জায়গাটা পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের কাছেই। যশোর রোড ধরে বর্ডার ক্রস করে বেশ কিছুদূর হাঁটলেই এই রিফিউজি ক্যাম্পের দেখা মিলবে। সীমান্ত পেরিয়ে যারা ভারতে এসেছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে- তাদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার পাশে সারি বেঁধে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এইসব শরণার্থী শিবিরগুলোয়। নামেই ‘শরণার্থী শিবির’- বেশিরভাগই আসলে ফেলে রাখা গোয়ালঘর, তার উচ্ছিষ্টের মাঝেই জায়গা করে নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এ নিয়ে অবশ্য তাদের কোন আপত্তি নেই- জীবন তো বাঁচছে অন্তত! নিজের দেশে তো সেটাও ভাগ্যে জোটেনি অনেক বাঙালির!
ক্যাম্পের অনেকের মতই মাটিতে বসে উদাস চোখে সুদূরে কী যেন খুঁজছিলেন এক বৃদ্ধা। অনেক বয়েস হয়ে গেছে। আশি-নব্বই তো পেরিয়েছে কবেই- এখন আর চোখে ভালো দেখতে পান না। শরণার্থী শিবিরের বাইরে একটা ট্রাক থেমেছে, মানুষে বোঝাই। ক্যাম্পের অনেকের মাঝেই একটুখানি কৌতূহল, অনেকবেশি আশার সঞ্চার করেছে এই ছ’পেয়ে যানটা। “করবে নাই বা কেন?”- আপন মনে ভাবলেন বৃদ্ধা। এই তো সেদিন বেশ কিছু বিদেশী ঘুরতে এসেছিলেন তাদের শিবিরে, সাথে বিরাট লটবহর। কেউ কেউ মুভি ক্যামেরাও নিয়ে এসেছিলেন সাথে। শিবিরের অসহায় মানুষদের সাথে ‘ফটোসেশন’ করলেন অনেকে, অনেকে দেখালেন মৌখিক সহানুভূতি। এইসব বিদেশী সাথে করে নিয়ে আসেন এটা-সেটা উপহার, গায়ে মাখার সাবান, ছোটদের জন্য লজেন্স, চকলেট। নিজেরাই বিলি করে দেন সেগুলো। তবে বণ্টনের সময় ভয়ঙ্কর অবস্থা হয়- ক্ষুধার্ত মানুষগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে, অনেকের ভাগ্যেই কিছুই জোটেনা। আর তাই ট্রাক-বড় গাড়ি দেখলেই বুভুক্ষু চোখে তাকিয়ে থাকে সর্বহারা মানুষগুলো। দোষেরই বা কী আছে এতে?
বৃদ্ধার নাম মরিয়ম বেগম। পাকিস্তানি কুকুরগুলো অন্য অনেক গ্রামের মতন হানা দিয়েছিল তাঁদের গ্রামেও। সন্ধ্যা নামতেই তাণ্ডব শুরু- এক নিমিষে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো হিন্দুদের বাড়ি-ঘর। এরপরে অবশ্য মুসলমানরাও রেহাই পেল না- কুকুরদের কাছে ধর্ম-বর্ণ-জাত নেই। ধরে ধরে পুকুরপাড়ে নিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে লাশের মিছিল তৈরি করে ফেলল হানাদার আর ওদের পা-চাটা রাজাকারগুলো। বৃদ্ধার পরিবারও রেহাই পায়নি- বৃদ্ধার চোখের সামনেই একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল তাঁর ছেলে, ছেলেবউ, নাতি। ষোড়শী নাতনিটাকে যেন কই নিয়ে গেলো- আর কখনো দেখা মেলেনি। যাবার সময় ‘দয়া’ কিংবা উপহাসের পাত্র ভেবেই হয়ত ফেলে রেখে গেলো বৃদ্ধাকে। একসময় অনেক কাঁদতেন বৃদ্ধা, এখন ওসব কথা ভেবে মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, “একি দয়া?” বৃদ্ধার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে কবেই।
বৃদ্ধার দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পের মাঝে- এই ক’দিনেই কেমন আপন হয়ে গেছে জায়গাটা। অচেনা মানুষগুলোকেও এখন আপন মনে হয়। সর্বহারা মানুষ হয়ত পুরো পৃথিবীটাকেই তার আপন ভাবে! একটু দূরেই মাটিতে মুখ গুঁজে বসে থাকা আরেক বৃদ্ধের দিকে চোখ গেল তাঁর। এই বৃদ্ধকে চেনেন তিনি, রিফিউজি ক্যাম্পেই পরিচয় হয়েছে- নাম আমীনুদ্দিন। বৃদ্ধের পঁচিশ বছরের ছেলেটাকে তাঁর চোখের সামনেই কুপিয়ে কুচিকুচি করে কেটেছে কুকুরগুলো, মেয়েটাকে নিয়ে গেছে অজানা কোথাও- খোঁজ পাননি আর। বৃদ্ধ তখন থেকেই কিছুটা অপ্রকৃতস্থ- সত্তরোর্ধ্ব একটা মানুষের আর কত সহ্যক্ষমতা থাকতে পারে? পাশের বাড়ির কর্তা দয়া করে সাথে নিয়ে এসেছেন আমীনুদ্দিনকে, নাহলে হয়ত দেশেই পচে মরতে হত এতদিনে। ক্যাম্পের প্রায় সবারই আছে স্বজন হারানোর এমনই কোন না কোন বেদনাবিধুর কাহিনী।
দূরে ট্রাকের দিকে আবার চোখ গেলো বৃদ্ধার। যা ভেবেছিলেন, ঠিক তাই। কিছু মানুষ খাবার-কাপড় বিলি করছে, আর নিজের ভাগ অন্যের আগে বুঝে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ক্যাম্পের মানুষ-জন। “হায়রে জনসেবা!” শ্লেষ ঝরে পড়ল বৃদ্ধার কন্ঠে। এসব পরোপকার দেখতে দেখতে গা-সওয়া হয়ে গেছে এখন- বেশির ভাগই লোকদেখানো। যে মানুষগুলো তাদের দেখতে আসেন, বেশির ভাগই মুখের ভাব এমন করে রাখেন, যেন শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশায় তাঁদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। চলে সুন্দর সুন্দর বক্তৃতা। অনেকে আবার বিরাট সব পরিকল্পনা নিয়ে আসেন। শরণার্থীদের নিয়ে নাটক হবে, শিশুদের জন্য স্কুল হবে- আরো কত কী! দেশপ্রেমের বুলি আওড়ান অনেকে- বাইরের বিশ্বের কাছে যেন প্রকাশ পায়, এমন সংকট মুহূর্তেও সবাই দেশপ্রেমের আলোয় উদ্ভাসিত! ক্যামেরা গলায় ঝোলানো বিদেশী হলে তো কথাই নেই। তাদের ভ্রমণের সময় যদি কোন শরণার্থী মারা যায়- তাতেই তাদের আনন্দ। কত কায়দা করেই না ডেডবডির ছবি তোলা হয়, স্বজনদের আকুতি বন্দী হয় সেলুলয়েডের ফ্রেমে!
মানুষ-জনের খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি দেখে আফসোস হলো বৃদ্ধার। ভিখিরির মতন কেমন ঝাঁপিয়ে পড়েছে খাবারের ওপর। মাঝে মাঝেই পরিবেশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে ক্যাম্পগুলোয়। এক শরণার্থী আরেক জনের খাবার- কাপড় চুরি করে, অনেকে ধরাও পড়ে। মারামারি বাঁধে। স্বেচ্ছাসেবী ওয়ার্ডেনরা এগিয়ে আসে মীমাংসা করতে- তারাও তেমন সুবিধা করতে পারে না। মানুষগুলোকে অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না- তারা তো এখন ভিখিরিই। নিজ দেশ ছেড়ে ভিনদেশে বাস করছে ভিখিরি সেজে। ভারত যে তাদেরকে দয়া করে থাকবার জন্য অন্তত গোয়ালঘরগুলো ছেড়ে দিয়েছে, লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে হলেও দু’বেলা দু-মুঠো খেতে দিচ্ছে- তাই বা কম কী? “এই অসহায়ত্বের কি শেষ হবে?” প্রশ্ন জাগে বৃদ্ধার মনে, “নাকি বাকি জীবন কেটে যাবে রিফিউজি ক্যাম্পেই?”
ট্রাকের আরোহী বেশ কয়েকজন ঢুকে পড়েছে ক্যাম্পের ভেতরে, কথা বলছে শরণার্থীদের সাথে। কিন্তু কই- ওদেরকে তো বিদেশী মনে হচ্ছে না! চেহারা দেখে তো বাঙালি মনে হচ্ছে। বয়েসও তো খুব বেশি নয় কারো। বাচ্চা কয়েকটা ছেলে-মেয়ে তাদের জন্য এতো জিনিসপত্র নিয়ে হঠাৎ হাজির হলো কোথা থেকে? আশেপাশের মানুষ বলাবলি করছে, ওরা নাকি গান শোনাতে এসেছে। কত মুক্তিযোদ্ধা অকাতরে প্রাণ দিচ্ছে, ভুখা থেকে যুদ্ধ করছে- তাতেও কিচ্ছু হচ্ছে না, আর কয়েকটা ছেলে-মেয়ে গান গেয়ে দেশ স্বাধীন করে ফেলবে? বৃদ্ধা ভেবেই পান না। পারবে ওরা বৃদ্ধার সুখী পরিবার ফিরিয়ে দিতে?
একটা ছেলে হাতে কী জানি নিয়ে এগিয়ে আসছে বৃদ্ধার কাছেই। মোটা কালো ফ্রেমের চশমা চোখে, হাস্যোজ্জ্বল সুন্দর চেহারা। কাছে এসে তরুণ বসলো বৃদ্ধার পাশে, বলল, “মা, সবাই বাইরে খাবার-কাপড়ের জন্য কাড়াকাড়ি করছে, আপনি এখানে একা বসে আছেন কেন?”
“বয়েস হইয়া গ্যাছে, বাপ- কাইড়া খাওনের দিন নাই আর। মাইনষে দয়া কইরা কিছু দিলে খাই, নাইলে দুই বেলা থালে যে খাওন দ্যায়, তাই খায়াই বাঁচি। সংসার গ্যাছে, একা বাঁইচা থাকনেরও খায়েশ নাই, বাপ- আল্লায় উঠায় নেয় না।”
“ছি মা, এভাবে বলতে হয় না,” তরুণ হাত বুলিয়ে দিল বৃদ্ধার মাথায়। “এইযে দেখুন, আপনি খাবার আনতে যাননি দেখে আপনার এই ছেলে আপনার জন্য খাবার- কাপড় নিয়ে এসেছে। এক ছেলে মারা গেছে, আরো কত ছেলে আছে আপনার! জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করছে যারা, তারা কী আপনার সন্তান না? তাদের একা ফেলে কোথায় যাবেন আপনি?”
একটু দূরে ছেলে-মেয়েগুলো গান গাইছে, সুর ভেসে এলো বৃদ্ধার কানে-
“আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!
ওগো মা- তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!”
বৃদ্ধার চোখ ভিজে এলো। নাহ, হয়ত এরাই পারবে তাঁর পরিবারকে ফিরিয়ে দিতে, যে পরিবার ছড়িয়ে আছে তাঁর মাতৃভূমির আনাচে কানাচে- যে পরিবারের নাম বাংলাদেশ!
*
ট্রাক ছুটে চলেছে হাওড়া রোড ধরে, শান্তিনিকেতনের দিকে। ট্রাকের পেছনে বিশ-পঁচিশ জন মানুষ বসে আছে- কেউ হেলান দিয়ে গল্প করছে, কেউ কিনারায় আপন মনে সুর ভাঁজছে। ট্রাকের পেছন দিকে রক্তলাল রঙের একটা বড় ব্যানার লাগানো, তাতে বড় সাদা অক্ষরে লেখা, “জয় বাংলা, Long Live Bangladesh.” চালকের আসনের পিছনেও আরেকটা লাল ব্যানার দেখা যাচ্ছে, সেখানে লেখা এই ট্রাকের যাত্রীদের পরিচয়- “বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা।”
ট্রাকের পেছন দিকে ব্যানার ঘেঁষে বসে আছে বিশ-বাইশ বছর বয়েসি এক তরুণ। সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ, চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। তরুণের নাম তারিক আলি। এই হাস্যোজ্জ্বল চেহারা মুহূর্তেই তাকে আপন করে নেয় যে কারো কাছে। শরণার্থী শিবিরগুলোয় এই কথার সত্যতা প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিদিনই। অসহায় মানুষগুলোর সাথে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যেতে পারে এই তরুণ।
এই মুহূর্তে তরুণের মন খারাপ। ডান হাতে ধরে রাখা পাখির খাঁচার দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে সে। খাঁচার ভেতরে একটা টিয়া পাখি, লাল ঠোঁট দিয়ে শস্যদানা খুঁটে খাচ্ছে। টিয়াপাখির দিকে তাকাতেই অদ্ভুত একটা ভাবনা খেলে গেল তারিকের মনে। সবুজবরণ টিয়া, রক্তলাল ঠোঁট- ঠিক যেন লাল-সবুজ বাংলাদেশ! খাঁচায় বন্দী পাখির মতন তার দেশও তো এখন পাকিস্তানিদের শেকলে বন্দী। আচ্ছা, পাখিটাকে ছেড়ে দিলে কেমন হয়? মনে মনে ঠিক করে রাখলো তারিক, যেদিন দেশ স্বাধীন হবে- সেদিন এই পাখিটিকে সে উড়িয়ে দেবে স্বাধীন বাংলার আকাশে।
তারিকের মন খারাপের কারণকে গুরুত্ব না দিলে ভুল হবে। তার মনে পড়ছে দেশ ছেড়ে আসার আগে শেষ কয়েক দিনের কথা। আর সেই স্মৃতি শান্ত থাকতে দিচ্ছে না তাকে। তারিকের চোখে ভাসছে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের দৃশ্য।
দিনটা ছিল মার্চ মাসের সাত তারিখ। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধার না। ভাইস এডমিরাল এস,এম, আহসানের বদলে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান। এর পেছনে ইয়াহিয়া খানের কী দুরভিসন্ধি, কে জানে! এর মাঝেই মানুষের ঢল নেমেছে রেসকোর্স ময়দানে, প্রিয় নেতাকে নিজ চোখে দেখার সাধ প্রতিটি বাঙালিরই। অন্য কোন দিন হলে তারিক ঘরে বসেই ভাষণ শুনত, রেডিওতে তো প্রচারিত হবেই। আজকের অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না, হয়ত দেখা যাবে ইয়াহিয়া ভাষণ বন্ধ করে রাস্তায় মিলিটারি নামিয়ে দিয়েছে, কিংবা হঠাৎ সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে! ঝুঁকি নিতে চাইল না তারিক, আজকে ময়দানে উপস্থিত থাকতেই হবে।
ঢাকায় যত মানুষ, সব বোধহয় আজকে জড়ো হয়েছে প্রিয় নেতার ভাষণ শুনতে। মানুষের স্রোত, এর মাঝেই এগিয়ে চলল তারিক। মানুষগুলো কিন্তু চুপ করে নেই, শ্লোগান দিতে দিতে সামনে এগোচ্ছে, “তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা”, কিংবা “বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন কর!”
চারদিকে মানুষ- আর কিছুই চোখে পড়ছে না। এই দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে পাওয়াও তো অনেক বড় ভাগ্যের ব্যপার- পৃথিবীর আর কোথাও কি কখনো এত মানুষ একসাথে একত্রিত হয়েছে এর আগে?
ভাষণ শুরু হওয়ার আগেই মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলো দু’টো হেলিকপ্টার- মানুষের সমুদ্রে চাপা আতঙ্কের ঢেউ তুলে। সবার মনে আশঙ্কা, আজ কিছু একটা ঘটে যাবে নাতো? হয়ত দেখা গেল, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন, অমনি উপর থেকে তার ওপর ফেলে দেওয়া হল দুইটা বোমা!
বাঙালির নেতা ভাষণ দিতে দাঁড়িয়েছেন- মুহূর্তে চারদিকে নেমে এল ভয়াবহ নীরবতা। একটু আগেও ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস কাঁপছিল, এখন সবাই চুপ। প্রিয় নেতার একটা কথাও মিস করতে চায় না কেউ!
“প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। … আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। … সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না, আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না। …
… রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”
রেসকোর্স ময়দানের সমবেত জনতা যেন একসাথে ফেটে পড়লো, “জয় বাংলা।” সেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি ঠিকই, কিন্তু তারিকের মতন অসংখ্য তরুণের মনে বুনে দিয়ে ছিলেন স্বাধীনতার বীজ অপূর্ব নিপুণতায়। তাই তো দেশের জন্য অকাতরে জীবন দিতেও কুন্ঠা করেনি তারা!
সেই ভাষণের কথা মনে পড়তেই মন আরও খারাপ হয়ে গেলো তারিকের। সেই ভাষণ তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল যুদ্ধে যোগ দিতে, অনেক চেষ্টাও করেছিল সে। বাদ সাধে এই হাই-পাওয়ার চশমা। ট্রেনিং-এর সময় বাদ পড়ে যায় সে, আর যুদ্ধে যাওয়া হয়নি। এই আফসোস প্রায়ই তাকে পোড়ায় নীরবে।
মন খারাপ কমাতে ট্রাকের যাত্রীদের দিকে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলো তারিক। তার পাশেই আপন মনে ছবি এঁকে যাচ্ছে আরেক তরুণ, বয়স তার মতনই হবে। নাকের নিচে সরু গোঁফ, খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এই আঁকিয়ে তরুণের নাম বিপুল ভট্টাচার্য। হাতের ড্রয়িং বোর্ডে করুণ একটা ছবি শোভা পাচ্ছে- কোন এক শরণার্থী শিবিরের একটা শিশুর ছবি। যখন ছবি আঁকে সে, তখন তার চারপাশে কী ঘটছে- কিছুতেই কিছু এসে যায় না বিপুলের। দারুণ আঁকার হাত ছেলেটার- নিজ মনে প্রশংসা না করে পারলো না তারিক। মুখে এক চিলতে হাসি লেগেই আছে। এই বিপুল থাকতে তাকে কেন যে মানুষ বেশি পছন্দ করে!
ট্রাকের সামনের দিকে বসে আছেন মাহমুদুর রহমান বেনু, এই শিল্পীগোষ্ঠীর দলনেতা। তাঁর পাশে তাঁর স্ত্রী, শাহীন সামাদ। শাহীনের দুই বোনও আছে তাদের সাথে- নায়লা জামান আর লুবনা মরিয়ম। দু’জনেই বেশ ভালো গান গায়। বেনু ভাইয়ের জন্যই আজ সে এখানে- ভাবল তারিক। যুদ্ধে যেতে পারেনি বলে মন ভেঙে গেছে, কিছুই ভালো লাগছে না- এমন সময় বেনু ভাই এসে বললেন, “তারিক, আমরা যা করতে যাচ্ছি, এটাও কিন্তু একটা যুদ্ধ। শব্দ-গানের যুদ্ধ। দেশের অবস্থা তো জানোই, শরণার্থী শিবিরগুলোয় মানুষ-জন কীভাবে দিনযাপন করছে, একবার ভেবে দেখো! ওই অসহায় নিঃসম্বল মানুষগুলোর মুখে যদি হাসি ফোটাতে পার, সেটাও হবে যুদ্ধজয়।”
সেই থেকে তারিক ট্রাকে চড়ে শরণার্থী শিবিরগুলোয় ঘুরে ঘুরে যুদ্ধে না যেতে পারার কষ্ট ভোলার চেষ্টা করে! পুরো ট্রাকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল সে, প্রায় বিশ-পঁচিশ জন যাত্রী। শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি একটা অনুষ্ঠান আছে আজ- সেখানেই গন্তব্য সবার। আরেকটা ট্রাকে একদল শিল্পী আগেই পৌঁছে গেছে সেখানে। হাসান ইমাম অনুষ্ঠানের জন্য স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন, আরেকবার ঝালিয়ে নিতে অনুষ্ঠানস্থলে চলে গেছেন আগেই। স্টেজ তৈরি করেছেন মুস্তাফা মনোয়ার। বাকি শিল্পীরা রিহার্সালে ব্যস্ত। আপনমনে ভাবল তারিক- দেশ স্বাধীন হলে এই মানুষগুলোর একেক জন ভীষণ বিখ্যাত হবে!
গুনগুন করে রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইছে ট্রাকের কয়েকজন। আস্তে আস্তে কণ্ঠ চড়লো, পুরো ট্রাকেই ছড়িয়ে পড়লো গানের সুর। কী যেন অপূর্ব জাদু আছে গানটায়- শুনলেই গলা মেলাতে ইচ্ছে করে! তখন কে জানত, এই অমিয়মধুর গানটাই স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হতে যাচ্ছে!
গান শেষ হতেই হাতের খাঁচায় বন্দী টিয়াপাখির দিকে নজর ফিরলো তারিকের। গত রাতে এক শরণার্থী পরিবার তাদের গান শুনে দাওয়াত করে বসে- গরীবের ঘরে দু’টো ভাত হলেও খেয়ে যেতে হবে। শিল্পীরা মুগ্ধ হয়, ভিনদেশে থেকেও একটা রিফিউজি পরিবারের আতিথেয়তা আর আন্তরিকতায়। সেই পরিবারেরই পোষা টিয়াপাখি এটা। তারিকের মায়া আর আগ্রহ দেখে ফেরার সময় নিজের পোষা টিয়াপাখিটাকে এক অচেনা বাঙালির হাতে তুলে দিতে এতটুকুও কুন্ঠা হয়নি বাড়ির কর্তার। ভিনদেশে গেলেও বোধহয় স্বজাতির প্রতি মায়া বাঙালির স্বভাবে থেকেই যায়!
সকাল থেকে তারিক অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে- টিয়াপাখিটাকে একটা কবিতার লাইন শেখাতে, যদিও পাখিটা বিন্দুমাত্র আগ্রহ পোষণ করেনি। আরেকবার চেষ্টা করলো সে, “বল, লক্ষ্মীটি, ‘যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে’।”
পাশ থেকে হঠাৎ বিপুল বাধা দিয়ে বসলো, হাতে পেন্সিল থাকলে যার জগতের আর কোনকিছুর প্রতি হুঁশ থাকে না! “কীসব ছাইপাশ শেখাচ্ছ ওকে! ‘জয় বাংলা’ শেখাও- এইটা সময়ের প্রয়োজন।”
তারিককে অবাক করে ‘দুষ্টু’ পাখিটা বলে বসলো, “জয় বাংলা!”
[চলবে- চার কিংবা ততোর্ধ্ব অংশে সমাপ্য।
প্রথম কমেন্ট দ্রষ্টব্য।]
মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে একদল মুক্তিমনা সৃজনশীল মানুষ গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’, যাদের নিত্যদিনের কাজ ছিল গান গেয়ে শরণার্থী মানুষদের প্রেরণা জোগানো। দেশ স্বাধীন হতে শুরু করলে তারা পাড়ি জমান মুক্তাঞ্চলগুলোতেও, তাদের গানে উৎসাহ পান মুক্তিযোদ্ধা আর সাধারণ মানুষেরা। এই শিল্পীদলের কর্মতৎপরতা ৩০ ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ আকারে সেলুলয়েডে বন্দী করেন মার্কিন চলচ্চিত্রকার লীয়ার লেভিন, কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতা তাঁকে প্রামাণ্যচিত্রটি সম্পূর্ণ করতে দেয়নি। ১৯৯০ সালে এই ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করে বাংলার অসামান্য চলচ্চিত্রকার অকালপ্রয়াত তারেক মাসুদ স্বাধীনতার ২৪ বছর পর তৈরি করেন ‘মুক্তির গান’। সত্য ইতিহাসের আড়ালে আমার এই গল্পটা তাঁদের নিয়েই।
কৃতজ্ঞতাঃ
* ‘জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প’- হুমায়ূন আহমেদ
* কলাম- শাহীন সামাদ
* ‘মুক্তির গান’- তারেক মাসুদের নির্দেশনায়
* সাক্ষাৎকার- মাহমুদুর রহমান বেনু, তারিক আলি, শাহীন সামাদ, তারেক মাসুদ
* পেপারকাটিং ও ইন্টারনেট
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোন লেখাই ভাল লাগে, এ বিষয়টার প্রতি আলাদা একটা দুর্বলতা আছে, আর লেখা যদি হয় অত্যন্ত গুছানো তাহলে তো কথাই নেই,
লেখা ভাল লেগেছে 🙂
তোমার দুর্বলতার এই বিষয়টা জানি আমি 🙂
ধন্যবাদ, ভাইয়া 🙂
দারুণ দারুণ!
এবারেরটা পুরোপুরিই গল্প মনে হল।
আমি মাসে একটা পড়ার আশায় বসে ছিলাম, এত তাড়াতাড়ি পরের পর্ব আসবে ভাবি নি। :penguindance:
অনেক ধন্যবাদ, আপু 😀
গল্পই লিখতে চেষ্টা করেছি 🙂 এইটা মোটে প্রথম অংশ- আরও কয়েকটা অংশ বাকি আছে 🙂
আর এইটা আসলে ‘মাসে একটা’ প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত না 😛 আলতাফ মাহমুদকে নিয়ে লিখছি, উনার সম্পর্কে পড়তে গিয়ে অনেক ইন্টারেস্টিং ইতিহাস জানলাম- আর তাই লেখার লোভ সামলাতে পারিনি! 😀
এই গল্পটা শেষ হলে আরেকটা এমন গল্প লেখার ইচ্ছে আছে- আলতাফ মাহমুদকে নিয়ে লেখাটা আরও পরে আসবে 🙂
নিলয় ছেলেটা পুরাই বস!
দারুণ এগুচ্ছে। শুরু আর শেষটুকু বেশি ভালো লেগেছে।
বিশেষ করে গল্প যেভাবে শুরু হলো …পূর্ব পাকিস্তান! ঠিক যেন টাইম ট্রাভেল! শুরুতেই তুমি পাঠকদের বুঝিয়ে দিলে কোন সময়ের কথা বলছো!
এই রকম পরিশ্রম এর ফল অবশ্যই আসবে। ঐতিহাসিক লেখা গুলো নিয়ে একটা বই এর আইডিয়া মাথায় রাখো 😀
পাঠক হিসেবে সরব এ এসে এত পরিশ্রমী যত্নশীল নিপুণ হাত দেখলে কার না ভালো লাগে?
একটু সমালোচনা করি
২/১ টা জায়গা পড়ে মনে হলো গল্পটা সেই সময়ের না, আরও পরে এসে লেখা হয়েছে।
ধরো
তারিকের চোখে ভাসছে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের দৃশ্য।
সেই সময়ে কি কালজয়ী বলে মনে হবার কথা?
আর একটা বিষয়
সেদিন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি ঠিকই, কিন্তু তারিকের মতন অসংখ্য তরুণের মনে বুনে দিয়ে ছিলেন স্বাধীনতার বীজ অপূর্ব নিপুণতায়।
এই জায়গা মনে হচ্ছে যেন গল্প বলছো না তুমি বিশ্লেষণ করছো। গল্পের মধ্যে এক চরিত্র আরেক চরিত্রকে অনেক সময়ে প্রশ্ন করে, এই প্রশ্নোত্তর রাখা হয় এই জন্য যেন গল্পের বিভিন্ন বিষয় চরিত্রের মুখ দিয়ে বলিয়ে নেয়া যায়। ডোন্ট টেল, শো! তুমি এইখানে বলছো, ভালো হতো দেখালে। এক চরিত্র আরেক চরিত্রকে বলছে “শেখ সাহেব এর কারণেই এমন হইছে … ” এই রকম কিছু।
আর বঙ্গবন্ধুকে ৭১ এ কি শেখ সাহেব টাইপ ঢাকা হতো না? আমি নিশ্চিত না অবশ্য।
চলতে থাকুক ভাইয়া। দারুণ তোমার এই লেখা।
আগেরটার চেয়ে এটা অনেক পরিণত!
ঢাকা > ডাকা!
অনেক, অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া 🙂 বইয়ের আইডিয়াটা মাথায় থাকবে- দোয়া করবেন 🙂
লেখক হিসেবে এত্ত দারুণ সমালোচনা দেখলে মন আরও ভালো হয়ে যায়- বিশেষ করে যখন লেখক লেখার ব্যপারে খুব একটা দক্ষ না 🙂 এই সব সমালোচনা পরবর্তী লেখাগুলোয় অনেক কাজে আসবে, ভাইয়া- যেমন এসেছে ইতিহাস-গল্পের মিশ্রণের ক্ষেত্রে 🙂 ভুলগুলো এইভাবে ধরিয়ে দেবেন সবসময় 🙂 :huzur:
‘কালজয়ী’ শব্দটা আসলে ভেবে লিখিনি- মনে হয়েছিল, তখনকার মানুষ তো ‘বঙ্গবন্ধু’ বলতে অস্থির- তাঁর ভাষণের আগে একটা বিশেষণ দেওয়াই যায়! বিশেষণটা দুষ্ট হয়ে যাবে- বুঝিনি 🙂
“ডোন্ট টেল, শো!” -এই কথাটা হৃদয়ঙ্গম হয়ে গেলো এখন থেকে। লেখার সময় সবসময় মনে থাকবে। আমি আসলে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম, বেশি বড় হয়ে গেলো কিনা। এর পর থেকে আর কম্প্রোমাইজ করবো না 🙂
‘শেখ সাহেব’ এর ব্যপারটা জানতাম না আমি। পারটিকুলার কেউ কেউ বলেছেন, কিন্তু সর্বসম্মতভাবে কোথাও পাইনি, ‘জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প’তেও না। ৭ই মার্চের ভাষণের বর্ণনা দেওয়ার সময় এই বইটা কাজে এসেছে সবচেয়ে বেশি 🙂
এইভাবে ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন সবসময়, ভাইয়া- তাইলে লেখা আরও পরিণত করতে পারবো ইনশাল্লাহ 🙂
অনেক খুশি হয়েছি 😀
দারুণ
ভালো লেগেছে 😀
অনেক ধন্যবাদ 🙂
এই ছেলেটা এতো ভালো লেখে!
গল্পের আদলে সত্যি কাহিনীগুলো কী নিপুনভাবে বলে যায়! অপেক্ষায় রইলাম বাকী পর্বগুলোর……
থ্যাঙ্কু, ভাইয়া 😀
ইতিহাস গল্প হয়ে গেলে পড়তে ভালো লাগে, সহনীয় মনে হয়।
আজকালকার বেশ কিছু ছেলে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা জানায় আগ্রহী কিন্তু তাই বলে পরের প্রজন্মও এমন হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
তাই ইতিহাসকে গল্পের বুননে বাঁধতে হবে আমাদেরই।
নিলয় দায়িত্বটা নিয়ে ফেল।
আমি জানি, তুই পারবি।
এই গল্প তোর আগের পোস্টের চেয়েও বেশি পরিণত হয়েছে।
লেখার টান ভালো লাগছে।
বোহেমিয়ানের ‘দৃশ্যায়ন’এর ব্যাপারটাও পছন্দ হয়েছে।
খেয়াল রাখিস, গল্প তুই বলবি না, দেখাবি।
লেখার মাধ্যমে কিন্তু গল্প দেখানোর ব্যাপারটা খুব কঠিন।
তবু চেষ্টা কর।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। 🙂
দোয়া রাইখো, আপু 😀
অনেক বড় একটা দায়িত্বের কথা বললেন- এইটা নেওয়ার যোগ্যতা মনে হয় এখনো হয় নাই আমার 🙂 তবু চেষ্টা করবো 🙂
পরের পর্ব আসছে খুব শিগগিরই 😀
বুকে বল রাখ আর মনে সাহস।
দায়িত্ব নেয়ার যোগ্যতা আরও শক্ত হোক- দোয়া করি। 🙂
ইনশাল্লাহ 🙂
ওই, এতো বড় কেন? 😳
বড় হয়ে গেছে বেশি 🙁
এখন ও যোগ্য ও আদর্শ পাঠক হয়ে উঠতে পারিনি, 😯 বড় লেখা দেখলে একটু ফাঁকিবাজি করে পড়ি। 😛 কিন্তু এটা যে কখন চোখের পলকে এক নিমিষেই পড়ে ফেললাম টেরও পেলাম না। অনেক বেশি ভালো 🙂
পরের পর্বের অপেক্ষায় আমি ফাঁকিবাজ…… (ধারাবাহিক লেখায় তো ফাঁকিবাজি আরো এক ধাপ বেশি করতাম 😛 )
অনেক, অনেক ধন্যবাদ 🙂
পরের পর্ব খুব শিগগিরই আসছে ইনশাআল্লাহ 🙂
আহা একটু শান্তিতে থাকতে দিলেন না। 😳 পরের পর্ব আসলেই তো পড়ে ফেলবো 🙂 তাড়াতাড়ি চলে আসলে ফাঁকিবাজির সুযোগটা পাবো কই? 😛
হাহা 😛
তোমার লেখার হাত দেখি অসাধারণ। এত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছ, মনে হচ্ছে চোখের সামনে সব দেখতে পাচ্ছি। ঝরঝরে লেখা, টানা পড়ে গেলাম। লেখালেখি চলুক দারুনভাবে 🙂
অনেক, অনেক ধন্যবাদ, আপু 🙂