
পারবানা >> পারবা না (না বোধক অর্থ প্রকাশ পেলে ‘না’ আলাদা শব্দ হিসেবে বসে, মানে মাঝে স্পেস দিয়ে কিন্তু তুলনা, নিশানা এগুলোতে ‘না’ বোধক আলাদা অর্থ নেই, তাই এরা একটাই শব্দ)
ভাগ্নীঃ , ভাগ্নেঃ >> ভাগ্নী: , ভাগ্নে: (কথোপকথনের সময় বিসর্গ না, কোলন বসে, বিসর্গ এর আলাদা ব্যবহার, আলাদা উচ্চারণ, তাই কথোপকথন বোঝাতে বিসর্গ ব্যবহার করলে পুরো শব্দের উচ্চারণই পরিবর্তিত হয়ে যায়)
আশা করি, বিসর্গ আর কোলনের চেহারাটা তুই চিনিস। দুইটা দেখতে কিন্তু দুই রকম! 😛
ওরে আল্লাহ! হাসতে হাসতে পড়ে যাচ্ছি! =)) উফফ এইগুলাকে তো খুব দেখতে মন চাচ্ছে এখন আমার…লাইভ পারফরম্যান্স বলে কথা! 😛
তোমার পুরো সিরিজটা ভীষণ মজা নিয়ে পড়েছি। বাচ্চাদের আমি এমনিতেই বিশাল ফ্যান। :happy:
এই সিরিজ চলুক আরও। আর অনেক অনেক দু’আ থাকল সোনামণিগুলোর জন্য। 🙂
শেষের গল্পটা তো মারাত্মক! আমি আগে শুনি নাই। 😀
“তাহলে হাতের রান দাও!” =))
“আমি কি এখন কোলে উঠসি? এখন কি কোলে আছি? এখন তো আমি চেয়ারেই বসছি!” :love: :love:
অতি অতি প্রিয় একটা সিরিজ – এত আনন্দ লাগে পড়তে! পিচ্চিগুলা বড় হয়ে গেলে কী হবে ভাবছি। 🙁
উফফ!! এই পিচ্চিগুলোর কথা শুনলে হা না হয়ে পারিই না!! কী অসাধারণ এক একজনের চিন্তা-ভাবনা!! একটাই প্রার্থনা, বড়ো হয়েও যেন ভাবনা চিন্তাগুলো পালটে না যায়! আর এই সিরিজ যদি কখনো বন্ধ হইছে! আপনার নামে হুলিয়া জারি হবে কিন্তু! 8)
হাহা! মারাত্মক পার্ট হইছে এইটা
এখনও এত কম ভিউ!
হা হা ইন্টারেস্টিং
🙄 🙄
চমৎকার 🙄
ভাগ্নীঃ গল্প আমি বলছি নাকি তুমি বলছো
:fire: :fire:
হাসতে হাসতে আমি অস্থির
কড়া…কড়া……ঐরকম গাড়ি আর বাড়ি বানানোর নেশা আমারও ছিলো, সারাদিন ধরে। তখন তো জানতাম না ব্যাপারটা একদিন আমাকে স্থাপত্য পড়ার উস্কানি দিবে। কিন্তু আমি খুব কম কোলে চড়তে চাইতাম, আর মারামারিও কম করতাম (ভাগ্যিস এইটা আম্মু পড়তেছে না 😀 )……
ভালো লাগছে পড়তে।