পশ্চিমের আধুনিক নারীদের আধুনিক সমস্যা

প্রথম যখন আমেরিকায় আসি, সেই ১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসের কথা, মনে হচ্ছিল চারপাশের সবকিছু দেখে খুব বিস্ময়াভূত হবো। কিন্তু না, তেমন কিছু ঘটছিলো না। দেশ আর বিদেশের পার্থক্য তো আছেই। যানজটহীন মসৃণ আর প্রশস্ত রাস্তায় তরতর করে সব ফিটফাট গাড়ি ছুটছিল। এ আর নতুন কি? এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল। আসলে চোখে হোমসিকের ঠুলি এঁটে চারপাশ দেখলে সবই নিরসক্ত লাগে। তবে দুটি অনভস্ত দৃশ্যে হোঁচট খেলাম। মনে হলো না এমনটাই তো হবার কথা ছিল। প্রথমটি হলো সত্যিকারের মোটা মানুষ দেখা। আমেরিকায় আসার পরের সপ্তাহেই বর নিয়ে গেল লেক টাহো নামের এক নয়নাভিরাম স্থানে। পথে বার্গার খাওয়ার জন্য থামলাম ম্যাকডোনালস রেস্টুরেন্টে। দেখা মিললো এই বিশালবপুর। চেহারা দেখে মনে হয় না বয়স ত্রিশের কোঠা ছাড়িয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই দেহের যা হাল করেছে তাতে সে নিজেই আর শরীরের ভার সহ্য করতে পারছে না। মোবাইল হুইলচেয়ারে চলাফেরা করছে। আমরা ঢোকার সময় সে চলে যাচ্ছিল। হাতে ছিল সবচেয়ে বড় মাপের আইসক্রিমের কাপ। অবশ্য কাপ না বলে গ্লাস বলাই সমুচিত হবে। মনে আছে বাংলাদেশের টেলিভিশনে প্রচারিত অনেক নাটক কিংবা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে এর থেকে অর্ধেক আয়তনের বিশালবপুদের এনে হাসিঠাট্টা করা হতো। তখন বুঝিনি বন্দিজীবন মানেই জেলজীবন নয়। মানুষ নিজের দেহের ভারেই বন্দি হয়ে যেতে পারে।

দ্বিতীয় যে দৃশ্যটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না তা হলো চারপাশে নারীদের আধিক্য। মনে হচ্ছিল হঠাৎ করেই যেন কোন নারী রাজত্বে চলে এসেছি। এমন না যে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে আমার এ কথা মনে হয়েছে। আমেরিকাতে প্রথম এসে উঠি ক্যালিফর্নিয়া স্টেটের ফ্রীমন্ট নামের একটি ছিমছাম শহরে। এ শহরের রাস্তাঘাট প্রায় সময়ই শুনশান নিরব থাকে। গ্রোসারী স্টোর, রিটেইল স্টোর, ওয়াল মার্ট, ব্যাংক, গাড়ির লাইসেন্স দেওয়ার অফিস, সোশ্যাল সিকিউরিটির অফিস – সব জায়গায় কাস্টমার সার্ভিসের সীটে মহিলারা বসে আছে। কালে ভদ্রে কোন পুরুষ থাকলেও তাদের অধিকাংশ সিকিউরিটি গার্ডের কাযে নিযুক্ত। বরকে জিজ্ঞেস করলাম, “সব জায়গায় দেখ মহিলারা অফিস চালাচ্ছে। কী ইন্টারেস্টিং!”

“পেছনের বিগ বসরা সব পুরুষ। কাস্টমার সার্ভিসের এই চাকরিগুলোর বেতন কম। সাধারণত মেয়েরাই এইসব কাজ করে।” বরের উত্তরটি কতোখানি পুরুষবাদী তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। আরো কয়েকদিন আমেরিকা বাসের পর বুঝলাম যে এদেশে মেয়েদের চাকরি করতে হয় প্রয়োজনে। অন্ততঃ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মেয়েদের। বাংলাদেশে এখনও এ সংস্কৃতি চালু আছে যে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা সরাসরি বাবার পে-চেক থেকে স্বামীর পে-চেকের অধীনে চলে যাচ্ছে। আমেরিকায় মেয়েদের অতো জামাই খাতির নেই। বিশেষ করে ব্লু-কালার লোকজনের। যে দেশে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ বিয়ে ভেংগে যায় সে দেশে বরের পে-চেকের উপর নির্ভর করে মেয়েদের জীবন চলে না। অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার জন্য নিজের পে-চেক লাগে। তাই চাকরি এখানে মেয়েদের শখ নয় – প্রয়োজন।

মেয়েরা ঘরের বাইরে আসছে বলে বিয়ে ভাংগছে, নাকি বিয়ে ভাংগছে বলে ঘরের বাইরে আসছে  – এই ডিম আগে না মুরগী আগে তর্কের মধ্যে ঘুরপাক না খেয়ে বরং আমেরিকার মহিলাদের ঘরের বাইরে আসার ইতিহাসটাতে একটু চোখ বুলিয়ে নিই।

আজকের বিশ্বে চারপাশে চারদিক থেকে নারীদের যে সরব পদচারণা দেখছি, বিজ্ঞান-সাহিত্য-প্রযুক্তি-রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ যে অবদান রাখছে তার ইতিহাস কিন্তু বেশিদিন আগের নয়। অর্ধশতাব্দি পেছালেই দেখা যাবে নারীর সনাতনী চিত্র সংসারের ঘেরাটোপে বাঁধা। তবে কি সেসময় তাদের কোন উচ্চাশা ছিল না? সমাজে অবদান রাখার ক্ষমতা ছিল না? মিশরের ক্লিউপেট্রা, ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাভেদ, স্পেনের রানি ইসাবেলার ভূমিকা পুরুষ অধিপতিদের থেকে কোন অংশেই কম ছিল না। পুরুষের হাতে লেখা ইতিহাসে যদিও বিষয়টি সেভাবে ইঠে আসেনি। তবে এসব নারীরা ভাগ্যবতী। জন্মসুত্রে সুযোগ পেয়ে তাঁরা নারীদের সনাতনী ইমেজ ভেংগে ফেলেছিলেন। কিন্তু সাধারণ নারীরা সব সময়ই সমাজ নির্ধারিত অনুশাসনের খোল-নামচে আটকে ছিলেন। ঘরের কাজে সম বা অধিক পরিশ্রম দিলেও তার তেমন মূল্যায়ন ছিল না। মূল্যায়নের পাল্লাটা সবসময়ই হেলে থাকতো অর্থোপার্জনজনিত কাজগুলোতে। আবার মানুষের কণ্ঠস্বর জোরালো হয় তার মূল্যায়নের ভিত্তিতে। এই পুরো ব্যাপারটাই একটা প্যারাডাইম -দৃষ্টিভংগি। এতোদিন পুরুষরা এই দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির দায়িত্বে ছিলেন। তাই তাদের লেখা ইতিহাসে,তাদের তৈরি সমাজরীতিতে নারীদের উপস্থিতি ছিল  পার্শ্বচরিত্রের মতো। নারীচরিত্র তখনই প্রাধান্য পেয়েছে যখন সে পুরুষের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে পেরেছে। এরজন্যও তাদের কম মূল্য দিতে হয়নি। আজকেরদিনে জোয়ান অব আর্ককের বীরত্বগাঁথা নিয়ে আমরা বই লিখছি, সিনেমা বানাচ্ছি। অথচ তাঁর সময়ে ইউরোপের সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগে ডাইনী খেতাব দিয়ে তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটা মানুষই কমবেশি মূল্যায়ন চায়। পুরুষের জন্য নির্ধাতির কাজগুলো না করলে মূল্যায়ন পাওয়া যায়না। আবার সামাজিক অনুশাসন নারীদেরকে সে কাজগুলোও করতে দিচ্ছে না। অবশেষে একসময় নারীদের ভাগ্যে শিঁকে ছিড়ে। বিংশ শতাব্দির মাঝমাঝি সারা পৃথিবীতে বেজে উঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। পুরো ইউরোপ তখন রণক্ষেত্র। অথচ যুদ্ধের জন্য জাহাজ, প্লেন, অস্ত্র, গোলা-বারুদ, সৈন্যদের পোষাক, শুকনো খাবার কতোরকম রসদ লাগে। আমেরিকা হয়ে গেল এইসব রসদের সরবরাহক্ষেত্র। সরবরাহের প্রথম ধাপ উৎপাদন। কিন্তু পুরুষরা তো তখন দলে দলে যুদ্ধে চলে গেছে। কে এতোকিছু উৎপাদন করবে? ভেংগে গেল অদৃশ্য সামাজিক ঘেরাটোপ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই প্রথম নারীদের সুযোগ হলো সরাসরি উৎপাদনের কাজে যুক্ত হওয়ার। কিন্তু ১৯৪৫ সালে শেষ হয় যুদ্ধ। সেইসাথে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানও সংকুচিত হয়ে আসলো। অবস্থা আবার আগের মতো হয়ে পড়ে। নারীদের জন্য কাজের ক্ষেত্রে শুধু কম বেতনের সেবিকা, শিক্ষিকা গার্মেন্টসকর্মী কিংবা দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে। কিন্তু যুদ্ধকালীন চার-পাঁচ বছরের স্বল্পসময়টুকু নারীদের সনাতনী প্যারাডাইম বদলে দেয়। নারীরা নিজে এবং সেইসাথে সারাবিশ্বও বুঝতে পারে যে প্রকৃতি আসলে অন্ধ। মেধা বা প্রতিভা বিতরণের সময় প্রকৃতি ছেলে আর মেয়ের মধ্যে কোন ভেদাভেদ করতে পারে না। এই অনুধাবন সনাতনী সামাজিক অনুশাসনের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী পদক্ষেপ। সীতার জন্য রামের এঁকে দেওয়া নিরাপত্তাবলয় শুধুই একটা মিথ। বাইরে কোন রাবণ ওৎ পেতে নেই। নারীরা চাইলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, রাজনীতি, অর্থনীতি, মিডিয়া যে কোন ক্ষেত্রেই সফল হতে পারে।  পশ্চিমা মিডিয়া তখন ডরিস ডে কিংবা ডেবি রেনোল্ডের মতো বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের  এপ্রোন পড়িয়ে নারীদেরকে ঘরে থাকবার জন্য বিজ্ঞাপন করছে। কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ একবার পেলে কি তাকে অতো সহজে মুছে ফেলা যায়? নারীরা দেখেছে যে অর্থোপর্জনের সাথে সামাজিক মূল্যায়ন সমানুপাতিক। সেইসাথে তাদের ভেতরে গড়ে উঠছে আত্মবিশ্বাস। পরিবারে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে পারছে। তারা তখন ঘরের চৌহদ্দি ছাপিয়ে আরো বিস্তৃত সীমানার খোঁজে। নদী যখন স্থির হয়ে পড়ে তখন সে মরে যায়। সমাজেরও একই ধর্ম। সমাজ তখন বদলাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উৎপাদনের উৎকর্ষতায় ইউএসএ তখন সুপার পাওয়ার। ১৯৬০ দশকে দিকে আমেরিকা যখন সারা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল তখন দেশের ভেতর সিভিল রাইট মুভমেন্ট চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে। একই তালে চলছে নারী আন্দোলন। নারীদের কণ্ঠস্বর ক্রমশ জোরালো হতে শুরু করেছে। ১৯৬০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় জে এফ কেনেডি প্রাক্তন ফার্স্টলেডি ইলিনর রুজভেল্টের সাহায্য চেয়েছিলেন। বিনিময়ে ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট কেনেডি ‘প্রেসিডেন্ট’স কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেন’ বিলটিতে সাক্ষর করেন। এই কমিশনের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে নারীদের দৈহিক গঠনকেও বিবেচনায় আনা হয়। এর আগ পর্যন্ত বাইরের কর্মক্ষেত্রটি পুরোপুরিই পুরুষ-বান্ধব ছিল। নারীরা আপ্রাণ মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রকৃতিগত কিছু বৈশিষ্টের কারণে কিছুটা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছিলেন। যেমন পুরুষরা সন্তান জন্ম দেন না। কিন্তু মহিলাদের জন্য মাতৃকালীন ছুটির দরকার হয়। ১৯৬৩ সালে কংগ্রেস ইক্যুয়াল পে এক্ট, ১৯৬৪ সালে লিংগ এবং প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বৈষম্য বন্ধ করার পক্ষে বিল পাশ করে। ১৯৭০ সালে শিক্ষা, গর্ভাবস্থাজনিত এবং স্বীকৃত্বের ক্ষেত্রে যে কোন রকমের বৈষম্যকে নিষিদ্ধ করা হয়। বিংশ শতাব্দির শেষপর্যন্ত যৌন হয়রানি, নারীর প্রতি সহিংশতা বন্ধের ব্যাপারে কাজ চলতে থাকে। আন্দোলন এখনও চলছে।

পশ্চিমে এখন আর কোন কাজকে লিঙ্গবৈষম্যের ভিত্তিতে দেখা হয় না। এই পরিবর্তন আসতে কয়েক দশক লেগেছে। মাত্র চল্লিশ বছরের মধ্যেই আমেরিকার কর্মশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ এক-তৃতীয়াংশ থেকে ২০১০ সালের হিসেব অনুযায়ী অর্ধেকেরও বেশি হয়ে গেছে। নারীরা এখন অর্ধেকের বেশি ব্যবস্থাপক এবং পেশাজীবি পদে কাজ করছেন। তবে উল্লেখ করার মতো সবচেয়ে দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মহিলা মালিকানাধীন ব্যবসা-বাণিজ্য। আমেরিকায় এখন মহিলাদের তৈরি করা স্ব-কর্মসংস্থান শতকরা ৩৫ভাগ। বাইরের জগতে নারীর এই অংশগ্রহণ সনাতনী পারিবারিক প্রতিচ্ছবিকেও বদলে দিচ্ছে। টাইম ম্যাগাজিন এক সমীক্ষায় দেখিয়েছে ৩৩ লাখ বিবাহিত মহিলা এককভাবে পরিবারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করছে। ১৯৭০ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৯ লাখ। একই পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে শতকরা ৪০ ভাগ মহিলা পরিবারের প্রধান অর্থোপার্জনকারী। শতকরা ৮০ ভাগ নারী এবং পুরুষ এই সংখ্যাকে খুব ভালোভাবে দেখছে। অর্থাৎ পুরুষেরা এখন আর সনাতনী ধারণার খোলসে বন্দী নেই। খেলাধূলা এবং মিডিয়াতেও নারীরা তাদের দক্ষতা এবং প্রতিভার বিকীরণ ছড়াচ্ছে। ২০০৯ সালে ম্যাডোনা এবং সান্ড্রা বুলক ছিল যথাক্রমে সবচেয়ে বেশি অর্থোপর্জনকারী সংগীতশিল্পী এবং অভিনয়শিল্পী। ২০১০ সালে ক্যাথেরিন বাইগলো পরিচালনায় প্রথম অস্কার পান। আর রাজনীতিতে সেক্রেটারী অব স্টেট হিলারী ক্লিনটন, আলাস্কার প্রাক্তন গভর্ণর সারাহ পলিন এবং হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পোলসি তো নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছেন।

অবশ্য এইসব পরিসংখ্যাণ আশাপ্রদ হলেও লিংগ বৈষম্য কমিয়ে আনতে পারেনি। এখনও পরিশ্রমের অনুপাতে মহিলারা পুরুষের সমান পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। এই অসাম্যের অনুপাতটা হচ্ছে ৭৭:১০০। অবশ্য এইক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা যেমন ডক্টোরাল, পেশাজীবি, স্নাতক এবং ব্যাচেলর এবং এশোশিয়েট ডিগ্রীতে পুরুষরা এগিয়ে থাকাতে বৈষম্যটা বেড়েছে।

তার উপর কর্মশক্তির অর্ধেক হলেও মহিলারা উঁচুপদগুলোতে তেমন একটা আসিন হতে পারেনি। ফরচুন ৫০০ কোম্পানীর সিইও পদে শতকরা ৩ ভাগ মহিলা। এক-পঞ্চমাংশের কম আইনজীবি, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শতকরা ১১ ভাগ মহিলাদের দখলে, শতকরা ৩০ভাগ চিকিসৎক মহিলা; গণিত এবং কম্পিউটার সায়েন্সে ২০ ভাগ। আবার বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে মহিলারা আরও বেশি অর্থনৈতিক বৈষম্যের সম্মুখীন হন। তাদের জন্য নেই কোন ডে-কেয়ার, স্বাস্থ্যসেবা, সহিংশতার প্রতিরোধের সুব্যবস্থা।

এইসব পরিসংখ্যাণ ভবিষৎতের এক ঝলক মাত্র। এবং এক্ষেত্রে পুরুষরা মহিলাদের সাহায্য করছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা হোয়াইট হাউযে সাতজন মহিলাদের ক্যাবিনেট পর্যায়ের পদে অভিসিক্ত করেছেন। দুইজন সুপ্রিম কোর্টের জাস্টিস পদে নিযুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে শতকরা ১৭ ভাগ কগ্রেসন্যাল সীটে মহিলা রয়েছেন। গত দুই দশকে এই সংখ্যা বাড়ছে। ২০০৮ সালের ভোটার তালিকা অনুযায়ী মহিলা ভোতারের সংখ্যা দশ মিলিয়ন বেশি। ১৯৭০ সালে শতকরা ২৮ ভাগ মহিলা স্বামীর থেকে বেশি শিক্ষিত ছিল। ২০০৭ সালে এসে তা উলটে যায়। ১৯৭০ সালে যেখানে আইনের ছাত্রী ছিল শতকরা ১০ জন সেখানে এখন অর্ধেক ছাত্রীই মহিলা। একই চিত্র চিকিৎসাবিজ্ঞানে। আগে কলেযে ছেলে-মেয়ের অনুপাত ছিল ৬০:৪০ এখন সেটা উলটে দাড়িয়েছে ৪০:৬০। ক্রমশ বাইরের ক্ষেত্রে নারীরা টপকে যাচ্ছে সব লিংগবৈষম্যের বাঁধা এবং পৌছে যাচ্ছে অকল্পনাতীত উচ্চতায়। এই ধারা চলতেদ থাকলে একদিন হয়তো কর্মক্ষেত্রে আমরা কোন লিঙ্গবৈষম্য দেখতে পাব না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটাই কি আমাদের লক্ষ্য? কর্মক্ষেত্রে নারীর বৈষম্যহীন পদচারণাই সন্ধান দেবে আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপের? দৈত্য এসে নারীকে ভরিয়ে তুলবে আরদ্ধ সুখ-সমৃদ্ধিতে? আশ্চর্য হলেও সত্যি যে বিংশ শতাব্দির শেষ অর্ধেকভাগে এতোসব সুযোগ অনেকাংশে নারীদের জীবনে শাঁখের করাতের মতো হয়ে উঠছে। বর্তমান সময়ের গড়পত্তা অবশাদগ্রস্ত আমেরিকানদের সংখ্যা শতকরা পঁচিশ ভাগ যার শতকরা আশি ভাগই নারী। প্রশ্ন হচ্ছে এতো সাফল্য পেয়েও নারী কেন সুখি হতে পারছে না?

১৯৬৩ সালে বেটি ফ্রীডানের প্রকাশনা ‘ফেমিনিন মিসটিক’ খুব নিখুঁতভাবে নারীর অন্তঃদহনের রূপটি তুলে ধরে। এর আগে নারী বিষয়ক পত্রিকাগুলোর পুরুষ সম্পাদকেরা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেননি। তারা মনে করতেন বৈষয়িক পূর্ণতা, সুস্থ সন্তান এবং স্বামীসহ একটি সুখের সংসার হলেই নারী সুখী হন। কিন্তু বেটি ফ্রীডান এরকম আপাত সুখের সংসারে বাস করা অসংখ্য নারীর মতামতের ভিত্তিতে দেখান যে আসলে তারা নিজেদের অতোটা সুখী মনে করেন না। নিশ্চিত সংসারজীবন তাদের মনোজগতের অন্তঃদহন, অপরাধবোধ, আর হীনমন্যতার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারছে না। পূর্ণতাবোধের জন্য নারী তার চারপাশে আরও বড় পৃথিবী দেখতে চায়। সে চায় তার মতামতের যথার্থ মুল্যায়ন। যে কাজ করলে লোকে বাহবা দেয় সে তেমন কাজ করতে চায়। সেসময় আমেরিকায় নারীবাদী আন্দোলন একদম তুঙ্গে।  সে আন্দোলনের সাথে তাল দিয়ে একসময় আমেরিকান সমাজও নিজেকে বদলে ফেললো। সামাজিক অনুশাসন ভেঙ্গে নারী তার ইচ্ছে মতন কাজ করার সুযোগ পেল। এই অবস্থাকে বলা যেতে পারে নারীআন্দোলনের প্রাথমিক মাইলস্টোনে পৌছানো। কিন্তু গন্তব্য এখনও অনেকদূর। কিছুটা অজানাও। শুরুতে মনে হয়েছিল বাইরে বেরিলেই নারী তার কাংখিত সুখ ও সমৃদ্ধির সন্ধান পাবে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সর্বেসর্বা নারীরা অনেকটাই ক্লান্ত। বর্তমান বিশ্বে যে দ্রুত গতিতে ছুটছে তাতে নারী-পুরুষ উভয়েরই চাপ বাড়ছে। বরং মহিলারা অর্থনৈতিক দায়িত্ব নেওয়ায় পুরুষদের তা সুবিধা হয়েছে। বর্তমানে কর্মজীবি নারীরা বৈষয়িকভাবে গত কয়েক দশকের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু পুরুষের তুলনায় তাদের মানসিক প্রশান্তি কমে গেছে। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে বিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত,  কর্মজীবি, সংসারজীবি, তরুনী, মধ্যবয়স্ক, স্বল্পশিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত – সবক্ষেত্রেই এক অবস্থা।  যদিও এর পেছনের কারণটা এখনও জানা যায়নি কিন্তু বিষয়টি অবহেলা করার মতো নয়। হতে পারে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব বেড়ে যাচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে তাদের অপরাধবোধ। কর্মজীবি মহিলারা সরাসরি দেখতে পারছে যে তাদের কাজের সময় পরিবারকে বঞ্চিত করছে। সন্তানদেরকে প্রতিদিন নিজ হাতে ফ্রেস খাওয়াতে পারছেন না, অনেক সময় সন্তানের পড়াশোনায় অসুবিধা হচ্ছে, ক্লান্তি তাকে টেলিভিশনের সামনে বসিয়ে রাখছে -এরকম হাজারো অপরাধবোধে সে বিদ্ধ। অন্যদিকে পুরুষেরা দোষ দেয় বাইরের নিয়ামককে। যেমন সমাজ, বন্ধু, মিডিয়ার ভায়লেন্স। সাংসারিক কোন বিচ্যুতি ঘটলে পুরুষেরা নারীদের মতো নিজেদের ঘাড়ে দোষ টেনে নেয় না। তার মানে এই নয় যে নারীরা আবার অতীতের দিনগুলোতে  ফিরে যেতে চায়। কেন যাবে? মানব সভ্যতার ইতিহাসে নারীরা এই প্রথম বাইরের পৃথিবীতে নিজেদের অবদান রাখতে পারছে। এতে সংসারের ভেতরেও তাদের মতামত দেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এ যাত্রা নতুন, তাই পথটা এখনও অমসৃণ। জীবনের স্টিয়ারিংহুইল নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যে অনেক চাপ থাকতে পারে, কিন্তু তা অসহায় আরোহীর মতো ড্রাইভিং সীটে বসে থাকার চেয়ে তো আনন্দদায়ক। এভাবে চলতে চলতেই একসময় পথ মসৃণ হবে। সমাজে নারী-পুরুষের দায়িত্ব বন্টনের মধ্যে ভারসাম্য আসবে যেখানে মূল্যায়নের কোনদিকে হেলে পড়বে না।

দূরের রংধনু আমাদের মুগ্ধ করে। আর কে না জানে রংধনু তৈরিতে বৃষ্টি আর সূর্‍্যকিরণ এই দুই’ই লাগে।

লেখকঃ ওয়াহিদা নূর আফজা

পরিচিতিঃ তড়িৎ প্রকৌশলী, বর্তমানে দর্শন এবং প্রযুক্তির সম্পর্ক নিরূপন নিয়ে গবেষণা করছেন

সূত্রঃ লেখাটি গবেষণা লদ্ধ। এখানে লেখকের নিজস্ব মতামত দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংখ্যাগত পরিসংখ্যাণ নিচের উল্লেখিত জার্নাল এবং বইগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে।

১ – হাই অকটেন উইম্যানঃ ডঃ শেরী বোর্গ কারটার (প্রমেথিউস বুকস)

২ – ব্যাক অন ট্র্যাকঃ ডেবরা নরভাইল

৩ – টাইম ম্যাগাজিন (২০১০)

অন্য স্বর সম্পর্কে

ননরেজিস্টার্ড সদস্যগণও যেন সরবে লিখতে পারেন সেই জন্য এই একাউন্ট। যোগাযোগ পাতায় কিছু লিখে জমা দিলে সরব এর মডারেটরগণ তা মূল্যায়ন করবেন। মনোনীত হলে এই একাউন্ট দিয়ে ছাপা হবে।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

14 Responses to পশ্চিমের আধুনিক নারীদের আধুনিক সমস্যা

  1. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    অসাধারন লাগলো নারীমুক্তির ইতিহাসটা। মূলত প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে তাল মেলাতে এই মুক্তি ছিল অবশ্যম্ভাবী। আপনি বৃহত্তর কর্মক্ষেত্রে নারীদের এই মহাগমনের রূপরেখা দেখিয়েছেন একেবারে পরিসংখ্যান দিয়ে।আমার ধারনা, আমাদের বাংলাদেশেও সংখ্যাগত দিক দিয়ে বিশাল এগিয়ে যাওয়া দেখা যাচ্ছে গত দশক ধরে। এ ব্যাপারে ভবিষ্যৎ খুবই জানা। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন সত্যি হবার পথে।

    তারপরেও, পরিবার, সমাজের সবচেয়ে মৌলিক একক, নিয়ে আমাদের সমাজবিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা কি? এক্ষেত্রে পুরুষদের কি সমান ভাবে পরিবারকে সময় দেবার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে? এই যে বাহির ও ভেতরের মাঝে ইঁদুর দৌড়, সেখানে কেবল নারীকেই কেন কষ্ট পেতে হবে? পরিবার তো কেবল এক নারীর নয়। একজন পুরুষও মিলেছেন তার সংগে।

    এ বিষয়গুলো আলোচিত হলে লেখাটি আরো পরিপূর্ণ হতো।
    মোটের ওপর, খুবই গোছালো এবং চমৎকার একটা বিষয়ে লেখা। এক নিশ্বাসে পড়লাম প্রতিটা লাইন। লেখিকাকে ধন্যবাদ।

    • ওয়াহিদা নূর আফজা বলেছেনঃ

      নারীরা তো বেশিদিন হয়নি যে বাইরে এসেছে। তারা এডজাস্ট করছে এতোদিন ধরে পুরুষের তৈরি করা পরিবেশের মধ্যে খাপ খাওয়াতে। নারীরা যখন নিজেরা কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পারবে (শুধু বিউটি পার্লার ধরনের নয়), এক্সিকিউটিভ পাওয়ারে যেতে পারবে তখন হয়তো অবস্থার উন্নতি হবে। আমেরিকাতে এখন অনেক স্বামীরা বাই চয়েস বাসায় থাকছে, আর স্ত্রীরা বাইরে কাজে যাচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় এটি একটি কালচারাল শক হলেও এখন এটি একটি বাস্তবতা। আসল কথা হলো কমপ্যানিয়নশীপ রাখতে গেলে কেস বাই কেস সাম্যাবস্থা খুঁজে নিতে হয় বোধহয়।

  2. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    অসাধারণ একটি তথ্যবহুল পোস্ট আপু। আপনার প্রোফাইলটিও বেশ লাগল বিশেষত প্রযুক্তির সাথে দর্শনের সম্পর্ক নিয়ে আপনার গবেষণা। 🙂

    নারী মুক্তির ব্যাপারটা আমাকে প্রায়ই ভাবায়। আসলেও কতখানি মুক্তি ঘটেছে আমাদের? প্রকৌশল আর প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনেক পেছনে এখনও আমরা, এর প্রেক্ষিতে অনেকের কাছে শুনি জেনারেল কেইসে মেয়েদের মাথায় বুদ্ধি কম, তাই এখন পর্যন্ত শান্তি ছাড়া আর কোন জায়গায় নোবেল পায় নি মেয়েরা। আমরা কেন একজন স্টিভ জবস বা বিল গেইটস কেই দেখব? এই জায়গাগুলোতে মেয়েরা নেই! আমি পুরুষবিদ্বেষী নই তবে এই ব্যাপারগুলো ভাবায় আমাকে।

    আরও একটা জিনিস আমার যেটা বেশ এলার্মিং মনে হয় তা হল বাইরে চলে আসা নারীদের বেশ বড় একটা অংশ কেবল দেহ প্রদর্শনমূলক পেশায় নিয়োজিত যা আলটিমেটলি পুরুষের মনোরঞ্জনের কাজেই লাগছে। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এই সমস্যা প্রকট। রীতিমত মেয়েরা পাগল হয়ে থাকে মডেল হাণ্ট প্রতিযোগিতায় যাওয়ার জন্য।

    বিলবোর্ড, ম্যাগাজিন কিংবা টিভি বিজ্ঞাপনগুলোতে এখন দিন দিনই নারীকে পণ্য বানানো হচ্ছে। এখনো রূপকেই মূল ধরা হচ্ছে একজন পুরুষের কাছে মোহনীয় হবার জন্য।এখানে একতরফাভাবে আমি পুরুষদের দোষ দিবো না। মেয়েরাও কেন এরকম পেশায় যাচ্ছে, কেন আত্মসম্মানের পুরোটাই জলাঞ্জলি দেয়া এই বিজ্ঞাপনগুলো করতে রাজি হচ্ছে, কি তাদের পরিস্থিতি এইসব বিবেচনায় এনে ওদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর কথা বোধ হয় ভাবা দরকার। আর নয়তো বাংলাদেশে নারীর শালীন স্বাধীনতার যে স্বপ্ন বেগম রোকেয়া দেখেছিলেন তা অধরাই থেকে যাবে।

    পশ্চিমে নারীর অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে, কিন্তু আমরা সেই হিসাবে পারি নি ততদূর এগোতে। তবে সুখের বিষয় এটাই, এবার বুয়েট থেকে তিনজন এম আই টি তে পড়ার সুযোগ পেয়েছে শুধুমাত্র মেধার গুণে, যার দুইজনই মেয়ে। আমি নিজে অনুপ্রাণিত হই আমারই সহপাঠী এই মেয়েগুলোকে দেখে।

    সবশেষে পরিবারে পুরুষদের দায়িত্ববোধটা জাগানোর খুব বেশি প্রয়োজন, কর্মজীবী একজন নারীকে যদি ঘরে বাইরে পুরোটাই একা সামলাতে হয়, সেই সাহস নিয়ে কয়জন বাইরে বেরোতে ইচ্ছা করবেন সেটা ভাববার বিষয়।গৃহস্থালী রন্ধনকার্য, গৃহসজ্জা, সূচিকার্য অবশ্যই অনেক ক্রিয়েটিভ কাজ; কিন্তু নারী মাত্রই এই কাজগুলো জানবে বা পারদর্শী হতে হবে এই ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছে আমাদের সমাজ অনেকটাই। এই চিন্তাটার আরও বেশি ব্যাপ্তি বিস্তার করা দরকার।

    • ওয়াহিদা নূর আফজা বলেছেনঃ

      মেয়েরা এখন পর্যন্ত ঘরের বাইরে তাদের স্বামী বা বাবার তৈরি করা পেশা কিম্বা তাদেরকে (পুরুষদের জন্য) বিনোদিত করবার জন্য তৈরি পেশাগুলোতে কাজ করছে। আস্তে আস্তে নিজেদের উপযুক্ত পেশা তৈরি করে নেবে হয়তো।

      আমার মনে হয় পড়াশোনার ক্ষেত্রে মেয়েদের পারফরমেন্স খুব ভালো। কিন্তু বিশের কোঠার একটা মেয়ে আর চল্লিশে এসে একই ধারা ধরে রাখতে পারে না। একটা পরিসংখ্যাণে দেখেছিলাম হার্ভাডের একটি ব্যাচের অবস্থা বিশ বছর পর কে কোথায় আছে খোঁজ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে শতকরা ৫০ ভাগ মেয়ে অফিস জবে আছে যেখানে ছেলেদের মধ্যে এটি শতকরা ৯২ ভাগ।

      আমার কাছের একজন বাংলাদেশী প্রতিবেশি এম আইটি থেকে পড়েছে। অনেক আগে থেকেই যে কাজ করে না। কিছুদিন আগে ওড় পাঁচ নম্বর বাচ্চা হলো। সুতরাং বর্তমান দেখে ভবিষৎ বলা যায় না। ভবিষৎ নির্ভর করে আলটিমেট গোলের উপর।

      • মাধবীলতা বলেছেনঃ

        “আসল কথা হলো কমপ্যানিয়নশীপ রাখতে গেলে কেস বাই কেস সাম্যাবস্থা খুঁজে নিতে হয় বোধহয়।” একমত। আমার যেটা মনে হয় যে আমি এত বড় একটা ডিগ্রি নিলাম, এত এত পড়ালেখা করে পরীক্ষা পার করলাম, অলস মগজে বসিয়ে না রেখে তা অবশ্যই কাজে লাগানো উচিত। মা একজন নারীর অনেক সম্মানজনক এক পরিচয়। মা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজের মত করে এই অর্জিত জ্ঞানের প্র্যাকটিস রাখা দরকার। তার জন্য বাইরেই থাকতে হবে সারাদিন তা নয়, বাইরে সময় কম দিয়েও অনেকভাবেই অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগানো সম্ভব। নারী পুরুষের চেয়ে অনেকভাবেই ভিন্ন, তাই আশা করছি এভাবে আস্তে আস্তে নিজেদের মত করে জায়গা করে নেবে মেয়েরা। 🙂

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    মেয়েদেরকে নিয়ে মেয়েদের লেখা আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়ি।
    আপনার লেখাটা খুব ভাল লাগলো। তথ্যবহুল, আর চিন্তার খোরাক জোগানো।
    নিয়মিত হবেন আশা করছি। 😀

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    লেখার তথ্যগত দিক বিবেচনা করলেই বোঝা যায় বেশ গবেষণা করে যত্ন নিয়ে লেখা।
    নারীদের নিয়ে এমন যুক্তিবাদী, গোছানো একটি লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
    বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের নিয়ে এইরকম লেখা পেলে ভীষণ খুশি হব।

    আপনার আগামী পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম আপু। 🙂

  5. অবন্তিকা বলেছেনঃ

    তথ্য বহুল আর অসাধারন পোস্ট!

  6. Mamun Ahmed বলেছেনঃ

    Thanks for your nice article.

  7. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    পোস্টটা খুব ভালো লেগেছে।

    http://www.theatlantic.com/magazine/print/2012/07/why-women-still-can-8217-t-have-it-all/9020/?single_page=true

    এই খানে দারুণ একটা লেখা আছে। এইটা নিয়ে কিছু লিখলে/ মন্তব্য করলে খুশী হব।
    এই টেড টকটাও রিলেভেন্ট শেরিল স্যান্ডবার্গ এর।
    http://www.ted.com/talks/sheryl_sandberg_why_we_have_too_few_women_leaders.html

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।