মহামান্য আদালতঃ
গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারলাম বুয়েটের চলমান আন্দোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ যে আন্দোলন চলছে তা নিঃশর্ত ভাবে বন্ধ রাখতে হবে। এর পাশাপাশি চার সপ্তাহের মধ্যে আপনার দরবারে ‘ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য থাকিবে এই মর্মে যে কেন এই আন্দোলন অবৈধ ঘোষণা করা হইবে না’।
মহামান্য আদালতঃ
এই আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচে অগ্রহণযোগ্য আদেশ প্রদান করা হয়েছে বলে একজন নাগরিক হিসেবে মনে করছি। এই আদেশ সংবিধান বিরোধী ও মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থি শুধু নয়, এই আদেশ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচে কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
মাই লর্ডঃ
কোন বিচারিক আদেশের সমালোচনা কিংবা প্রশংসা কোনটিই করার সুযোগ নেই। তাই তা করার দুঃসাহস দেখাবো না। শুধুমাত্র এই বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। মাননীয় আদালতের নয় বিবেকের কাছে।
রাষ্ট্রের সর্বচ্চো বিধিবিধান সংবিধান এর ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যেকোনো নাগরিকের শান্তিপূর্ণভাবে কোন সভা বা সমাবেশে অস্ত্র ছাড়া অংশ গ্রহণ এর অনুমতি রয়েছে। তবে সেই অনুচ্ছেদ এটাও বলে যদি রাষ্ট্রীয় বা জননিরপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কারণে যদি আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকে তবে সে সভা বা সমাবেশ করা যাবে। এখন প্রথমত উপস্থাপন করতে চাই- বুয়েটের আন্দোলনে কেউ অস্ত্রসহ অংশ নিয়েছে কিনা অথবা বুয়েটের আন্দোলনে জন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে কিনা? বুয়েট, গণমাধ্যম, সারাদেশ সাক্ষী যে কেউ অস্ত্র নিয়ে বুয়েটে আন্দোলন করেনি এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করেনি, কোথাও ভাংচুর করেনি, কোন গাড়িতে আগুন দেয় নি। তাহলে এই আন্দোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা কেন? যেহেতু এটা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার, তাই আন্দোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা কেন সংবিধান পরিপন্থি বলে গণ্য হবে না?
Freedom of assembly
Every citizen shall have the right to assemble and to participate in public meetings and processions peacefully and without arms, subject to any reasonable restrictions imposed by law in the interests of public order health.
মাই লর্ডঃ
আন্দোলনের উপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ক ধারা লঙ্ঘন হয়েছে কিনা তা আমলে নেয়ার অনুরোধ করবো। এই ধারা প্রদত্ত অধিকার অনুযায়ী একজন নাগরিক এর শান্তিপূর্ণ উপায়ে মতামত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বুয়েটের আন্দোলন মতামত প্রকাশের, দাবী উপস্থাপনের। সেই মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত নিশ্চিত অধিকার বন্ধ করা হল রাষ্ট্রের সর্বচ্চো আদালতের মাধ্যমে। আমাদের প্রশ্ন- রাষ্ট্রের সর্বচ্চো আদালত সংবিধান প্রদত্ত অধিকার জরুরী অবস্থা ছাড়া খর্ব করতে পারে কিনা? আমাদের বাহ্যিক জ্ঞান বলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ‘উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনা পূর্বক’ এখনও প্রজাতন্ত্রে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেননি। তাহলে আদালত কেন এমন সংবিধান বিরোধী অবস্থানে গ্রহণ করলো?
মহামান্য আদালতঃ
আমরা স্বীকার করছি দায়ের করা আবেদনে বুয়েটে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সেই কারণে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা আরো চাওয়া হয়েছিল যেসব বিষয়ে তার মধ্যে ছিল –
১- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুয়েট প্রশাসনের জারি করা ৪৪ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার
২- ৭ দিনের মধ্যে বুয়েট ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন
৩- রোববার বুয়েটে অনির্ধারিত ছুটি
৪- তিন দিনের মধ্যে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
মাই লর্ড-
বুয়েট বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি কি আমলে নেবার প্রয়োজন ছিল না? কেন শুধুমাত্র একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত এলো? বিচারের বিষয়ে সব সময় বলা হয়- ন্যায় বিচার হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে যখন এটি বিশ্বাস যোগ্য হবে যে আসলেই ন্যায় বিচার হয়েছে। এখন এই এক বিষয়ে সিদ্ধান্ত, সংবিধানের প্রদত্ত অধিকারের বিপরীতে অধিকার খর্বকরণ কি আমাদের কে এটা বিশ্বাস করতে বলে যে আদালত ন্যায় বিচার করেছেন? যদি তাই না হয় তবে এই আদেশ কি ‘ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবো’ কারো এমন শপথের বিপরীত আচরণ হয়ে যায় কিনা? কারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার শপথ নেন তা নাগরিক মাত্রই জানেন।
মহামান্য আদালতঃ
এই রায়ের ফলে কয়েকটি ফলাফল নিশ্চিত হল যে
১- যেহেতু যেকোনো দেশের সর্বচ্চো আদালতের কোনো আদেশ অন্য যেকোনো দেশে তুলনামুলক মানদণ্ড, দলিল ও প্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা যায় তাই এই আদেশের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হল যে কোন আদালত, বা রাষ্ট্রক্ষমতা চাইলেই মানুষের অধিকার হরন করতে পারে। অর্থাৎ মানুষের অধিকারের কোন নিশচয়তা বা সার্বজনীন মানবাধিকার বলে আর কিছু থাকলো না। যে কেউ মানুষের অধিকার হরন করলেও এখন সাংবিধানিক উত্তরণের পথ করে দেয়া হল। অপরাধ কে উৎসাহ দেয়া হল। এটা নিশ্চিত হল অপরাধ করলে অপরাধি পার পেতে পারে কিন্তু যে অপরাধের স্বীকার হল সে এমন প্যাঁচে পড়বে যে জীবনে আর সাহস করে নিজের অধিকারের কথা বলার চিন্তাও করবে না। মানব জীবনের সবচে মৌলিক সত্তাকে কারারুদ্ধ করার পথ সহজ হয়ে গেলো এই আদেশ থেকে। সৃষ্টির শুরু থেকেই সব শোষক এই শোষণের চেষ্টা করে আসছে। আজ তারা বাহবা পেলো, চাপা পড়ল মানবিক মর্যাদা।
২- বুয়েটের শিক্ষক- শিক্ষার্থী যে আন্দোলন করে আসছেন তা বুয়েট এর ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য। সেই ঐতিহ্য শিক্ষার মানের ব্যাপারে আপোষ না করা, জ্ঞান সৃষ্টির পথে যেন কোন অশুভ প্রভাব শক্তি বিস্তার না করতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা ও সুনাম বজায় রাখা। সেই আন্দোলনের বন্ধের যে নিষেধাজ্ঞা এলো তাতে যা হল
ক- এখন যে কেউ চাইলে ক্ষমতা প্রয়োগ করে যেকোনো ফলাফল বদলে দিতে পারবে। আদালত তা সমর্থন করে যাবে।
খ- জ্ঞানের মর্যাদার বিপরীতে পেশি শক্তির ক্ষমতা পাকাপোক্ত হল।
গ- জ্ঞানের উঁচু মানের যে প্রয়োজন তা অস্বীকার করা হল। জ্ঞান বিবর্জিত সমাজ যদি সভ্যতার বিপরীত বলা হয় তবে সামগ্রিক অসভ্যতাকেই গ্রহণ করা হল।
৩- এমন অবস্থায় বুয়েট এর শিক্ষকবৃন্দ যে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেই পথে যাবার সুযোগ করে দেয়া হল যা জাতির জন্য সবচে কালো অধ্যায়। কারণ
ক- বুয়েটের শিক্ষকরা স্বভাবতই এখন এসব আইনি জটিল প্যাঁচে যেতে চাইবেন না। বরং সহজভাবে কটা দিন পার করতে চাইবেন। এর মধ্যে যতটুকু পারেন দেশের বাইরে তাদের যে নিশ্চিত জীবনের হাতছানি রয়েছে সেই পথে হাঁটবেন। অন্তত আন্দোলন করে জেল খানার ভাতের চেয়ে দেশের বাইরে ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্য জীবন বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। এর ফলে যা হল মেধা ধ্বংস ও মেধা পাচার। ৭১ এ হানাদাররা জাতির সবচে মেধাবী মানুষগুলোকে হত্যা করেছিল যেন একটি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। আজ সেই পথ অনুসরণ করা হল বন্দুকের মাধ্যমে নয়, আদালতের মাধ্যমে। আর তা করা হল স্বাধীন দেশের স্বাধীন আদালতের মাধ্যমে।
খ- মুহাম্মাদ শহিদুল্লাহ ( জ্ঞানতাপস) বলেছিলেন যে দেশে গুনের কদর নেই সেদেশে গুণী জন্মাতে পারে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে গুণী মেধাবী মানুষগুলোকে ছুঁড়ে ফেলা হল। আর এখন আমাদের সোনালি ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার বীজটি এভাবে বপন করা হল।
গ- এই রায়ের ফলে দেখানো হল যে অপরাধের বিচার হয় না। যে খানে অপরাধের বিচার হয় না সেখানে
ন্যায়বিচার নেই। তাই এই রায় প্রমাণ করে বাংলাদেশ ন্যায়বিচারের স্থান নয়।
“Injustice alone can shake down the pillars of the skies, and restore the reign of Chaos and Night”.
HORACE MANN, A Few Thoughts for a Young Man
মাননীয় আদালত- আমার নাম বোকা মানুষ ( short- witted) । তাই আমার কোন শব্দ, কথায় যদি আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় অথবা আইন ও সংবিধানের লঙ্ঘন হয় তবে আইনবলে আমার উপর অর্পিত শাস্তি যেন আরোপ না করা হয় তার বিনীত প্রার্থনা করছি।
With these all, I am concluding my submission before the Highness of Your Lordship my Lord.
Therefore Sincerely
Boka Mansuh
পুনুশ্চঃ গান শুনেছিলাম-
বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
আজ জেগেছে এই জনতা এই জনতা……
ক্ষমা তোমায় চাইতে হবে নামিয়ে মাথা হে বিধাতা হে বিধাতা…
“Injustice alone can shake down the pillars of the skies, and restore the reign of Chaos and Night” বড়ই সত্য কথা! :huzur:
এক কথায় অসাধারণ পোস্ট! সব ধরনের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠুক বিবেকসম্পন্ন মানুষেরা। এই পোস্ট ছড়িয়ে দিতে হবে।
মাধবী- যে ঘটনার সাক্ষী আমাদের হতে হল- পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রার্থনা করি তারা যেন এরকম কিছুর সাক্ষী না হতে হয়। তবে অবিচারের ধারা একবার শুরু হলে এক অনিবার্য যুগান্তকারী ঘটনা বা বিপ্লব ছাড়া তার অবসান হয় না।
“তবে অবিচারের ধারা একবার শুরু হলে এক অনিবার্য যুগান্তকারী ঘটনা বা বিপ্লব ছাড়া তার অবসান হয় না।”…ভয়ঙ্করভাবে সহমত। বিপ্লব অনিবার্য!!
মাধবীলতা- নন্দলাল তো করিল একদা একটা ভীষণ পণ
স্বদেশের তরে যে করেই হোক সে রাখিবে জীবন!
যাই হোক- পরিবর্তনের প্রত্যাশা রাখছি। আপনার মতই।
আদালত আর মিডিয়া পরস্পর যেভাবে চলে তাকে ব্যক্তিগত জিজ্ঞাসা বড়ই ঠুনকো।
এসবের কোন উত্তর পাওয়া দায়।
নিষ্ঠুর সত্য হল, উল্টো রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হলেও হতে পারে!
এই এতগুলো মানুষ আজ আপনার মত একই সুরে কথা বলছে কিন্তু আদালত সে কথা শুনছে কি?
সংবিধানের ঘেরাটোপ থেকে জনগণ বহু দূরে তবু আজ কিংবা কাল এই জনতা জাগবেই।
বুয়েটের পরিস্থিতির সর্বাঙ্গীন শুভ সমাধান কামনা করি।
ফিনিক্স পাখি যেমন মৃত প্রায় অবস্থা থেকে উঠে ডানা ঝাঁপটায়, জনগন একদিন সেরকম ডানা ঝাঁপটা দেবে আমি খুব একটা বিশ্বাস করি না। কারণ, কর্পোরেট, আইন, আদালত, রাষ্ট্র, সমাজ, মিডিয়া সব শোষকদের পক্ষে থাকে। কোন পরিবর্তনে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন খুব কমই হয়। তবে তারুণ্য অনেক সময় সব হিসেব ওলট পালট করে দেয়।
চোখের সামনে এই তারুণ্যকে দেখেছি, জেনেছি।
মৃত অবস্থা থেকে জাগলে অবাক হবাক কিছু নেই বরং উল্টো কিছু হলে অবাক হবার সুযোগ বেশি।
খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি, এই একবার যদি কোনভাবে আন্দোলন ব্যর্থ হয়, তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনীতির ছোবলে আক্রান্ত দুষিত আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সূচনা হবে পাকাপোক্তভাবে।
আমি নিজে ফিনিক্স নাম ধারণ করে এ কিছুতেই চাই না, চাই না।
বুয়েট হচ্ছে বাংলাদেশের সেই শেষ শিক্ষাঙ্গন যেখানে জ্ঞানভিত্তিক নৈতিকতার চর্চা হয়। কাজেই এই প্রতিষ্ঠানটিও যখন কারো ইচ্ছের কাছে বলি হয়ে যায় তখন সামগ্রিক জ্ঞান চর্চা ও নৈতিক মানদণ্ড ধ্বংস হয়ে যায়। আজ হয়ত বাংলাদেশের মানুষ এর জন্য রাস্তায় নামবে না। কিন্তু যেদিন এর ফল নিজের ঘরে গিয়ে পৌঁছবে সেদিন ফেরার পথ থাকবে না।
মানুষ ভাই, আপনি যে বোকা বোকা কথাগুলো নিঃসঙ্কোচে বলে ফেললেন সেই কথাগুলোর ভার বড্ড বেশি।
সত্যি কথা তো, তাই হয়ত এমন ভারী লাগছে।
নিজের ঘরে ফল পৌঁছোবার আগেই যেন সব ঠিক হয়ে যায় সেই প্রার্থনাই করি।
আর একটা অনুরোধ, অনেকবার সামনে থেকে দেখলেও আপনার এই বোকা বোকা কথাগুলো মাত্র একবার শোনার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
সেই সৌভাগ্যের সমাপ্তি ঘটেছে দীর্ঘ সময় পর এইরকম একটা ব্লগপোস্টে।
পরবর্তী সৌভাগ্যকে আরেকটু নাতিদীর্ঘ কি করা যায় না?
কারণ আপনার বোকা বোকা কথাগুলো হৃদয়ে সহজে গেঁথে যায়, ছড়িয়ে যায়, আলোকবর্তিকার মত।
ক- এখন যে কেউ চাইলে ক্ষমতা প্রয়োগ করে যেকোনো ফলাফল বদলে দিতে পারবে। আদালত তা সমর্থন করে যাবে।
খ- জ্ঞানের মর্যাদার বিপরীতে পেশি শক্তির ক্ষমতা পাকাপোক্ত হল।
গ- জ্ঞানের উঁচু মানের যে প্রয়োজন তা অস্বীকার করা হল। জ্ঞান বিবর্জিত সমাজ যদি সভ্যতার বিপরীত বলা হয় তবে সামগ্রিক অসভ্যতাকেই গ্রহণ করা হল।
“টানেলের শেষেও কেবল অন্ধকারের গান!”
আমার আগের এক পোস্টে তুমি লিখেছিলে- স্কুল পালানোর জন্য তোমরা ‘ পারিবারিক সমস্যার’ কথা বলতে। এরকম সৃষ্টিশীল কিছু পথ বের করে ফেল যাতে টানেলের শেষে আলোর দেখা মেলে। নয়ত যে অসভ্যতার দিকে আমরা এগুচ্ছি তাতে পরিনতি খুব সুবিধার দেখছি না।
আপনার লিখার মুল্যায়ন করার সামর্থ আমার নেই। ইশ, মহামান্য আদালত/মহামান্য রাষ্টপতি/ প্রধান্মন্ত্রী বা অন্য কেহ সামর্থবান নাগরিক যদি ভেবে দেখত!!!
ভাই- আমার লেখার মূল্যায়ন না করে আসেন আমাদের আগামি ভাগ্য মূল্যায়ন করি। আপনি কি মনে করেন এই বিষয় মহামান্যদের কাছে যায় না? প্রত্যেক মহামান্য এসবের সব শুধু জানেন না বরং তাদের হাত দিয়েই এটা বাস্তবায়িত হয়। এটা আমরা বুঝেও না বোঝার ভান করি। আর মহামান্যদের মাননীয় জ্ঞান করে যাই। আর তাদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের কারণে যখন আমজনতার বারোটা বাজে তখন তারা বলেন- বুয়েট শিক্ষকদের আচরণে আমরা বিব্রত।
নিজে বুয়েটের একজন হয়েও কিছু নিয়ম কানুন আর হাস্যকর যুক্তির কাছে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে নিজের প্রিয় প্রতিষ্ঠান, মেনে নিতে পারছি না, সক্রিয় ছিলাম প্রতিবাদে, কিন্তু কোথাও কি হিসেবে ভুল করেছি, নাকি খুব বেশিই রঙ্গ তামাশা চলছে এই দেশটার শাসন ব্যবস্থা নিয়ে, রাষ্ট্রদ্রোহিতার ভয়ে তো কথাও বলতে ভয় লাগে……
বন্ধু শৈশব – এটাকে কি বলবেন? একটা গল্প বলি শোনেন। একবার হিরক রাজার দেশে এক গার্লস স্কুলে একজন শিক্ষক ( !) কে নিয়ে তুলকালাম ঘটে গেল। কারণ শিক্ষক যা করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। এবার সেই শিক্ষক কে বাঁচাতে এলেন সে স্কুলের সবার প্রধান। ক্ষোভে ফেটে পড়া ছাত্রীদের বললেন – “সে হয় ভালো শিক্ষক। তোমরা অদ্য ক্লাশে ফিরিয়া যাইবে। নইলে আমার বন্ধুবর, এই রাজ্যের সবচে ক্ষমতাবান কে জানো? সে আমার বন্ধুবর। একদম তাঁহার হুকুমে তোমাদের সবগুলোকে লাল দালানে ঢুকাইয়া, আটার রুটি খাওয়াইয়া এমন চাঁছা দিবো যে ইহজনমে সেই ভালো শিক্ষক (!) গুরুজনের চোখের দিকে ও আর তাকাইবার মতলব করিতে পারিবে না”!
এরপর কি হল জানেন- ঐ নালায়েক বাচ্চাগুলো কারো কথা শুনলো না। তখন রাজ প্রতিনিধি হিসেবে মস্তকে কেশ বিহিন একজন মন্ত্রী মশায় এলেন। তিনি বলিলেন – “নালায়েক বাচ্চারা! তোমরা এই সব পবিত্র শিক্ষকদের নামে খারাপ কথা বলো ? যত সব বেত্তমিজের দল। তোমাদের এই কর্ম বড়ই ঘৃণ্য। আমাদের মহারাজার যাতে ক্ষতি হয় তাই এই সব কূটকর্ম তোমরা করিতেছো। আমাকে বলিতেই হইবে তোমাদের এই সব কার ইন্ধনে ঘটিতেছে”!
গল্পের পরের কথা মনে নেই। তবে মনে রাখবেন গল্প শুধুই গল্প। কাকতাল মাত্র। ওখানে দেশদ্রোহিতা নেই। তাই গল্প বলতে পারেন। রুপকথার মনোহর কাব্য ও কাহিনী।
এই রূপকথার কাব্য-কাহিনী বোধকরি আমার বিশেষ পরিচিত।
কোথায় যেন শুনেছিলাম কিংবা হয়ত স্বপ্নের ঘোরেই ঐ নালায়েক বাচ্চাগুলোর একজন হয়ে বেঁচে ছিলাম।
ঘুমিয়েই কেটে গেল সময়।
গল্পের পরের কথা এখন আর মনে নেই!
Justice delayed is Justice Denied… বুয়েটের জন্য প্রার্থনা…
Justice delayed is justice denied? কথাটা শুনেছি, কিন্তু কোনদিন বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ delay হলেই যদি মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার না হয় তাহলে বসনিয়া, রুয়ান্ডার উদহারন তো আমাদের সামনে থাকতো না। আমার মনে হয় – Justice corrupted is absolute denial of justice.
এই পোস্ট এর জন্য কি মামলা হতে পারে?
আমরা কোন সময়ে বসবাস করছি
অরওয়েল এই সময়ে এই দেশে থাকলে কী লিখতেন?!
মামলা কেন হবে?? স্বাধীন দেশের নাগরিক নিজের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারবে না??!!
বন্ধু ইয়াশা- মামলা হবে according the Article 39 of the Constitution of the People’s Republic of Bangladesh. ওখানে বলা আছে চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করা হল। আপনি আমি আমরা সবাই এই অংশটুকু জেনে মত প্রকাশের সাহস দেখাতে চাই। কিন্তু ওখানে এর পরেই বলা আছে – subject to any reasonable restrictions imposed by the law ! এখন বলেন এই reasonable এর ব্যাখ্যা কে দেবে? আদালত দেবে। আপনার বুয়েট বন্ধ করে দিল আবার আরো কিছু আশা করেন। আচ্ছা লিঙ্কটা দেখেন। কিছুটা খোলাসা হবেন আশা করছি- http://freedomofpresses.wordpress.com/2012/04/30/bangladesh-constitution-confiscates-freedom-of-the-presses-11/
ল’ পড়া উচিত ছিলো আসলে ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়ে! :@
মামলা হতে পারে। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী হতে পারে। এমনকি ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে। তবে একটা সুযোগ থাকবে আত্মসমর্পণের। সেটা হচ্ছে যিনি লিখেছেন তিনি নিজেকে short-witted বলে গণ্য করছেন। রাষ্ট্র তাকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার জন্য ফাঁসি মউকুফ করলেও করতে পারে।
অরওয়েল বেঁচে থাকলে কোর্ট ফার্ম লিখতেন মনে হয়!!! যা হোক ওটা কল্পনা।
আপনার প্রশ্নের উত্তর নিচে চলে গিয়েছে।
৬১ এর আইয়ুব খানের অধ্যাদেশের আদলে ভিসি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এমনকি ভিসি চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাভেটাইজেশন করার এখতিয়ার রাখে। সে চাইলেই ছুটি দিতেও পারে, ক্লাস বসাইতেও পারে। বাই ল, এইখানে করার কিছুই নাই যদ্দিন এই কালাকানুন থাকবে।
ভাই বাঙ্গাল! মজার ব্যপার দেখেছেন! রক্তের দামে স্বাধীনতা কেনা হল মুক্তির জন্য। আর শোষণের ভিত শক্ত রাখার জন্য আইয়ুব খান কে চর্চা করা হচ্ছে প্রতিদিন!
যুক্তি দিয়ে এতো সুন্দর করে কথাগুলো আর কোনভাবেই লেখা যেত না……
নারে ভাই! এই লেখা আরো সহজ করে বলতে পারা মানুষগুলো একে একে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
আসলে আদালতের থেকে একটা আদেশ পাওয়া খুব দরকার ছিল । কারণ শিক্ষক সমিতি বা সরকার যে ভাবে আগাচ্ছিল তাতে আগামী দেড় মাসেও কোন রেসাল্ট পাওয়া যেত কিনা সন্দেহ ।আমি এখনো মনে করি শিক্ষক সমিতির অনেক কিছুই করার আছে । তাদের দ্রুত একটা সভা ডেকে পদত্যাগ করা দরকার । বুঝতে পারছি না সেটা ঠিক হবে কিনা । তবে আমা্র মনে হয় কারো প্রতি আমার অনাস্থা থাকলে পদত্যাগ করা আমার অধিকার । আর এ ধরণের ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে এ ধরণের পদক্ষেপ নেয়া খুব দরকার তা না হলে আর কোন উপায় নাই । আর সেই সাথে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা দরকার । সেক্ষেত্রে গণপদত্যাগ হয়ত শিক্ষক সমিতির ফেভারে যেতে পারে ।
বাদ বাকি নির্দেশনার ব্যাপারেও কিছু বলার আছে –
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুয়েট প্রশাসনের জারি করা ৪৪ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার ।
আদালত যদি বন্ধ প্রত্যাহার করে ক্লাস চালু করার ঘোষণা দিত তাহলে কি এই সময়ে ছাত্ররা আবার ক্লাসে ফিরত ? আপনার কি মনে হয় ?
৭ দিনের মধ্যে বুয়েট ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন ।
ভিসি-প্রো ভিসি তো অনেক আগে থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথা বলছে । সেক্ষেত্রে শিক্ষক সমিতি তা নাকচ করে দিয়েছে । এখন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যদি তদন্ত হত এবং তাও যদি আগের চা-বিস্কুট টাইপের একটা তদন্ত হত বা তদন্তে কোন দোষ প্রমাণিত না হত তাহলে কি ঘটত ?
রোববার বুয়েটে অনির্ধারিত ছুটি ।
এটার মানে কি বুঝলাম না ??
তিন দিনের মধ্যে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা ।
এই জিনিসটার ব্যাপারে আসলেই একটা আদেশ দেয়া দরকার ছিল । কিন্তু তাহলে শিক্ষকদের আদেশ দিয়ে ক্লাসে ফিরতে বাধ্য করা হোত ।
শিক্ষক সমিতি কি করবেন জানি না। কিন্তু দেখুন বুয়েটে সমস্যা সৃষ্টি করলেন একজন। এখন শিক্ষক সমিতি কে কেন তার সমাধানের জন্য মাঠে নামতে হবে? কিন্তু যিনি নিয়ম ভাংলেন, পরীক্ষার ফলাফল পর্যন্ত বদলে দিলেন তার ব্যপারে আদালতের কোন নির্দেশনা নেই! আর আপিল করার কথা বলছেন! একবার আপিল করতে হলে যে পরিমান টাকা লাগে তাতে নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে একজন শিক্ষক অন্তত এই কাজ করার দুঃসাহস দেখাবেন না। যদি কালো টাকা থাকে অথবা প্রতিষ্ঠান টাকা দেয় সেটা ভিন্ন কথা।
৪৪ দিন বন্ধের প্রসঙ্গঃ এটি আসলে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল কেন বুয়েট প্রশাসনের এই আদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। এখন বুয়েট খুললে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসবে কিনা তা নির্ভর করবে তাদের উপর। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তের ফল যেহেতু জ্ঞানের চেয়ে পেশির জোর বেশি তাই যদি কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে না এসে ক্ষমতা আছে এমন দলের ক্যাডারবাজি করে সে ক্ষেত্রে সেই শিক্ষার্থীকে আমরা দোষ দেবো কিভাবে?
কিন্তু যিনি নিয়ম ভাংলেন,পরীক্ষার ফলাফল পর্যন্ত বদলে দিলেন তার ব্যপারে আদালতের কোন নির্দেশনা নেই!
আদালত কখনোই সরাসরি ভিসি-প্রোভিসিকে পদত্যাগ করতে বলবে না । সেক্ষেত্রে অবশ্যি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হবে । আর তা হলে কি হতে পারে তা আগেই বলেছি ।
আর আপিল করার কথা বলছেন! একবার আপিল করতে হলে যে পরিমান টাকা লাগে তাতে নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে একজন শিক্ষক অন্তত এই কাজ করার দুঃসাহস দেখাবেন না।
আপিলের টাকা কেন একজন দিবে ? শিক্ষক সমিতি কি কেবল একজনের টাকায় চলে ? এতগুলো ছাত্রদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হল তা কি কেবল একজনের টাকায় ? যতদূর জানি সব শিক্ষক মিলিত ভাবে সে খরচ বহন করছে এক্ষেত্রে কেন একজন হবে ? আর সব শিক্ষক যেখানে পদত্যাগ করতে পারার সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেক্ষেত্রে কেন সবাই আর্থিক ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে না !!
তাই যদি কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে না এসে ক্ষমতা আছে এমন দলের ক্যাডারবাজি করে সে ক্ষেত্রে সেই শিক্ষার্থীকে আমরা দোষ দেবো কিভাবে?
আমি বিশেষ কোন দলের ছাত্রদের কথা বলি নি । খোজ নিয়ে দেখেন কয়জন সাধারণ ছাত্র এই মূহূর্তে ক্লাস করতে আগ্রহী । আর হ্যাঁ , বন্ধ ঘোষণা অবৈধ করা দরকার ছিল । কিন্তু তা করলে সাধারণ ছাত্রদের কি এমন লাভ হত । সেক্ষেত্রে খুলে দিলে যদি অটো নেয়া হত তাহলে ছাত্রদের আরো অনেক বেশি ক্ষতি হত । বন্ধের ব্যাপারে বিব্রত মন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী নিজেও কিন্তু ভিসি স্যারের উপর নাখোশ ছিল ।
অসাধারন একটি লিখা… কিন্তু এই কথাগুলো কি হীরক রাজার রাজদরবার পর্যন্ত পৌছাবে??
ও ভাই সে কি!
আসুন মহা রাজা কে সেলাম বলি…
রাজা মশায় ! আমরা বড্ড সুখে আছি যে!
যেমন রেখেছেন তেমন আছি মশাই।
অসাধারণ বিশ্লেষণ!
রাইয়্যান এর মতো আমিও বলি, অসাধারণ বিশ্লেষণ!
কিন্তু আদৌ ফলপ্রসূ হবে কি?