প্রিয় নীরা,
কেমন আছ? আশা করি ভালই আছ, অবশ্য ভাল থাকার ই কথা আজ বাদে কাল যে মেয়ের বিয়ে সে নিশ্চয়ই খারাপ থাকবে না,
আজ তো তোমার গায়ে হলুদ, হলুদ শাড়িতে তোমায় নিশ্চয়ই খুব মানিয়ছে, আর মানাবে না কেন, তোমার গায়ের রঙটা ও কাঁচা হলুদের মতন,
আজকের এ চিঠিটা পেয়ে হয়ত তুমি খুব অবাক হয়েছ যে, এ
মানুষ কেন চিঠি লিখবে একে তো আমি সেভাবে চিনি ই না, কিন্তু
চিঠি পাঠানোতে নিশ্চয়ই বাধ্যবাধকতা নেই, আগের দিকে অনেকের চিঠিতে বন্ধুত্ব হত, এখন আধুনিক যুগ, চিঠির কালচার উঠে গেছে, সবাই মেইল পাঠায় ম্যাসেজ পাঠায়, হয়ত অবাক হচ্ছ এ আধুনিক যুগেও আমি কেন চিঠি দিচ্ছি, আসলে কারণ কিছুই না, চিঠির মাধ্যমে আসলে অনেক আবেগ প্রকাশ করা সহজ হয়,
এবং বলতে আজ বাধা নেই সেই প্রথম দেখাতেই আমি তোমার প্রেমে পড়েছিলাম, love at first sight বলে ইংরেজী তে একটা কথা আছে, আমার ঠিক সেটা হয়েছিল,
অনেকে বলেন এর আসলে কোন অস্তিত্ব নেই এ শুধুই মোহ, কিন্তু আমি বলব এ মোহ নয়, ভালবাসতে সারা জীবন লাগেনা, সত্য্যিকারের ভালোবাসা হলে এক মুহূর্তে হয় নয়তো কোনদিন ও হয় না,আমি এরপর তোমায় অনেক দিন দেখেছি, যতই দেখেছি প্রেম গাঁঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছে, এক বিন্দু কমে যায়নি,
আমি তোমাকে এটা প্রতিজ্ঞা করে বলতে পারি যে এ প্রেম কোনদিন নিঃশেষ হবে না যতদিন আমি বেচে থাকব এ প্রেম ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারন করবে, কথায় আছে “too much love kills the lover” হয়ত একদিন এ আমাকেই মেরে ফেলবে,
তুমি ভাবছ এতদিন পরে এসব বলার মানে কি,
আসলে মানে কিছুই না, আমি ভেবেছিলাম চলে যাব তোমার ভালোবাসা নিয়ে দূরে চলে যাব, এ ভালবাসাকে পুঁজি করে বেচে থাকব বাকি জীবন, তোমার নতুন জীবনে অশুভ ছায়া হয়ে আর আসব না,
কিন্তু স্রষ্টা হয়ত অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন, তিনি আমাকে বহু দুরের এক দেশে যাবার সুযোগ করে দিচ্ছেন যেখান থেকে আর ফিরে আসা যায় না, আর হয়ত কয়েক মাস হাতে আছে আমার,
তাই এ শেষ লগ্নে এসে জীবনের এ অব্যক্ত কথাটা তোমাকে না বলে থাকতে পারলাম না,
ভাল থেকো, নতুন জীবনের শুভেচ্ছা রইল অনেক।
ইতি জহির
জহিরের চিঠিটা পড়ে শীলার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়তে লাগলো, হটাত করে জহির নামের এ মানুষটির জন্য তার মনে প্রবল মমতা কাজ করতে লাগলো, চিঠিটা আজ থেকে ২০ বছর আগের লেখা, মানুষ টা হয়ত আর নেই এখন কিন্তু সে তার সমস্ত ভালোবাসা নীল খামের এ চিঠিতে বন্দি করে রেখে গিয়েছে,
-কিরে শীলা কাঁদছিস কেন
আচমকা কণ্ঠস্বরে শীলা চমকে পেছনে ফিরে তাকাল,
– এখানে কি করছিস তুই, আমার পুরনো ট্র্যাঙ্ক ধরেছিস কেন?
ভ্রু কুঁচকে নীরা মেয়ের দিকে চাইলেন,
– এমনি মা, ধুলো জমেছিল তো তাই ভাবলাম পরিস্কার করে দিই,
– পরিস্কার করা লাগবে না, আমার পুরনো জিনিসে হাত দিতে মানা করেছি না কতদিন!!
– আর হাত দেব না মা,
– যা নিজের ঘরে যা,
শীলা নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল, হটাত কি মনে করে সে পেছনে ফিরে আসলো,
– মা
– বল
– জহির কে?
নীরা প্রায় চমকে নিজের মেয়ের দিকে তাকালেন, শীলা নির্লিপ্ত চোখে তার দিকে চেয়ে আছে,
– আমি কোন জহির, ফহির কে চিনিনা,
– বল না মা, প্লিজ সত্যি করে বল
– বললাম তো চিনিনা
– শীলা কোন কথা না বলে নীল খামের চিঠিটা মায়ের সামনে রেখে মাথা নিচু করে চলে গেল।
শীলা চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত নীরা তার গমন পথের দিকে চেয়ে রইলেন, এক সময় চুপচাপ্প দরজা বন্ধ করে নীল খামের চিঠিটা তুলে নিলেন হাতে।
চিঠিটার ঘ্রান নিলেন, ২০ বছর পরেও সে বেলীফুলের ঘ্রান এখনো মনে হচ্ছে যায় নি, নাকি এ সব ই তার মনের ভুল,
চিঠিটা একসময় বুকে চেপে নীরা দীর্ঘদিনের চেপে রাখা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, কোন এক অদ্ভুত কারনে তার চোখে পানি চলে এসেছে, তিনি পাচতলার উপর থেকে জানালা দিয়ে চেয়ে রইলেন ঝলমলে নীল আকাশের দিকে, শেষ বিকেলের রোদে চিকচিক করে উঠলো তার চোখের কোনে জমে থাকা একফোঁটা অস্পষ্ট অশ্রু…
দারুণ গল্প 🙂
অনেক ভালো লেগেছে 😀
গল্প ভালো লেগেছে। 🙂
বানানের ব্যাপারে আরেকটু যত্নশীল হলে আরও ভালো লাগত। 🙂