চোখ বুজে নেয়া দু’মুঠো সিক্ত বাতাস

সদ্য নবজাতকের সদ্য ফোঁটা চোখের দৃষ্টিটা হয়ত এমন থাকে……….

মা যখন পরম মমতায়ে গুল্টি টাকে গোসল করায়ে- তখন রঙিন সাবান পানির বুদবুদ দেখে এমনই কি ভাবে? অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে!!!……. ধরতে গেলেই যে ফুটুস হয়ে যাবে……

বৃষ্টির চাদরে মোড়া প্রকৃতিটাকে দেখলে আমার ও না অমন লাগে, অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি, ওই রিনিঝিনি চুড়ির মত-বৃষ্টি যে আমার ভিতরে কি তোলপাড় করে যায়ে…… মনে হয় যেন ধরতে গেলেই হারিয়ে যাবে। লজ্জাবতী লতার মত লুকিয়ে যাবে,তাই অবাক চোখে শুধু তাকিয়ে থাকি, ধরতে গেলেই যদি হারিয়ে যায়ে…… কিন্তু বৃষ্টি যে আমার ভীষণ ভাবে চাই। বৃষ্টির ঘ্রাণ যেন আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে ঘুলি-ঘুপচিতে গুমরে পড়ে থাকা মন খারাপটার সাথে গল্পে মেতে উঠে,হাসি-গান-আড্ডায়ে তাকে খুশিতে ঝলমলিয়ে তুলে, বৃষ্টির ঝাপ্টা শুধু আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে যায়ে না,যেন পৃথিবীর লক্ষ-কোটি কণ্ঠের হাসিকে আমার কানে বাজিয়ে তোলে, শিশুর নিষ্পাপ মুখের হাসি দিয়ে আমাকে ঘিরে ফেলে। প্রসাধন-মাখা মসৃণ জীবনের তলায়ে পড়ে থাকা ক্লান্তি-অবসাদ-হতাসার পুরু হয়ে জমে থাকা ধুলার আস্তরণকে যে সে  আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তার নিজের করে নেয়, আপন সঙ্গী করে শুরু করে তার পথচলা, আর আমাকে দিয়ে যায় তার সুমধুর সুর গুলো……

 

আচ্ছা একই বৃষ্টির এতো রূপ কেন???

 

রাতে যখন বৃষ্টির দোর্দন্ড-প্রতাপের শব্দ শুনি- মনে হয় যেন কোন ভাই বহু বছর পূর্বে তার হারিয়ে যাওয়া বোনকে আজো খুঁজে বেড়াচ্ছে, এখানে-ওখানে-সেখানে। দেখলে মনে হয় কি যেন প্রচণ্ড কষ্ট বুকে চেপে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, রাতের আঁধারকে যেভাবে বৃষ্টি ঘিরে ফেলেছে-যেন-শুধু একটি বার আমার বোন কে খুঁজে পাই, পৃথিবীর আর কোন বিপদ-শঙ্কা তাকে স্পর্শ করতে পারবে না, এমনই ভাবে আমি তাকে আগলে রাখব। কি যেন কষ্ট বুকে চেপে আছড়ে পড়ছে, হাজার বছরের বিশৃঙ্খলার শিকড় যেন উপড়ে ফেলতে চাইছে, মাঝে মাঝে যে আকাশটা চমকে উঠে- তা কি পৃথিবীর এই অত্যাচার-অনাচার দেখে? রাতের নীরবতা খানখান করে আকাশটা ডেকে উঠে কি পৃথিবীর নৈরাজ্য আর শোষণ সইতে না পেরে!!! কি জ্বালা তাঁদের অন্তরে কে জানে……

 

আবার এই বৃষ্টি কেই যখন দেখি ভোরের মিষ্টি আলোয়ে-মনে হয় যেন প্রকৃতি তার পায়ে নূপুর পড়ে ঝুমুর-ঝুমুর করে নৃত্য করছে। আবছা আবছা আলোয়ে বৃষ্টি যখন আবার তার আবছায়ার ঝাঁপিটা খুলে বসে তখন কার সাধ্য আছে ওই আকাশের দিকে, ওই বৃষ্টির দিকে না তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়???

 

একটি, দু’টি, তিনটি- টুকটুক করে ফোঁটা গুলো পরছে, একটি ফোঁটা পরলো আর তাকে ঘিরে কত গুলো বৃত্ত তৈরি হল-যেন আমাদের এই আস্তাকুড়কে কিছু আশা ঘিরে ধরলো।

চোখের পাপড়িতে একটি শুধু একটি ফোঁটা পড়া আর সমস্ত অস্তিত্ত দিয়ে তা অনুভব করা, তাকে আপন করে নেয়া…… হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরা আর প্রাপ্তির স্পর্শে মন নেচে উঠা………

বারান্দায়ে সার দিয়ে টব গুলো- জাপানি গোলাপ, পাথরকুচি, কাঁটা-গাছ, নাম-না-জানা ফুল গাছ, মরিচ গাছ আরও কত গাছ………টুপ করে একটি ফোঁটার পাতায়ে পড়া- তিরতির করে পাতাটির কেঁপে উঠা, ফুটতে থাকা ফুলের কলিটার লাজুক আনন্দে একটু চেপে উজ্জ্বল হয়ে উঠা……

 

কালো কালো থমথমে মেঘে গোধূলির আকাশ ঢাকা পড়ে যায়ে, উহ্ কি তার চেহারা, নব-বিবাহিত বধূর  বাপের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার সময়ের চেহারাটি কি এমন থাকে না!!! ট্রেনটা হুইসেল বাজিয়ে যেই না তার চাকাটা একটু ঘোরায়ে- ওমনি কোথা থেকে যেন টুপ করে বধূর গালে নেমে আসে একটি শিশির বিন্দু,তারপর ট্রেনের বেড়ে চলা গতির সাথে পাল্লা দিয়ে যেন কান্নাটাও সব দুমড়ে মুচড়ে ছিটকে বেরিয়ে আসে, আর তার সাথে গলা মিলিয়েই কি ওই আকাশ কান্নায়ে ভেঙে পড়ে, নাহলে তাঁদের রূপে এতো মিল কেন………

 

সৃষ্টির এতো সৌন্দর্য, এতো বিশালতা,কিন্তু আমাদের ক্ষমতা এতো সীমিত কেন? পারিনা গাইতে, পারিনা কবিতা আবৃতি করতে,না পারি লিখতে…… কিন্তু কি করে বুঝাই বৃষ্টি যে আমার মাঝে কি উন্মাদনা সৃষ্টি করে, কোন সে ঢেউ যা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়ে,শুধু আমি থাকি এখানে কিন্তু আমার মন-প্রাণ-আত্মা যে চলে যায়ে বৃষ্টির হাত ধরে নৃত্য করতে। না আমার সে ক্ষমতা নেই-বৃষ্টি আমার মাঝে যে ঝড় বাদলের আলোড়ন তৈরি করে তার তীব্রতাকে ছাপিয়ে, তাকেই তুলে আনব আমার কলমে… না সে তো পারি না, তাই আমার বৃষ্টি আমার না বলাই থেকে যায়ে………

বৈরাগী সম্পর্কে

প্রকৃতি যেন আমার হৃদস্পন্দন__বৃষ্টি যেন আমার বেঁচে থাকার কারণ__সবুজকে বন্ধু করতে চাই,যেন সারা জীবন তারই সাথে কাটিয়ে যাই__আকাশ- হোক না ঝলমলে অথবা কালো,চোখ মেলে তাকেই যেন দেখতে পাই
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

12 Responses to চোখ বুজে নেয়া দু’মুঠো সিক্ত বাতাস

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    বৃষ্টিবিলাস ভালো লাগল! :happy:

  2. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    বৃষ্টির মতো ছুঁয়ে যাওয়ার ক্ষমতা প্রকৃতির আর কোন কিছুরই নেই…… 😀

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    আরে এখানে যে তখন মন্তব্য লিখলাম, কই গেল? 🙁

    সুন্দর লিখেছো। বানানের দিকে নজর দিয়ো। 😀

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    বৃষ্টিকাব্য ভালো লেগেছে পিচকি।

    বানানটা একটু ঠিক করে নিস শুধু। 🙂

  5. নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেনঃ

    লেখাটা এত সুন্দর কেন?

    কোন এক অনুভূতি আর ভাবনার জগতে যে হারিয়ে গিয়েছিলাম!!

  6. বৈরাগী বলেছেনঃ

    তাই??! 😛 ধন্যবাদ :happy: আমি তো ভাবলাম কিসুই হয় নাই 😳 কেউ কিসু জানাইলই না 🙁

    কোন এক অনুভূতি আর ভাবনার জগতে যে হারিয়ে দিতে পেরে আনন্দিত :happy:

বৈরাগী শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।