তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়
সেকি মোর অপরাধ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী
বলে না তো কিছু চাঁদ।।
চেয়ে’ চেয়ে’ দেখি ফোটে যবে ফুল
ফুল বলে না তো সে আমার ভুল
মেঘ হেরি’ ঝুরে’ চাতকিনী
মেঘ করে না তো প্রতিবাদ।।
জানে সূর্যেরে পাবে না
তবু অবুঝ সূর্যমুখী
চেয়ে’ চেয়ে’ দেখে তার দেবতারে
দেখিয়াই সে যে সুখী।।
হেরিতে তোমার রূপ-মনোহর
পেয়েছি এ আঁখি, ওগো সুন্দর।
মিটিতে দাও হে প্রিয়তম মোর
নয়নের সেই সাধ।।
বহুকাল আগে আত্মীয়ার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে অখ্যাত এক লেখকের বই পড়েছিলাম। বইয়ের ভাষ্যে, মানুষের সৌন্দর্য দু’রকম – অর্জিত সৌন্দর্য আর অর্পিত সৌন্দর্য। জন্মগত/দৈহিক সৌন্দর্য হচ্ছে অর্পিত; আর সৌন্দর্য অর্জিত হয় যখন কোন মানুষ নিজে থেকে সুন্দর চালচলন, সুন্দর গুণের চর্চা করে, তাতে সফলও হয়।
“প্রথমে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারি”– এই আপাত পক্ষপাতদুষ্ট কথাটার যত বিরোধিতাই আমরা মুখে মুখে করি না কেন, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কে ‘অর্পিত সৌন্দর্যের’ অনিবার্য প্রভাব অস্বীকার করার জো নেই কারোর পক্ষেই।
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়/ সেকি মোর অপরাধ?
“Don’t judge a book by it’s cover.” – কথাটা নিঃসন্দেহে সত্যি। তবে মানুষের শত হাজার বছর ধরে বিবর্তিত এই মন একসময়কার শিকারি-সংগ্রাহক জীবনেরই সভ্য রূপ, ‘সভ্যতা’ যেই মনের কাছে প্রায় আনকোরা শব্দই বলা যায়। পৃথিবীতে থাকতে শুরু করা থেকে আজ পর্যন্ত এই বিশাল সময়ের প্রায় ৯৯% জুড়েই আমরা হয় ভবঘুরে হয়ে শিকার করে বেড়াতাম; নয়তো বুনো ফল, শাকসব্জি আর বাদাম সংগ্রহ করতাম জীবিকার তাগিদে। সেসময় বাইরের চেহারা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল; চেহারা দেখেই বুঝতাম কোন্ ফল পাকা আর খাওয়া যাবে, আর কোন্টা পচে বাদামি হয়ে গেছে বলে ফেলে দিতে হবে। তবে এই উপায় মানুষের বেলায় খাটাতে হবে সেটা কিন্তু বলছি না! চেহারা দেখে মানুষের চরিত্র সম্পর্কে ধারণা করা নিশ্চিত বোকামি, তবে কারো বয়স কিংবা স্বাস্থ্য বিচার করা যায় বাইরের রূপ দেখে। অবশ্য সৌন্দর্যের (সেটা প্রকৃতির হোক কি মানুষের) ধোঁকায় পড়াও অসম্ভব কিছু নয়, বরং মানুষের ইতিহাসে এরকম ঘটনা চাইলে অনেক খুঁজে পাওয়া যাবে। সুন্দর ফল খেতে গিয়ে হয়তো দেখা গেল সেটা বিষাক্ত, সুন্দর মানুষের কাছে গিয়ে দেখা গেল ভেতরটায় ঘুটঘুটে অন্ধকার।
মানুষের সৌন্দর্যপ্রীতির স্বভাবটা প্রশ্নাতীত। সুন্দর যে কোন কিছু দেখলেই আমরা মুগ্ধ হই – সেটা জীবন্ত হোক কি প্রাণহীন! এই প্রীতি আবার ক্ষেত্রবিশেষে অতিপ্রীতিতে রূপ নেয়, তখন শুরু হয় বৈষম্যের। অনেক সময় দেখা যায় নিজের অজান্তেই আমরা সুন্দর মানুষের প্রতি পক্ষপাত করে বসছি।
গবেষণায় দেখা গেছে, তিন মাসের একটা বাচ্চাও দুটো মুখের মধ্যে যেটা বেশি আকর্ষণীয় সেদিকেই বেশিক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকে ((http://news.bbc.co.uk/2/hi/science/nature/3631018.stm))! আমাদের সৌন্দর্যপ্রীতি যে জন্মগত, এর ওপর পরিবেশ কিংবা সংস্কৃতির প্রভাব যে অল্প সেটা বোঝা যায় এ থেকেই।
The Ugliness of Beauty
ছোট বাচ্চাদেরকে সাধারণত আমাদের চোখে অসম্ভব রকম সুন্দর আর আদুরে লাগে, যে-ই বাচ্চা এমনিতেই সুন্দর তাকে আরও বেশি সুন্দর লাগে। এমন কি সবচেয়ে সুন্দর বাচ্চাদের মায়েরাও নাকি বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে আর তার সাথে কথা বলে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় কাটায়, অন্যদিকে অসুন্দর বাচ্চারা অনেক সময়েই অবহেলার স্বীকার হয়। চিরন্তন নিঃস্বার্থ মায়ের ভালবাসাতেও কলুষতা ডেকে আনে সৌন্দর্য।
সুন্দরের প্রতি আমাদের এই অন্যায্য আকর্ষণকে আমার কাছে মনে হয় মানুষ হিসেবে একরকম পরীক্ষা। মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলার কারণ – মানুষের মধ্যে ভাল আর খারাপ দু’রকম প্রবৃত্তিই আছে। যদি মন্দটাকে দমিয়ে ভাল গুণগুলোর চর্চা করতে পারি তাহলে আমরা ফেরেশতা/দেবদূত/angelদেরকেও(যাদের কোন খারাপ প্রবৃত্তি থাকে না) ছাড়িয়ে যেতে পারবো, আবার খারাপ যদি কাবু করে ফেলে তবে আমাদের পক্ষে শয়তানের(যার কিনা পুরোটাই মন্দ) চেয়েও নিচে নেমে যাওয়া সম্ভব। এখন আমরা কি সুন্দরকে দেখে চোখ বুজে তার পেছনে ছুটবো, সুন্দর-অসুন্দরে বৈষম্য করবো; নাকি প্রবৃত্তির রাশ টেনে ধরে বিচার-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনের রূপ খুঁজে বের করবো – সে সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে।
Beauty is in the Eyes of the Beholder
কথাটা ভুল নয়, কিন্তু তারপরেও একেক সমাজে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা একেক রকম। যেমন আমাদের এখানে ফর্সা হওয়া মানেই সুন্দরের মাপকাঠিতে অনেকখানি এগিয়ে যাওয়া। কেউ কেউ অস্বীকার করতে পারেন, কিন্তু আশেপাশে তাকালে দেখা যাবে আমরা সচরাচর যাদেরকে সুন্দর বলি তারা বেশির ভাগই ফর্সা। ফেইসবুক প্রোফাইলে আমরা অনেকেই ছোট বাচ্চাদের ছবি দিয়ে রাখি, যাদের প্রায় সবাই সুন্দর, দুঃখজনকভাবে ফর্সাও বটে।
ছোট চিবুক, পাতলা চোয়াল, গালের উঁচু হাড়, ফোলা ফোলা ঠোঁট, ছড়ানো হাসি আর বড় চোখের মেয়েদেরকে বেশিরভাগ সমাজেই সুন্দর বলা হয়। আবার ছেলেদের শক্ত চিবুক আর মোটা ভুরু শক্তি আর কর্তৃত্ব নির্দেশ করে, সেই সাথে আর্থিক নিশ্চয়তাও (শক্তিশালী মানুষ>বেশি কাজ>বেশি রোজগার)! লম্বা ছেলেদের প্রতি মেয়েদের আকৃষ্ট হওয়ার পেছনের সুপ্ত কারণও এটাই। অন্যদিকে কিছুটা মেয়েলি চেহারার ছেলেদেরকেও সুন্দর ভাবা হয়, এরা সন্তানের দিকে আগ্রহী হবে এই আশায়। এমন না যে সচেতনভাবেই চিন্তা করা হয়, ঐ ছেলেটা লম্বা বলে তার ওপর আমি নির্ভর করতে পারবো কিংবা এই মেয়েটা আকর্ষণীয় বলে সে সন্তান জন্ম দিতে পারদর্শী হবে – বরং অবচেতন মন হিসাব কষে, সচেতন মন সে অনুযায়ী চলে নিজের অজ্ঞাতসারেই।
চেহারার প্রতিসমতা যার যত বেশি, সে দেখতে তত সুন্দর। মানুষের শরীরের ডান আর বাম দিক সাধারণত পুরোপুরি এক/প্রতিসম হয় না। বয়স বাড়তে থাকলে কিংবা স্বাস্থ্য খারাপ হলে প্রতিসমতাও কমতে থাকে।
সৌন্দর্য হচ্ছে শক্তি!
‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’র বিজ্ঞাপনে এই কথাটা যতবার শুনি, প্রতিবারই নতুন করে হাসি পায়। তারপরেও ভাবতে বসি – কথাটা কি আসলেই সত্যি? কিংবা ‘সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র’ – এই কথাটা?
“বুদ্ধি, বংশ, সৌন্দর্য আর সম্পদ – জন্মসূত্রে পাওয়া এই চারটা উপহারের মধ্যে একমাত্র সৌন্দর্যই পারে পরশে বন্ধ দুয়ার খুলে দিতে। চাকরির ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে পার্টিতে ডাইনিং টেবিলে সবার আগে জায়গা দেওয়া, অফিসে পদোন্নতি কিংবা গাড়িতে লিফ্ট দিতে – সবখানেই নারী হোক কিংবা পুরুষ, যে কেউ কোন বিশেষ লিঙ্গের প্রতি তার আকর্ষণ নির্বিশেষে সুন্দর মুখকে অগ্রাধিকার দেবে। আর অন্য যে কারো চাইতে সুন্দর মানুষেরা এটা ভালভাবে জানেও বটে। নিজেদের এই ক্ষমতাকে তারা একই সাথে শ্রদ্ধা করে, মেনেও নেয়।”
– জুলিয়ান ফেলোস (স্নব্স)
সুন্দর মানুষেরা ভুল করে ছাড়া পেয়ে যায় তুলনামূলক সহজভাবেই, ‘অন্যায্য’ সব সুযোগও পায় জীবনে ((http://www.amazon.com/Survival-Prettiest-The-Science-Beauty/dp/0385479425))। জীবনের অন্য অনেক ক্ষেত্রের মত বিয়ের সময় সঙ্গী নির্বাচনেও বাড়তি সব সুবিধা থাকে তাদের জন্য। পাণিপ্রার্থীর লম্বা লাইন থেকে পছন্দমত মানুষকে বেছে নিলেই হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি তাদের বিবাহিত জীবনও অপেক্ষাকৃত সুখের হয়? মিডিয়ার দিকে তাকালে তো দেখা যায়, সেখানে সুন্দর মানুষের প্রাচুর্য যতটা, বিয়ে টিকে থাকার হার যেন ততটাই কম। এর উত্তর খুঁজতে গেলে আরেকটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মনে – এমন কি হতে পারে যে সৌন্দর্য নিজেই এর একটা কারণ? সম্পর্ক গড়ে তোলার চেয়ে ভেঙে দিতেই এটা বেশি তৎপর?
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, জীবনে তীব্র মানসিক আঘাত সয়েছে এমন মানুষেরা যেমন নিষ্ঠুর আর সঙ্গীকে নির্যাতন করে এরকম লোকের কাঙ্ক্ষিত হয়; ঠিক তেমনি সুন্দর মানুষেরা যাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, দেখা যায় যে তারা অনেক সময়েই এমন কেউ হয় যে ভালবাসা আর শ্রদ্ধাভরা সম্পর্কের চাইতে সঙ্গীর সাথে শারীরিক কিংবা আর্থিক লেনদেনেই বেশি আগ্রহী, অথবা ভেতরের নিচুতাকে ঢাকার জন্য বাইরের চাকচিক্য ধরে রাখতে চায় (সুন্দর সঙ্গী সেজন্যই প্রয়োজন), মানুষকে ‘মানুষ’ ভাবার চাইতে ‘সম্পত্তি’ ভাবতেই বেশি পছন্দ করে, কিংবা একের পর এক সঙ্গী বদল করে আরও বেশি সুন্দর কারো পেছনে ছোটে।
রুটি-মদ ফুরিয়ে যাবে/ প্রিয়ার কালো চোখ বিবর্ণ হয়ে যাবে
এক মনোবিজ্ঞানীর লেখায় পড়ছিলাম, তার সাথে একবার প্লেনে এক জুটির দেখা। তিনি নবদম্পতিদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করছেন জেনে বিপুল উৎসাহে তারা তাঁকে নিজেদের প্রেমের গল্প শোনাতে শুরু করলো। খুবই তাড়াহুড়োয় বিয়ে হয়েছে তাদের, দেখা হওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই একে অন্যের প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেছে। কেন মেয়েটার প্রেমে পড়লো, এই প্রশ্নের উত্তরে ছেলেটার সহজ স্বীকারোক্তি, “ওর মত ‘হট’ ((পড়ুন ‘আবেদনময়ী’)) মেয়ে আমি জীবনেও দেখি নি।” পাশে বসা সুন্দরীর মুখও খুশিতে ঝলমল করে উঠলো এ কথা শুনে।
সঙ্গিনী খুশি হলেও কথাটা আসলে ভয়-ধরানো। আজ ছেলেটা সঙ্গিনীর যেই ‘হটনেস’ দেখে মুগ্ধ হয়েছে, মেয়েটার ৬০ বছর বয়সেও কি সে এই একই আবেদন ধরে রাখতে পারবে? না পারার সম্ভাবনাই বেশি, তাহলে তখন এই ঠুনকো আসক্তির জায়গা কোথায় হবে? কিংবা যদি ধরেও নিই, শরীরচর্চা বা রূপসচেতনতা অথবা কোন আশ্চর্য জাদুবলে ৬০ বছর বয়সেও মেয়েটার কোন পরিবর্তন হল না, তারপরেও নিশ্চয়তা কী যে – ছেলেটা আজ ওকে যে কারণে ভালবাসে, সে কারণটা অন্য কেউ এসে ভুলিয়ে দিলে (অর্থাৎ এই মেয়ের চেয়েও সুন্দর কাউকে ছেলেটা সঙ্গিনী হিসেবে পাওয়ার সুযোগ পেলে) সে তাকে একইরকম ভালবাসবে?
“যে কোন শারীরিক কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাতন্ত্র্যেরই একটা সর্বনাশা দিক থাকে। এজন্য চারপাশের মানুষদের থেকে আলাদা না হওয়াই আমাদের জন্য ভালো। অসুন্দর আর বোকারা অনেক স্বস্তিতে থাকে; জয়ের স্বাদ না পেলেও, তাদেরকে অন্তত পরাজয়ের গ্লানি ভোগ করতে হয় না। তারা অন্যের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে না, আবার কারো কাছ থেকে এর শিকারও হয় না। তোমার সম্মান-প্রতিপত্তি; আমার প্রতিভা, আমার শিল্প; ডোরিয়ান গ্রে-র সৌন্দর্য – আমরা যা পেয়েছি তার জন্য আমাদের সবাইকেই ভীষণরকম কষ্ট ভোগ করতে হবে।”
– অস্কার ওয়াইল্ড (দ্য পিকচার অফ ডোরিয়ান গ্রে)
সুন্দর মানুষদের নিরাপত্তাহীনতার ভয়ও প্রবল হয় অনেক ক্ষেত্রেই। কাছের মানুষটা কি তাকে আসলেই ভালবাসে, নাকি কেবল তার বাইরের রূপটাকে ভালবাসে – এ নিয়ে সংশয় কাজ করে। অনেক সম্পদের মালিক হলে যেমন নিজের শুভাকাঙ্ক্ষী আর সুযোগসন্ধানীদের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে, অনেকটা সেরকম। আবার চারপাশের অনেকে তখন নিজেদের সঙ্গীকে সুন্দর মানুষটার কাছে হারানোর ভয়ে থাকে, তাই তাদের সাথে সম্পর্কও খারাপ হয়ে যায়।
না চাইতেই অনেক সুযোগ-সুবিধা আর প্রশংসা পায় বলে মনে হতে পারে, নতুন নতুন কাজে সুন্দর মানুষদের আত্মবিশ্বাসও হয়তো বেশি হয়। ব্যাপারটা আসলে ঠিক উল্টো; জীবনে কোন কিছু অর্জন করতে হলে যে সংগ্রাম করতে হয়, নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়, বঞ্চিত হলে সেই কষ্ট সামলে ওঠার জন্য যে মানসিক শক্তি থাকতে হয় – তার তেমন অভিজ্ঞতা হয় না তাদের। সুন্দর মানুষদের ব্যক্তিত্ব তাই অনেক সময়েই ঠিকভাবে গড়ে ওঠে না, সাধনা করার মানসিকতা থাকে না। ((Abbott, A.R. and Sebastian, R.J. (1981). “Physical attractiveness and expectations of success.” Personality and Social Psychology Bulletin, 7, 481-486.)) আমি নিজেই এমন অনেক মানুষকে দেখেছি, যারা চাইলে জীবনে অনেক কিছু করতে পারতো, কিন্তু জন্ম থেকেই ‘তুমি সুন্দর তাই তুমি সেরা’ – নিজের প্রতি সমাজের এরকম মনোভাব দেখতে দেখতে নিজে অর্থপূর্ণ কিছু করার চেষ্টা তো করেই নি, এর প্রয়োজনই মনে করে নি।
এর পরিণতি হিসেবে সুন্দর মানুষদেরকে প্রায়ই জেদী হতে দেখা যায়, পছন্দের জিনিসটা না পেলে তা মেনে নিতে কিংবা মানুষের সাথে মানিয়ে চলতে যুদ্ধ করতে হয় তখন। একগুঁয়েমির জন্য কাছের মানুষের ভালবাসাও হারাতে হয়।
সৌন্দর্যের পথ ধরে অহঙ্কারও শেকড় গেড়ে বসে মনে। তাতে সঙ্গীর আকাঙ্ক্ষার বস্তু যতটা হওয়া যায়, চাইলেও তখন ভালবাসা আর শ্রদ্ধা পাওয়া ততটাই কঠিন হয়ে ওঠে।
এত এত নেতিবাচক কথার মানে এই না যে সৌন্দর্য কাউকে সমাজে অচল করে দেয়। তাছাড়া এগুলো সবই গবেষণার ফলাফল, ব্যতিক্রম থাকতেই পারে – আর অন্তত এই একটা ব্যাপারে ব্যতিক্রমই কাম্য। একই সাথে সুন্দর, গুণী, নিরহঙ্কার, বিবাহিত জীবনে সুখী এমন মানুষও চারপাশে দেখা যায় – সংখ্যা যাই হোক। মনোবিজ্ঞানের আলোকে এসব কেবল সুন্দর আর সৌন্দর্যপ্রীতির সাধারণীকৃত বর্ণনা।
আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতাটা দিয়ে শেষ করছি –
If thou must love me, let it be for nought
Except for love’s sake only. Do not say
‘I love her for her smile—her look—her way
Of speaking gently,—…
For these things in themselves, Beloved, may
Be changed, or change for thee,—and love, so wrought,
May be unwrought so…– Elizabeth Barrett Browning
সুন্দর না? 🙂
তথ্যসূত্র ((এই লেখার বিষয়বস্তু যা, সেটা নিয়ে আমার আগ্রহ অনেক পুরনো আর অনেক গভীর। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একবারই কেবল ‘ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ’ কোর্স পেয়েছিলাম। কোর্সের এক স্যারকে বেশ ভাল লাগতো, স্যার একদিন ‘হিউম্যান বিউটি’ নামে একটা আর্টিক্ল ক্লাসে এনে আমাদেরকে বললেন সামারি লিখতে। আমার লেখা সামারিটা স্যার খুব পছন্দ করেছিলেন, আর আমারও স্যারের দেওয়া সেই আর্টিক্ল এত বেশি ভাল লেগেছিল যে কয়েক বছর পরও সেটা আমার টেবিলের ড্রয়ারেই আছে এখনো। সেই আর্টিক্ল, নিজের অভিজ্ঞতা আর ‘সাইকোলজি টুডে’তে প্রকাশিত Shauna Springerএর ‘Can Beauty Hurt Your Odds of Having a Good Marriage?’ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে এই লেখা।))
অসাধারণ !!! 🙂
তোকে এতদিন পর দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম। :love:
😀
শুধু প্রিয়তেই নিলাম না, পেজটা বুকমার্কও করে রাখলাম 😀 নিজের খ্যাতনেস নিয়ে মন খারাপ হলে লেখাটা আরেকবার পড়ার জন্য!
অসংখ্য ধন্যবাদ! :huzur:
তোমাকেও! 😀
অসাধারণ লেখা- আমার পড়া আপনার সেরা লেখা 😀
কী সুন্দর করে খুব সত্যি কিছু কথা বলে ফেললেন!
hats off! :huzur:
অনেক ধন্যবাদ নিলয়। 🙂
প্রিয়তে নিলাম ! আর সৌন্দর্যই শেষ কথা নয়।
আমি মুগ্ধ !
:love: :huzur: :huzur: :babymonkey:
“সৌন্দর্যই শেষ কথা নয়।” – সেটাই! 🙂
দারুণ লেখা, দারুণভাবে সাজানো।
ছন্দার লেখাটাও পাঠকের পড়া উচিৎ। ওই লেখার পাঠকেরও এইটা পড়া উচিৎ!
🙂
ছন্দা’পির লেখাটা এখন অনেকটা রেফারেন্সের মতন হয়ে গেছে আমার জন্য। এই বিষয়ে কথা উঠলেই আপুর লেখাটা সাজেস্ট করি পড়ার জন্য 🙂
সহমত!
সুন্দর মানুষের ভালো কাজের প্রতি উদাসীনতা চোখে পড়ার মত। তবে এইভাবে ব্যাপারটা ভেবে দেখিনি। এখন মনে হচ্ছে আসলেইতো, এই কারণেই অনেকের মধ্যে নিজেকে আরো উন্নত করার তাগিদটা বেশ কম।
খুব ভালো লাগলো পড়ে 😀
ব্লগে দোস্ত লেভেলের মানুষজনের কমেন্ট দেখলে দেখি পৈশাচিক টাইপ আনন্দ হয়। 😛
:love:
কই কই, আরেকজনের না কমেন্ট করার কথা তারটাতো দেখতেছি না! 8)
এতো অসাধারণ করে গুছিয়ে লিখাটা পড়ে কী বলবো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি……
আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ডে কিন্তু অনেক কিছুই আস্তে আস্তে করে পালটে ফেলে আমাদের, আজকের আমি আর ১০ বছর আগের আমি’র মাঝে অনেকটাই তফাৎ, কিন্তু সেই তফাৎটা ভালো দিকে হলেই আমার মানুষ হবার পথে আরেকটু এগিয়ে যাওয়া, এইরকম লিখাগুলো সেই ভুল করে চলে আসা নষ্ট অনেক ভাবনাকে দূরে ঠেলে দেয়……
দুর্দান্ত! :dhisya:
ধুত ভুল জায়গায় রিপ্লাই দিয়ে ফেললাম। :wallbash:
গুছিয়ে লেখাটা কিন্তু আপনাদের কাছ থেকেই শিখছি। 🙂 এটা লেখার সময় সরবে ফিনিক্স পাখির প্রথম পোস্টটা দেখে নিছিলাম প্রেজেন্টেশন শেখার জন্য। সরবে অনেকেই রিসার্চ করে পোস্ট লেখে, তাদের দেখে অনুপ্রেরিত!
“আজকের আমি আর ১০ বছর আগের আমি’র মাঝে অনেকটাই তফাৎ, কিন্তু সেই তফাৎটা ভালো দিকে হলেই আমার মানুষ হবার পথে আরেকটু এগিয়ে যাওয়া” – অসাধারণ সত্যি একটা কথা বলেছেন ভাইয়া।
কে যেন খুব দুঃখ করে সেদিন এমন একটা কথা বলছিল যে সে নাকি রিসার্চ করে লিখতে পারে না! কথাটা রেকর্ড করে রাখা উচিত ছিল, মনে হচ্ছে। 8)
ব্রাউনিং এর কবিতা ভালো পাইলাম। রিসার্চ করে লেখা পোস্ট ভালো পাইলাম।
তবে ব্যাপার হল, বাচ্চারা তো আমাকে খুবই পছন্দ করে। তুই নিজেই চোখের সামনে দেখলি কয়েকদিন আগে। অনেকের ভেতর আমাকে পছন্দ করার কারণ কী? আমি তো মোটেও সুন্দর না! :thinking:
😛
বাচ্চারা সুন্দর মানুষদের পছন্দ করে সেটা কিন্তু বলা হয় নাই। সুন্দরদের দিকে বেশিক্ষণ তাকায় থাকে সেটা বলা হইছে। 🙂
তাকায় থাকা আর পছন্দ করা তো আলাদা জিনিস।
আরেকটা জিনিস – এই ধরনের পোস্ট লেখার জন্য তোমার পোস্টগুলা খুব সাহায্য করছে কিন্তু! উপরেই লিখছি একজনের মন্তব্যের উত্তরে। নিজে নিজে তো পারতাম না। 🙂
শব্দটা ‘তোমার’ না হয়ে ‘তোমাদের’ হবে মনে হয়। 😛
নিজে নিজে অবশ্যই পারতি। শুধু মনে হচ্ছে যে পারতি না। কিন্তু সব মনে হওয়া তো সবসময় সত্যি হয় না। 🙂
তাহলে বাচ্চারা আমার দিকে না তাকিয়েই মানে চোখ বন্ধ করে আমাকে পছন্দ করে- তোর সূত্র অনুযায়ী। 😛
শেষ কথাটা কৌতুক করে বলছো ধরে নিয়ে আর কিছু বললাম না। 🙂
দারুণ বিশ্লেষণ! চমৎকার লেগেছে……
একটু মত প্রকাশ করি– আমার কাছে সবসময়-ই মনে হয় শিক্ষা’ খুবই, খুবই না, বরঞ্চ সবচে’ দরকারী জিনিস। এটা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না, এমন শিক্ষা যা আমাদের মূল্যবোধ-নীতি-নৈতিকতাকে শাণিত করবে। একজন সত্যিকার অর্থে শিক্ষিত মানুষ প্রচলিত এই সৌন্দর্যকে অহেতুক প্রায়োরিটি দেবে না, আবার নিজে এই সৌন্দর্যের অধিকারী হলে অহংকার বা অন্য যেই সমস্যাগুলো উল্লেখ করেছো, সেগুলোতে ভুগবে না।
আমার সবসময়ই পরিবারকে সবচে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনে হয়, পরিবারে বাচ্চাকে যখন তার অর্পিত সৌন্দর্য সম্পর্কে অতি সচেতন করে তোলাহয়, সৌন্দর্যের নেতিবাচক দিকগুলো ধীরে ধীরে তার মাঝে প্রবেশ করে আরো।
তাছাড়া, ইভ্যালুয়েশনের যথাযথ মানদন্ড সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব-ও আমাদের বদলে দেয় অনেকখানি……
বাই দ্যা ওয়ে, বহুদিন পর লগইন করলাম তোমার লেখা পড়ে। দারূন সাজানো লেখা, আর এমন রিসার্চ করে লেখার ইচ্ছে হচ্ছে আমারো… 🙂
আমারও মনে হয় একটা মানুষের শিক্ষা কতটা ভালো হয়েছে সেটা বোঝা যায় সে অর্জিত সৌন্দর্য্যের চেয়ে অর্পিত সৌন্দর্য্যকে কত বেশি গুরুত্ব দিত্ব পারে-সেটা দেখে।
আপনাদের দুজনের প্রতিটা কথার সাথে একমত হলাম। 🙂 ঠিক এই জিনিসগুলো আমিও ভেবেছি এতদিন!
পুরো কমেন্ট পড়ে দারুণভাবে সহমত পোষণ করছি। 🙂
অসাধারণ :love:
প্রিয়তে নিলাম
ধন্যবাদ ধন্যবাদ!
সামিরা-র লেখা দিনকে দিন এতো বেশী ভালো হয়ে যাচ্ছে, কী বলবো বুঝতে পারছি না!
শুধুই বলি, খুবই ভালো হয়েছে।
থ্যাঙ্কস ভাইয়া। 🙂
Wonderful Article. A little correction:
প্রবাদ টা “প্রথমে দর্শনহারি, পরে গুণবিচারি” না হয়ে হবেঃ “প্রথমে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারি”।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। কী যে বোকার মত ভুল করছি, লজ্জা লাগতেছে! এর আগে কেউ বললো না দেখে অবাকও লাগছে। লেখার সময় আমার কিঞ্চিৎ কনফিউশন ছিল এটা নিয়ে, কিন্তু পরে চেক করতে ভুলে গেছি। আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
খুবই চমৎকার একটি লেখা, সামিরা আমি তোমার লেখনী আর তোমার দেখার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আনন্দিত। ভালো লেখা পড়লে যে মন ভালো হয়, এই ব্যাপারটায় সার্থক উদাহরণ হলে তুমি। 🙂
আপনার মন্তব্য দেখে খুব ভাল লাগলো আপু। 🙂 অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আগেই বলেছিলাম, অসাধারণ একটা পোস্ট হবে নিশ্চয়ই। আর তাই সত্যি হল। :happy:
কিন্তু দুঃখের বিষয়…মানুষের চেহারা, দৈহিক গঠন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বা খুঁতখুঁতে হন অনেক শিক্ষিত লোকজন। যে মেয়েটা ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞাপনে মডেল হয় তার বাবা মা কিংবা ঐ বিজ্ঞাপনের পরিচালক তারা তো যথেষ্ট শিক্ষিত নামী দামী লোকজন।এদের কবে বোধোদয় হবে কে জানে! :crying:
তাছাড়া সরব বোহেমিয়ানের একটা লেখায় সে দেখিয়েছিল ছেলেরা কীভাবে সুন্দরী বউ পাবার জন্য মুখিয়ে থাকে। এইসব ছেলেরা কিন্তু উচ্চশিক্ষিতদের মাঝেই আছে। শুধু ছেলেরা না, মেয়েদের মাঝেও এমন অনেকে থাকে।
এই সুন্দরের দোহাই দিয়ে মেয়েদের এখন পণ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে। উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের মধ্যে আমি নিজে অনেককে দেখেছি যারা রঙ ফর্সা করার জন্য দিনকে রাত বানিয়ে পরিশ্রম করে!! 🙁
তাই শিক্ষাই যে একমাত্র সহায়ক ভূমিকা রাখবে এটা আমি বলতে পারি না, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা একটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে বটে, তবে পারিবারিক শিক্ষা এবং সামাজিকভাবে মানসিকতার পরিবর্তন আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখাটা প্রিয়তে নিলাম। 🙂
অনাবিল আর স্বপ্ন বিলাস কিন্তু এ কথাগুলোই বলেছেন আপু। আমরা কতটুকু ‘মানুষ’ হলাম তার ওপর নির্ভর করে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। 🙂
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
হুম আপি, সবাই এমন করে বুঝতে পারত যদি!! আসলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় মাঝে মাঝে। দুঃখিত, বেশি প্যাঁচাল পারলাম কমেন্টে। :haturi:
দুঃখিত হওয়ার কী আছে? 😛 আপনাদের প্যাঁচাল শোনার জন্যই তো বসে থাকি!
দারুণ বিশ্লেষণধর্মী একটা পোস্ট! আগেই পড়েছিলাম একবার, আবার পড়লাম। 🙂
কদিন আগে এই রকম একটা টপিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল কয়েকজন সহপাঠির সাথে…… আমি এই লেখাটা পড়তে দিলাম অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই। সবচেয়ে অবাক হলাম যখন দেখলাম সেখানকার দুই-একজন এই লেখার বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করছে! কাউকে চেঞ্জ করে ফেলা আমার কর্ম নয়, আমি কেবল চিন্তার খোরাক দিতে পারি-এটা ভেবে কনভার্সেশন ছেড়ে চলে এসেছি। 😐
এটা তো গেল আমার ক্লাসমেইটদের কথা …… কিন্তু খুব দুঃখের বিষয় হল, এমন চিন্তা-ভাবনার মানুষের সংখ্যাও খুব একটা কম না বোধহয়। :thinking:
অনাবিল আপুর সাথে পুরোপুরি একমত। পরিবারের চেয়ে বড় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।
শুধুমাত্র অর্পিত সৌন্দর্যের জন্যই কখনও কাউকে মূল্যায়ন করতে চাই না, মূল্যায়িত হতেও চাই না।
ধন্যবাদ আপু! 🙂
তোমার বন্ধুদের দ্বিমতটা কোথায় আমাকে জানাতে পারবা একটু? কৌতূহল হচ্ছে।
তার দ্বিমতের কথা আর কী উল্লেখ করব……… তার মতে, “যেখানে সৌন্দর্য বিদ্যমান সেখানে সুখ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর নয়। আর, কেউ যদি বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে খুশি থাকে তাহলে তাতে কার কী আপত্তি থাকতে পারে!”-বোঝেন অবস্থা! 😯
অবশ্য, এই বিষয়টা সম্পর্কে তার ভিন্ন মতামত জেনে আমি খুব বেশি বিচলিত হই নি। সে এখনকার নিউ জেনারেশনের ‘ইয়ো’ গ্রুপের সদস্য। যারা কাউকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে ‘হটনেস’/’রাফনেস’ কে অন্যতম প্রধাণ যোগ্যতা বিবেচনা করে। তবু আমার মনে হয়েছিল তার চেয়ে ব্যতিক্রম, আরও সুন্দর চিন্তা-ভাবনাও যে করা যায়- এটা আমার জানানো দরকার।
সে ছাড়া বাকিদের প্রায় সবাই পোস্টের সাথে একমত ছিল।
অফটপিক: কিছুদিন আগে এক জায়গায় পড়েছিলাম- আইনস্টাইনকে একজন সুন্দরী মহিলা প্রপোজ করেছিল এই বলে “চিন্তা করে দেখুন তো, আমাদের সন্তান যদি আমার মত রূপ আর আপনার মত বুদ্ধি পায়, তাহলে ব্যপারটা কেমন হবে?”
আইনস্টাইন উত্তরে বলেছিল, “কিন্তু সে যদি আমার রূপ আর আপনার বুদ্ধি পায়, তাহলে কেমন হবে ভেবে দেখেছেন?”
(ঘটনা সত্য কি না জানি না। তবে খুব মজা পেয়েছি। আইনস্টাইন আসলেই খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। :huzur: )
আচ্ছা। সুখ খুঁজে যদি কেউ পায় তাতে আসলেই অন্যদের কিছু বলার নাই, কিন্তু এখানে মূলত সৌন্দর্যপ্রীতির কারণে আমরা যেমন ডিসক্রিমিনেশন কিংবা ডাব্ল স্ট্যান্ডার্ডের পথ ধরি সেটা নিয়ে বলেছি। তবে সুখ আসলে পাওয়া যায় কিনা সেটা হল প্রশ্ন, আনন্দ পাওয়া গেলে যেতে পারে, কিছু সময়ের জন্য।
হ্যাঁ এই ঘটনাটা আমিও শুনেছি। :happy:
আপনার লেখা খুবই ভাল লেগেছে। প্রতিটি বাক্য মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। তথ্য, যুক্তি, উপস্থাপনা – সব মিলিয়ে দারুণ! আমি নিজেও জীবনে এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। ছোটবেলায় দেখতাম টিচাররা সুন্দর ছাত্রীদের আদর করতেন, ওরা ভালো ফলাফল করলে মনে রাখতেন। খারাপ লাগত, কিন্তু অন্যদের যে অবহেলা করতেন তাও না। আবার কোথাও বেড়াতে গেলে অন্যকে বলতে শুনি, তুমি একদম তোমার মা/দাদী/নানী’র মত হওনি। তারা কত সুন্দরী ছিলেন! আবার অনেকে বলেন, মেয়ে তো দেখতে সুন্দর না, কিভাবে বিয়ে দিবেন? এসব কথা শুনতে কারো ভাল লাগে, বলুন? তারপরও আপনার লেখাটা অনেক ইতিবাচক। আশা করি এই লেখা পড়লে পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা পরিবর্তন হবে।
ধন্যবাদ আপু। আমি কিন্তু নানান জায়গা থেকে আহরিত জ্ঞান আর অভিজ্ঞতাই সাজিয়ে লিখেছি শুধু! নিজের ক্রেডিট নাই তেমন। 😀
“ছোটবেলায় দেখতাম টিচাররা সুন্দর ছাত্রীদের আদর করতেন, ওরা ভালো ফলাফল করলে মনে রাখতেন। খারাপ লাগত, কিন্তু অন্যদের যে অবহেলা করতেন তাও না।” – একদম এরকম অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে। টীচার থেকে শুরু করে, অনেক শিক্ষিত চমৎকার মানুষকেও দেখেছি – আমরা সম্ভবত নিজেরাও ঠিক বুঝতে পারি না কখন নিজের অজান্তেই আমরা সুন্দরের প্রতি অন্যায় পক্ষপাতিত্ব করছি। আর এতে সরাসরি কারও ক্ষতি না হলেও, সুন্দর ছাত্রীটার পাশে বসে থাকা ছোট মেয়েটার মনে একটা দীর্ঘস্থায়ী ছাপ পড়ে যায়, এ-ও দেখেছি।