“আমরা বাঁচব। আমরা মরব না। আমরা কবরে যাব না।”
প্রায় অন্ধকার কুঠুরি- মধ্যিখানে আলো-আঁধারির খেলা। হারিকেন, প্রদীপ আর দিয়াশলাইয়ের কারসাজিতে আবছা আলোমাখা একটা ভুতূড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর মাঝেই ষাট-সত্তর জন লোক জটলা করে বসে আছে। বিজলি বাতির অভাব স্পষ্ট, কিন্তু পরিবেশটাই এমন- আলো-আঁধারির খেলাই যেন সেখানে বাঞ্ছনীয়!
কুঠুরির এক প্রান্তে কিছুটা খালি জায়গা। হারিকেন আর প্রদীপের আলোর উৎসও এই জায়গাটুকু। দেখলেই মনে হবে, সীমিত সুযোগের মাঝে মঞ্চজাতীয় কিছু তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা মানুষ। আর তাদের দিকেই চোখ চারপাশ ঘিরে বসে থাকা মানুষগুলোর।
একটা নাটক হচ্ছে। নাহ, থিয়েটার কিংবা যাত্রাপালা নয়- ঘরোয়া পরিবেশ ভেবেও ভুল করবেন না। প্রায় অন্ধকার এই কুঠুরি আসলে কারাগারের একটা সেল। কী, চমকে গেলেন বুঝি? তাহলে তারিখটাও শুনুন- ফেব্রুয়ারি ২১, ১৯৫৩। রাত সাড়ে দশটা। ঢাকা কারাগারের একদল ‘ছন্নছাড়া’, ‘বিশৃঙ্খল’ বন্দী একটা নাটকের আয়োজন করেছে একুশে ফেব্রুয়ারির স্মরণে। এঁদের কেউ গ্রেফতার হয়েছে সরকারি ভাষা অমান্য করবার ‘অন্যায়ে’, কেউবা ‘উচ্ছৃঙ্খল’ ছাত্র-জনতার মিছিলে ‘শৃঙ্খলা’ বজায় রাখতে সরকারি সশস্ত্র বাহিনীর গুলি চালানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে। এই সেলের মানুষগুলোর প্রায় সবাই কমিউনিস্ট। বামপন্থী হলে কী হবে- দেশ আর দেশের ভাষার প্রতি ভালোবাসার এতটুকু কমতি নেই কারো মাঝে। কারাগারে থাকতেও একুশে ফেব্রুয়ারি তাঁদের হৃদয়ে ঠিকই নাড়া দেয়!
এই মুহূর্তে এই সেলের ঠিক পাশের সেলেই অন্ধকারে ভ্রূ কুঁচকে বসে আছেন সৌম্যদর্শন একজন মানুষ। মোটা কালো ফ্রেমের চশমা চোখে। দাড়ি-গোঁফবর্জিত স্বপ্নবিলাসী সুন্দর চেহারা। বয়স তিরিশেক হবে। সেলের আরো অনেক বন্দীর সাথে তিনিও কান পেতে চেষ্টা করছেন নাটকের সংলাপ শুনতে। প্রায় সময়ই ডায়লগ শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়ছে সেলের মানুষজন- এই মানুষটা ঘাড় ঘুরিয়ে তাদের দেখছেন, হয়ত আপনমনে হাসছেনও। মাঝে মাঝে একটু আফসোসও হচ্ছে- কেন পাশের সেলেই থাকতে পারলেন না! তাহলে তো নিজ চোখেই উপভোগ করতে পারতেন পুরো নাটকটা। যে নাটক নিয়ে বন্দীদের মাঝে এতো উত্তেজনা- সেটা যে তাঁরই লেখা!
গোটা কারাগার অন্ধকার। রাত দশটা পেরোলেই নিয়ম করে জেলের বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়। এর মাঝেই আজকের রাতে হারিকেন আর প্রদীপের আলোয় নাটকের জন্য প্রয়োজনীয় রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করতে চেষ্টার কমতি রাখেননি রণেশ’দা আর ফণি’দা। যেসব হারিকেনের আলোয় পড়াশুনা করে ছাত্রবন্দীরা, তার কয়েকটাই আলো-আঁধারি সৃষ্টি করেছে সেলে। নাট্যকার ভেবে খুশি হলেন- রণেশ’দা না বললে এই নাটকটা হয়ত লেখাই হতো না। গত কয়েক দিনের কথা নাড়া দিয়ে গেল তাঁর স্মৃতিতে।
নাট্যকার স্বভাবসুলভ দুরন্তপনার বদলে জেলখানার রুটিনমাফিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ একদিন একটা চিঠি এলো তাঁর হাতে- চিঠির বাহক যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেছে চিঠিটা তাঁর হাতে পৌঁছতে। চিঠিটা খুলেই তিনি অবাক- রণেশ’দার চিঠি! চরমভাবে কমিউনিস্ট রণেশ দাশগুপ্ত নাট্যকারের অনেকদিনের চেনা। যখন নাট্যকার নিজেও কম্যিউনিজমের নেশায় প্রবলভাবে বুঁদ, তখন থেকেই রণেশ’দা তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গনের সহকর্মী। রণেশ’দাও এখন বন্দী- নাট্যকারের পাশের সেলেই থাকেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কথা হয় কদাচিৎ। সেই রণেশ’দা হঠাৎ এত রিস্ক নিয়ে তাঁর কাছে চিঠি লিখতে গেলেন কেন?
চিঠিটা পড়তেই নাট্যকারের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো সব। সামনেই একুশে ফেব্রুয়ারি- কমিউনিস্টরা চাইছে স্মরণীয় কিছু একটা করতে। তাই রণেশ’দা তাঁকে অনুরোধ করেছেন জেলখানায় অভিনয়ের উপযোগী একটা নাটক লিখে দিতে। রাত দশটার পরে জেলখানার বাতি নিভে গেলে সেটি অভিনীত হবে। নারী চরিত্র যদি থাকে, তাহলে সেটা যেন কোন পুরুষ মঞ্চায়িত করতে পারে- এই অনুরোধও ছিল সাথে। রণেশ’দার অনুরোধ উপেক্ষা করবার মানুষ নাট্যকার নন- তিনি বসে গেলেন নাটক লিখতে।
নাট্যকার ভাবলেন, সেট আর আলোর ব্যবস্থা থাকবে না- তাই সেই সীমাবদ্ধতাকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি নাটকের ঘটনাস্থল হিসেবে বেছে নিলেন গোরস্থানকে, যেখানে সেটের প্রয়োজন নেই। সময় শেষ রাত- তাই চারপাশের পরিবেশ অন্ধকার হওয়াই বাঞ্ছনীয়। নাটকের শুরুতেই নাট্যকারের নির্দেশ ছিল এমনঃ
‘মঞ্চে কোনোরূপ উজ্জ্বল আলো ব্যবহৃত হইবে না। হারিকেন, প্রদীপ ও দিয়াশলাইয়ের কারসাজিতে নাটকের প্রয়োজনীয় ভয়াবহ, রহস্যময়, অশরীরী পরিবেশকে সৃষ্টি করিতে হইবে।’(১)
জেলখানায় নারী চরিত্রের অভিনেত্রী পাওয়া যাবে না বলে নাট্যকার নাটকে কোন নারী চরিত্র রাখেননি। কেবল নাটকীয় মুহূর্তে ‘ইন্সপেক্টর হাফিজ’ নামের একটি চরিত্র মাথায় চাদর টেনে নারীর অভিনয় করেন। নাট্যকার কোন নারী চরিত্র ছাড়াই জেলে বসেই লিখে ফেললেন এক অঙ্কের একটি নাটক- তখন হয়ত তিনিও ভাবতে পারেননি, বাংলাদেশের প্রথম কালজয়ী নাটক সৃষ্টি হয়ে গেছে এইমাত্র!
নাট্যকার এক অঙ্কের এই নাটক লিখে শেষ করেন ১৭ ফেব্রুয়ারি, যেটা ফণী চক্রবর্তীর নির্দেশনায় ২১ ফেব্রুয়ারি কারাগারের ওই সেলে অভিনীত হয়। এই ঘটনার বেশ কয়েক বছর পর নাট্যকারকে একবার একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল- জেলখানায় যখন অদূরেই অন্য কক্ষে নাটকটি প্রথমবারের মতন অভিনীত হচ্ছিল, তখন তাঁর মনে কী অনুভূতি হয়েছিল। নাট্যকার জবাব দিয়েছিলেন, “আমি নির্লিপ্ত ছিলাম, কেননা জেল এমন জায়গা যেখানে সব রকমের মানসিক উৎকণ্ঠাকে আয়ত্তে আনতে হয়।”(২)
এই নাটকটিই হলো ২১-এর অমর নাটক ‘কবর’- বাংলার ভাষা আন্দোলনের একমাত্র নাট্য দলিল!
২.
বেশ কয়েক বছর পরের কথা। নাট্যকার এখন বেশ বিখ্যাত ব্যক্তি। রীতিমত বাংলা নাট্যান্দোলনের প্রবাদপুরুষ। মৌলিক নাটকের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই আশ্চর্য সফলতা দেখিয়েছেন শেক্সপীয়ারের বাংলা অনুবাদে। ‘কেউ কিছু বলতে পারে না’, ‘রূপার কৌটা’, ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’, ‘বৈদেশিকী’- আরো বেশ কয়েকটা অসমাপ্ত নাট্যানুবাদ নিয়ে তাঁর অনুবাদ নাটকের রাজ্য।
নাট্যকার তখন বাংলা বিভাগের শিক্ষক। কারাগারে থাকতেই সঙ্গী কারাবন্দী অধ্যাপক অজিত গুহের কাছ থেকে প্রাচীন আর মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ঝালিয়ে নিয়েছিলেন ভালোভাবেই। বন্দী অবস্থাতেই ১৯৫৩ সালে বাংলায় এম,এ পরীক্ষা দেন, ফলাফলটাও সাংঘাতিক- একেবারে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান! কারামুক্ত হয়ে নাট্যকার প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন, পরে বাংলা বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ আবদুল হাই তাঁকে বাংলা বিভাগে নিয়ে আসেন চিরকালের জন্য। মুহাম্মদ আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বে যে বাংলা বিভাগ গড়ে ওঠে, সে সময়কালকে বলা হয় ‘বাংলা বিভাগের স্বর্ণযুগ’। মুহাম্মদ আবদুল হাই অকালে মৃত্যুবরণ করলে তাঁর দায়িত্ব বর্তায় নাট্যকারের ঘাড়েই।
এমনই এক সময়ের কথা। তখন টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হত শেক্সপীয়ারের কালজয়ী নাটক ‘টেমিং অফ দ্য শ্রু’ অবলম্বনে নাটক ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’, যার নাট্যরূপ দিয়েছিলেন নাট্যকার নিজেই। বিভাগীয় প্রধানের কক্ষেই বেলা বারটার দিকে কয়েকজনকে নিয়ে বসতেন নাট্যকার। আসতেন গোলাম মুস্তাফা, হাসান ইমাম, জিল্লুর রহমান খান, লায়লা হাসান- এঁরা সবাই ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’এর কুশীলব। নাট্যকার ‘মুখরা রমণী’র অনুবাদ নিয়ে আসতেন সাথে, পড়ে শোনাতেন অপূর্ব সরস ভঙ্গিতে, অভিনেতাদের নির্দেশনাও দিতেন- সবাই উপভোগ করত দারুণভাবে। নাট্যকার নির্দেশনা দিচ্ছেন- হয়ত তরুণ কোন সহকর্মীকে চোখে পড়লো, তাঁর হাতে পাণ্ডুলিপি ধরিয়ে দিয়ে বলে ফেললেন, “দেখ তো, বানান-টানানে ভুল আছে কিনা, আমি তো বানানে অত পারদর্শী নই!”(৩) বাংলা বিভাগের প্রধান বানান জানবেন না- তা কী করে হয়? আসলে বানান নিয়ে নির্মল কৌতুকেই তাঁর আনন্দ।
আরেক দিনের কথা। বাংলা বিভাগের এম,এ ক্লাস। নাট্যকার ক্লাসে ঢুকেই একটু অবাক হয়ে গেলেন- বাংলা ক্লাস, তাও পুরো রুম ছাত্রভর্তি! এতো ছাত্র তো পুরো এম,এ ক্লাসেই নেই! পড়ানোর বিষয়টাও বেশ কাঠখোট্টা- বঙ্কিম রচনাবলি আর বর্ণনামূলক ভাষাতত্ত্ব। কিন্তু তাতে কী, ছাত্রদের আগ্রহের কমতি নেই এতটুকুও- পড়াচ্ছেন যে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা শিক্ষক!
বঙ্কিম ছিলেন শেক্সপীয়ার দ্বারা প্রভাবিত, সেজন্যেই হয়ত তাঁর উপন্যাসগুলো রোমান্সে ভরপুর- শেক্সপীয়ারের নাটকের মতই নিখুঁত। সেই রোমান্স আর কল্পিত চরিত্রগুলোই নাট্যকার এমন অননুকরণীয় ভঙ্গিতে পড়াতেন যে ক্লাসে সম্মোহন সৃষ্টি হয়ে যেত। বঙ্কিমের উপন্যাসের নায়িকাদের রূপ বর্ণনায় পড়ুয়ারা এমনিতেই আমোদিত, তার ওপর কৌতুককর অংশে হাসির উতরোল, কখনো বিষাদিত অংশের বিষণ্ণতায় নাট্যকার পড়ুয়াদের দোলাতেন এদিক-ওদিক। সেই মোহের আকর্ষণে অন্য বিষয়ের ছাত্ররাও এসে ভীড় করত নাট্যকারের ক্লাসে। তাই তাঁর ক্লাসে ছাত্রসংখ্যার কখনো কমতি হয়নি!
উপস্থাপনা আর বক্তৃতায় নাট্যকার ছিলেন অতুলনীয়। সে সময় টেলিভিশনে সাহিত্য বিষয়ক একটা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন তিনি- যেটা দেখার জন্য টেলিভিশন সেটের সামনে ভীড় জমে যেত অচিরেই! নাট্যশিল্পী হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল- আর বক্তা হিসেবে খ্যাতি তো কিংবদন্তীতুল্য। তাঁর সম্পর্কে এমন কথাও প্রচলিত- এক বিতর্কসভায় তিনি একই বিষয়ে একবার পক্ষে বলে সেরা হলেন, আবার বিপক্ষে বলেও সেরা হলেন! সাহিত্যসভায় তিনি থাকলে অন্যদের আলোচনা ম্লান হয়ে যেত। কবি আবদুল কাদির তো সভার আগেই বলে রাখতেন, “ও মুনীর স্যার, আপনি কিন্তু পরে বলবেন, আমরা আগে বলে নিই। আপনি আগে বললে আমাদের কথা শোনার জন্য কোনো শ্রোতা থাকবে না!”(৩)
হ্যাঁ, কিংবদন্তীতুল্য এই নাট্যকারের নাম মুনীর চৌধুরী- ‘বাংলা বিভাগের স্বর্ণযুগের’ সেরা স্বর্ণপালক। একাধারে শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী- তাঁর পরিচয় দিতে শুরু করলে কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে, লেখা ফুরোবে না! বাংলা, ইংরেজি দুই বিষয়েই এম,এ ডিগ্রি ছিল তাঁর। মুনীর চৌধুরী কৌতুক করে বলতেন, “আমাদের বাড়িতে যেমন ইংরেজি পড়ার চল রয়েছে- আমরা পারলে একাধিক ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র হই!” শুধু মুনীরই নন, তাঁর অনুজা ফেরদৌসী মজুমদারেরও (রামেন্দু মজুমদারের স্ত্রী) বাংলা, আরবি- দুই বিষয়ে এম,এ ডিগ্রি ছিল!
বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান মুনীর চৌধুরীর নামকরণের কাহিনী বেশ মজার। তাঁর বড় ভাইয়ের জন্মের আগেই তাঁদের বাসার যে মৌলভী সাহেব, তিনি স্বপ্নে দেখলেন- বাড়ির গৃহিণীর ছেলের নাম হবে আবুল কালাম, নয়ত আবু নঈম। তাঁর বড় ভাই কবির চৌধুরীর পুরো নাম তাই ছিল আবুল কালাম মোহাম্মদ কবীর। আর মৌলভীর স্বপ্নের অন্য নামটি পেয়েছেন তিনি- তাঁর পুরো নাম আবু নঈম মোহাম্মদ মুনীর!
মুনীর ছোটবেলা থেকেই বেশ দুরন্ত ছিলেন, অগ্রজ অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর একদম উলটো। তাঁর চেয়ে বছর দুয়েকের বড় কবীর চৌধুরী ছিলেন ইংরেজির ছাত্র, অসাধারণ মেধাবী- পরীক্ষায় কখনো দ্বিতীয় হননি! মুনীর চৌধুরী রস করে বলতেন, “পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী পেতে চাইলে আমার ভাইয়ের পদ্ধতি অনুসরণ করো। উত্তরপত্রের প্রথমে একটু খালি জায়গা রাখবে মুখবন্ধ লেখার জন্য, তারপর একটি উদ্ধৃতি বসাবে, তারপর খালি জায়গা, তারপর উদ্ধৃতি। এখন তোমার কাজ তোমার লেখা শূন্যস্থান পূরণ করা, দেখবে, প্রথম শ্রেণীর চমৎকার উত্তর হয়ে যাবে!”(৩)
ছাত্রজীবনে পড়ুয়া হিসেবে বেশ নাম ছিল তাঁর। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়তে এসে তাঁর জীবন বাঁক নিল অন্যদিকে- নতুন পরিবেশ, পরিস্থিতি আর প্রেক্ষাপট, নতুন অভিজ্ঞতায় প্রতিভাদীপ্ত, তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন তরুণ ছেলেগুলো তাঁকে আকর্ষণ করলো। রবিগুহ, দেবপ্রসাদ, মদন বসাক, সরদার ফজলুল করিম- প্রত্যেকেই তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক একটি উজ্জ্বল মুখ। এসময়ই তিনি জড়িয়ে পড়েন বামপন্থী রাজনীতিতে। তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে রণেশ দাশগুপ্ত, অচ্যুত গোস্বামী, কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত প্রমুখ প্রগতিশীল রাজনীতিকদের সাথে।
১৯৫২ সালের কথা। মুনীর চৌধুরী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কমিউনিস্ট পার্টির প্রত্যক্ষ কার্যক্রম থেকে সরে এলেও অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলনেই তাঁর মৌন সমর্থন ছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি- মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে ছাত্র-শিক্ষক-জনতার মিছিল শুরু হয়েছে। হঠাৎ শুনতে পেলেন গুলির শব্দ, সাথে সাথে পাগলের মতন ছুটে গেলেন তিনি শব্দের উৎসের দিকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কায় পড়ে যান তিনি।এর পরের দিন ভাষা রক্ষার মিছিলে গুলিবর্ষণ আর হত্যার প্রতিবাদে প্রতিবাদসভার আহ্বান করা হয়েছিল- মুনীর চৌধুরী ছিলেন এ সভার প্রধান উদ্যোক্তা ও বক্তা। এই ঘটনায় তখনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর সরকারের বৈরী দৃষ্টিতে পড়লেন তিনি- ফলে ২৬ ফেব্রুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।(৪)
দিনাজপুর আর ঢাকা- দুই কারাগারে প্রায় তিন বছর জেল খেটেছেন তিনি। ঢাকা কারাগারে তাঁর পাশের সেলে ছিলেন রণেশ দাশগুপ্ত সহ ষাট- সত্তর জন কমিউনিস্ট। আর তিনি যে কক্ষে বন্দী ছিলেন, সেখানে অন্য রাজবন্দীদের মধ্যে ছিলেন মোজাফফর আহমদ, অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, অজিত গুহ, মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ আর শেখ মুজিবুর রহমান!
৩.
ডিসেম্বর মাস, ১৯৭১ সাল।
ভারত আর ভুটান বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। ঢাকার বাইরের পাকিস্তানি সব ঘাঁটি একে একে ভেঙে পড়ছে তাসের ঘরের মতন। বাংলার আকাশে মিত্রবাহিনীর বিমানের একচ্ছত্র আধিপত্য। ভারতীয় সেনাবাহিনীর চীফ অফ স্টাফ জেনারেল স্যাম মানেক শ’র আহবান ভারতীয় বেতারে প্রচারিত হচ্ছে একটু পর পরেই-
“আমার সৈন্যরা এখন ঢাকাকে ঘিরে ধরেছে এবং ঢাকার সেনানিবাস কামানের গোলার পাল্লার মধ্যে। আত্মসমর্পণ করুন। নিরাপত্তা ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার করা হবে।”
মুক্তিবাহিনী আর মিত্রবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে পর্যুদস্ত পাক হানাদার আর তাদের দোসররা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হানাদারমুক্ত হচ্ছে ক্রমশ। সবার চোখ স্বাধীন দেশের স্বপ্নে বিভোর। নতুন দেশ হবে- থাকবে নতুন মানচিত্র, নতুন পতাকা। স্বাধীন দেশের নাম বাংলাদেশ।
মুনীর চৌধুরী এখন থাকেন সেন্ট্রাল রোডের পৈত্রিক নিবাসে। বাড়ির নাম ‘দারুল আফিয়া’। এই ক’দিনে তাঁর জীবনেও এসেছে বিরাট পরিবর্তন। মুনীর চৌধুরীর খ্যাতি এখন দুনিয়াজোড়া। পাকিস্তান সরকার বাংলা বর্ণমালাকে রোমান হরফ দিয়ে প্রতিস্থাপনের চক্রান্ত করেছিল, আর তা বাস্তবায়ন করতে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন পরিচালক ডক্টর কাজী দীন মোহাম্মদের নেতৃত্বে বাংলা ভাষা ‘সংস্কারের’ জন্য একটি কমিটিও করেছিল। মুনীর চৌধুরী বাংলা ভাষালিপির এই বিকৃতি আর অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন, উদ্ভাবন করেন বাংলা টাইপরাইটারের জন্য উন্নতমানের কীবোর্ড- যার নাম ‘মুনীর অপটিমা।’ ‘An Illustrated Brochure on Bengali Typewriter (1965)’ শীর্ষক পুস্তিকায় তাঁর এই টাইপরাইটারের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করা হয়, যা ‘রেমিংটন র্যান্ড’ নামের মার্কিনি কোম্পানীর উদ্ভাবিত রোমান হরফের দাসত্বে বন্দী ‘বাংলা টাইপরাইটার’ থেকে মুক্ত করে বাংলা ভাষালিপিকে।(৫)
১৯৬৯ সালে মুহাম্মদ আবদুল হাইয়ের অকাল প্রয়াণে মুনীর বাংলা বিভাগের হাল ধরেছিলেন, তার কিছুদিন পরেই ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যান একটা ভাষাতাত্ত্বিক সম্মেলনে যোগ দিতে। ১৯৭১ সালে যখন দেশে ফিরে এলেন, তখন যুদ্ধ চলছে পুরোদমে। অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বর্জন করলেন সরকার প্রদত্ত ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ খেতাব। দেশের সংকটপূর্ণ অবস্থায় দুইবার তাঁকে দুই অনুষদের হাল ধরতে হল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে।
মুনীর চৌধুরী তখন কলা অনুষদের ডীন। পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান মুনীর চৌধুরীকে সতর্কবার্তা পাঠালেন- তিনি যেন রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজে জড়িত না হন। স্ত্রী লিলি চৌধুরী আর তিন ছেলে ভাষণ, মিশুক, তন্ময়কে নিয়ে তিনি তখন ফুলার রোডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন। চিঠি হাতে পেয়ে মুনীর চৌধুরী ভাবলেন বেশ কিছুক্ষণ, তারপর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য চলে আসলেন সেন্ট্রাল রোডের বাসায়।
১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১। বেলা এগারটা। ‘দারুল আফিয়া’য় নিজের বিছানায় শুয়ে রেডিও শুনছিলেন মুনীর চৌধুরী। যুদ্ধের খবর খুশির দোলা দিয়ে গেল তাঁর হৃদয়ে- দেশ স্বাধীন হতে বোধহয় আর খুব বেশি দেরি নেই!
সাড়ে এগারটার দিকে রেডিও রেখে উঠে বসলেন মুনীর। গোসল করতে যাবেন। মা’কে ডেকে বললেন, ভাত বাড়তে। তাঁর তাড়াহুড়া ইঙ্গিত দিচ্ছিল, হয়ত গোসল সেরে কোথাও যাবেন। মা ভাত বেড়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন ছেলের জন্য, ছেলের সাথেই খাবেন তিনি।
গোসল সেরে কাপড় বদলালেন মুনীর চৌধুরী। গোসলের পানি এখনো শুকায়নি গা থেকে। গেঞ্জি পরে নেমে এলেন নিচতলায়, মা’র সাথে ভাত খাবেন। মা ছেলের জন্য ভাত বেড়ে রেখেছেন আগেই, গরম ধোঁয়া উঠছে ভাতের থালা থেকে। এমনই সময় একটা জীপ এসে থামল ‘দারুল আফিয়া’র গেটে। জীপ থেকে নামল পাঁচ-ছ’জন আরোহী- বেশির ভাগেরই মুখ ঢাকা কালো কাপড়ে। অনুমতির তোয়াক্কা না করে তারা ঢুকে পড়ল বাড়িতে।
“আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। আমাদের কমান্ডার আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন।” একজন আরোহী এসে দাঁড়াল মুনীর চৌধুরীর সামনে। কেমন যেন একটা শঙ্কা, আতঙ্ক ছুঁয়ে গেল পরিবারের সবার মধ্যে। মা এসে আড়াল করতে চাইলেন ছেলেকে, কালো কাপড়ে মুখ বাঁধা আরোহী যেন তাঁকে ভরসা দিতে চাইল, “আপনি মিছিমিছি ভয় পাচ্ছেন, ঠাকুমা। কথা সেরেই উনি চলে আসবেন। আমরাই তো দিয়ে যাবো।”
মুনীর চৌধুরীর পরনে ছিল লুঙ্গি-গেঞ্জি, তিনি কাপড় বদলাতে চাইলে একজন বলে উঠল, “আপনাকে কিছুই বদলাতে হবেনা। আপনি যাবেন, আর আসবেন।” এ কথা শুনে আর আপত্তি করলেন না মুনীর চৌধুরী, জীপে উঠে পড়লেন অচেনা আরোহীদের সাথে। পিছনে পড়ে রইল বাড়া ভাত, আর অপেক্ষমাণ মা।
আর ফিরে আসেননি তিনি। নীলনকশা অনুযায়ী আলবদর বাহিনী মুনীর চৌধুরীকে আগেই রেখে দিয়েছিল ‘খরচা’র লিস্টে- বাংলার আরো অনেক নক্ষত্রের মতন তাঁকেও হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে, এমনকি তাঁর লাশটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।(৬) লাল-সবুজের এই নক্ষত্র হারিয়ে গিয়েও যেন চিরজাজ্বল্যমান হয়ে রইলেন লাল-সবুজ মাটিতেই!
“এখন বিজয়ানন্দে হাসছে আমার বাংলাদেশ
লাল চেলী গায়ে, কী উদ্দাম। গমগমে
রাস্তাগুলো সারাক্ষণ উজ্জ্বল বুদ্বুদময়। শুধু আপনাকে,
হ্যাঁ, আপনাকে মুনীর ভাই,
ডাইনে অথবা বাঁয়ে, কোথাও পাচ্ছি না খুঁজে আজ।
আপনার গলার চিহ্নিত স্বর কেন
এ শহরে প্রকাশ্য উৎসবে
শুনতে পাব না আর? সেই চেনা স্বর?”(৭)
তথ্যসূত্রঃ
১. ‘কবর’ নাটক- মুনীর চৌধুরী
২. ‘কবর’ প্রবন্ধ- রামেন্দু মজুমদার
৩. ‘আমার শিক্ষক মুনীর চৌধুরী’- আহসান কবির, প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি, ২০১২
৪. ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিকথা’- বশীর আল হেলাল, আগামী প্রকাশনী
৫. ‘একুশের চাওয়া একুশের পাওয়াঃ মুনীর কী-বোর্ড’- মোস্তফা জব্বার, প্রথম আলো, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১২
৬. ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ’- রশীদ হায়দার সম্পাদিত, বাংলা একাডেমী
৭. ‘রক্তাক্ত প্রান্তরে (১৯৭২)’- শামসুর রাহমান
[গল্প যাকে নিয়ে, নেট ঘেঁটে তাঁর একটা সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্তও তৈরি করেছি আমি- যে কেউ সেটা আমার কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন নির্দ্বিধায়!]
মারাত্মক পরিশ্রম করেছ বুঝাই যাচ্ছে। খুবই উপভোগ্য হয়েছে।
তবে গল্পের শুরুটা যতটা গল্প ছিল, পরের দিকটা ততটাই ইতিহাস হয়ে গেছে।
ইতিহাস আর গল্প এক সুতোয় বাঁধা অনেক পরিশ্রমের কাজ। এবং তোমাকে দিয়ে আসলেই হবে!
এই রকম লেখা আরও চাই 😀
অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া 🙂
শেষের দিকে পুরোটাই ইতিহাস হয়ে গেছে- আমি নিজে যতবার লেখাটা পড়েছি, ততবার এই ব্যপারটা আমাকে খুঁচিয়েছে। এক সময় ভেবেছিলাম, লেখা বাদ দেই- পরে চিন্তা করলাম, নাহ- প্রথমবার তো- ইতিহাস থেকে নিয়ে লিখিনি আগে, ভুলভ্রান্তি হবেই। আস্তে আস্তে বড়দের পরামর্শে শুধ্রে নেবো 🙂
আমার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে একটা সিরিজ করার ইচ্ছে- আপনারা আশীর্বাদ দিলে এই রকম লেখা চলবে ইনশাআল্লাহ 🙂
পরের গল্পগুলো যেন গল্পই থাকে, সত্যি ইতিহাসের আড়ালে- সেই চেষ্টা থাকবে 🙂
প্রিয়তে নিলাম ভাইয়া, এভাবে সব ইতিহাস গদ্যে-পদ্যে উঠে আসা উচিৎ। মানুষ সুধু তথ্যভান্ডার না সাথে আরও অনেক কিছু জানতে চায়। তোমার লেখাটা অনেকটা সেইরকমের।
আর ‘কবর’ নাটক প্রসঙ্গে বলব এমন নাট আজ অবধি তৈরী হয়নি। কত ছোট অথচ কত সুন্দর ভাবেই না ফুটিয়ে তুলেছিলেন সব কিছু। আর মুর্দা ফকিরের কথা এখনও মনে পড়লে মনে হয় প্রতিবাদ করা তো তার কাছ থেকে শেখাই যায়।
:huzur: :dhisya:
একদম ঠিক কথা, অক্ষর 🙂
জীবনী অনেকেই পড়তে চায় না- ইতিহাসকে যদি সুপাঠ্য গল্প-উপন্যাসের আকারে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে নতুন প্রজন্মের অনেকেই আগ্রহী হবে দেশের প্রতি, দেশের ইতিহাসের প্রতি, ঠিক যেমনটা আমি হয়েছি কৈশোরে 🙂
আমার এই লেখাটা পুরোপুরি গল্প হয়নাই- পরবর্তীতে চেষ্টা থাকবে সুপাঠ্য করার 🙂
অসাধারণ! অসাধারণ!
এত বড় লেখা সাধারণত পড়া হয় না, প্রথম কয়েক প্যারা পড়ে স্কিপ করে চলে যায়, কিন্তু তোর লেখাটার গাঁথুনি এতো প্রাঞ্জল হয়েছে যে এক নিঃশ্বাসে পুরোটা পড়ে ফেলেছি! পরিশ্রম করে লেখা, পড়েই বুঝা যায়! উঁচুমানের আরও অনেক অনেক লেখা আশা করি তোর কাছে!
বড় লেখা হয়ে যাওয়াতে স্কিপ হয়ে যাওয়ার ভয়টা ছিল আমার, দোস্ত- পরবর্তীতে খেয়াল রাখবো 🙂
তোর ভালো লেগেছে জেনে খুশি লাগছে- চেষ্টা করব। দোয়া রাখিস 🙂
প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ে গেল কলেজের মুখতার স্যারের কথা। ক্লাসে মুনীর স্যারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি! মুখতার স্যার মুনীর চৌধুরীর সরাসরি ছাত্র ছিলেন। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় সাক্ষাৎকারও দিয়েছিলেন মুনীর স্যারের কাছেই। ভীষণ শ্রদ্ধা করতেন, আর দশজন ছাত্রের মতই!
স্বাধীনতার পূর্বমুহূর্তে যখন খবর পেলেন স্যারের নিখোঁজ হওয়ার কথা, দিশেহারা হয়ে গেলেন সেই ব্যাচের ছাত্ররা! মুখতার স্যার বলেছেন, আমরা রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে প্রতিদিন যেতাম, লাশের স্তুপ উলটে পালটে মুনীর স্যারকে খুঁজতাম! টিকতে পারতাম না, বমি করে দিতাম, অসুস্থ হয়ে যেতাম, পরদিন আবার যেতাম! স্যারকে আর পাইনি। বলে চোখ মুছেছেন তিনি, স্যারকে সেই একবারই কাঁদতে দেখেছি, নিজেও চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। আসলে স্বাধীনতার এত বছর পর আমাদের আবেগ অনেকটাই যান্ত্রিক, মুখতার স্যারের মত যাঁরা উনার সরাসরি সংস্পর্শে ছিলেন তাঁদের আবেগ অন্য রকম!
অসাধারণ লেখার জন্য ধন্যবাদ!
:love:
🙁
এত সুন্দর করে লিখেছো ভাইয়া, পড়তে খুব ভাল লাগলো। বড় পোস্ট, কিন্তু একদম ক্লান্ত হই নি!
তথ্যসূত্র কিন্তু আরও সহজভাবে দেয়া যেত। টিউটোরিয়ালে গিয়ে দেখো, ফুটনোট কীভাবে দিতে হয়। 😀
অনেক ধন্যবাদ, আপু 😀
অনেক বড় একটা উপকার হলো- এখুনি টিউটোরিয়াল চেক করছি 🙂
অনেকদিন ধরে তোমার কোন লেখা চোখে পড়ে নি। তারপর এটা……
অনেক কষ্ট করে লিখেছ এবং অসাধারণ একটা লেখার জন্ম হয়েছে। মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে এতো চমৎকার করে লেখা কোন কিছু আমি আগে পড়ি নি………
ভাইয়া, অনেকদিন লিখিনি সরবে- এর একটা কারণ অবশ্যি আলসেমি, আরেকটা কারণ- তাড়াহুড়ো করে লিখতে পারিনা আমি 🙁 সময় নিয়ে লিখতে পারলে আনন্দ লাগে- নিজের লেখা আগে নিজেই পড়ি বেশ ক’বার- তারপর ভালো লাগলে অন্যদেরকে দেখাই। অনেক গল্প- কবিতা নিজের ভালো না লাগার কারণে খাতায়- কম্পিউটারে পড়ে আছে, কাউকে দেখানো হয়নি 😳
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, এত্ত সুন্দর কমপ্লিমেন্টের জন্য 🙂
দোয়া রাখবেন 🙂
তোমার জন্য দোয়া থাকলো।
নিয়মিত লিখতে থাকো। অনেক ভালো লেখক হবার ক্ষমতা তোমার আছে। আর, যত লিখতে থাকতে, ততই কিন্তু তোমার তীক্ষ্ণতা বাড়বে। 😀
থ্যাঙ্কু, ভাইয়া 🙂
চেষ্টা থাকবে 🙂
দুর্দান্ত লিখা, অসাধারণ গাঁথুনি, চোখ বুলাতে যেয়ে আটকে গেলাম! লিখা পড়েই বোঝা যায় বেশ পরিশ্রম করে লিখেছো! অনেক কিছু জানতাম না, কিংবা ধোঁয়াশায় ছিলো, নতুন করে জানলাম……
অনবদ্য লিখা……
ইশ, এতোটা খাটনি যদি একটা লিখার পিছেও দিতে পারতাম! ভীষণ আইলসা আমি!! 🙁
অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া 🙂
চেষ্টা করেছি সত্য ইতিহাস ধরে রাখতে 🙂
আমিও অনেক আইলসা, ভাইয়া- কিন্তু মাঝে মাঝে কীভাবে জানি কিছু কিছু লেখা শেষ হয়ে যায় 😀
দোয়া রাখবেন 🙂
খুবই সুন্দর লেখা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আপনি কষ্ট করে এই লেখাটা লেখার জন্য। অনেক কিছু জানলাম নতুন করে
পড়বার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ 🙂
মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়েছি। অনেক কষ্ট করে লিখেছেন। এজন্য কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো, বুঝে উঠতে পারছি না। :huzur:
বাংলা নাটকে (আমার মতে) একমাত্র কালপুরুষের ব্যাপারে অনেক নতুন কিছু জানলাম। রোমান হরফের ব্যাপারটা এতটা জানতাম না। জেনে অবাক হলাম। রুষ্ট হলাম। :haturi:
ভাই, মুনীর স্যারের বিখ্যাত বক্তৃতা আর লেখার কোন কালেকশান কি আছে? জানাবেন 🙂
পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ 🙂
অনেক কথা বলতে পারিনি, ভাইয়া- গল্পের আমেজটা ধরে রাখতে চেয়েছিলাম বলে। জীবনী হয়ে যেত নাহলে, আকারেও বেশ বড় হয়ে যেত। 😐 রোমান হরফে বাংলা অক্ষর পালটে ফেলার ব্যপারটা বেশ সাংঘাতিক- কীবোর্ডে রোমান হরফের আদলে বসানো ইংরেজি হরফের জায়গায় বাংলা অক্ষর বসাতে গিয়ে অনেক বর্ণ- যুক্তবর্ণের জায়গা হয়নি; হবার কথাও না। সব ভাষারই নিজস্ব স্বকীয়তা থাকে। পাকিস্তান সরকার জায়গা না হওয়া সেই সব অক্ষরকে একেবারে ছেঁটে ফেলতে চেয়েছিল! মুনীর চৌধুরী কেবল ‘অপটিমা’ উদ্ভাবনই করেননি- বাংলা একাডেমীর রিপোর্টের প্রতিবাদ করে প্রবন্ধ লেখেন- ইংরেজিতেও ছাপা হয়েছিল তার কয়েকটা।
মুনীর চৌধুরীকে নিয়ে যখন পড়াশুনা শুরু করলাম- তখন উনার ক্লাস কিংবা বক্তৃতার কথাবার্তা অনেক খুঁজেছি। আমারই দুর্ভাগ্য হয়ত- তেমন কিছু পাইনি, যেখানে জহির রায়হান কিংবা আলতাফ মাহমুদকে নিয়ে এমনকি ভিডিও পাওয়া যাবে ইউটিউবে। 😐 উনার ছাত্রদের সাক্ষাৎকার দেখতে পারেন- আমি একটার খোঁজ দিচ্ছি। প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি, ২০১২-তে ছাপা হওয়া আহসান কবিরের লেখা।
লেখার কালেকশান- ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমী থেকে আনিসুজ্জামানের সম্পাদনায় চার খণ্ডে মুনীর চৌধুরী রচনাবলী প্রকাশিত হয়। প্রথম খণ্ডে (১৯৮২) মৌলিক নাট্যকর্ম, দ্বিতীয় খণ্ডে (১৯৮৪) অনুবাদমূলক নাট্যকর্ম, তৃতীয় খণ্ডে (১৯৮৪) সমালোচনামূলক গ্রন্থাবলি এবং চতুর্থ খণ্ডে (১৯৮৬) ছোট-গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক সমালোচনা ও আত্মকথনমূলক রচনা প্রকাশিত হয়। সবকয়টিই কিন্তু সংগ্রহে রাখার মতন।
ভালো থাকবেন 🙂
আরেকটা বিষয়- এক সময়ের বাংলা কাঁপানো বাংলা লেখার সফটওয়্যার ‘বিজয়’ এর সূত্রপাত কিন্তু ‘মুনীর অপটিমা’ থেকেই, মোস্তফা জব্বারই স্বীকার করে নিয়েছেন সেটা 🙂
নিলয় তোকে আমি কী বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
পড়ছি তো পড়ছি, পড়েই গেছি।
এতটুকু স্কিপ করে যেতে পারি নি।
শেষ পর্যন্ত এসে গায়ে কাটা দিয়ে উঠল, চোখে জল চলে এল।
প্রিয়তে নিতে বাধ্য হলাম।
লিখে যা ভাই, কোনরকম সাহায্য লাগলে এই আপুটাকে সবসময় পাশে পাবি ইনশাআল্লাহ।
একটাই দুঃখ, জাদুর মত এই লেখাটা অনেক দেরিতে পড়লাম।
এত্ত, এত্ত ভালোবাসা তোমার জন্য, আপু 🙂
তোমরা পাশে থাকলে আর কী চাই? 🙂
আরো লিখবো ইনশাআল্লাহ।
অসাধারণ গাঁথুনীর লেখা! ইতিহাস আর গল্প এক করা আসলে অনেক কঠিন একটা কাজ। একেবারেই ক্লান্তি আসে নি পড়তে গিয়ে।
অন্যায়ের সাথে আপোষহীন মুনীর স্যারের প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধা ।
পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 🙂
the best post ever:-)
অসংখ্য ধন্যবাদ, পড়বার জন্য 🙂