সে বহু বছর আগের কথা। এক ছিল রাজা, সেই রাজার ছিল এক রাজকন্যা। রাজকন্যার মনে শান্তি নেই। কারন তার বুড়ো বাপ রাজাটা সারাক্ষণ নানা ফন্দি করে বিভিন্ন রাজ্যের রাজপুত্রদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়, আর ঘোষণা দেয় যে তার কাজ করে দিতে পারবে তাকে দেয়া হবে অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা। রাজকন্যা এই ঘোষণা শুনে রাজার সাথে প্রতিদিন চেচামেচি করে, বলে-
তোমার এত শখ তোমার আর্ধেক রাজত্ব বিলিয়ে দাও, তাতে আবার আমাকে টানছো কেন?
রাজা বলেন, আহা খেপছিস কেন? তোর কি ধারনা রাজপুত্ররা কেউ সফল হবে? যে কাজ দিচ্ছি তাতে সবমিলিয়ে তিনটা কাজ থাকে, প্রথম দুইটাতে আমার খুব লাভ হয় রে! রাজ্যের লোকগুলো তো আলসে, জমি চাষটাও ঠিকভাবে করে না। দেখলি না, গতবছর কলাবতী রাজ্যের রাজপুত্রকে দিয়ে রাজ্যের দখিন অংশটার পুরো হালচাষ করিয়ে নিলাম। কী সুন্দর হালচাষই না করলো ছেলেটা। ওটাতে যে গম ফলল তাই দিয়ে তো এখনো রাজ্যের সবাই খাচ্ছে। তার আগের বছর পঞ্চবটী রাজ্যের সাথে ঝামেলা লাগার পর এক রাজপুত্রকে দিয়ে পরীখা খুড়িয়ে নিলাম,তার আগের বছর…
আর তিন নম্বর কাজটা সবার জন্য একই থাকে? তাই না? রাজকন্যা রাজাকে থামিয়ে ঠান্ডাস্বরে বলল।
হ্যাঁ মা, তুইতো জানিস ই। বারো হাত কাকুড়ের তের হাত বীজ, সেটা পাওয়া যায় মরীচিকা বনে। সেটা আনতে গিয়ে কেউ ফেরত আসে না।
তুমি একটা খুনী আর শয়তান! রাজকন্যা চেচিয়ে বলে।
ছি মা, অমন করে বাপের সাথে কেউ কথা বলে।
খবর্দার, আর কোন ঘোষণায় আমাকে সম্প্রদান করার কথা বলবে না, তাহলে কিন্তু কিছু একটা হয়ে যাবে! নিজের মেয়েকে বেঁচে খাচ্ছিস, বুড়ো ধাবড়া কোথাকার!
রাজকন্যার এসব কথাতেও কাজ হয় না, রাজা রাজপুত্রদের দিয়ে কাজ করিয়ে করিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছিল।
একদিন, এক অঘটন ঘটে গেল। সুবর্ণপুর রাজ্যের রাজপুত্র কীভাবে যেন বারো হাত কাকুড়ের তের হাত এক বীজ নিয়ে চলে আসলো।
রাজা তো পড়ে গেলেন বিপদে, অর্ধেক রাজত্বের কিছু বেশি দিতে চাইলেন, কিন্তু রাজকন্যার কথা ভুলে যেতে বললেন। কিন্তু রাজপুত্র তা মানবে কেন, সে রাজার সাথে হম্বিতম্বি শুরু করলো। অন্দরমহল থেকে তাই শুনে রাজকন্যা একটা তলোয়ার নিয়ে এসে এক কোপে সুবর্ণপুর রাজ্যের রাজপুত্রের মাথাটা কেটে ফেলল।
কী ভয়ংকর! এতক্ষণ পর বিলু, কালু আর গিলু চমকে বলে উঠলো।
গুরুৎ বলল, ভয়ংকর ব্যাপার তো শুরুই হয় নি।
কিন্তু রাজপুত্রকে মারবার পরই রাজকন্যা তার ভুল বুঝতে পারলো, সে বুঝতে পারলো রাজপুত্রের তো কোন দোষ ছিল না। দোষ তার বাবার। এ দৃশ্য দেখে রাজা শয্যাশায়ী হলেন, আর রাজকন্যা আফসোসে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সাতদিন সাতরাত কাঁদতে কাঁদতে রাজপুরী ভিজিয়ে ফেললেন চোখের পানিতে। কোনদিন পাখির পালকটুকুও ছিড়লো না যে, সে মারলো এক নির্দোষ রাজপুত্রকে, এ দু:খে রাজকন্যা প্রায় পাগল হয়ে গেল।
এমন সময় সেই রাজ্যে গিয়ে হাজির হই আমি।
ব্যাপার শুনে আমি সরাসরি রাজকন্যার কাছে গিয়ে বলি,
মহামান্যা রাজকন্যা,
চোখের জলে করছো বন্যা
রাজ্য তোমার ভেসেই যাবে
লোকজন তবু হেসেই যাবে
পাবে না কারো সমবেদনা
বলছি উপায় আর কেঁদনা
রাজকন্যা ঝাঁঝ দেখিয়ে বলল, কারো সমবেদনা আমার চাই না। তবে উপায় বল?
আমি বললাম-
বলো যদি এক সূত্র
বাঁচবে রাজপুত্র
রাজকন্যা বলল-অমন ছন্দ করে ঢং করে কথা বলো না, পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।
আমি বিব্রত হয়ে বললাম, যে রাজ্যে এতদিন ছিলাম, তারা সব মিলিয়ে মিলিয়ে কথা বলে তো অভ্যাস হয়ে গেছে। যাইহোক, ব্যাপার হল আমি বাঁচাতে পারি রাজপুত্রকে, তবে তার বিনিময়ে দিতে হবে এমন এক তথ্য-যা তুমি ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ জানে না এ মুহূর্তে।
শুনে রাজকন্যার মুখ শুকিয়ে গেল। কারন আমি কি জানতে চাইছি সেটা সে বুঝে ফেলল।
আমার রূপের রহস্য?
আমি বলতে চেয়েছিলাম, শুনে পাইলো অট্টহাস্য, কিন্তু ছন্দ মিলে যায় বলে সেটা আর না বলে বললাম, রাজকন্যা, তুমি কথা পেঁচিয়ো না, তুমি এমন কিছু সুন্দরী না। আর তুমি মুখের ছুলি ঢাকতে কয়টা পদ্মফুলবাটা মুখে লাগাও তা জেনে কী ঘন্টাটা হবে ! তোমার জন্য যে রাজপুত্ররা আসতো তারাও সে গোপন তথ্যের জন্যই তোমার বাবার প্রস্তাবে রাজী হত। তাদের সবার রাজ্যেই ঢের ঢের সুন্দরী ছিল। আর অর্ধেক রাজত্বের কারো দরকার ছিল না। সবারই দরকার ছিল সে তথ্যের সন্ধান।
রাজকন্যা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আর এ মানসিক তাড়না সহ্য করতে পারছি না। এই আহাম্মক রাজপুত্রকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে দাও। আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে জিনিস তুমি খুঁজতে এসেছো সেটা পাইয়ে দেব।
কী খুঁজতে এসেছিলে? বিলু প্রশ্ন না করে পারে না।
সেটা তোদের বলবো কেন? তবে এমন কিছু যেটা সবাই খুঁজছে। কেউ ভাবে সেটা নেহাতই গালগল্প, কেউ ভাবে সেটা থাকলেও কোন কাজ হবে না। মোদ্দা কথা, সেটা যে কী সেটা অনেকেই জানে না, কী না জেনেই মানুষ হন্যে হয়ে খুঁজছে সেটা।
কী আজব কথা!
আজব তো বটেই। এমনকি আমিও তাই খুঁজতে এসেছিলাম। তাই সুবর্ণপুর রাজ্যের রাজপুত্রের মাথা আর ধর একসাথে করে আমার সাথের অমৃত রস ঢেলে দেই যতটুকু ছিল, আমার আবার বেশিদিন বাঁচবার শখ নেই, তাই অমৃত রসটার মায়া করলাম না।
অমৃত রস?
হ্যা, সেটা যোগাড় করা এক বিরাট ঝক্কি, সে গল্প এখন বলতে পারবো না। তো রাজপুত্র মরণ দশা থেকে জীবিত হয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে গেল। তার অর্ধেক রাজত্ব কী রাজকন্যা দুটোরই শখ উবে গেল।
এদিকে রাজকন্যা আমাকে বলল, সে গুপ্ত জিনিসের সন্ধান সে মুখে দিতে পারবে না, তার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে। তবে যখন তখন গেলে হবে না। যেতে হবে ‘পূর্ণচন্দ্র মধ্যরাতে’!
পূর্ণচন্দ্র হতে তখন আরো দিন তিনেক বাকী ছিল। রাজকন্যার অনুরোধ করলো তার আতিথ্য গ্রহণ করে তিনদিনের জন্য রাজ্যে যেন থেকে যাই।
কিন্তু আমি তো বসে থাকার পাত্র নই, তিনদিন শুয়ে বসে থাকার চেয়ে মরণ ভালো, তাই আমি রাজকন্যাকে বললাম, সে ঠিক আছে- তবে রাজপ্রাসাদের গদিমোড়া আর কার্পেটে ঢাকা জায়গায় থাকলে আমার গা গুলিয়ে উঠবে তিনদিনে, তারচেয়ে আমি তোমার রাজ্যের পাশের যে বন আছে, তাতে শিকারে চলে যাই, রোজ রাত্রে রাজ্যে ফিরে এসে বুনো হরিণ ঝলসে খাব। তুমি তোমার বনরক্ষীদের বলে দিও প্রাণের ভয় থাকলে আমাকে যেন না ঘাটায়।
তাই ঠিক হল।
সারাদিন বনে ঘুরে ঘুরে এটা ওটা শিকার করে রাত্রে রাজ্যে গিয়ে প্রজাদের নিয়ে হরিণ ঝলসে খাচ্ছিলাম। কিন্তু ঠিক তিন নম্বর দিনে একটা ব্যাপার ঘটলো।
কী ব্যাপার? বিলু কালু আর গিলুর যেন তর সইছে না।
খুব আগ্রহ হচ্ছে।
হ্যাঁ।
আচ্ছা, তবে এক কাজ কর, অনেক ক্ষণ ধরে তোদের সাথে বকতে বকতে ঘাড়টা কেমন ম্যাজ ম্যাজ করছে। তোরা দুইজনা ঘাড়টা একটু টিপে দেয়, তারপর বলছি বাকীটুকু।
বিলু কালু তাই করলো।
খানিকপরে গুরুৎ বলল, যা হয়েছে। আবার শুরু করি।
তো তিন নম্বর দিনে বনের এক জায়গায় গিয়ে শুনি কে যেন ঘষছে।
ঘষছে?
হ্যাঁ, তলোয়ার ঘষছে কেউ পাথরে। তলোয়ার ধার করার জন্য অমন করে ঘষতে হয়। আমি ভাবলাম, এই নির্জন বনে আবার কে রে? তলোয়ার ধার করছে! কাছে গিয়ে দেখি সেই সুবর্ণপুরের রাজপুত্র। চুল উস্কোখুস্কো, কাপড় চোপড় ধুলো মাখা।
আমি অবাক হয়ে কাছে গিয়ে বললাম,
রাজপুত্র তুমি না রাজ্যে ফিরে গেছো? এখানে আবার কী করছো।
সে বলল, না শুধু বলল না, কেমন যেন দাঁত মুখ খিচিয়ে বিচিত্র ভঙ্গি করে বলল, গিয়েছিলামই তো, আবার ফিরে এসেছি। তোর আর রাজকন্যার মাথাটা কেটে নিয়ে যেতে ভুলে গেছিলাম তো, তাই আবার ফিরে এসেছি!
এমন করে বলল?
হ্যাঁ, শুনে আমি তো তাজ্জব হয়ে গেলাম, মাথা টাথা বিগড়ে গেল কিনা ভেবে বসলাম।
তারপরে বললে বিশ্বাস করবি না, সেই আধা ধার করা তরোয়াল নিয়ে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমিও ছেড়ে কথা কইবো কেন? কুড়াল বের করে লড়াই শুরু করলাম। তবে রাজপুত্র কিছু কম বীর ছিল না। তাই লড়াই চললো অনেক্ষণ। কখনো আমি প্রায় জিতে যাই, পরক্ষণে রাজপুত্র গা ঝাড়া দিয়ে আমাকে ধরাশায়ী করে ফেলে। এইভাবে চলছিল তো চলছিল। পরে আর কি? একসময় আমার মেজাজটা খুব চড়ে গেল। কুড়ালের এক কোপে ওর আধা ধার করা তলোয়ারটা কেটে ফেললাম। তারপর রাজপুত্রকে ধরে মাথার উপর তুলে দিলাম এক আছাড়। সেই আছাড়ে রাজপুত্র মনে হল ধরাশায়ী হল। উচিত ছিল তখন কুড়াল দিয়ে ধর থেকে ওর মাথাটা কেটে ঝামেলা শেষ করে দেয়া। কিন্তু যাকে মাত্র তিনদিন আগেই এতগুলো অমৃত রস খরচা করে বাঁচিয়েছি তাকে আবার মারতে কেন যেন ইচ্ছা করলো না। তাই বুনো লতা পাতা দিয়ে ওর হাত পা বেঁধে নিলাম, ভাবলাম নিয়ে গিয়ে ওর রাজ্যে ফেরত দিয়ে আসবো।
অতক্ষণ লড়াই করে আমিও কিছুটা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তাই বাঁধাছাদা শেষ করে, পাশের একটা গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে আমি একটু বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করলাম। ভাবলাম খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রওনা দেব।
বিশ্রাম নিচ্ছি, বিশ্রাম নিচ্ছি এমন সময় একটা ঘটনা ঘটলো।
কী হলো? বিলু, কালু আবারও জিজ্ঞেস করলো।
খুব আগ্রহ হচ্ছে, তাই না? গুরুৎ আবার চোখ উজ্জ্বল করে বলল।
এবার কোথায় ম্যাজ ম্যাজ করছে? বিলু কালু বিরস মুখে জিজ্ঞেস করলো।
ডানহাত আর বামপা টা, বলে গুরুৎ চোখ বুজলো।
খনিক পরে গুরুৎ আবার শুরু করলো,
তো হল কি, বিশ্রাম নিতে নিতে কখন যেন আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমাচ্ছি ঘুমাচ্ছি হঠাৎ-
এক তলোয়ারের খোঁচা খেয়ে জেগে উঠলাম।
রাজপুত্র বাঁধন খুলে ফেলেছে?
আরে না না, অত কাঁচা হাতের বাঁধন নাকি চাইলেই খুলে ফেলবে। দেখি বিশাল এক সৈন্যবাহিনী। এক সৈন্য তার তলোয়ার দিয়ে আমাকে খোঁচা মেরেছে।
আমি চোখ খোলার সাথে সাথে আরো দুইজন এসে আমার হাত পা বেঁধে ফেলল। আমি কিছু করতে পারছিলাম না, কারন আমার কুড়ালটা তখন তিনচার হাত দূরে মাটিতে পড়ে আছে, সৈন্যরা প্রথমেই পা দিয়ে ওটাকে সরিয়ে রেখেছে। না হলে ব্যাটাদের বুঝিয়ে ছাড়তাম কাকে খোঁচা মেরেছে।
এরা কারা, রাজপুত্রের সৈনিক?
না না, এরাই ছিল কনকপুর রাজ্যের সৈনিক!
মানে আমাদের সৈনিক?বিলু বলে উঠে।
হ্যাঁ, তোর বোকা বাপটা সেদিন আবার বিহারে বের হয়েছিল সৈন্যসামন্ত নিয়ে, শুনলাম সেদিন রাণীর এক সন্তান হয়েছে, তাই রীতি অনুযায়ী রাজাকে বিহারে বের হয়ে কোন এক পশু শিকার করে ফিরতে হবে।
মানে সেদিন আমি জন্মেছিলাম?
তোর বয়স দশ?
হ্যাঁ!
তাহলে তুইই হবি। তারমানে তোর জন্মদিনে আমি তোর বাপের হাতে বন্দী হই। ভারী অপয়া দেখছি তুই। সেদিন না জন্মালে হয়তো এই দুর্ঘটনাটা ঘটতোই না।
আমার কী দোষ? সেটাতে আমার কি হাত ছিল?
তা ঠিক, সে যাই হোক, ঘটনা হল, সেই আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন তোর বাপ এসে দেখে আমি একজনকে হাতপা বেঁধে ফেলে রেখেছি। আর তোর বাপও এমন বোকা, দেখেই ভাবলো ওই বাঁধা রাজপুত্র সোনার টুকরা ভালো ছেলে, আমি বোধহয় বদমাইশ। চিন্তা ভাবনার গভীরতা না থাকলে যা হয়, আহাম্মক কোথাকার!
খবরদার বাবাকে নিয়ে বাজে বকবে না! বিলু ঝাঁঝিয়ে উঠে।
আচ্ছা ঠিক আছে যা, অবশ্য তোর বাপেরই একলা দোষ না। তোর বাপের দলবল দেখার সাথে সাথে অপদার্থ রাজপুত্রটা নাকি কান্না শুরু করেছিল আমি নাকি ডাকাত এই বলে। তাই তোর বাপের যাচাই করার ফুসরত ছিল না। সে রাজপুত্রকে বাঁধন খুলে দিল, আর আমাকে ধরে নিয়ে এসে তোদের রাজকারাগারে শেকল দিয়ে আটকে রাখলো।
তোমার কুড়াল?
সেটা ওখানেই পড়ে রইলো, কেউ তো জানতো না কুড়াল যে বিশেষ কিছু,ওটা যার হাতে থাকে তাকে কেউ হারাতে পারে না।
তাহলে এটা এলাচ গাছের নীচে আসলো কীভাবে?
খুব আগ্রহ হচ্ছে? গুরুৎ আবার চোখ নাচিয়ে বলল।
এবার বাম হাত আর ডান পা।
বিলু আর কালুর কাজ শেষ হলে গুরুৎ আবার শুরু করলো,
আমাকে যখন বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে তখন আমি বুদ্ধি করে একটা কাজ করলাম। ব্যাপার হল, আমি যখন বিশ্রাম করি তখন একটা এলাচ ফল মুখে নিয়ে চিবাতে থাকি, এ অভ্যাসটা হয়েছে আমার শিংহল রাজ্য থেকে ফিরবার পর থেকে। ওখানে এক বিশেষ ধরনের এলাচ গাছ রয়েছে, সাধারণ এলাচ গাছের মত না, সাধারণ এলাচ গাছ দেখবি ছোটখাট ঝুপড়ি মত, সেটা বিশাল বৃক্ষ। কেমন যে সেটা তো দেখতেই পেলি। সেটার ফলের স্বাদ একবার নিলে আজীবন মুখে লেগে রয়। তো আমাকে যখন টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি মুখের এলাচ ফলটা ছুড়ে মারি কুড়ালটা যেখানে সেই মাটিতে। মনে মনে ভাবি, ভাগ্য ভাল থাকলে একদিন এখানে এলাচ গাছ গজাবেই। আর একবার যদি গজায় তবে নাকটা ভাল থাকলেই খুঁজে বের করতে পারবো।
তাহলে এভাবেই খুঁজে পেলে কুড়াল।
হ্যাঁ, দারুন বুদ্ধি খাটিয়েছি না?
বিলু আর কালু তার জবাব দিল না, গিলুও নিশ্চুপ রইলো।
এবার তোরাই বল কে অকৃতজ্ঞ? আমি না রাজপুত্র, যাকে প্রাণে বাঁচালাম সেই কিনা আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ধরিয়ে দিল!
ওরা সবাই মাথা নাড়লো, আসলেই সুবর্ণপুরের রাজপুত্র বড্ড অকৃতজ্ঞ আর ছোটলোক।
কিন্তু সুবর্ণপুরের রাজপুত্রের কী হল, গুপ্ত জিনিসের সন্ধানদাতা রাজকন্যারই বা কী হল? ওরা জিজ্ঞেস করলো।
গুরুৎ বলল, সেই প্রশ্ন তোদের মত আমারো মনে, সেই অকৃতজ্ঞ রাজপুত্রের তো রাজকন্যার মাথা কাটতে যাওয়ার কথা, সফল হয়েছে কিনা কে জানে! নাকি সে গুপ্ত জিনিসই সে নিয়ে নিয়েছে রাজকন্যাকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে? সব কিছুরই উত্তর মিলবে খানিক পরে। মণিমালার রাজ্যে যাওয়ার পরই।
মণিমালা কে?
ও মা, সারারাত গল্প শুনে শেষে এই প্রশ্ন? মণিমালা সে রাজকন্যাই তো।
তুমি নাম না বললে আমরা জানবো কীভাবে?
নাম এতক্ষণ বলি নি না! গুরুৎ চিন্তিত মুখে বলল, এটা মনে হয় গল্প বলার একটা ভঙ্গি। সে যাক হোক, তাহলে তোরা থাক। আমি গেলাম মণিমালার রাজ্যে।
আমরা তো পথ চিনবো না, তাছাড়া আমাদেরও খুব আগ্রহ হচ্ছে মণিমালার কী হল সেটা জানতে!
আরে ধুর, পথ চিনে ফেলবি, তোদের মিছিমিছি ভয় দেখাচ্ছিলাম, পথ খুব সোজা, চাঁদটা পিছনে রেখে হাঁটা দিবি, সোজা কনকপুর পৌঁছে যাবি। তোদের সাথে নিলে ঝক্কি হবে খুব!
আমরা তোমার গা-হাত-পা টিপে দেব, নাও না আমাদের! বিলু বলল।
ঘুমিয়ে পড়লে পাহাড়া দেব, নাও আমাদের। কালু বলল।
গিলুও শুড় তুলে কিছু বলল, বোঝা গেল না ভাল মত।
গুরুৎ হতাশভঙ্গিতে খানিকক্ষণ চেয়ে রইলো ওদের দিকে। ওরাও করুন চোখে তাকিয়ে রইলো গুরুতের দিকে।
আচ্ছা, ঠিক আছে। তবে শুনে রাখ, আমি যেভাবে বলবো ঠিক সেভাবে চলবি, উল্টাপাল্টা হলেই ঘচাৎ- কুড়াল দিয়ে মাথা কেটে নেব।
ঠিকাছে! ওরা সমস্বরে হই হই করে বলল।
আর কোথাও মারামারি করতে গিয়ে যদি কেউ প্রাণে মারা পড়িস, আমার কিন্তু দোষ নেই।
ঠিকাছে! ওদের হইহই থামে না।
গুরুৎ তারপর ওর কুড়ালটা পিঠে বেঁধে নিয়ে রওনা দিল মণিমালা রাজকন্যার রাজ্য অভিমুখে।
পিছু পিছু চলল রাজকুমার বিলু, সহিসপুত্র কালু আর দাঁতছাড়া গিলু।
(চলবে)
পড়লুম। 😀 😀
শুরুর দিকে বানান ভুল আছে কিছু। 🙂
এরপর থেকে আশা করি এরকম তাড়াতাড়িই পাবো পর্বগুলি। :penguindance:
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ 🙂
খবর্দার, আর কোন ঘোষণায় আমাকে সম্প্রদান করার কথা বলবে না, তাহলে কিন্তু কিছু একটা হয়ে যাবে! নিজের মেয়েকে বেঁচে খাচ্ছিস, বুড়ো ধাবড়া কোথাকার!
এই কথাগুলো কি রূপকথায় থাকা উচিৎ?
চমৎকার চলছে গল্প 😀
চলতে থাকুক
রূপকথা টাইপ কিছু লিখতেছি ব্যাপারটা আসলে মনে থাকে না 😛 , শেষ পর্যন্ত বাচ্চাদের গল্প থাকবে কিনা বুঝতে পারছি না, কারন বাচ্চাদের এই গল্পের পরবর্তী টুইস্টগুলা ধরতে পারবে কিনা কে জানে :thinking:
সে যাই হোক, ভাইনাল ভার্সনের জন্য আপনার এই কমেন্টের মত কিছু কমেন্ট খুব হেল্প করবে। 🙂
:happy:
আবারও পরের পর্বের অপেক্ষায়।
থ্যাংকু আপু 🙂
এই পর্বটা বেশ হয়েছে 🙂
পর্ব তিন- চার এক রকম, প্রথম দুই পর্ব অন্যরকম একটু।
সব পর্ব একত্র করার সময় এই দিকটা একটু দেখবেন, ভাইয়া। নাহলে খাপছাড়া লাগতে পারে, একসাথে পড়তে গেলে।
‘ভেন্ট্রিলোকুইস্ট’ পড়ার পর থেকে আপনার ফ্যান, তাই অসামঞ্জস্য চোখে পড়লে বলতে বাধ্য হই 🙂
গল্প চলুক 🙂
লেখার ক্ষেত্রে গ্যাপ পড়ে গেছে এজন্য হতে পারে 😳
কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, ফাইনাল করার সময় কাজে লাগবে 🙂