“এ্যাই রিক্সা থামো। শফিক রিক্সায় ওঠ।”
“ব্যাপার কী ? আগে বল কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“কথা বাড়ানোর দরকার নাই, সময় কম। তাড়াতাড়ি ওঠ আগে।”
রূপাদের বাসার ড্রয়িং রুম। শফিকের সামনে রূপার বাবা বসে আছে, মুখ গম্ভীর, বেশ রেগে আছেন বোঝা যায়। “কি জানি নাম তোমার?”,বেলাল সাহেব শফিকের নাম জানেন কিন্তু আবার জিজ্ঞাস করলেন। সামনে বসে থাকা ছেলেটা তার হবু মেয়ে-জামাই। কিন্তু তিনি একে সহ্য করতে পারছেন না। ইচ্ছা করছে বাসার ড্যালমেশিয়ানদের ঘরে ওকে ফেলে দিয়ে আসতে। ড্যালমেশিয়ান পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র কুকুর, নিমিষেই ওকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
-স্যার আমি শফিক।
-পুরো নাম কী?
-শফিকুল ইসলাম।
-থাকো কোথায়?
-মোহাম্মদপুরে একটা মেসে আছি আপাতত।
-বাবা-মা ?
-মাকে দেখিনি কোন দিন আর বাবা মারা গেছেন ছোট বেলায়।
-বাবা কী করতেন?
– জানি না। মনে হয় চাষাবাদ।
দুই দিন পর…
রূপা আর শফিক বসে আছে। সেই জাহাজ বাড়ি।
-আব্বু কী বলল তোমাকে?
– কী আর বলবে? আর দশটা বাবার মতই জিজ্ঞাসাবাদ করল। থাকো কই? খাও কী? চাকরী কর নাকি? বেতন কত? এইসব হাবিজাবি আর কি।
– তুমি কী বললা?
– কী বলব? যা সত্যি তাই বললাম।
-তুমি কিছু কর না, এইটা ?
– হুম।
– শেষ! সব শেষ করে দিলা। এখন আমার ঘর থেকে পালানো ছাড়া কোন উপায় নাই। আমার সত্যবাদীটারে ! একবার মিথ্যা বললে কি হত? একবারই তো বলতে বলছিলাম। বলতা যে একটা ছোটখাট কোম্পানীতে চাকরী করছি। নাহ তা করবা কেন?
রূপার চোখে পানি চলে আসতে চাইছে কিন্তু ও শক্ত হয়ে বসে আছে। অন্য সময় হলে এতক্ষণে ও রাগ করে চলে যেত কিন্তু আজ যাবে না। আজ সে শফিককে বিয়ে করতে এসেছে। আসার সময় মাকে বলেছে বান্ধবীর বোনের বিয়ে, ওখানেই থাকবে কয়েক দিন, হাজার দশেক টাকা দিতে। মা বিশ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছে। আগের দিনই রূপার বাবা স্রেফ না করে দিয়েছে যে এরকম চাল-চুলাহীন ছেলের কাছে মেয়ের বিয়ে সে কিছুতেই দেবে না। আর ছেলেটাকে তার পছন্দ হয়নি। অন্তত কৃষকের ছেলের কাছে মেয়ের বিয়ে তিনি কিছুতেই দেবেন না।
রূপা কিছু বলেনি। জানে কিছু বললেই বাবা তার সব বন্ধ করে দিবেন তাই চুপচাপ থেকেছে। তারপরের দিন তার মাথায় আসল বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে হবে কিন্তু টাকা লাগবে যে, টাকা পাবে কই? এরপরই ঐ বান্ধবীর বোনের বিয়ের ব্যাপারটা মাথায় আসে তার।
– শফিক, ওঠ।
– এক্ষুণি চলে যাবে? আর কিছুক্ষণ থাকো নাহয়?
– না , কাজ আছে, ওঠ।
-কী কাজ ?
– তুমি ওঠ আগে।
শফিক আর রূপা রিক্সায় বসে আছে।
“তুমি কি আমাকে ভালোবাসো শফিক?”
“উমম , আসলে বলা মুশকিল। আমি এখনও শিওর না। ঝামেলা আছে।”
-ঝামেলা আছে মানে? খুনই করে ফেলব যদি বল অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসো।
শফিক জোরে হেসে ওঠে। এই মেয়েটাকে সে মারাত্মক ভালোবাসে। যদিও তার মাঝে মাঝে মনে হয় রূপাকে সে বিয়ে করতে পারবে না। রূপাকে বিয়ে করলে এটা রূপার বাবা কখনই মানবে না আর রূপাকেও সে সুখে রাখতে পারবেনা। কিন্তু আবার মনে হত কয়েকটা দিনই তো মাত্র, এরপর সে যখন চাকরী করবে তখন তো নিশ্চয়ই রূপার বাবার আপত্তি থাকবে না।
– এ্যাই! ঐ ! হইছে কী তোমার! ধ্যান ধরে আছো কেন?
– কই না তো?
– আমরা কোথায় যাচ্ছি জানো?
– হুম জানি। – জানো ? কোথায় বলতো?
– কাজী অফিস।
– তুমি কীভাবে জানলা? আমি তো তোমাকে একবারের জন্যও বলি নাই যে আমরা কাজী অফিস যাচ্ছি!
– তুমি আজকে নীল শাড়ি পড়ে আসছ। মনে আছে আমাকে কী বলেছিলে একদিন?
– ধুর ! তুমি এত কিছু মনে রাখ কিভাবে?
রূপা একদিন শফিককে বলেছিল যে নীল রঙের শাড়ি তার খুব অপছন্দের কিন্তু বিয়ের দিন সে এই রঙের শাড়ি পড়বে। কারণ জিজ্ঞাস করলে বলেছিল যেদিন বিয়ে হবে সেদিন বলবে। আজ সকালে যখন রূপা আসলো তখন ওর পরনে নীল শাড়ি দেখেই শফিক বুঝতে পেরেছিল আজ ওদের বিয়ে কিন্তু কোথায় জানি সুর মিলছে না। ওদের বিয়ে এভাবে হবে তা শফিক ভাবেনি। দেখা যাক কী হয়?
কাজী অফিস…
“সমস্যা কী আপনার ? আমরা এখানে সাক্ষী কোথায় পাবো? আপনি ধরে নিয়ে আসেন না কেন দুই একটা?” কাজী সাহেব রূপার উপর প্রচন্ড খেপেছেন। আসার পর থেকেই উলটা পালটা কথা বলছে মেয়েটা। সাক্ষী আনে নাই আবার বলে তাকেই সাক্ষী দিয়ে দিতে। পাগল নাকি?
“এ্যাই যে নেন আপনার সাক্ষী।”, রূপার মুখে বিজয়ের হাসি। “কাজি অফিসের পাশের দোকানে চা খাচ্ছিল। পাঁচশ টাকার বিনিময়ে ধরে আনছি। এখন খুশি? তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়ান।”
এগার মিনিট লাগলো পুরো বিয়ে শেষ করতে। রূপা খুব খুশি। সে কাজিকে খুশি হয়ে পাঁচশ টাকা বকশিস দিল।
“এখন যাবা কই?”, শফিক জিজ্ঞাস করে রূপাকে।
“আপাতত যাচ্ছি না কোথাও। একটা রেস্টুরেন্টে খাবো। তারপর বিকালের ট্রেনে সিলেট।”
“সিলেট? কেন?”
“ইচ্ছা। আগে চল কিছু খেয়ে নেই।”
ঝিক.. ঝিক.. ঝিক.. ঝিক..ঝিক..ঝিক..
-রূপা, তুমি বাসায় ফিরে যাবা কবে?
– পরশু।
-পরশু কেন?
– এই দুই দিন আমার বান্ধবীর বোনের বিয়েতে থাকব।
– সিলেট কি এর জন্য যাচ্ছ?
– না। তোমাকে নিয়ে জাফলং যাবো।
– তাহলে বান্ধবীর বোনের বিয়ে?
– ওটা এমনিতেই বানিয়ে বলেছি, আম্মু বিশ্বাস করতনা তাহলে।
– এরপর কি করবা ?
– বাসায় চলে যাবো। লক্ষ্মী মেয়ের মত।
হা হা করে হেসে ওঠে রূপা। বিয়ের পর থেকে ওকে অদ্ভুত লাগছে শফিকের। ও কি করার চিন্তা করছে কে জানে?
-হ্যালো আব্বু।
– হুম রূপা,বল।
– বলতো আমি কোথায়?
– মনে হয় সিলেটে।
– তুমি কিভাবে জানলা?
– তোর বিয়ের পর সিলেটে যাবার ইচ্ছা ছিল, তাই ওখানে গিয়েছিস।
– বাহ, তোমার বুদ্ধি তো অনেক ভালো।
– কারণ আমি তোর বাবা। তুই এসব আমার কাছ থেকেই পেয়েছিস। আর বিশ হাজার টাকা পেয়ে বুঝিসনি তোকে টাকাগুলো কে কেন দিল?
– আমি ধারণা করেছিলাম। কিন্তু শিওর ছিলাম না। ভাবলাম হয়ত বান্ধবীকে গিফট দেওয়ার জন্য দিয়েছ।
– যাই হোক। এখন খেতে বসব। তোরা খেয়েছিস?
-হুম বাবা। ওর পছন্দের খাবার খেয়েছি।
– তুই আর কোনদিন বাসায় আসবিনা, মনে থাকে যেন কথাটা।
– আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে।
পরিশিষ্টঃ টাকা শেষ। পুরো দুইদিনের খরচ আর ঢাকায় ফেরার টাকা সব মিলিয়ে পুরো বিশ হাজার চারশ চব্বিশ টাকা লাগলো। চারশ টাকা রূপার দেওয়া আর শফিকের চব্বিশ টাকা। তাও আবার শফিকের টাকা দিয়ে রূপা সিগারেট কিনেছিল, খাবে বলে। যদিও শেষ পর্যন্ত তা আর হয় নাই। শফিক ঢাকায় ফিরেই একটা কোম্পানীতে চাকরী পেয়েছে, বিশ হাজার টাকা মাইনে। রূপা আপাতত তার বাবার বাসায়ই আছে, শফিক বলেছে আর দিন দশেক পর নতুন বাসায় উঠে তাকে নিয়ে যাবে। রূপার বাবার বিশ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে দেবে ও। যদিও শফিকের চাকরীটা রূপার বাবারই দান যেটা শফিক জানে না, জানলেও হয়ত চাকরীটা করে ফেলত। দিনকাল ভালোই যাচ্ছে সবার।
বাহ! এলোমেলো গল্পগাঁথা তো বেশ ভালোই লিখিস মনে হয় অক্ষর।
মাথায় আজকাল শফিক হবার চিন্তাভাবনা ঘুরঘুর করছে নাকি? 😛
এহেম ! এহেম ! শফিকের মত পকেটে চব্বিশ টাকা নিয়ে ঘুরলে হবে ? 😛
তাই তো! তুই তো আবার হবু প্রোগ্রামার। আর যাই হোক, পকেটে ২৪ টাকা থাকলে ভাত নাই।
তুই এক কাজ কর, নাহয় ২৪০০ টাকা নিয়েই ঘুরলি। 😛
আমি হবু না, অলরেডি প্রোগ্রামার খেতাব নামের পাশেই আছে 😛
(ভালো না খারাপ সেইটা অন্য কথা)
:happy:
হবি যখন ভালোটাই হবি, খারাপ হবার চিন্তা করার কী দরকার? 🙂
:love:
ভাল লিখছো। 😀
ফিনিক্সপুর প্রশ্ন আমারও। 😛
:happy:
খুশি। আসলে কিছু লিখতে গেলে উল্টা পাল্টা কী জানি লিখে ফেলি। তারপরও মানুষ ভালো বললে ভালো লাগে।
কি রে? তোর দিনকালের হাল কি? 😳
ঘুমাই খালি। 8)
জেনুইন কিছু চাই, হুমায়ূন স্যারের স্টাইল স্যারের জন্যই থাকুক!
ব্যাপারটা ঠিক পছন্দ হল না।
কোনটা?
এই যে বললেন জেনুইন, এটা তো একেবারেই কপি পেস্ট টাইপ কিছু না। 🙁
আমি আসলে বোহেমিয়ানদা’র কথাটাই বলতে চেয়েছিলাম, সুরটা একটু অফেনসিভ হয়ে গেছে 🙁
“লিখতে থাকো! হাত পাকুক! মাঝে মাঝে অন্য বই এর স্বাদও আসুক। লিখতে লিখতে নিজের স্টাইল চলে আসবে!”
🙂
হুমায়ূন!!
লিখতে থাকো! হাত পাকুক! মাঝে মাঝে অন্য বই এর স্বাদও আসুক। লিখতে লিখতে নিজের স্টাইল চলে আসবে!
হুম, হুমায়ূন আহমেদের ছায়া আছে কিন্তু আমিত্ব কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, মনে হয় হয় নাই। 🙁
হ্যাপিলি এভার আফটার !!!
🙂
ছোট গল্পটা আরেকটু বড় হলে বেশি খুশি হতাম।
লেখালেখি চলুক 🙂
আপি লিখতে পারি না, লেখা হারিয়ে যায়।
গল্পটাতে হুমায়ূনের ছাপ আছে , তবে তেমন না। তাই ও কথা আর তুলছি না।
গল্পের শেষটা অনেক পজিটিভ হয়েছে। দেখে ভালো লাগলো। তবে, বাবার কাছে ইন্টারভিউর পর পালিয়ে আসা মেয়ে কখনো এভাবে জিজ্ঞাসা করবে না যে,
“-আব্বু কী বলল তোমাকে?”
গল্পের শেষটাও একই ভাবে আকস্মিক হয়েছে। তবে যে জিনিসটা অসাধারনভাবে ফুটে উঠেছে তা হলো জামাই শ্বশুড়ের বোহেমিয়ান ভাবটা।
তবে সে ক্ষেত্রে শ্বশুড় মশাই কেন এমন করলেন তার কিছু ছিটে থাকলে ভাল হতো।
(বাকিরা অনেক সমালোচনা করেছে দেখলাম, তাই লোভ সামলাতে পারলাম না। 😛 )
আরেকটা কথা গল্পের স্টিকারে লেখা থাকা দরকার “ডোন্ট ট্রাই এট হোম”।
কারণ, চরম পজিটিভভাবে কোর্ট ম্যারেজের ব্যাপারটা ফুটিয়ে তোলা হলেও, পরিসংখ্যান মোতাবেক অধিকাংশ বিয়েই ফ্রড হয়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় মেয়ে সবকিছু হারিয়ে ফেলে, কিন্তু কোন বিচার পায় না।
বাংলাদেশের মেয়েদের মাঝে কোর্ট ম্যারেজ করার প্রবণতা থেকে কিছু নরপিশাচ সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। কোর্ট ম্যারেজের ব্যাপারে সঠিক ধারনা না থাকার ফলে এ ধরনের দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয় অনেক মেয়েকে।
অনেক কাজী পয়সার লোভে নিছক “হলফনামা” বিক্রি করে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ বলে চালিয়ে দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, রেজিস্ট্রি ছাড়া আইনত কোন বিয়েই বিয়ে বলে বিবেচিত হয় না।
নিচের লিঙ্কে গিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
“তবে জেনে রাখবেন, নোটারী পাবলিকের কাছে করা হলফনামার কোনো দাম নেই যদি আপনার কাবিননামা না থাকে। কাবিননামা থাকলে আপনার বিয়ের পক্ষে আর কোনো ডকুমেন্টই লাগবেনা। কাবিননামাই সব।”
ওরে বাবা! ভাই এটা একটা গল্প মাত্র! সব কিছুতে এত যুক্তি + এই লেখা পড়ে কি হবে ভাবতে গেলে তো মানুষ গল্পই লেখা ছেড়ে দেবে। আর আমি আসলে আমার মত লিখেছি, পাঠকরা তাদের মত ভেবে নিলেই হয়।
আপনার কমেন্ট বেশ ডেঞ্জারাস 😀
:babymonkey:
হা হা হা…… মজার গল্প…… 😀