প্রতিদিন সকালে আমরা বাস এ ঝুলে ঝুলে গন্তব্যে যাই, মুরগীর খোপের মত বাসার হাজার হাজার টাকা ভাড়া দেই, ধোঁয়া-ধুলোমাখা বাতাস বুক ভরে নেয়ার অপচেষ্টা করি, দিন-দুপুরে আমার হাতের ব্যাগ ছোঁ মেরে নিয়ে যায় অন্য কোন হাত, নতুন প্রভাতে পথে পড়ে থাকে প্রাণহীন দেহ।
তবুও, প্রতিদিন ঢাকা শহরে আমরা বেঁচে থাকার দুরন্ত চেষ্টা চালাই। কিন্তু, ঢাকা আসলেই কতটা বসবাস উপযোগী শহর?
Liveability ranking-বসবাসযোগ্যতা র্যাংকিং:
একটা শহর কতটা বসবাসের উপযোগী সেটা নির্ণয় করা হয় কতগুলো বিষয় এর উপর ভিত্তি করে। Economist Intelligence Unit প্রতি বছর ঘোষণা করে থাকে এই র্যাংকিং।
এই র্যাংকিং তৈরি করার সময় যে সব বিষয় বিবেচনা করা হয়:
১৪০টি শহরকে ৫টি বিষয় এর ৩০টি ভাগে নম্বর দেয়া হয়। ০-১০০ এর মধ্যে দেয়া নাম্বারের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় সবচেয়ে বসবাসযোগ্য শহর। যে ৫টি বিষয় দেখা হয়, সেগুলো হলো:
১. স্থিতিশীলতা
২. স্বাস্থ্য সেবা
৩. সংস্কৃতি ও জলবায়ু
৪. শিক্ষা
৫. অবকাঠামো
কেন গুরুত্বপূর্ণ?:
এই র্যাংকিং এর উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংস্থা। কারণ, বসবাস অনুপযোগী শহরে ব্যবসা স্থাপন করা অনেক বেশি মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এ কারণে এড়িয়ে চলে র্যাংকিং এ নিচের দিকে থাকা শহরগুলোকে।
Liveability Ranking ২০১২:
এ বছরের কিং এ শীর্ষ দশ এ আছে যে শহরগুলো(ব্রাকেটে পয়েন্ট):
১. মেলবোর্ন (৯৭.৫)
২. ভিয়েনা (৯৭.৪)
৩. ভ্যাংকুভার (৯৭.৩)
৪. টরোন্টো (৯৭.২)
৫. ক্যালগারি (৯৬.৬)
৬. অ্যাডিলেড (৯৬.৬)
৭. সিডনি (৯৬.১)
৮. হেলসিংকি (৯৬.০)
৯. পার্থ (৯৫.৯)
১০. অকল্যান্ড (৯৫.৭)
ঢাকার কী অবস্থা?:
আগে ভেবে দেখা যাক, যে পাঁচটি বিষয় এর উপর নাম্বার দেয়া হয়, সেগুলোতে ঢাকার কী অবস্থা।
১. স্থিতিশীলতা:
- বিভিন্ন অবরোধ ও আন্দোলনে মাঝে মাঝেই শহর অচল।
- তুচ্ছ কারণে ছড়িয়ে পড়ে মারামারি।
- EPZ গুলোতে অস্থিরতা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
- অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনায় দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ।
২. স্বাস্থ্য সেবা
- সরকারী হাসপাতালে সিট নিতান্তই কম।
- স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা নাগালের বাইরে।
- ভেজাল ওষুধ এর বিস্তার।
- ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফলাফল সম্পর্কে অনিশ্চয়তা।
- জবাবদিহিতার অভাব।
- ভুল চিকিৎসা।
৩. সংস্কৃতি ও জলবায়ু
- ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ
- চারপাশের নদীগুলোতে বিষাক্ত পানি।
- চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া।
- প্রায় গাছশূন্য শহর।
- নিজ সংস্কৃতি ধরে রাখার ব্যর্থতা।
- অন্য সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হবার প্রবণতা।
৪. শিক্ষা
- নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শিক্ষাগ্রহণের কম সুযোগ।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শিক্ষার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীলতা।
- উচ্চ শিক্ষার অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা।
- গবেষণামূলক শিক্ষার অভাব।
- শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে অনিশ্চয়তা।
- আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা অপ্রতুল।
- পারিবারিক অভাবের কারণে পড়ালেখা ত্যাগের উচ্চহার।
৫. অবকাঠামো
- নিয়ম না মেনে বানানো বেশিরভাগ অবকাঠামো।
- বিল্ডিং কোড কন্ট্রোল এর ব্যাপারে উদাসীন কর্তৃপক্ষ।
- ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থানের কারণে যে কোন মুহূর্তে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সম্ভাবনা।
- অপরিসর পথঘাট এবং তীব্র যানজট।
- পার্কিং এবং ট্রাফিক নিয়ম মেনে না চলা।
সবগুলো বিষয় চিন্তা করেই বোঝা যায় ঢাকার বসবাসযোগ্যতা অনেক নিচেই হবার কথা।
সেটা কত নিচে?
৩৮.৭ পয়েন্ট নিয়ে ১৪০ টি শহরের মধ্যে ১৪০ তম!
ভাবনার কী আছে?:
উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারলে ঢাকার প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যায় ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এর চেয়ে বেশি সমস্যা গ্রহণ করা নিশ্চয়ই সম্ভব না। তাছাড়া, মানুষ ও সমস্যার এই তীব্র চাপে মৃত নগরী হবার পথে এগিয়ে যাবে ঢাকা।
এখনই হোক তবে সচেতনতার সময়!
“রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যায় ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।”
তবুও চাই জনগণ আর সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এবং সচেতনতায় ফিরে আসুক ঢাকার প্রাণ!
এই আশাই রইলো……
এখনই হোক তবে সচেতনতার সময়!
🙂
আশায় আশায় বান্ধি বাসা। দেখা যাক সামনে কি হয়।
“আশায় আশায় বান্ধি বাসা”- আসলেই……
৪০ ও পায় নাই!
🙁
“কিছু সুর তুমি এনে দাও পাখি নাগরিক কোলাহলে
গান গাও তুমি শিষ দাও এই শহুরে দেয়ালে…” লেখাটা পড়ে কেন জানি এই গানটা কানে বেজে উঠল…
জন্ম নিয়েছি, বেড়ে উঠেছি এই বিচ্ছিরি পেছনে পড়ে থাকা শহরটায়।বিরক্তি ধরে যাওয়া ট্রাফিক জ্যাম, বৃষ্টিতে জমে যাওয়া কাদাপানি মাখা নোংরা রাস্তা…তবু এত মায়া কেন এ শহরটায়।
খুব চাই আমাদের প্রিয় এই শহরটা বেঁচে উঠুক, আমাদের মরে যাওয়া বুড়িগঙ্গা বেঁচে উঠুক… পাখিরা ফিরে আসুক,ওদের সুমধুর শিষে প্রতিধ্বনিত হোক এ শহরের প্রতিটি ইট-কাঠ, দেয়াল…
“খুব চাই আমাদের প্রিয় এই শহরটা বেঁচে উঠুক, আমাদের মরে যাওয়া বুড়িগঙ্গা বেঁচে উঠুক… পাখিরা ফিরে আসুক,ওদের সুমধুর শিষে প্রতিধ্বনিত হোক এ শহরের প্রতিটি ইট-কাঠ, দেয়াল”
সহমত……
কী আর বলবো।
বলার তো কিছু নাই, শুধু করার আছে 🙂
” ৩৮.৭ পয়েন্ট নিয়ে ১৪০ টি শহরের মধ্যে ১৪০ তম! ” –একশো ঊনচল্লিশতম হইলেও মনটারে একটু সান্ত্বণা দিতে পারতাম । 🙁 🙁 :'(
যেন আরও সামনে এগিয়ে যেতে পারি, সে জন্য কাজ করতে হবে আমাদেরই……
এবার ‘হারারে’র সাথে হেরে গেলাম!! 🙁
:crying:
Wow…I live in Melbourne, and I was born in Dhaka. I have tasted both extremes!!
ha ha…..
ইট-কাঠ পাথরের এই শহরটাকে তবু কেন জানি ভালোবাসি, আর সবাই যদি ভালোবেসেই নিজের জায়গার কাজটুকু করে, এই শহরটাকে পাল্টাতে ১ বছরের বেশি লাগবে না, শুধু দরকার মানসিকতার পরিবর্তন……
আর কিচ্ছু না……
আশা করছি মানসিকতার পরিবর্তন হবে খুব দ্রুত……