গুগল সায়েন্স ফেয়ার ও বিজ্ঞান চর্চা: শুরু করার সময় এখনই

ইতোমধ্যেই ২০১২ সালের গুগল অনলাইন সায়েন্স ফেয়ার এর ফলাফল বেরিয়েছে। ইন্টারনেট থাকলে যে কেউ দেখে নিতে পারেন, (ওয়েব লিঙ্ক: http://www.google.com/events/sciencefair/)

লিখব না লিখব না করেও লিখে ফেললাম। মূলত এই নোটটি লেখছি একটা দুঃখবোধ থেকে। সেটা হল আমাদের দেশে নিম্ন মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান চর্চা এবং তার পরিবেশের অভাব। অনেক ক্ষেত্রেই এ বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে অনেকে (মহাত্মা ধরণের মানুষেরা) এ অবস্থা প্রতিকার করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু ব্যপারটা এতটা সোজা নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ। তাই আমাদের নিম্ন মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানের থিওরিটিকাল এবং প্র্যাক্টিকাল ক্ষেত্রে কাজ করার আগ্রহ থাকলেও কাজ করার জায়গাটি অনেক সীমিত। আমি একদিন এরকম বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে একজন প্রফেসরকে বললাম। তাঁর পরামর্শ ছিল এরকমঃ আগে এইচ.এস.সি. পাশ করে নাও। পরে চিন্তা করে দেখলাম, আসলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই উপদেশটাই বেশি কার্যকর। অথচ আমাদের দেশে আসলে যে এই মাধ্যমিক বা এর নিচের ছাত্রদের দিয়ে বিজ্ঞানধর্মী কাজগুলো করানো যেতে পারে, সে চিন্তাটি এখনো বোধহয় “অঙ্কুর” পর্যায় পেরোতে পারেনি।

অথচ ব্যপারটি এমন কিছু কঠিন নয়। প্রয়োজন সময়ের, দরকার কারো এগিয়ে আসা। যেমনটি হয়েছিল গণিত অলিম্পিয়াডের ক্ষেত্রে। একটা সময় গণিত অলিম্পিয়াডের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পর্যায়ে যে কিছু করে দেখানো যেতে পারে সেটা কেউ কল্পনা করতে পারতো কিনা সন্দেহ আছে, বা করা গেলেও আমি অন্তত জানি না। কিন্তু ব্যাপারটা আজ সম্পূর্ণই বদলে গেছে। আজ বাংলাদেশ আইএমও থেকে রূপা নিয়ে ফিরছে, কাল যে স্বর্ণ নিয়ে ফিরবে না, তা কে বলতে পারে? আমি অনেককে পর্যবেক্ষণ করে অন্তত একটা বিষয়ে এই হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছি যে, আমাদের দেশে আর যাই হোক, আগ্রহ আর প্রচেষ্টার কোনো অভাব নেই। অভাব যেটা, সেটা শুধু দিকনির্দেশনার। এ বছর যতদূর জানি, গুগল সায়েন্স ফেয়ার নিয়ে একটা সেমিনার আয়োজন করা হয়েছিলো। কিন্তু ব্যপারটা বেশিদূর গড়ায়নি। এমন একটা সুবর্ণ সুযোগ কেন হাতছাড়া হবে তা ভেবে পাচ্ছি না। যদি বাংলাদেশ দুইবারের চেষ্টায় আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ আনতে পারে, তবে এই ক্ষেত্রে কেন নয়? এ বছর দেখেছি খুব তাড়াহুড়ো করে সেমিনার আয়োজন করা হল। অনেকে খবরটাই পেল না। আসলে এ জন্য কাউকে দোষ দেয়া যায় না। স্বল্প সময়ে যেটা করা যায়, তাই করা হয়েছে। নোটটা লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে, পরেরবার যেন এ ধরণের ভুল না হয়। আমি যতদূর জানি, এই প্রতিযোগিতায় ১৩ থেকে ১৮ বছরের যে কোনো ছাত্র অংশগ্রহণ করতে পারে। এখানের মূল কথা হল “তোমার প্রশ্ন কি?”। অর্থাৎ :thinking: :thinking: :thinking: তুমি কি নিয়ে জানতে চাও, আর সে জন্য গবেষণা করে কি পেলে। গবেষণা যে খুব উঁচু পর্যায়ের হতে হবে তা নয়। তোমার সামর্থের মধ্যেই তা হতে পারে। তবে যতটা সম্ভব সেরাটা দিতে চেষ্টা করতে হবে, যেহেতু এটা ওয়ার্ল্ড ক্লাস প্রতিযোগিতা। তবে সব সময় পুরস্কার পাবার জন্য কাজ করতে নেই। একটা কথা আছে, তোমার যে কাজটা বা যে বিষয়টা পছন্দ সেটা অন্তর থেকে কর, ভালোবেসে কর, কিন্তু সাফল্যের জন্য করো না। অন্তর থেকে বা ভালোবেসে করলে সাফল্য এমনিতেই তোমার দোরগোড়ায় হাজির হবে। বিজ্ঞানকে তাই ভালোবাসতে হয়। এই পেজটিও দেখতে পারোঃ http://www.google.com/events/sciencefair/faq.html তবে পুরস্কার জেনে নিতে পারো এখান থেকেঃ http://www.google.com/events/sciencefair/prizes.html

সবশেষে বলবো যদি আমাদের বড়রা এ কাজে সাহায্য করেন, বা এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তাহলে আমাদের অনেক সুবিধা হয়। একাজে বিভিন্ন সেমিনার অথবা স্কুল পর্যায়ে ছোটোখাটো জার্নাল ও গ্রুপ খোলাও যেতে পারে। সর্বশেষে বলি, বিজ্ঞান চর্চার জন্য আগ্রহের প্রয়োজন, আর আগ্রহের কারণে পুরস্কার আসবে, পুরস্কারের কারণে আগ্রহ নয়।

মারুফ আহমেদ সম্পর্কে

মহাজ্ঞানী অথবা দার্শনিক নই...... সব কিছু দেখি আমার সরল খোলা চোখে...... আজ তারুণ্যের সাথে একাত্মতা ...... পরিবর্তনের স্লোগান ধারণ করি সত্যের নিরিখে......
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

12 Responses to গুগল সায়েন্স ফেয়ার ও বিজ্ঞান চর্চা: শুরু করার সময় এখনই

  1. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    আপনার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমার মনে হয়, আগামী বছর এই ইভেন্ট এর কয়েক মাস আগে থেকেই এটা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে পারেন, তাহলে সবাই উৎসাহী হবে।
    আর, কোন কিছুই শুরু করা তো সহজ হয় না।

    শুভ হোক আপনার প্রচেষ্টার পথচলা……

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    ভাল পোস্ট। 🙂
    :welcome:
    লিঙ্ক দেওয়ার জন্য সরবের ‘টিউটোরিয়াল’ সেকশন থেকে ফুটনোট দেওয়ার উপায় দেখে নিতে পারেন। 🙂

  3. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ESAB এর সদস্যদের জানালাম 😀

    এই রকম চিন্তা চলতে থাকুক। বিজ্ঞান নিয়ে সচেতনতা দারুণ দরকার। দরিদ্র এই দেশ থেকে দরিদ্রতা দূর করতে হলে বিজ্ঞান এর বিকল্প পাই না!

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    বিজ্ঞানের সম্ভয়াবনাময় দিকগুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।
    আপনার মত মানুষের উৎসাহে আগামীদিনের বাচ্চাগুলো বিজ্ঞান চর্চায় আরও সামনে এগিয়ে যাবে- আশা, প্রার্থনা। 🙂

  5. মাহি বলেছেনঃ

    অনেক ধন্যবাদ এরকম একটি পোস্টের জন্য।

    আমরা ESAB থেকে এবছর আদমজী ক্যান্টঃ কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সেমিনার আয়োজন করেছিলাম, কয়েক শ’ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। তবে আমাদের টার্গেটটা ছিল ২০১৩ এর টাইমলাইন। ওয়ার্কশপ ও ওভাবেই ডিজাইন করা হয়েছিল।

    এবার ইনশাআল্লাহ অনেক আগে থেকেই শুরু হবে, ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। বেশ কয়েকটি কলেজের সাথে কথা হয়েছে, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই আমরা মাঠে নেমে পড়ব। ( কেউ যদি আমাদের সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে চান তাহলে মেইল করতে পারেন অথবা এখানে জানাতে পারেন আপনার আগ্রহের খবর ) ।

    আমরা শুধু সেমিনার/ওয়ার্কশপের মধ্যেই এই প্রজেক্টের সীমা আবদ্ধ রাখতে চাই না, ইচ্ছে আছে নিয়মিত আগ্রহীদের সাহায্য দেয়া যাতে একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনের যোগ্যতার পাশাপাশি পুরস্কার জেতারও মনোভাব তৈরি হয়।

    সবার দোয়া – পরামর্শ – আগ্রহ – সহযোগিতা কামনা করছি।

    ধন্যবাদ।

  6. সিরফল বলেছেনঃ

    ” তবে সব সময় পুরস্কার পাবার জন্য কাজ করতে নেই। একটা কথা আছে, তোমার যে কাজটা বা যে বিষয়টা পছন্দ সেটা অন্তর থেকে কর, ভালোবেসে কর, কিন্তু সাফল্যের জন্য করো না। অন্তর থেকে বা ভালোবেসে করলে সাফল্য এমনিতেই তোমার দোরগোড়ায় হাজির হবে। বিজ্ঞানকে তাই ভালোবাসতে হয়।” অনেক উৎসাহ ব্যঞ্জক কথা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।