উহ্ কি ভয়ঙ্কর বিষণ্ণ সকাল… কেন??? ভালো লাগে না এই বিষণ্ণ সকাল। কেমন কালো কালো মুখ করে গোমড়া করে রাখে চেহারা। 🙁 সবাই বলে সকালে নাকি খুব ভালো লাগে,একটা জরাজীর্ণ দিনের শেষ করে, ক্লান্ত-ক্লিস্ট রাতের পর সকালে আসে নতুন সূর্য আর নতুন আশা নিয়ে,সকালের সূর্যের রশ্মি ফোটে জরাজীর্ণতাকে মুছে ফেলার জন্য, কিন্তু আমার সকালে ভালো লাগে না………
আচ্ছা সকালের রঙ কি ধূসর? হতাশার রঙ কি ধূসর? সকালটা দেখলেই এমন হতাশ লাগে কেন ?যেন ধূসর বর্ণ গুলো হতাশা দিয়ে আমার আগাগোড়া মুড়ে ফেলছে। কেমন মন খারাপ করে দেয়। সব পাওয়া-না-পাওয়ার হিসাব কোথা থেকে যেন এসে আমার সাথে কুশল বিনিময় করে, কই এতোদিন তো তুমি আমার খোঁজ নাও নি, এখন কেন? কেমন যেন বিষণ্ণ, প্রথম যখন রাতের আঁধারটা কাটে, সে যেন বিষণ্ণতার ঘোষণা দেয়। একটু একটু আঁধার কাটে আর একটু একটু করে জীবন তার জ্বালাময় খাতার অধ্যায় গুলো শুরু করে।উহ্ কেন সকালে আসে,আবার প্রতিযোগিতায়ে নামো, দৌড়াও দৌড়াও দৌড়াও আর দৌড়াও। আবার সেই একঘেয়েমি পৃথিবী, চারপাশে বনবন করে ঘুরতে থাকা কথামালা,সবার মাঝে কেমন যেন ব্যস্ততা, নিজের দিকে তাকানোর সময় নেই, শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া অন্তরে পানি দেয়ার বোধ নেই,যখন কিটির মিটির করে রোদটা উঠে মনে হয় যেন আমাকে ব্যাঙ্গ করাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। মুলত এই রোদ টাই মেজাজ খারাপের আসল কারণ, ভোর মানেই তো রাত শেষ,একটু পরই ট্যাঁ ট্যাঁ করে রোদ উঠবে।
কেন সকালে আসে, পৃথিবীর সারা রাতের একরত্তি কষ্ট নিজের বুকে নিয়ে। ওই যে সোনার হরিনের খোঁজে ক্লান্ত ছেলেটার ক্লান্তি, সে তো ভালই ছিল তার একলা রাতে নিজের ক্লান্তি নিয়ে একলা বসে,তোমার কি দরকার ছিল তাতে ভাগ বসানোর। নতুন দিনে আশা নিয়ে বের হয়ে আবার রাতে হতাশা নিয়ে ফেরা, দাও না তাকে কিছুক্ষণ নিজের মত থাকতে…… ওই যে বাচ্চাটা-সারা দিন না পাওয়া ব্যস্ত বাবার পিঠ ঘেঁষে ঘুমাচ্ছে,দাও না তাকে ঘুমাতে, এমন কর কেন???? আহা ওই মেয়েটার সাথে অবিচার করো না, মা অসুস্থ ছিল তো, আগের দিন পড়াশুনা করতে পারে নি, এই রাত টুকুই তো শেষ ভরসা,তারপরই তো পরীক্ষা…… দাদাজান- রাতে আরেকটু বেশি সময় পেলে হয়ত আরও কিছুক্ষণ ইবাদত-বন্দেগী করতো…… বাবার মৃতদেহ নিয়ে চারপাশে বসে আছে যে ভাইবোন গুলো, সকালে বাবার দাফন,হোক না মৃত, তবু তো বাবা, পাশে তো বসে থাকতে পারছে, মাটির নিচে তলিয়ে গেলে কে খুঁজে পাবে??? তবে……রাস্তার মোড়ে ছিনতাইটা আরেকটু বেশি হত, তা নাহয় একটু হত আরকি, ওদের ও তো খেয়ে পড়ে বাঁচতে হবে নাকি!!! নাইট ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফেরা ক্লান্ত প্রাণ গুলো-সব জায়গাতেই ক্লান্তি আর অবসাদের ছড়াছড়ি। ভোরের ওই শান্ত,স্নিগ্ধ ধূসর বর্ণটা দেখলে তাই আমকেও ক্লান্তি আর অবসাদ চেপে ধরে,হতাশ লাগে,স্নিগ্ধ লাগে না……
সকাল সুন্দর!!! সেতো বিলাসিতায়ে ,পত্রিকাটা হাতে নিয়ে আরাম কেদারায়ে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়াতে।
কেন আমার সকাল ভালো লাগে না।মনে হয় রাতটা বেশি ভালো লাগে এজন্য, কী করবো ব্যস্ত এই জীবনে রাতটা ছাড়া তো সময় নেই নিজেকে নিজে দেয়ার।নিজের ভিতর যে বন্দি অস্তিত্বটি আছে- আলো-হাওয়া-বাতাস ছাড়া, রোদ-মেঘ, ঝড়-বৃষ্টি দেখা ছাড়া, একাকীত্বে গুমরে কাঁদতে থাকা অস্তিত্বটি নিঃসঙ্গ দিন কাটাচ্ছে আর আমার পথ চেয়ে প্রতিক্ষার মিষ্টি প্রহর গুনছে তার কি হবে? তাকে কি আমি সময় দিব না? তাই স্বার্থপরের মত রাতটা চাই, একটু নিজের মত করে থাকার জন্য। আমি রাতের গান শুনতে চাই, শিশির পরার শব্দ শুনে জেগে থাকার আনন্দ উপভোগ করতে চাই, নিস্তব্ধতার মাঝে যে আনন্দের উল্লাস তা শুনতে চাই, নিঃসীম কালো অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থেকে সৃষ্টির গভীরতা অনুভব করতে চাই, তারাহীন আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আমি হারিয়ে যেতে চাই আজানা ভুবনে।আর হঠাৎ যখন কাঁকাঁ করে একটি কাঁক মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায়ে তাতে আমি চমকে উঠতে চাই, বাগানে কালো বিড়ালটি দেখে ভয়ে দৌড়ে কাঁথার নিচে মুখ ঢাকা দিয়ে পালাতে চাই…………
ভোর মানেই তো আমার রাত শেষ হবার ঘণ্টা আর বিরক্তিকর রোদের দাঁত বের করে হাসার প্রস্তুতি।
এজন্যই স্বার্থপরের মত রাতের প্রার্থনায়ে বসে থাকতে যেয়ে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম সকালের তাৎপর্য।ওই যে রিকশাওয়ালা- সকাল হলে তার একমাত্র ভরসা রিকশাটি নিয়ে বের হবে,অসুস্থ ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে হবে না?! সকাল বেলা ফল প্রকাশ হবে যে ছেলেটার-সেতো বসে আছে সকালের অপেক্ষায়…… ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে , ধুর সকাল না হলে কি ক্লাসে যাওয়া যাবে???!!! আর ক্লাসে না গেলে কি আড্ডায়ে টেবিল ভাঙা যাবে,বাকিদের পিণ্ডী চটকাতে হবে না, আর স্যার-ম্যাম দের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার…… মেয়েটি বসে আছে,ভাইয়া জন্মদিনের উপহার পাঠিয়েছে, মনে হয় সকালেই কুরিয়ারটা এসে হাজির হবে……
নাহ্ নিজের মধ্যে বুদ হয়ে থেকে ভোরের আলোয় ভেসে যাওয়া হয় নি। ভাগ্যিস সেদিন বারান্দার গ্রিলটা খোলা ছিল, নিত্যদিনকার মত বিরক্তি নিয়ে বারান্দার গ্রিলটা লাগাতে গিয়েছিলাম………
নাআআআআআ এ আমি দেখতে চাই না,এ আমি উপভোগ করতে চাই না,কেন এমন হচ্ছে, আমার এতো দিনের ধ্যান ধারণা পাল্টে যাচ্ছে, নাহ্ স্বীকার করতেই হচ্ছে, ভোরটা বেশ সুন্দর, শুধু ‘বেশ সুন্দর’ না, অনেক অনেক বেশি সুন্দর।(মনে সান্ত্বনা দিলাম-না আজ রোদ নেই, মেঘলা আকাশ তাই ভালো লাগছে,আমার তো আসল সমস্যা আলোতে) মেঘলা আকাশ এমনিতেই সুন্দর তার উপর আবার আধা ফোটা ভোরের আলোয় মেঘলা আকাশ, হিমেল বাতাস, হালকা ঝিরঝিরে বৃষ্টি, বাইরে নিরালা সবুজ। সবচেয়ে যা ভালো লাগছে তা হল চশমা ছাড়া দেখা এই প্রকৃতি। কি যে অদ্ভুত অনুভূতি। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা,মনে হচ্ছে সামনের এই সবুজেই বুঝি পৃথিবী শেষ। তৈলাক্ত কিছু যেমন ধরতে নিলে পিছলে যায়ে, দৃশ্যটা যেন তেমন, চোখের সামনেই আমার সব কিন্তু আমি কিছুই দেখছি না আবার সব দেখছি।বাহ্ আন্ধা হবা সুবিধা আছে তো। ওই আকাশ,ওই সবুজ-মনে হচ্ছে ইচ্ছে করলে ছুঁতে পারব, কিন্তু তা করতে গেলেই লজ্জাবতী গাছের মত লজ্জায়ে মুখ লুকাবে,ধরতে নিলেই শিশিরের মত টুপ করে গলে যাবে। ইচ্ছে করছে এই নীল, এই সবুজ- হাতের মুঠোয়ে নিয়ে, চোখ বন্ধ করে তুলার মত স্নিগ্ধ সব বাতাস নিয়ে নেই, ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুধু আমার জন্য- গালে, চোখে, কপালে তার স্পর্শ নেই……… নাহ্ একটু ‘গল্পগুচ্ছ’টা নিয়ে বারান্দায় না বসলেই আর হচ্ছে না। আচ্ছা কোথায়ে কি এখন কোন শিশু জন্মগ্রহণ করেনি? ইসস যদি দুইটা যমজ ভাইবোন জন্মাতো কী মজা হত। বোনের নাম হবে ঊষা, ভাইয়ের নাম হবে প্রভাত………… আজানা এবং অচেনা ওই দুই ভাই বোনের নামে আমার এই না দেখা ভোর…………
:beshikhushi: :beshikhushi: :beshikhushi:
রাতের আঁধার আপন আর ভোরের মায়ায় দিনযাপন।
রাত-দিনের ভালোবাসায় সিক্ত হোক সবার মন। :beshikhushi:
ধন্যবাদ পড়ার ও মন্তব্যের জন্য :beshikhushi:
বলতে ভুলে গেছি!
:welcome:
:yahooo:
ধন্যবাদ
:happy:
অবজেকশান(‘অবজেকশান’ এর সঠিক বাংলা খুঁজে বের করতে পারছি কোন ভাবেই(আবার ও ছিঃ 😉 ) আর ইংরেজি ব্যবহার এর জন্য অবজেকশান দিতে হবে,আমি নিজেই নিজেকে দিচ্ছি 🙁 )-আমি অনেক ছোট হব। ‘আপনি’ না বললে খুশি হব 😀
আচ্ছা ঠিক আছে।
তাহলে ‘তুমি’ই সই। 😛
মন খারাপ করা ভয়ঙ্কর-বিষন্ন সুন্দর।
সরবে স্বাগতম। :welcome:
ধন্যবাদ ধন্যবাদ ধন্যবাদ 🙂 🙂 🙂
মন খারাপ করা লিখা লিখতে চাই নাই ত,আসলে কি যে লিখতে চাইসিলাম আর লিখার পর যে কি হইসে বুঝলাম না 🙁 কিন্তু ভোর যে আসলেই অনেক সুন্দর তা লিখতে চাইসিলাম 🙁
তবে সকাল আমার আসলেই মন খারাপ লাগে 🙁
সুন্দর লেখা।
বানান, বিরাম চিহ্ন, স্পেসিং এগুলি আরেকটু যত্ন নিয়ে করলে ভাল লাগবে।
:welcome:
ধন্যবাদ 🙂
অবশ্যই চেষ্টা করবো 🙂
শিরোনামে একটা ভুল আছে মনে হয়, তাই না? *আলোয়* হবে না?
হুম 🙁
আপু- চেষ্টা করেছি যতটুকু পারি ঠিক করার,
আশা করি আরও অনেক ভুল আছে 🙁
বাংলায়ে কাঁচা :crying:
ছিঃ ছিঃ ছিঃ হে বঙ্গ-কন্যা :crying:
আপনি বৈরাগী কন্যা বুঝি?
আমি ভাবছিলাম ‘পুত্র’ কিনা! 😛
খুব সুন্দর আর ভালো লাগার মতন লেখা।
শুরু যদি হয় এমন জৌলুসময়, সরব তবে এবার আরেকজন দারুণ সবর পেলো যার স্বর শুনে সচকিত হবে গোটা তারুণ্যময় বাংলাদেশ 🙂
:welcome:
ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না 🙂 , এমন কমেন্টে তো আমিই লজ্জায়ে ছোট হয়ে যাচ্ছি। 😐
সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি,সুন্দর মনের অধিকারীদের চোখে সবই সুন্দর। তাই তো সরব জৌলুসময় আপনাদের মত সুন্দর মনের প্রাণ গুলোকে নিয়ে… :beshikhushi:
খুব ভালো লাগলো পড়ে, কারণ বেশিরভাগ পঙক্তি আমার সাথে মিলে যায় 😀
তোমার বিষন্নতার সাথে সুর মিলিয়ে আমারো চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে
“উহ্ কেন সকালে আসে,আবার প্রতিযোগিতায়ে নামো, দৌড়াও দৌড়াও দৌড়াও আর দৌড়াও। ”
8)
সুন্দর লেখা, সুন্দর করে অনুভূতির প্রকাশ। আসলে সবই আপেক্ষিক এ পৃথিবীতে। আমি যেমন ভয়ানক রাত্রিবিলাসী টাইপ, আবার তেমনি এটাও সত্য যে এই দিনের ব্যস্ততা না থাকলে হয়তো রাতের বিশেষত্ব ধরতে পারতাম না। 🙂
:welcome:
ধন্যবাদ বোরহান :guiter:
বাহ্ আমার মত নিশাচর প্রাণী পেয়ে খুশি হয়ে গেলাম… :love: আসলেই রাত জাগা যে কি মজার কাজ :yahooo:
ধন্যবাদ :happy:
বাহ! ভালো লাগছে।
সরব এ স্বাগতম আপু 😀
ধন্যবাদ 😀
ধন্যবাদ 😀
ভালো লেগেছে
:welcome: আপুনি 😀
ধন্যবাদ 😀
:welcome:
অনেক শুভকামনা 🙂
অনেক ধন্যবাদ :happy: