মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা না নেবার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে, আগামীকাল, ১৩ই আগস্ট, বেলা ১২টার মধ্যে শহীদ মিনারে, সকলকে উপস্থিত থাকবার জন্য আহবান জানানো যাচ্ছে। বিশেষ করে, সকল মেডিকেল এর ছাত্র, শিক্ষক ও ডাক্তারগন পাশে থাকলে তো খুবই উপকার হয় আমাদের জন্য। এছাড়াও, ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মা এর উপস্থিতিও কাম্য। আর যেহেতু ন্যায় এর পথেই আছি, আশা করছি সাংবাদিক ভাই-বোনরাও এগিয়ে আসবেন। এইটুক বলতে পারি, ভুল কিছু করছি না !
ইভেন্টে অংশগ্রহন করুন ও আমাদের সাথে একাত্মতার জন্য আসুন
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মোটামুটি সকল শ্রেণির মানুষই বিশাল ক্ষিপ্ত। হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। এদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের সবচেয়ে বড় দুইটি পাবলিক পরীক্ষা, এসএসসি ও এইচএসসি উভয়েই সম্পুর্ণ সাজেশন নির্ভর। ফলে জিপিএ ৫ এর মহামারী কলেরার থেকে তীব্র হলেও, দেশ মেধাশুন্যের দিকে প্রতিবছর দুইবার লম্ফ মেরে এগিয়ে যাচ্ছে, এতে সমর্থন দিবে না এমন লোক হয়তো নেই। এরই মাঝে, দেশে সত্যিকার অর্থে যদি পাঠ্যবই আত্মস্থতা ও মেধা যাচাই জনক একটি পরীক্ষা থেকে থাকে, তা হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। তুমুল প্রতিযোগীতামুলক এ পরীক্ষায় বই এর প্রতিটি লাইন যেনো একেকটি প্রশ্ন। আর তাই, যে ছাত্রের পাঠ্যপুস্তকের উপর যতো বেশী আধিপত্য, যে যতো ভালো করে তার এইচএসসি এর দুইটা বছরকে কাজে লাগিয়েছে, বুঝে পড়াশুনা করেছে, তার জন্য ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকতে পারার নিশ্চয়তা ততোই বেড়ে গিয়েছে।
কথা হলো, এসব ধ্রুব সত্যগুলো আবার কেনো বলছি? অবাক হয়ে বলছি, কারণ দেশের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের পদবীধারীদের এক অভূতপুর্ব সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া। এর বদলে তারা চাচ্ছেন, যাতে এসএসসি ও এইচএসসি এর রেজাল্ট, অর্থাৎ জিপিএর ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজ গুলোতে ভর্তি নেয়া হয়। এর পেছনে তাদের যুক্তি –
গত বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছাপাখানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা, পরীক্ষার আগে ভুয়া প্রশ্নপত্র বেচাকেনাসহ নানা ধরনের সমস্যা হওয়ায় এবার পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বেশির ভাগ অধ্যক্ষ। তাঁরা বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষা না হলে কোচিং সেন্টারগুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেসব কোচিং সেন্টার নানাভাবে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রতারণা করছে, তাও বন্ধ হবে।
কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার জন্য তো দায়ী এর সাথে জড়িতরা! এখানে ভর্তি পরীক্ষার দোষটা কোথায়? ভর্তি পরীক্ষার্থীদেরই বা দোষটা কোথায়? আর কোচিং সেন্টার? তারা কোঁচিং সেন্টার গুলোর লাইসেন্স ক্যান্সেল করে দিক! আর না হয় কোচিং সেন্টার বন্ধের ঘোষনা দেয়া হোক। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সাথে এসবের কি সম্পর্ক? আবারও সেই পুরানো কথা বলতে হয়, “মাথা ব্যাথায় ঔষধ খাওয়া লাগে, নাকি মাথা কাটা লাগে?”
তাঁদের প্রস্তাব নিয়ে কিছু বিবেচনায় যাওয়া যাক। “তাঁদের” বলবার সময় চন্দ্রবিন্দু যোগ করবার কারণ, এ সিদ্ধান্ত ২২টি সরকারি মেডিকেল ও ২টি বেসরকারি মেডিকেলের অধ্যক্ষের এক সভায় নেয়া। তাঁদের প্রস্তাব ছিলো, এসএসসি ও এইচএসসি এর জিপিএ এর উপর ভিত্তি করে ভর্তি সম্পন্ন করা। গত কয়েক বছরের জিপিএ ৫ এর মেলা দেখা যাক।
এসএসসিঃ
২০১০ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৬২ হাজার ১৩৪ জন।
২০১১ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৭৬ হাজার ৭৪৯ জন
২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৮২ হাজার ২১২ জন।
এইচএসসিঃ
২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৬১ হাজার ১৬২ জন
২০১১ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ৩৯ হাজার ৭৬৯ জন
২০১০ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ২৮ হাজার ৬৭১ জন।
২০০৯ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে = ১৮ হাজার ২২২ জন
এটি ছিলো সমগ্র দেশের রেজাল্টের একটি ঝলক। এ ক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারকদের একটি কথা উল্লেখযোগ্য –
প্রতিবছর ভর্তির জন্য ৫০-৬০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) যেখানে একটি আসনের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন-চারজনের পরীক্ষা নিচ্ছে, সেখানে গত বছর এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে তিন হাজার আসনের বিপরীতে ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নিতে হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, ৫০-৬০ হাজার ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেয়া সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে, ৬১ হাজার ১৬২ জন (২০১২ সালের কথাই না হয় বললাম, আগামী বছর চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়বে, জানা কথা) এর মধ্যে থেকে অধিকতর যোগ্য খুজে বের করা কতোটা যৌক্তিক, যেখানে কিনা সকলেই জিপিএ ৫ প্রাপ্ত? আর যারা জিপিএ ৫ এর থেকে কম পেয়েছে, তারা কি মেডিকেলে পড়বার যোগ্য নয়?
আমার একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার শেয়ার করি। ২০১১ সালের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর ছিলো ৬৯.৫। আমার জিপিএ ৫ ছিলো এবং আমি পেয়েছিলাম ৬০.৫, এবং আমি ঢাকা মেডিকেলে বর্তমানে পড়াশুনা করছি। আমারই ক্লাসমেট, রিয়াজুল ইসলাম শাওন। তার জিপিএ ছিলো মাত্র ৪.৫০। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষায় সে পেয়েছে ৬৬.৫ এবং সেও আমার সাথে এখন ঢাকা মেডিকেলে পড়ছে। আমার কথা এখানেই, যদি শুধু জিপিএ এর ভিত্তিতে ভর্তি নেয়া হয়, তাহলে “বাজে সিস্টেম” এর ভেতরে হারিয়ে যাওয়া প্রতিভাবান ছেলে-মেয়েগুলো কিভাবে নিজেদের যোগ্যতাকে প্রমান করবে?
আরেকটু ভুল যা বলা হয়েছে, তা হলো, বুয়েটে কখনোই প্রতি আসনের বিপরীতে ৩-৪ জন পরীক্ষার্থী থাকে না। ২০১১ সালেও ৮০০০ পরীক্ষার্থী প্রায় ১০০০ সীটের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। ৮০০০ কে ১০০০ দিয়ে ভাগ দিলে উত্তর “আট” হয়। ২০১১-১২ সালে শাবিপ্রবিতে প্রতি আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২৩ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক-ইউনিটেই প্রতি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ২৯ জন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু একটি ইউনিটেই যদি প্রতি সিটের বিপরীতে ২৯ জন অবস্থান নিতে পারে, সারা দেশে প্রায় সকল বিজ্ঞান শিক্ষার্থীই অংশ নেয়া ৩ হাজার সিটের বিপরীতে ৫০০০০, অর্থাৎ প্রতি সিটের বিপরীতে সাড়ে ১৬ জন অংশ নেয়া অযৌক্তিক, ব্যাখ্যা দিবেন কি তাঁরা?
আঞ্চলিক রেজাল্টঃ
২০১২ সালের এসএসসি রেজাল্টের ক্ষেত্রে আমরা জানতে পারি যে –
সব বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৬২৯ জন। আর সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে সিলেট বোর্ড। এ বোর্ডটিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৬১১ জন।
তাহলে কি স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার ছেলে-মেয়েরা অতিরিক্ত সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে না? সম্ভাব্যতা তো তাই বলে !
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ
বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জিপিএ ৫ অনেকখানিই নির্ভর করে, প্র্যাক্টিকেলের নাম্বার এর উপর। আমি ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করি। য়ামার সিট পরে ফার্মগেটের কোনো একটি কলেজে, নাম জানাতে ইচ্ছুক না হওয়ার সঙ্গত কারণ আছে। রসায়ন এর প্র্যাক্টিকেল মানেই ছিলো মামাদের কে ১০০-৫০ টাকার নোট ধরিয়ে দেয়া ও তারা লবন পরীক্ষা করে দিবেন। জীববিজ্ঞান প্র্যাক্টিকেলে তো তেলাপোকার মুখোপাংগ ও পরিপাক এর স্লাইড আগে থেকেই তৈরী থাকে, মামাকে ১০০-৫০ টাকা দেয়া লাগে আর কী! কাহিনী এখানেই শেষ নয়। একই এলাকায় দুইটি কলেজ, একের সিট আরেকটিতে পরেছে। তো ঐ কলেজে কড়া গার্ড দেয়ার কারণে, এ কলেজে প্র্যাক্টিকেলের নাম্বার কম করে দিয়েছে, ভাইবায় নাম্বার কম দিয়েছে। এই যে মানব আবেগে চলা রেজাল্ট, এই রেজাল্ট কিভাবে নির্ধারণ করবে, কে মেডিকেলে পড়বার যোগ্য, আর কে নয় ?
তারিক আদনান মুন – ভাইয়ার এ সম্পর্কিত লেখার একটি বিশেষ জায়গা উল্লেখ করছি –
লেখাটির লিংকঃ http://tarikmoon.com/ssc-hsc-result-admission-bangladesh/
কোচিং সেন্টারঃ
আমার গ্রুপমেট, নাম শোয়েব। সে কাচিপাড়া নামের অতি দূরবর্তি একটি অতি অনাধুনিক গ্রাম থেকে পাশ করে এসেছে, যেখানে কি না ২০১১ সালে সেই একমাত্র জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্র এবং সেই সর্বপ্রথম। সে কোনো কোচিং করার সুযোগ পর্যন্ত পায় নি, আজ সে ঢাকা মেডিকেলের একজন গর্বিত ছাত্র।
কোচিং করাটা কখনোই নিজে পড়াশুনা করবার বিকল্প হতে পারে না। সহায়ক হতে পারে। কেউ যদি মনে করে, তার কোনো বড় ভাই-বোনের সাহায্য দরকার পড়াশুনার ক্ষেত্রে, সেটাও কি সরকার আইন করে বন্ধ করে দিবে? সরকার এর যদি মনে হয়, কোচিং ব্যাবসায়ীরা অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে, তাহলে একটি অর্থের স্কেল তৈরী করে দিক, আর যদি অবৈধ মনে হয়, তাহলে বন্ধ করে দিক। কিন্তু, এরকম সম্ভাবনাময় ছেলে-মেয়েগুলোর ভবিষ্যত কেড়ে নেবার অধিকার তাদের কেউ দেয় নি, তারা যাতে ভুলে না যায়।
প্রশ্নপত্র বেঁচা-কেনাঃ
প্রশ্নপত্র বেঁচা কেনা? কিছু ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে নেয়া ভালো। যতোটুকু জানি, বুয়েটের প্রশ্নপত্র ছাপা হয় পরীক্ষা যেদিন সেদিন মধ্যরাতে। অর্থাৎ, যদি ১০ তারিখে সকাল দশটায় পরীক্ষা হয়, তবে ১০ তারিখ মধ্য রাতে ছাপানো শুরু হয়। লোকমুখে এও শুনেছি, সদ্য ছাপাখানা থেকে প্রাপ্ত গরম প্রশ্নে পরীক্ষা দেবার সৌভাগ্যও তারা পেয়েছেন!
আর মেডিকেল? সারা বাংলাদেশের ২২টি সরকারি ও ৫৩টি বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য একই সময়ে একই প্রশ্নে পরীক্ষা হয়। ফলে, প্রশ্ন দু-একদিন আগেই ছাপানো হয় ও সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া লাগে। ফলে, এ হাত ও হাত করে প্রশ্ন বেঁচা কেনা হয়ে থাকে, মাঝে মাঝে। কিন্তু, এর জন্য ভর্তি পরীক্ষা কি দায়ী? নাকি দায়ী এর সাথে সংস্লিষ্ট মানুষেরা? আপনারা তাদেরকে শুদ্ধ করেন। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হবার কথা ছিলো ২৩শে সেপ্টেম্বর, কিন্তু প্রশ্ন ফাঁস হবার গুজব উঠলে, নতুন প্রশ্নে ৩০ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবং হঠাত নতুন প্রশ্ন ও সম্পুর্ণ ভিন্ন ফরম্যাটে প্রশ্ন সাহায্য করেছে, প্রকৃত মেধাকে খুজে বের করতে।
ইংলিশ মিডিয়ামঃ
কথা হলো, মেডিকেল কলেজে কি শুধু বাংলা মিডিয়ামের ছেলে-মেয়েদেরই পড়াতে চায় কিনা তাঁরা। এ লেখাটি আমার এক ক্লাসমেটের, যে কি না ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, এখন আমাদের সাথে ঢাকা মেডিকেলে অধ্যয়ন করছে।
আমি যখন জানতে পারলাম যে, তাঁরা এসএসসি ও এইচএসসি এর রেজাল্টের ভিত্তিতে মেডিকেল ভর্তি নিয়ে পরিকল্পনা করছেন, আমি অবাক হয়ে গেলাম। তাহলে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র-ছাত্রীদের কি হবে, যারা আমার মতো ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখে? নাকি আমাদের ডাক্তার হবার ইচ্ছেটা অপ্রয়োজনীয় কিংবা তারা আমাদের ব্যাপারে ভুলেই গেছেন? আমি মনে করি, ও-লেভেল এবং এ-লেভেলের রেজাল্টের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি এর রেজাল্টের তুলনা করাটা অসম্ভব। কারণ –
১) মার্ক দেবার সিস্টেমটাই আলাদা। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর একই জিপিএ রয়েছে, এ কারণে যা করা লাগবে, নম্বর দেখতে হবে। এখানেই আসল ঝামেলা। সব ছাত্র-ছাত্রীর বিষয় সংখ্যাও তো সমান না। আরও সমস্যা হলো, তুলনামুলক গ্রেডীং সিস্টেম। যেমন, ইংরেজীতে ৬০ পেলে এ গ্রেড, যেখানে ম্যাথ এ ৮০তে এ গ্রেড। এভাবে তো ইংলিশ মিডীয়ামের ছাত্র ছাত্রীরা সম্পুর্ণ অযাচিতভাবে পিছিয়ে পরবে।
এ লেভেলে আমাদের পছন্দ মতো আমাদের ৩-৫টি বিষয় থাকে, এবং প্রতি বিষয়ে ৬টি পেপার থাকে। এবং আমাদের পরীক্ষা হয় ৬০০ নম্বরের ভিত্তিতে। এ পৃথিবীতে এমন কেউ কি আছেন, যে কি না এই সিস্টেমের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি রেজাল্টের তুলনা করতে পারেন?
৩) ও লেভেল/ এ লেভেলের সিলেবাস, এসএসসি/ এইচএসসি থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন। তাহলে, কিভাবে আপনি দুইটি সম্পুর্ণ আলাদা সিলেবাস এর স্টুডেন্টদের রেজাল্টের মাঝে তুলনা করবেন? অথচ, ভর্তি পরীক্ষার আগে আমরা এইচএসসি সিলেবাস পড়বার ৩-৪ মাস সময় পাই এবং একটি “একই” পরীক্ষায় অংশগ্রহন করি। অর্থাৎ, সম্পুর্ণ সমান প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করেই আমরা মেডিকেল্র পড়বার প্রত্যাশা করি।
প্রতিবছরই অনেক সমস্যা সম্মুখীন হয়েও এ লেভেলের ছাত্রছাত্রীরা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে, এবং কেউ কেউ সফল ও হয়। আমি নিজেই তাদের একজন জলজ্যান্ত প্রমান, ইংলিশ মিডীয়ামের হয়েও আমি এখন ঢাকা মেডিকেলে পড়ছি। কিন্তু, ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেবার মানে হলো, সেই শেষ সুযোগটুকুও কেড়ে নেয়া আমাদের থেকে। আমি মনে করি, একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, আমার ছোটো ভাই-বোনদেরও সম্পুর্ণ অধিকার আছে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে, নিজ যোগ্যতায় মেডিকেলে অধ্যয়ন করবার।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন-পত্রঃ
অনেকের মাঝে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে একটা চিন্তা কাজ করে, তা হলো, মুখস্ত নির্ভর এ নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার মানে কী। মেডিকেল অধ্যয়নরত ছাত্র হিসেবেই বলছি, মেডিকেলে প্রচুর তথ্য আপনাকে মাথায় রাখতে। ইয়া মোটা মোটা বই এর এতো তথ্য আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে, এটি বিশ্বাস করেই তো একজন ছাত্র মেডিকেলে পড়তে আসতে চায়। তবে, শুধু মুখস্ত করে কেউ ভালো ডাক্তার হতে পারবে না, পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেতে পারে। কারণ, বিভিন্ন প্যাথলজিকেল কন্ডিশনে অনেক অনেক ডায়াগনোসিস এর যৌক্তিক বিন্যাস-সমাবেশ করে আপনাকে চিকিৎসা করতে হবে। এতো বড় দায়ীত্ব নিতে হবে যাকে, তাকে মাথায় পড়া রাখবার মেন্টালিটি নিয়েই তো আসতে হবে! তবে, ২০১১-১২ সালের ভর্তি পরীক্ষায় সম্পুর্ন ভিন্ন ফরম্যাটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যাতে কি না মুখস্ত নির্ভরতার বদলে কনসেপ্ট এর উপর জোর দেয়া হয়। এ উদ্যোগকে আমি বিশাল ভাবে সাধুবাদ জানাই।
শেষ কথাঃ
সবশেষে কথা একটাই, অনিয়মের এই দেশে, একটা মাত্র সুনিয়ম এখনও শিক্ষা ক্ষেত্রে বাকি আছে, তা হলো এই ভর্তি পরীক্ষা। যেখানে কিনা, সমান মেধার প্রতিযোগীতায়, নিজের যোগ্যতা প্রমান করবার সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে। শুধু মাত্র কোচিং ব্যবসায়ীদের প্রতারনার দোহাই দিয়ে হাজারও পরিশ্রমী ছাত্র-ছাত্রীদের কপাল পোড়াবেন না। কোচিং তো এখন ক্লাস ওয়ানের ভর্তি পরীক্ষার জন্যও করানো হয়, তাই বলে কি ক্লাস ওয়ানেও ভর্তি পরীক্ষা হবে না? সব ভর্তি পরীক্ষা বাদ দিয়ে কি তবে টাকা ওয়ালাদের রাস্তা আরও সুগম করে দিতে চান? ভর্তি পরীক্ষা হবে না, ফলে অসৎ শিক্ষকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাবে, টাকার বিনিময়ে তখন জিপিএ ৫ হবে বড়লোকের হাতের মোয়া। ধনীদের ডাক্তার আর গরীবদের রোগী বানানোর এই প্রস্তাব আপনারা বন্ধ করুন। পরিশ্রমী ও প্রকৃত মেধাবীদের ডাক্তার হবার পথ দয়া করে রোধ করবেন না। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে আরেকটি কালো অধ্যায় সূচনা করবেন না।
বানান বিভ্রাট: ক্ষীপ্ত>ক্ষিপ্ত
প্রশ্নপত্র বেচাকেনার কারণ বিশ্লেষণের জায়গাটা দারুণ লাগলো।
ইংলিশ মিডিয়ামের বন্ধুর কথাগুলো উদ্ধৃতি চিহ্নের ভেতর দিলে ভাল হত মনে হয়, কিঞ্চিৎ কনফিউজড হয়ে গেছিলাম।
অতি অসাধারণ পোস্ট। সবগুলি পয়েন্ট আলাদাভাবে এত গুছিয়ে তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ নিশম। শেয়ার করবো। :dhisya:
বানান ও উদ্ধৃতি ঠিক করে দিলাম 🙂
সাথে থেকো সামিরাপু 🙂
খুব খুব জরুরি ইস্যুতে লেখা। সবাইকে অনুরোধ করি ছড়িয়ে দিতে।
আমরা সবাই মিলে যদি সোচ্চার হই, সরব হই তাহলে এই রকম ভুল পথে সরকার/ শিক্ষা মন্ত্রণালয় পা বাড়াবে না।
আমার অবাক লাগে, একটা ১৬ বছরের ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে মেনে নিবে, তার পক্ষে ডাক্তার হওয়া সম্ভব না। তাদের ক্লাসের সাজেশান পরে মুখস্ত করা ছেলেটাই ডাক্তার হবে। কিভাবে মেনে নিবে সে?
সত্যি কথার ঝাঁঝালো বুনট………… I don’t understand these people… our principals, উনারা কি ভর্তি পরীক্ষা দেন নাই, না পড়াশোনা করেন নাই??? এমন না ইনসাফি কথা উনারা বলেন কীভাবে????
উনারা অনেক জ্ঞানী। জ্ঞানের বালতি উপচে পরবার কারণে, সাধারণ বিষয় গুলো মাথায় রাখতে পারছেন না।
অসম্ভব ভালো লিখছিস পিচ্চি!
এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দেশের সবগুলো সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সম্মতি দিয়েছেন শুনে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি। এইরকম সুইসাইডাল উদ্যোগ না নেয়ার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আকুল আবেদন জানাই।
তোর মত এইরকম টগবগে তরুণদেরই এই জন্য এত দরকার।
এই কথাগুলো ছড়িয়ে যাক প্রাণ থেকে প্রাণে।
ধন্যবাদ আপু। জায়গা পর্যন্ত গেলেই হয় ! আমি চাই, তাঁরা যাই করুক, অন্তত এইটুকু বুঝে করুক, উনাদের কোনো না কোনো কাছের মানুষ এই দেশের ডাক্তারের কাছেই চিকিৎসা নেবে।
অসাধারণ হয়েছে। আমার নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকার পরও এই খবর পাওয়ার পর আমি আমার ব্লগে পোস্টটা লিখলাম, কারণ এরকম অনিয়মের পর তো কারো চুপ করে থাকা উচিত না। তোমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা পড়ে আশা করি সবাই বুঝতে পারবে কী কারণে এটা সম্পূর্ণ অন্যায্য এবং বাজে সিদ্ধান্ত।
মুন ভাইয়া, আপনার ব্লগপোস্টটা পড়ে বেশ অবাক হয়েছিলাম। চিন্তা-ভাবনা পুরোটাই মিলে গেছে দেখে ! আপনার অবজার্ভেশন ক্ষমতা অত্যাধিক ভালো। বাজে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আপনাকে পাশে পাবো, আশা রাখি 🙂
আপনার লেখাটা বেশ কাজে এসেছে।
পোস্টটা অত্যন্ত গোছানো ও তথ্যবহুল হয়েছে। এই পোস্ট ছড়িয়ে দিতে হবে। অনিয়ম অনাচার রুখতে হবে।
অনেক ধন্যবাদ ! রুখতে হবে, আসলেই।
এমন হাস্যকর সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের পক্ষেই নেয়া সম্ভব। এমন অদ্ভূত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হোক-কোনক্রমেই চাই না………
প্রচন্ড ক্রিয়েটিভ না হলে, এরকম সিদ্ধান্ত কিভাবে মাথায় আসে ???? 8)
এদের সমস্যা কি ?? এরকম চিন্তা ভাবনা কেমনে করে এরা ??
খুব সুন্দর করে লিখেছিস ভাইয়া ।
দে আর বেরী মাচ ইন্টেলিজেন্ট !!!!! তোমার আমার এন্টেনার বাইরে !!!
এখন এত জিপিএ ৫ গোল্ডেন জিপিএ ৫ কিভাবে পায় তা জানা আছে। এমনও ছাত্র আছে কিছু পারে না পরীক্ষা হলে অন্যের খাতা পুরো কপি করে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাইছে। তারপর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতে পাইছে ১০ (আমার পার্সোনাল অভিজ্ঞতা। )
তাছাড়া যারা ইংরেজি মাধ্যম থেকে পাস করেছে তাদের সাথে এদের মেধার সমকক্ষতা কিভাবে বের করবেন।
ঢাকা বোর্ড আর যশোর বোর্ড একই প্রশ্নে পরীক্ষা হয় না। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করেন ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতার পরীক্ষকরা। ফলে পরীক্ষার্থীরা মূল্যায়িত হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে।
গ্রেডিং সিস্টেমে আছে বৈষম্য। ৮০ এবং ১০০ সমান না। ঠিক তেমনি ৭৯ এবং ৮০ পাওয়া ছাত্রের মেধার পার্থক্য অতি সামান্য । অথচ প্রথম দুজন এ প্লাস। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ৭৯ এ আর ৮০ এ প্লাস।
গুটি কয়েক প্রশ্ন মুখস্থ করেই জিপিএ ফাইভ পাওয়া যায়।
এটা করলে অনেক ফাউল পোলাপান ডিএমসিতে ঢুকবে। 🙁
বরং প্রথম দফায় বিসিএস পরীক্ষার আদলে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা এবং দ্বিতীয় দফায় লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব ভাল।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ একশ্রেণীর কোচিং সেন্টারের প্রতারণা থেকে মুক্তি, অভিভাবকদের আর্থিক চাপমুক্ত করতে এবং উচ্চশিক্ষায় ভর্তি-ইচ্ছুদের দুর্ভোগ ও হয়রানি লাঘবকে আমলে রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি নীতিমালা তৈরি করছে। যে কোচিং সেন্টারগুলোয় পড়ালেখা করে ছাত্ররা বুয়েট, মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হিরো হচ্ছে, সেই কোচিং সেন্টারগুলোই নাকি ভিলেন। কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে আমরা এখনো প্রমাণ করতে পারিনি যে কোচিং সেন্টারে পড়ার সঙ্গে লোভনীয় বিষয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার কোনো ইতিবাচক সম্পর্ক নেই। এটা প্রমাণ করতে পারলে ছাত্র কিংবা অভিভাবক কেউই কোচিং সেন্টারের আঙ্গিনায়ও প্রবেশ করত না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রকে বলতে শুনেছি তাদের ভর্তিতে কোচিং সেন্টারের অবদান সুবিশাল অথচ কলেজের অবদান অনুল্লেখ্য। অর্থাৎ আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে অকার্যকর হচ্ছে, সেখানে কোচিং সেন্টারগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
–
মোহাম্মদ কায়কোবাদঃ অধ্যাপক, সিএসই বিভাগ, বুয়েট, ফেলো, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী।
রবিবার (১৩/৭/০৮) প্রথম আলো – খোলা কলম।
প্রত্যেক বছর এরকম অনেক হাঙ্গামা করে, পরে যা লাউ তাই কদু।
তথ্যবহুল ও দরকারি পোষ্ট।
দারুন লিখেছিস।
তোর ইনফো, আর প্রেজেন্টেশন দেখে মুগ্ধ হলাম।
বেকুব নীতিনির্ধারকের নিকুচি করি :S
খুব সহজ কিছু হিসাব আমার মাথায় আসে না, এই আমরা, খুব সাধারণ মানুষেরা যেটা বুঝতে পারি একটু বিচার বিশ্লেষণ করে, আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকেরা সেই জিনিসটাই কেন ধরতে পারে না? নাকী তাদেরকে বোঝানোই হয় ভুল?? কষ্ট লাগে যখন দেখি তাদের কিছু “হঠকারী (মতান্তরে আত্মঘাতী)” সিদ্ধান্তে পালটে যায় হাজারটা মানুষের স্বপ্ন! কী অদ্ভুত ভয়ঙ্কর একটা জিনিস……
সকল স্তরের মেধাবীদের মেধার যাচাই করার সুযোগ কেনো দেয়া হবেনা? শুধুমাত্র জিপিএ-৫ ই কি মেধার মাপকাঠি?
যদি সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে
প্রতিবাদী আমাদের হতেই হবে, প্রয়োজনে পথে নেমে হবে সংগ্রাম
আমাদের মেডিকেল কলেজের প্রফের রেজাল্টের দিক দিয়ে যারা প্রথম দিকে আছে, সোজা কথা যারা সবচেয়ে ভাল ডাক্তার হয়ে বের হচ্ছে তাদের অনেকেরই এসএসসি আর এইচএসসি তে জিপিএ ৫ নেই। মেডিকেল কলেজের বুইড়া অধ্যক্ষ্য গুলার ক্যামনে এরকম ভীমরতি হইলো বুঝলাম না।
আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এইসব ফাইজলামী শুরু হইছে বেশ কয়েকবছর ধরে। বয়স ধইরা কলেজ ভর্তির জন্য কত কত মেধাবী স্টুডেন্ট ভালো কলেজে ভর্তি হইতে পারলো না।
লেখার জন্য ধন্যবাদ, প্রতিবাদটা ছড়িয়ে দেয়া দরকার, ভীষণ দরকার।
সহজ ভাষায় দারুন পোস্ট! আমরা বুঝছি বাচ্চাগুলোর কি হাল হবে, তথাকথিত নীতি নির্ধারকেরা বুঝে না কেন?
I have sent an email to DGHS as a protest… U can try also… This is the link
http://www.dghs.gov.bd/bn/index.php/feedbac
সঙ্গে নিউজ লিংক গুলো দিতে ভুলবেন না…
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-08-12/news/281362
http://www.bdnews24.com/details.php?cid=2&id=230190&hb=top
:brokenheart: :wallbash: :crying: 🙁 :nono: 😯 :brokenheart: :slap: :brokenheart:
আবার লিখবার সময় এসে যাচ্ছে মনে হয়… 🙁
আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার মনে হয়েছে যে, প্রশ্ন আউট তো SSC & HSC পরীক্ষাতেও হতে পারে। বরং এটার সম্ভাবনাই বেশি । তখন শিক্ষা ব্যবস্তা ভয়ঙ্করভাবে দুর্নীতি গ্রস্ত হবে…