এইসব দিন এইসব রাত্রি ২ :: উটপাখিতালীয়

আজকে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটে গেল।

ঢাকা ভার্সিটির চারুকলার উল্টোদিকে ছবির হাটে আজকে ইফতারী করলাম কয়েকজন ভাই ব্রাদারের সাথে। আড্ডা মেরে উঠতে উঠতে প্রায় নয়টা বেজে গেল। নীলক্ষেত মোর থেকে এক মিরপুরগামী বাসে উঠলাম,বাসটা কেন যেন বেশ ফাঁকাই ছিল, চট করে সিট পেয়ে গেলাম। নিউমার্কেটের সামনে থেকে আমার পাশে এক ছেলে উঠলো।

খানিকপরে আমি ছেলেটার মুখের আদল লক্ষ্য করে চমকে গেলাম।

আরে এ তো আমার স্কুলের ফ্রেন্ড রনি। চেহারা একটু অন্যরকম লাগছে ঠিকই, কিন্তু এতদিন পর দেখছি, সামান্য পার্থক্য তো থাকবেই। আমি উচ্ছাস্বের সাথে বলে উঠলাম, রনি!!

ছেলেটা কেমন ভাবলেশীন ভাবে তাকালো।

সাথে সাথে আমার একটু খটকা লাগলো, রনি হলে আমাকে দেখামাত্রই ওরও তো একটা রিফ্লেক্স থাকার কথা ছিল।

ছেলেটা বলল, না ভাই, আমার নাম হেনা।

আমি বললাম, আরে আমি মাশুদ!

ভাবলাম বলার পর চিনবে। কারন হেনা বলার পর আমি নিশ্চিত ছিলাম এটা রনিই। কারন ওর পুরা নাম আবু হেনা মোস্তফা জামান , ডাকনাম রনি।

তারপরও চিনলো না।

আমি কিছুটা বিব্রত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনার স্কুল কোনটা ছিল?

সে জানালো তার স্কুল কলেজ দুটোই রাজশাহীতে।

আমি মোটামুটি আকাশ থেকে পড়লাম। আমার ক্ষীণ একটা সন্দেহ হচ্ছিল রনি আমার সাথে বিতলামী করছে। কিন্তু সেটা মানতে কষ্ট হচ্ছিল কারন, রনি ওই টাইপ ছেলেই না।

তারপর তার সাথে অনেক কথা হল, তাকে আমার বিস্ময়ের কথা বললাম। জানলাম, সে আসলে আমার চেয়ে এইচএসসি ব্যাচের হিসেবে অনেক সিনিয়র, একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী’র সাইট অ্যাকুইজিসন ম্যানেজার। কার্ড নিলাম।

১৫ মিনিটের আলাপে বেশ খাতিরও জমে গেল। খুব করে বললেন, যেন আমার সেই বন্ধুটিকে যদি কোনভাবে ম্যানেজ করে তার অফিসে গিয়ে এককাপ চা খেয়ে আসি যেন। তার জময কে দেখার ইচ্ছা তারও হচ্ছে।

জিজ্ঞেস করলাম ফেসবুক ইউজ করেন কিনা, নাহ! তাহলে না হয় ফ্রেন্ড সাজেশন পাঠানো যেত রনির।

ভাবলাম- যাক এ আর এমন কি, কাকতাল বলে যেহেতু একটা শব্দ আছে তার দুএকটা প্রয়োগ তো থাকবেই।

কিন্তু মজাটা তখনো শেষ হয় নাই।

খানিক পরে লোকটা নেমে গেল বাস থেকে। আমি তার কার্ডটা বাসের জানালার কাছে নিয়ে বাইরের আলোতে পড়ার চেষ্টা করলাম।

এবং রীতিমত শক খেলাম-

কার্ডে তার পুরো নাম- আবু হেনা মোস্তফা জামান

আমি পুরাই বেকুব হয়ে গেলাম, রনিরও পুরা নাম তাইই।

এইটারে আর কাকতালীয়  বলা যায় না, পুরাই উটপাখিতালীয়!!

মাশুদুল হক সম্পর্কে

হাত ভর্তি চান্দের আলো ধরতে গেলে নাই... https://www.facebook.com/masshood
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে স্মৃতিচারণ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

14 Responses to এইসব দিন এইসব রাত্রি ২ :: উটপাখিতালীয়

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    আমি তো ভাবতাম ভৌতিক!

    চেহারা নিয়ে আমার এমন হইছিলো একবার!

    • মাশুদুল হক বলেছেনঃ

      ভৌতিক এর মতই, চান্স হইলে ব্যাপারটা আবার যাচাই করে দেখার ইচ্ছা আছে, ঠিকানা ফোন নাম্বার যেহেতু নিয়ে রাখছি

  2. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    আজিব! ভাইয়া ফোন করে দেখেন নাই?

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    কী আশ্চর্য!
    আমি হইলেও ভূত-টূত ভাবতাম মনে হয়। 😯

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    হায় আল্লাহ! এত মিল কীভাবে সম্ভব ভৌতিক কিছু ছাড়া? 😯

  5. অবন্তিকা বলেছেনঃ

    চেহারা মিলতে পারে, তাই বলে নামও! অবশ্য আমার ছোট আপুর মত হুবহু দেখতে একটা আপু আমাদের স্কুলে পড়তো, ডাকনামও এক ছিলো, তবে পুরো নাম না।

  6. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    মাশুদ ভাই, আমার বিশ্বাস হয় নাই। তবে আপনি ভাল একজন লেখক। বিশ্বাস করার মতই লিখেছেন। তাই, ইচ্ছা না করলেও বিশ্বাস করলাম। 🙂

  7. বৈরাগী বলেছেনঃ

    আমি তো ভাবলাম ‘মীরাক্কেল’ এর আবু হেনা রনি। সেই আশায়ে পড়তে পড়তে বিশ্বাস- অবিশ্বাস করার আর সুযোগ পাইলাম না। 🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।