কনগ্রুয়েন্সের প্রাথমিক ধারণা (পর্ব – ০২)

প্রশ্ন ০১) 20 ≡ 26 (mod 6) হলে 26 ≡ ? (mod 6) এখানে ‘?’ চিহ্নিত অংশে সংখ্যা বসাও।

প্রশ্ন ০২) 20 ≡ 26 (mod 6) এবং 20 ≡ 2 (mod 6) হলে, যখন মডুলো 6, তখন 26 এবং 2 এর মধ্যে কি সম্পর্ক?

প্রশ্ন ০৩) 20 ≡ 2 (mod 6) হলে 25 ≡ ? (mod 6) এখানে ‘?’ চিহ্নিত অংশে সংখ্যা বসাও।

 

এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটার অনেকগুলো করে উত্তর হতে পারে। উত্তরগুলো একেবারে নেগেটিভ ইনফিনিটি থেকে শুরু করে পজিটিভ ইনফিনিটি পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু সবগুলো প্রশ্নেরই একটা সবচাইতে সহজ উত্তর আসলে প্রশ্নটাতেই বলে দেয়া আছে। বলতে পারবে সেটা?

 

হ্যাঁ! অবশ্যই পারবে। কিন্তু সেজন্য মড্যুলার অ্যারিথমেটিক বা কনগ্রুয়েন্স এর বেসিক কিছু বৈশিষ্ট্য জানতে হবে।তাই, আবারও চলে এলাম কনগ্রুয়েন্সের মজার জগতের গল্প বলতে। এবার দ্বিতীয় পর্ব।

আগের পর্ব এটা কনগ্রুয়েন্সের প্রাথমিক ধারণা (পর্ব – ০১)

 

১. একেবারে প্রথম প্রশ্নটার দিকে তাকাও। কনগ্রুয়েন্স এর যে বৈশিষ্ট্যের কারণে আমি এই প্রশ্নটার সবচাইতে সহজ উত্তরটা দেখেই বলে দিতে পারি সেটাই প্রথমে বলি।

a ≡ b (mod m) হলে এর ভাইস-ভার্সাটাও সত্য। মানে হল, a ≡ b (mod m) হলে b ≡ a (mod m) হবে।

একেবারে উদাহরণ দিয়েই দেখে ফেলি। 20 ≡ 26 (mod 6) হলে 26 ≡ 20 (mod 6) হবে।

আরে! এটা তো সেই ০১ নম্বর প্রশ্নটার উত্তর হয়ে গেল! হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ। বলেছিলাম না, এর সবচাইতে সহজ উত্তরটা প্রশ্নেই দেয়া আছে! শেখা হয়ে গেল কনগ্রুয়েন্স এর প্রথম বৈশিষ্ট্যটা। 😀

 

২. এটা তো সবাই জানই, a=b আর b=c হলে অবশ্যই a=c হবে। এটা সমীকরণের খুব সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলোর একটা। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এখানে কনগ্রুয়েন্স এর মাঝে সমীকরণ নিয়ে এলাম কেন! একটু পরে বলছি। তার আগে চল এবার ০২ নম্বর প্রশ্নটার দিকে একটু তাকাই।

20 ≡ 26 (mod 6) এবং 20 ≡ 2 (mod 6) এই দুটো তথ্য আমাদের বলে দেয়া আছে। এবার একটু কল্পনা করার সমস্য এসেছে। আমরা ধরে নেই 20=a , 26=b আর 2=c. সেই সাথে ‘≡’ (ইকুইভ্যালেন্ট) চিহ্নটাকে মনে করি ‘=’ (ইকুয়াল) চিহ্ন আর ব্র্যাকেটের ভেতরের মডের কথা ভুলে যাই। তাহলে আমাদের প্রশ্নটা হয়ে যাবে এরকম,

a=b এবং a=c হলে b এবং c এর মধ্যে কি সম্পর্ক? এটার উত্তর নিশ্চয়ই সবাই পারবে। সম্পর্ক হল, b=c !!

এবার আমাদের কল্পনাগুলোকে একটু একটু করে বাস্তবের সাথে প্রতিস্থাপন করি। a,b,c এর মানগুলো বসিয়ে দেই। ‘=’ এর জায়গায় ‘≡’ বসাই। আর শেষে আমাদের উত্তরটার সাথেও ব্র্যাকেটের মডুলো টা যোগ করে দেই। তাহলে উত্তরটা এরকম হয়, 26 ≡ 2 (mod 6). এবং মজার ব্যাপার হল, এইযে কল্পনা আর বাস্তবের এত বড় একটা জগাখিচুড়ি আমরা করলাম, তার ফলে কিন্তু আমাদের উত্তর ভুল আসেনি। একেবারে সঠিক। কেন সঠিক? তাহলে এবার দেখ কনগ্রুয়েন্স এর আরেকটা মজাদার বৈশিষ্ট্য।

যদি a ≡ b (mod m) আর a ≡ c (mod m) হয়, তাহলে  b ≡ c (mod m) হবে!

এর সাথে মিলিয়ে একটা কৌতুক বলে ফেলি! ছাত্র শিক্ষক কে ভালবাসে, শিক্ষক ভালবাসেন তাঁর মেয়েকে; বাকিটুকু কনগ্রুয়েন্স এর ২ নম্বর বৈশিষ্ট্য! 😛

 

৩. কনগ্রুয়েন্সের বৈশিষ্ট্যগুলোর ক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল করেছ? এর ইকুইভ্যালেন্ট চিহ্নের বদলে ইকুয়াল চিহ্ন বসিয়ে দেয়া গেলে যে কাজগুলো আমরা করতে পারতাম, প্রায় সেই সবগুলো কাজই ইকুইভ্যালেন্ট এর ক্ষেত্রেও করা যাচ্ছে। এই কথাটার আরেকটা প্রমাণ দেখাচ্ছি।

এবার আমাদের ০৩ নম্বর প্রশ্নটার দিকে তাকাই। বলে দেয়া আছে, 20 ≡ 2 (mod 6) [বার বার একই জিনিস বলে দেয়া থাকে ক্যান!! :thinking:  ] আর জানতে চাওয়া হয়েছে 25 ≡ ? (mod 6)।

এখানে বাম পাশে কি করা হয়েছে দেখো, ২০ এর সাথে ৫ যোগ করে সেটাকে ২৫ বানানো হয়েছে। দেখি তো, ডানপাশেও একই কাজ করে কি আসে! ২ এর সাথে ৫ যোগ করে আমরা যদি একে এভাবে লিখি, 25 ≡ 7 (mod 6) তাহলে কি ভুল হবে?

নাহ! মোটেও না। কারণ এই স্টেটমেন্ট টা সত্যি। ৬ দিয়ে ভাগ করলে ২৫ আর ৭ দুজনেরই ভাগশেষ থাকে ১, মানে হল তারা কনগ্রুয়েন্ট। সেইযে ভাই-ভাই কনসেপ্ট! 😀

আর এইযে আমরা যোগের বেলায় এই জিনিসটা দেখলাম, একইরকম বৈশিষ্ট্য বিয়োগের বেলাতেও খাটে। বিশ্বাস না হলে নিজেই পরীক্ষা করে নাও!

এবার তাহলে বৈশিষ্ট্যটা কাগজে কলমে দেখতে কেমন সেটাও দেখে ফেলি, যদি a ≡ b (mod m) হয়, তখন a±c ≡ b±c (mod m) হবে।

 

৪. যোগ-বিয়োগ তো গেল! এবার আসি গুনের কথাতে। এখানে অবশ্য নতুন করে বলার কিছুই নেই। কারণ যোগ-বিয়োগের এর ক্ষেত্রে আমরা যেমন মডুলো কে একইরকম রেখে ডানপক্ষ আর বামপক্ষে একই জিনিস যোগ বা বিয়োগ করতে পারি, তেমনি একই জিনিস গুণও করতে পারি! মজার না? 😀

মানে হল, যদি, a ≡ b (mod m) হয়, তাহলে ac ≡ bc (mod m) হবে। 😀

 

একটা বিষয় কি কেউ খেয়াল করেছ, আমরা কিন্তু একবারও আমাদের মডুলো কে নিয়ে চিন্তা করছি না। ঘষামাজা যা করার সেটা ব্র্যাকেটের বাইরের ভাইদের দিয়েই চালিয়ে দিচ্ছি! বেচারা রাগ করেনি তো!  😳

 

৫. এবার আসি ভাগের বেলায়। আমি জানি, অনেকেই ভাবছে যোগ আর বিয়োগ তো একই সাথে দেখালাম। তাহলে গুণ আর ভাগ আলাদা কেন! উত্তরটা তোমরা একটু পরেই পেয়ে যাবে।

আগের সবগুলো ক্ষেত্রে আমরা ডানে আর বামে একই জিনিস করেছি। কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার আমরা একটু সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি। তো চল, দেখি কিরকম সমস্যা!!

36 ≡ 46 (mod 10) এটা সত্য। কারণ ৩৬ আর ৪৬ দুজনই ১০ এর সাপেক্ষে অনুসম বা কনগ্রুয়েন্ট। [তাও ভালো, ২০,২৬ এর লুপ থেকে তো বের হওয়া গেল!  😛 ]

এবার এদের ২ দিয়ে ভাগ করে দেখি। তখন আসবে, 18 ≡ 23 (mod 10)। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখ তো, এই স্টেটমেন্টটা কি সত্যি?

না। ১৮ আর ২৩ কে ১০ দিয়ে ভাগ করলে মোটেও একই ভাগশেষ আসে না। এরা কনগ্রুয়েন্ট না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

ব্যাপার হল, এখানে আসলে ১০ কেও যদি আমরা ২ দিয়ে ভাগ করতাম তাহলে আর কোন সমস্যা হত না। কারণ 18 ≡ 23 (mod 5) বাক্যটা সত্যি। কারণ ১৮ আর ২৩ দু’জনকেই ৫ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ ৩ হয়। এরা কনগ্রুয়েন্ট।

আরেকটা উদাহরণ দেখি, 18 ≡ 8 (mod 5) , এখন একে ২ দিয়ে ভাগ করি! আসবে,9 ≡ 4 (mod 5)

এবার কিন্তু কোন সমস্যা নেই। কারণ ২টা স্টেটমেন্ট ই সত্য!  :happy:

অ্যাঁ! কি যন্ত্রণা! এটা আবার কেমন হল! একটা ঠিকমতো আসে, আরেকটা আসে না!

মানে হচ্ছে, একটা ক্ষেত্রে মডুলো কেও আমাদের ভাগ করতে হচ্ছে। আরেকটা ক্ষেত্রে ভাগ করতে হচ্ছে না। এখন প্রশ্ন হল, কোন ক্ষেত্রে ভাগ করতে হবে, আর কন ক্ষেত্রে ভাগ করতে হবেনা সেটা। আমি ধরে নিচ্ছি সবাই গ.সা.গু বা gcd কাকে বলে সেটা জানে। এখন যদি, a ≡ b (mod m) হয়, gcd(a,b) = d হয় অর্থাৎ a এবং b এর গ.সা.গু d হয় এবং d|m হয় অর্থাৎ m যদি d দিয়ে বিভাজ্য হয়, তাহলে a, b আর m তিনজনকেই d দিয়ে ভাগ করতে হবে। বাকি সকল ক্ষেত্রে শুধু আগের মত a আর b কে ভাগ করলেই চলবে। 😀

 

পরের বার ভাগ করতে হয়নি কেন সেটা নিশ্চয়ই সবাই এবার বুঝতে পেরেছ। এখানে ১৮ আর ৮ এর গ.সা.গু ২ এবং তাই দুইজনই ২ দিয়ে বিভাজ্য। কিন্তু ৫ কিন্তু ২ দিয়ে বিভাজ্যই না! 😛

 

কি? মাথা গরম হয়ে গেল নাকি সবার? তাহলে আজকের মত রেস্ট নেয়া যাক, কি বল সবাই? পরের পর্বে আশা করি আরেকটু মজার কিছু বৈশিষ্ট্য শিখব। সে পর্যন্ত ভালো থাক সবাই। 😀

 

সবার জীবন পাইয়ের মত সুন্দর হোক। 😀

 

 

 

তিষা সম্পর্কে

সবসময় ই কাউকে না কাউকে শুরু করতে হয়। আমি শুরু করতে চাই। সবার চেয়ে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করি। পড়ছি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর পুরকৌশল বিভাগে।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ, হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

12 Responses to কনগ্রুয়েন্সের প্রাথমিক ধারণা (পর্ব – ০২)

  1. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    “সবার জীবন পাইয়ের মত সুন্দর হোক।”>> আমারটা মনে হয় জীবনেও হবে না আর তাইলে!

    তবে আমাদের তিষাপু জিনিয়াস! :huzur:
    সংখ্যার প্রতি যাদের অটুট ভালোবাসা আছে, তারা এই পর্বগুলোকে ভালো না বেসে থাকতেই পারবেন না! :clappinghands:
    সেইসব মানুষদের জন্য পাইয়ের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। :beshikhushi:

  2. অসাধারণ!! যত পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি, গণিতকে ভালোবাসি কিন্তু তোদের দেখলে হিংসা হয়, তোদের মতো ভালোবাসতে পারলে জীবনটা অন্যরকম হতো রে!

    শুভকামনা আর আমাদের মতো হালকার উপর ঝাপসা বোঝা মানুষগুলোর জন্য আরো লিখে যা!

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    চোখ বোলালুম।
    মাথা ঘোরাচ্ছে। 😯

  4. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে হয়ত বইও লিখে ফেলবি!

    ফরম্যাটিং ঠিক করা দরকার। মাঝে মাঝে স্পেসিং কেমন কেমন হয়ে যায়!

  5. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    প্রথম পর্ব পড়ে তেমন আগ্রহ পাই নি, স্বীকার করছি। মনে হয়েছিল, সেই বোরিং পাটিগণিত কি না?

    কিন্তু, দ্বিতীয় পর্ব পড়ে বলছি। জবাব নেই।
    এখন আসলে ভয়ে আছি, পরের পর্বে না জানি কি আলাদ্দিনের চেরাগ নিয়ে উপস্থিত হোন। 🙂 :happy:

  6. ইয়াকা বুনবুন বলেছেনঃ

    মডুলার ইনভার্স নিয়ে বিপদে আছি … পুরা মডুলার এরিথমেটিকটাই মাথার উপর দিয়ে যায় … 😛 পরের পর্বের আশায় আছি … মডুলার ইনভার্স ব্যাপারটা ক্লিয়ার হইলেই শান্তি …

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।