আমাকে এই লেখাটা লেখতে হবে তা কখনও ভাবিনি । কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয়েছে এই লেখাটি লেখা উচিৎ। আমি গত বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি বর্তমানে সরকার যে মেডিকেলে ভর্তির যে পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে সে পদ্ধতি গত বছর থাকলে আমি ঢাকা মেডিকেলতো অনেক দূরের বিষয়, সরকারী কোন মেডিকেলে বা ডেন্টাল কলেজে চান্স পেতাম কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বলতে দ্বিধা নেই যে, আমার SSC, HSC কোনটাতেই গোল্ডেন 5 ছিলনা। ভর্তি পরীক্ষার আগের সময়টাতে কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এর মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় আমার যোগ্যতার প্রমান আমি দিয়েছি। এখন কেউ কি বলবেন যে, আমি মেধাবী নই, কেননা আমি তো গোল্ডেন পাইনি ?
প্রশ্ন আসতে পারে মেডিকেলে ভর্তির জন্য জিপিএ ৮ প্রাপ্ত হলেই তো এপ্লাই করতে পারবে, সেখানে আমি গোল্ডেন এর প্রশ্ন টেনে আনছি কেন? ২০১০ সালের SSC আর ২০১২ সালের HSC এর রেজাল্টটা একটু দেখুন। এই দুটা পরীক্ষায় যথাক্রমে ৮২,৯৬১ ও ৬১,১৬২ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। মানবিক আর কমার্সের সংখ্যা বাদ দিলে এ সংখ্যা অর্ধেকে দাঁড়াবে। এর মাঝে কম করে ধরলেও অন্তত ১০,০০০ জনের উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন 5 আছে। সুতরাং স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সরকারী মেডিকেল আর ডেন্টাল গুলোর মোট সীটের (৩৩৪০, কোটাসহ) ৩ গুণ প্রার্থী আছে। অর্থাৎ সব গোল্ডেনকেই জায়গা দেওয়া যাবে না।
এখন আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন মফস্বলের কয়টা ছেলে মেয়ে গোল্ডেন পায়? মূলত গোল্ডেন তারাই পায় যারা রাজধানী ঢাকা অথবা বিভাগীয় শহরগুলোর ভাল ভাল স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছে, যাদের বাপ মা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে নামীদামী টিচারদের কাছে প্রাইভেট পড়াতে পারে, আবার সেই টিচারের কাছে যা পড়ল তা যেন পাকাপোক্ত হয় তার জন্য বাসায় প্রাইভেট টিউটর রেখে কেয়ার নিতে পারে। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, কিন্তু তা নগন্য। মফস্বলের ছাত্র ছাত্রীদের সেই সুযোগটা কোথায়? আমি সুদুর রাঙামাটির কাপ্তাই এর যে নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি সেখানে গত দশ বছরে ৮ জন (!) এ+ পেয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের একজন ছেলে বা মেয়ের কাছে এ+ এর স্বপ্নই একটা বিশাল ব্যাপার, গোল্ডেন তো তাদের চিন্তা জগতেরই বাইরের ব্যাপার। অথচ এরাই যদি কোন নামী দামী স্কুল কলেজে পড়তে পারত তাহলে তারাই হয়তো আরও অনেক ভালো করতে পারতো। এখন ভর্তি পরীক্ষার সিস্টেমটাই যদি বাদ দিয়ে দেয়া হয় তাহলে এই ছাত্র ছাত্রগুলোর কি হবে?
ভর্তি পরীক্ষা ছিল বলেই আমি দেখলাম, না আমার এখনও একটা সুযোগ(score 100) আছে। তিনমাস কঠোর পরিশ্রম করলাম শুধুমাত্র ডাক্তার হওয়ার জন্য যা ছিল আমার আজন্ম লালিত স্বপ্ন, ফলশ্রুতিতে ১ম হয়ে ডিএমসিতে চান্স পেলাম। এরকম শুধু আমার ক্ষেত্রেই ঘটেছে ব্যাপারটা এরকম নয়। আমাদের ব্যাচ DMC তে K-69 হিসেবে পরিচিত। ব্যাচের ২০০ জন ছাত্র ছাত্রীর বেশীরভাগই ঢাকার বাইরের এবং তাদের অনেকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চান্স পেয়েছে। শোয়েবের কথা বলতে পারি যে বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জাতীয় মেধায় ১১৫ তম হয়েছে। শাওন এর কথা বলতে পারি, যে HSC তে এ+ না পেয়েও খুলনা থেকে চান্স পেয়েছে। এমনকি ঝালকাঠির প্রত্যন্ত এলাকার মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেও নিজ মেধার গুনে আজ সর্বোচ্চ মেডিকেলে পড়াশোনা করছে মাহবুব, ফিরোজ আর ইমরান। একই চিত্র অন্যান্য ব্যাচেও। ভর্তি পরীক্ষা ছিল বিধায় মেডিকেল শিক্ষার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা মেডিকেল এই মেধাগুলোকে খুজে নিয়েছে। এখন সরকার শুধু জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি নিলে এরকম শত শত মেধাবী অথচ কোন কারনে গোল্ডেন পায়নি এরকম ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। আমার সন্দেহ এই ব্যবস্থায় রাঙামাটি জেলার আর কোন ছাত্র DMC তে আসবে কিনা? শোয়েবের কিংবা শাওনের মত মেধাবী মুখগুলো আর ঢাকা মেডিকেলে দেখা যাবে কিনা?
আসুন দেখি GPAর ভিত্তিতে ভর্তি কেন গ্রহনযোগ্য নয়-
১. এর মাধ্যমে সঠিক মেধা যাচাই সম্ভব নয়। কারণ ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা ছাত্র মানেই জানেন, যে এ+ পেতে পুরো সিলেবাস সম্পর্কে না জানলেও চলে। নির্দিষ্ট কিছু অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ন, বোর্ডে নিয়মিত আসে এইরকম কিছু প্রশ্ন পড়েই ভাল মার্ক পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এডমিশন টেস্টে পুরো সিলেবাসের ব্যাপারে ধারনা রাখতে হয়।
২. ৬টি শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নের প্যাটার্ন, খাতা যাচাইয়ের পদ্ধতি ৬ রকম। ফলে ভিন্ন দুটি বোর্ডের একই রেজাল্টধারীদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে।
৩. ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে।
মাননীয় স্বস্বস্থমন্ত্রীর কাছ আবেদন, মাননীয় মন্ত্রী আপনি একটু চিন্তা করুন সেই ছেলেমেয়েগুলোর কথা যারা গত বছর কোন মেডিকেলে চান্স না পেয়ে একটি বছর ধরে কঠোর শ্রম আর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করছে ভর্তি পরীক্ষার জন্য, তাদের স্বপ্ন একটাই, কোন মেডিকেলে চান্স পাওয়া। ঈদের আগমুহুর্তে আপনার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত তাদের জীবনের সব আশা আকাঙ্খা দপ করে নিভিয়ে দিয়েছে। তাদের কথা একটু চিন্তা করুণ যারা মেডিকেল ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে Versity বা অন্য কিছুর জন্য কোন প্রিপারেশন নেয়নি। তাদের অবস্থা এখন কি হবে?
শেষে বলব, সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক, বিভিন্ন ব্লগ, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর টকশো সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে সবাই ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার পক্ষে। পরীক্ষার সিস্টেম নিয়ে কথা থাকতে পারে, বর্তমান সিস্টেমকে কিভাবে আরও উন্নত ও স্বচ্ছ করা যায় তা নিয়ে কথা থাকতে পারে কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা বাতিল কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। বিশেষ করে অন্য সব জায়গায় যখন ভর্তি পরীক্ষা হবে তখন শুধুমাত্র মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের যৌক্তিকতা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। তাই প্লিজ, এই অযৌক্তিক, অসময়োপযোগী ও অমানবিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে এতগুলো ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎকে অন্ধকার করবেন না ।
– শরাফত করিম মিরাজ
আপনার মতো কিছু মানুষের এগিয়ে আসা খুব বেশি দরকার, হয়তো কোনভাবে এই লিখাটা, এই যুক্তিগুলো যদি আমাদের দেশের তথাকথিত “নীতি নির্ধারক”-দের মোটা মাথায় ঢোকানো যায়, সেটাই হবে সাফল্য……
আপনার মতো একজন এই লেখাটা লেখার জন্য এগিয়ে আসায় অনেক ধন্যবাদ।
কোনভাবেই ভর্তি পরীক্ষা বাতিল চাই না………
আমি আরও কিছু কথা যোগ করতে চাই। আমার মতে SSC বা HSC পরীক্ষার মাধ্যমে কোনোভাবেই একটি ছেলের মেধা যাচাই করা সম্ভব নয়, কারণ এসব পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের কোন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। একই খাতায় একেক শিক্ষক একেকরকম নাম্বার দেন। বিশেষত বাংলার মত বিষয়গুলোতে এখনো অনেক শিক্ষক ভালো নাম্বার দিতে চান না। আমি নিজে এমন একটি ঘটনার সাক্ষী। HSC তে নটরডেম কলেজ গ্রুপ টু-তে একটি সারির একটানা ৪৪ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় বিষয়েই এ+ মিস করতে দেখেছি আমি, অথচ তার পাশের সারিতেই ছিল গোল্ডেন এ+ এর ছড়াছড়ি। সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না যে মেধা নয়, উত্তরপত্র মূল্যায়নের পদ্ধতির ভিন্নতাই এরকম বিস্ময়কর ফলাফলের কারণ।
তাছাড়া এটাও সবার জানা যে এসব পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য গতানুগতিক কিছু প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে লিখতে পারাই যথেষ্ট, কে কতটুকু শিখল সেটা কোন ব্যাপার না। যে শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্য ডাক্তার হওয়া, সে গণিতের তুলনায় জীববিজ্ঞানে বেশি গুরুত্ব দিবে এটাই স্বাভাবিক। এই সিস্টেমের মাধ্যমে সবগুলো বিষয়কেই তো একই কাতারে দাঁড় করান হচ্ছে।
আমার আরেকটি প্রশ্ন, সীটের চেয়ে যখন গোল্ডেন এ+ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি, তাহলে কিভাবে তাদের মধ্য থেকে বাছাই করা হবে? সেটা যদি করা সম্ভবও হয়, একজন শিক্ষার্থী কোন মেডিকেল কলেজে পড়বে সেটাই বা কিভাবে ঠিক করা হবে? ভয় হয় কলেজে ভর্তির মত এখানেও না আবার “বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার” ধরণের কোনও আজগুবি নিয়ম চালু করা হয়।
খুব দুঃখজনক হবে এই ধরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে।
এই পদ্ধতিতে দেশে যে ক’জন ডাক্তার হবেন, তারা কি পরবর্তীতে আদৌ ভালো ডাক্তার হতে পারবেন?
এই সাধারন কথাগুলো যখন আমরাও বুঝি তখন উপর মহলের লোকগুলো কেন বুঝতে চায় না। তাদের সমস্যাটাই বা কি, এমন একটা পদক্ষেপের আড়ালে তাদের স্বার্থটাই কি!!
“আমার আরেকটি প্রশ্ন, সীটের চেয়ে যখন গোল্ডেন এ+ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি, তাহলে কিভাবে তাদের মধ্য থেকে বাছাই করা হবে? সেটা যদি করা সম্ভবও হয়, একজন শিক্ষার্থী কোন মেডিকেল কলেজে পড়বে সেটাই বা কিভাবে ঠিক করা হবে? ভয় হয় কলেজে ভর্তির মত এখানেও না আবার “বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার” ধরণের কোনও আজগুবি নিয়ম চালু করা হয়।”…………LOL…..valo bolsen
🙁
Akhon akta jinis hobe….ta holo medical a vorti hoar iccha na thakar sorteo oneke medical a vorti hobe….Shorker er kham kheyali siddhanter akta shima thaka dorkar