বাংলা চলচ্চিত্রে এক নতুন মুখ হলেন এম এ জলিল অনন্ত| তিনি একইসাথে একজন প্রযোজক এবং নায়ক| খুব বেশি নয়, মাত্র তিনটি ছবি দিয়েই আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছেন এই মানুষটি| চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় ‘খোঁজ:দ্য সার্চ’ এর মাধ্যমে| গত বছর মুক্তি পেয়েছিল ‘হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ’ এবং সর্বশেষ এই বছর মে মাসে মুক্তি পেল ‘দ্য স্পিড’|
‘দ্য স্পিড’ নিয়ে কথা বলার পিছনে কারণ আছে| যখন অনন্তের প্রথম ফিল্ম মুক্তি পায়, সেটি নিয়ে বেশ শোরগোল উঠেছিল| সেই ফিল্মের বিজ্ঞাপন আল-জাজিরা তে প্রচার পেয়েছিল| এছাড়া ফিল্মটির হাই বাজেট নিয়েও কথা উঠেছিল| ফিল্মটির কাহিনী বিস্তৃতি, অভিনয় নিয়েও সমালোচনা হয়েছিল| সে তো মাত্র শুরু| এই বছরে ‘দ্য স্পিড’ মুক্তির পর থেকেই প্রায় প্রতিটি হলেই দর্শকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে| এর প্রচারনাও আগের যে কোনো ফিল্মকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল| চারিদিকে এত গুঞ্জন শুনে শেষমেষ নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না| পাঁচজন বন্ধু মিলে ঠিক করে ফেললাম ফিল্মটি দেখেই ছাড়বো| যেই বলা সেই কাজ| স্টার সিনেপ্লেক্সে গিয়ে দেখি টিকিট সব বিক্রি হয়ে গেছে| বিমর্ষ মনে বাধ্য হয়ে তাই পরের দিনের জন্য অগ্রিম টিকিট কিনে রাখতে হলো|
কাহিনী সংক্ষেপ: অনন্য চৌধুরী (অনন্ত) একজন সৎ ব্যবসায়ী এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যার জীবনে এক ভাতিজি (দিঘি) ছাড়া কেউ নেই| শেয়ার বাজারে সবাই ধসের কবলে পড়লেও অনন্য এখনো সততার বলে টিকে আছেন| কিবরিয়া খান (আলমগীর) তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী| কিবরিয়া একজন দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী যিনি শেয়ার বাজারে ক্ষতির শিকার হন| তিনি অনন্যের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এবং হাত মিলান আরেক ব্যবসায়ী এনায়েতুল্লাহ’র (নিনো) সাথে| ঘটনাক্রমে সন্ধ্যার (পারভীন) সাথে অনন্যের পরিচয় ও বিয়ে হয়| বিয়ের পর কিবরিয়া ষড়যন্ত্র করে প্রথমে দিঘিকে হত্যা করেন, পরে সন্ধ্যাকে অপহরণ করেন এবং অনন্যের ব্যবসা ধ্বংস করার চেষ্টা করেন| অনন্যের সুখের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে| পরবর্তীতে অনন্য সব বাধা পেরিয়ে সন্ধ্যাকে উদ্ধার করে, এভাবেই সিনেমাটির শুভ সমাপ্তি ঘটে|
ইতিবাচক দিক:
১. প্রযোজক (মনসুন প্রডাকশন) হিসেবে অনন্ত সত্যিই প্রশংসার দাবিদার| প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ভালো ভালো লোকেশনে ফিল্মটির শুটিং করেছেন|
২. নায়িকা হিসেবে পারভীন একেবারেই নতুন মুখ| মালেশিয়ান হওয়া সত্ত্বেও বেশ ভালই বাংলাতে কথা বলেছেন| এছাড়া তার অভিনয় ও এক্সপ্রেশনও মানানসই ছিল|
৩. পার্শ্ব চরিত্রে এক রাশিয়ান অভিনেত্রী নানা’র অভিনয়ও মন্দ হয়নি| বিশেষ করে ফিল্মের শেষের দিকে একটি আইটেম সং ‘এসোনা এসোনা’ তে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন|
৪. গান নির্বাচন যথোপযুক্ত ছিল| আমি রোমিও তুমি জুলিয়েট, গুনগুন পাখিরা, এসোনা এসোনা, আকাশের ভাজে- গানগুলো শ্রুতিমধুর ছিল বটে|
৫. গানের সাথে নাচের কোরিওগ্রাফিও উপভোগ্য ছিল|
৬. গতানুগতিক বাংলা চলচ্চিত্রের গন্ডি পেরিয়ে ব্যতিক্রম কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করেছেন পুরো টিম|
সমালোচনা:
১. ফিল্মটির মূল চরিত্রে অনন্তের অভিনয় বেশ অপটু| তার বাচনভঙ্গি ও এক্সপ্রেশন শ্রুতিকটু ও দৃষ্টিকটু ছিল| কুথায়, পতিযোগিতা, কিশি, কিষ্টিনা- এ শব্দগুলোর ভুল উচ্চারণ বিরক্তির উদ্রেক করে| এছাড়া দিঘি গুলিবিদ্ধ হবার পর হাসপাতালে ডাক্তারকে ডাকার সময় ‘ডাক্তার’ বলে যে এক্সপ্রেশন দিয়েছেন, তা রীতিমত হলের মানুষকে হাসিয়েছে|
২. ‘আকাশের ভাজে’-এর মত শ্রুতিমধুর রোমান্টিক গানে অনন্তের এক্সপ্রেশন বেশ বেমানান ছিল যা দর্শককে হতাশ করেছে|
৩. অনন্তের ডায়ালগ থ্রোইং এ ভুল ঠাট্টার জন্ম দিয়েছে, “অসতের (?) চেয়ে সততার স্পিড অনেক বেশি|”
৪. এছাড়া ছোটখাটো অনেক ভুল ছিল| যেমন: মালেশিয়ার সমুদ্র সৈকতে রাখা গাড়ির পেছনে নেমপ্লেটে লেখা ‘ঢাকা মেট্রো’!
পর্যালোচনা:
১. সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসাভিত্তিক ছবির কথা বললে ‘দ্য স্পিড’ সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে বলে আশা করা যায়|
২. নেতিবাচক দিকগুলোর সমাধান করতে পারলে মনসুন প্রডাকশন সামনে হয়ত আমাদের অনেক ভালো ছবি উপহার দিতে পারবে|
৩. এম এ জলিল অনন্তের প্রচেষ্টার প্রশংসা করতে হয়| সমালোচকরা যাই বলুক, তিনি ভিন্ন কিছু করতে চান এই বার্তা ফিল্মটি দেখলেই বুঝা যায়|
ফিল্মটি দেখা শেষে হল থেকে বেরিয়ে সকলের মুখ দেখে মনে হলো তারা একেবারে হতাশ যে হয়েছেন তা কিন্তু নয়| বাংলা চলচ্চিত্রে সাকিব খানের একক আধিপত্য আর গতবাধা প্রেমের ছবি দেখতে দেখতে মানুষ যখন ক্লান্ত, ঠিক সেই মুহুর্তে ভিন্ন গল্পের ভিন্ন নায়ক-নায়িকা’র উপস্থিতি কিছুটা হলেও তরুনদের হলের দিকে টানতে পেরেছে| আসন্ন ঈদ এ মুক্তি পাচ্ছে মনসুন প্রডাকশনের আরেক ফিল্ম ‘মোস্ট ওয়েলকাম’| দেখার আমন্ত্রণ রইলো সবাইকে|
– পাহাড়ি কন্যা
কিছু অংশ পড়ে মনে হলো আপনি এই পরিচালক এর পক্ষে নেমেছেন অনলাইনে!
এই বছরে ‘দ্য স্পিড’ মুক্তির পর থেকেই প্রায় প্রতিটি হলেই দর্শকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে|
এই ভিড় এর একটা কারণ মনে হয় ছিল কমেডি
বাংলা চলচ্চিত্রে সাকিব খানের একক আধিপত্য আর গতবাধা প্রেমের ছবি দেখতে দেখতে মানুষ যখন ক্লান্ত, ঠিক সেই মুহুর্তে ভিন্ন গল্পের ভিন্ন নায়ক-নায়িকা’র উপস্থিতি কিছুটা হলেও তরুনদের হলের দিকে টানতে পেরেছে|
তরুণদের কেন টেনেছে সেটাও বলতে পারতেন!
তবে আমি অনন্ত’র আগমনকে দারুণ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। অনন্তের কারণে আশা করি বিগ বাজেট এর মুভি নির্মিত হবে।
অনন্তকে বাদ দিয়ে যদি অন্য কাউকে দিয়ে অভিনয় করানো হত তাহলে এরকম মজাটা পেতাম না| কমেডি বলবেন না| এটা হলো আনাড়ি পারফরমেন্স| আর পক্ষে-বিপক্ষে বলছি না| ভদ্রভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলাম আর কি! অপমান না করে বরং সমালোচনা করে তাদের উত্সাহ দেয়া উচিত|
“অপমান না করে বরং সমালোচনা করে তাদের উত্সাহ দেয়া উচিত|” – সহমত
আপনার মন্তব্য ভালো লেগেছে। আসলেই আমরা একটু বেশি করি 🙁
আমি খুউবই হতাশ। 🙁
অনন্ত আর আগের মতো ইংলাজি বলে না কেন? 🙁 🙁 🙁
আমিও হতাশ!!
“কিছু অংশ পড়ে মনে হলো আপনি এই পরিচালক এর পক্ষে নেমেছেন অনলাইনে!”>> সহমত!
তবে ঢালিউডে অনন্তর আগমনকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি আমিও। তথাকথিত সাকিব-অপু থেকে দর্শক একটু অন্য স্বাস পাচ্ছে, প্লাস বাংলাদেশে এত বড় বাজেটে সাধারণত চলচ্চিত্র আগে ঢালাওভাবে নির্মিত হয় নি। এটা অবশ্যই দেশের চলচ্চিত্র জগতের জন্য ইতিবাচক।
পক্ষে-বিপক্ষের কথা এখানে আসছে কেন? মানুষ যে হারে অনন্ত সাহেবকে অপমান করছে আমি সেদিকটাতে যেতে চাচ্ছি না| তাই একটু ভদ্র ভাষায় বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলাম আর কি!
আমি একটাও দেখি নাই এখনো।
আমিও না =))
দেখেননি তো কি হয়েছে?
8)সিনেমাটি দেখে আহামরি কোনো অনুভুতি হয় না, নির্মল (?) বিনোদনে কিভাবে যেন সময় পার হয়ে যায়! ঈদের ২য দিন চ্যানেল 9 এ দেখানো হবে, দেখতে চাইলে দেখতে পারেন| তবে হাসবেন-এ গ্যারান্টি দিতে পারি , আর তাতে পেট ফেটে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে😛:happy:
অনন্তর একটা মুভিও দেখতে পারলাম না :crying:
তবে একটা ব্যাপার ঠিক যে কমেডি হোক আর আনাড়ি অভিনয়ই হোক সে কিছুটা হলেও দর্শক টানতে পেরেছে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ছবিগুলোর মধ্যম শ্রেণির দর্শক একদম ছিলই না বলতে গেলে। কিন্তু এখন অনেকেই হয়ত তার মুভিগুলো দেখতে যাচ্ছে। আশা করি সামনে ভালো কিছু করবে।
এখনো দেখিনি একটাও। সামনে পেলে দেখবো ।
এইরকম উৎসাহ নিয়ে বানানো ছবি সুযোগ পেলে সবার দেখা উচিত হবে মনে করি,
ভালো লাগলে আরো অনেককে ধরে দেখাবো।
তিনটা ছবি করেও যদি না বুঝে কেও যে নায়কের রোল টা তার জন্য না; নিজে প্রযোজক তাই জোর করে নিজেকে নায়ক হিসেবে পর্দায় দেখাবো, তাহলে আসলে বলার কিছু থাকে না। ব্যবসা ভিত্তিক হোক আর যে ভিত্তিক ই হোক, দেশে নায়কের রোল করতে পারবে এমন লোকের অভাব আছে কি? লিপস্টিক সুন্দরী শাকিব খান কে টানতে হবে এমনও কোন কথা নেই। কিন্তু বড় বাজেট, সুন্দর লোকেশন, সবই অর্থহীন হয়ে যায় যখন দেখা যায় যে এখানে প্রতিভার চেয়ে ইগো বড়, যিনি প্রযোজক তিনিই নায়ক; অভিনয়ের যোগ্যতা না থাকলেও তিনিই প্রধান চরিত্র; দর্শকদের পয়সা দিয়ে টিকেট কেটে সেটা দেখতে হবে।
এক সময় মনে হত আমাদের দেশে নায়িকার সংকট| এখন দেখা যাচ্ছে নায়ক সংকট| অনন্ত প্রযোজক হিসেবেই ভালো করবে, নায়ক হিসেবে নয় যদি না সে নিজেকে ঝালাই করিয়ে নিতে পারে| তিনটা ছবি দেখার পর তার অভিনয়ের অবস্থা দেখে এই আশা করাটা হয়তো দুরাশা
:voypaisi:তবুও এই সিনেমাতে ইতিবাচক দিকের সংখ্যা আশানুরূপ| সমস্যাটা নায়ক সাহেবকে নিয়ে| আপনার কি মনে হয় ইমন বা নিরবের মত চকলেট বয় দ্বারা ‘নায়ক’ পার্ট করালেও ছবির মান বাড়বে?:thinking:তবে এটা স্বীকার করতেই হবে এই মুহুর্তে সাকিব খানকে বাদ দিলে ইমন বা নিরবের কোনো বিকল্প নেই| তারপরও আমাদের সিনেমার জন্য সালমান শাহ বা রিয়াজের মত ভালো অভিনেতা দরকার, যারা একই সাথে নায়কও| এই অভাবটা কিভাবে দূর হবে জানিনা🙁এক সময় মনে হত আমাদের দেশে নায়িকার সংকট| এখন দেখা যাচ্ছে নায়ক সংকট| অনন্ত প্রযোজক হিসেবেই ভালো করবে, নায়ক হিসেবে নয় যদি না সে নিজেকে ঝালাই করিয়ে নিতে পারে| তিনটা ছবি দেখার পর তার অভিনয়ের অবস্থা দেখে এই আশা করাটা হয়তো দুরাশা
:voypaisi:তবুও এই সিনেমাতে ইতিবাচক দিকের সংখ্যা আশানুরূপ| সমস্যাটা নায়ক সাহেবকে নিয়ে| আপনার কি মনে হয় ইমন বা নিরবের মত চকলেট বয় দ্বারা ‘নায়ক’ পার্ট করালেও ছবির মান বাড়বে?:thinking:তবে এটা স্বীকার করতেই হবে এই মুহুর্তে সাকিব খানকে বাদ দিলে ইমন বা নিরবের কোনো বিকল্প নেই| তারপরও আমাদের সিনেমার জন্য সালমান শাহ বা রিয়াজের মত ভালো অভিনেতা দরকার, যারা একই সাথে নায়কও| এই অভাবটা কিভাবে দূর হবে জানিনা🙁