চলচ্চিত্র কাটাছেঁড়া:দ্যা বেস্ট এক্সোটিক ম্যারিগোল্ড হোটেল

এভেলিন(Judi Dench), ৪০ বছরের সঙ্গী স্বামী মারা যাওয়ার পর হঠাৎ করে প্রচণ্ড একা হয়ে যাওয়া এক মানুষ। সব সময়ের সঙ্গী মানুষটা মারা যাওয়ায় পৃথিবীটা অনেকটাই অর্থহীন অয়ে ওঠে তাঁর কাছে। একমাত্র ছেলেও বুঝতে চায় না তাঁর একাকীত্ব ও হতাশার কথা। স্বামীর ঋণ শোধ করার জন্য নিজের বাড়িটাও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।

গ্রাহাম(Tom Wilkinson), ব্রিটিশ কোর্টের জজ। এক সহকর্মীর বিদায়ী অনুষ্ঠানে সঙ্গীর ভাষণ শুনতে শুনতে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেন, আজই তার কাজের শেষ দিন। কাছের সহকর্মীরা বিরোধিতা করলেও নিজের মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে সে দিনই চাকরী ছাড়েন তিনি।

ডগলাস(Bill Nighy) এবং জিন(Penelope Wilton), তিরিশ বছর চাকরীর পর সবটুকু সঞ্চিত অর্থ মেয়েকে ব্যবসার কাজে দিয়ে দেয়ার পর একটা ভালো বাসা নেয়ারও অবস্থা থাকে না এই দম্পতির। এরই মধ্যে মুখরা জিন এর কথায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে ডগলাস এর জীবন।
ম্যুরিএল(Maggie Smith), বহু বছর ধরে একটি পরিবারে কাজ করার পর চাকরী হারান তিনি। সেই পরিবারের বাইরে কোন জীবন না থাকায় শূন্য হয়ে যায় তাঁর পৃথিবী। হিপ বোন অপারেশন এর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েও কয়েক মাসের আগে হাসপাতালে অপারেশন এর কোন নিশ্চয়তা পান না। ভয়াবহ রকম রেসিস্ট মনোভাব তার নিজের জীবন করে তোলে আরও বিষাক্ত।
নরম্যান(Ronald Pickup), প্রায় ৭০ বয়স হয়ে গেলেও নারীসঙ্গের তীব্র বাসনায় তিনি ঘুরে বেড়ান। যদিও অর্থবিত্ত বা তেমন কোন পরিচয় না থাকায় ব্যর্থ হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় তাকে।

ম্যাজ(Celia Imrie), অদ্ভুত এক মহিলা। যাযাবর টাইপের এই চরিত্র স্থির হতে পারেন না সংসারে। ঘর বাঁধেন আর ভেঙে আবার ছোটেন নতুন কারো সন্ধানে।

এই সব চরিত্র হঠাৎই একত্র হয়ে যান জীবনে নতুন কিছু পাওয়ার আশায়। সবাই-ই ছুটে আসেন ভারতে-ইন্টারনেট এ দেখা এক ঐতিহাসিক স্থানে গড়ে তোলা হোটেল এ, দ্যা বেস্ট এক্সোটিক ম্যারিগোল্ড হোটেল।

এভেলিন খুঁজে বেড়ান জীবনে বাঁচার নতুন কোন উদ্দেশ্য, গ্রাহাম খোঁজেন তার ছেলেবেলায় হারানো এক বন্ধুকে যার সাথে তার সম্পর্ক বন্ধুত্বের অনেক বেশি কিছু। ডগলাস ও জিন যেন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে চান তাদের বিভীষিকাময় দাম্পত্য জীবনকে। নরম্যান ও ম্যাজ কোন এক নতুন মানুষের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান। ম্যাজ অপারেশন করেন ফিরে যেতে চান এই নোংরা ও কালোদের দেশ থেকে।

কেমন হোটেল পাবেন তারা? কী-ই বদল হবে তাদের জীবনে? কেমনই বা প্রাপ্তি ঘটবে তাদের?

সানি(Dev Patel) নামের ছেলেটি, যে গড়ে তুলতে চাইছে তার বাবার স্বপ্ন এই হোটেলের মাধ্যমে সে পারবে তার স্বপ্ন সত্যি করতে? অথবা, মায়ের মত কী-ই সে পাবে তার প্রেমিকা সুনায়না এর সাথে জীবন কাটানোর?

একসাথে তো কিছু, এতোগুলো গল্প এক করেই তৈরি সিনেমা ‘দ্য বেস্ট এক্সোটিক মেরিগোল্ড হোটেল’।

ভারতের প্রেক্ষাপটে নির্ণয় করা সিনেমায় যেমন স্বাদ পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতার, প্রায় একই সাথে চোখে পড়ে ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সামাজিক পরিবর্তন।

শক্তিশালী অভিনেতাদের অভিনয় মজবুত করেছে চলচ্চিত্রের কাহিনী, তবে, ভারতীয়দের ইংরেজি বলার তীব্র একসেন্টটা একটু বেশিই কানে লাগে।

এক নজরে,

পরিচালক: জন ম্যাডেন

জনরা(Genre): কমেডি, ড্রামা

ব্লগারের রেটিং: ৩.৫/৫

আইএমডিবি রেটিং: ৭.৩/১০

মুক্তি সাল: ২০১২

ব্যয়: ১০ মিলিয়ন ডলার

আয়: ১২৯ মিলিয়ন ডলার
সময় হলে বসে পড়ুন তবে……পস্তাবেন না এটুকু বলতে পারি।

 

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র, চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

15 Responses to চলচ্চিত্র কাটাছেঁড়া:দ্যা বেস্ট এক্সোটিক ম্যারিগোল্ড হোটেল

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    এভেলিন(Judi Dench), ৪০ … এই রকম লিখলে একটু চোখে লাগে। সামিরাশেষ পোস্ট এর মতো করে লিখলে চোখে লাগত বলে মনে হয় না।
    আর ট্যাগ হিসেবে অভিনেতা/ নাম/ পরিচালক দিলে সার্চ করে খুঁজে পেতে সুবিধা! 😀

    মুভিটা দেখতে আগ্রহ জাগলো। মুভি দেখা কেমন হয়ে গেছে ইদানিং

    রজার এবার্ট (নাকি রজার ইবার্ট) এর রিভিউ গুলা পড়ে দেখা যেতে পারে। ওর ব্লগও দারুণ!

    সরব এ ভালো মুভি রিভিউয়ার দরকার! তুই হতে পারিস কিন্তু! আমি স্পাইডার ম্যান নিয়ে যাচ্ছেতাই লিখছি 😛

    • স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

      ট্যাগ করার বিষয়টা নিয়ে আমি এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছি। যেটা টেকে সেটাই থাকবে 😛

      মুভিটা আমার ভালোই লেগেছে। খুব একটা নাম শুনি নাই, তবে ব্যবসা করেছে ভালো। দেখিস সময় পেলে।

      রজার ইবার্ট এর ব্লগ পড়ে দেখবো।
      আর, মুভি রিভিউ লিখবো সামনে, আশা করি। 🙂

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    কার তৈরি মুভি সেটা যোগ করে দিতে পারেন ভাইয়া।
    genre>জন্‌রা না এটার উচ্চারণ? আমি নিশ্চিত না অবশ্য!
    রিভিউ ভাল লেগেছে। দিয়েন তো আমাকে ভাইয়া!

  3. নিলয় বলেছেনঃ

    আগ্রহ পেলাম- দেখবো মুভিটা 🙂

    ঝরঝরে রিভিউ 🙂

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    রিভিউ নিয়ে চেষ্টা কর আরও।
    স্পয়লার বাদ দিয়ে রিভিউ লিখতে পারাটা একটা গুণ। তার উপর কাহিনীর অধিকাংশ না বলে ফেলাটাও।
    রিভিউয়ের আরও অনেকগুলো দিক আছে কাহিনী বাদে।
    সেগুলোও বলার চেষ্টা কর। সিনেমাটোগ্রাফি, এফেক্ট, ক্যামেরা, সাউন্ড সবকিছুই কিন্তু অন্তর্ভুক্ত।

    আমি মোটেও পারি না রিভিউ লিখতে, আমার জ্ঞান অতিমাত্রায় কম।
    তুই পারবি, আমি জানি।
    শুধু একটু বাড়তি মাতব্বরি করলাম! 😛

    এইটাও ভালো হইছে কিন্তু। তবে তুই চাইলে আরও ভালোভাবে লিখতে পারিস, এই আর কি। 🙂

  5. বৈরাগী বলেছেনঃ

    পোস্টটা পড়তে পড়তে বাংলা উপন্যাস ‘চৌরঙ্গী’র কথা মনে পড়ে গেলো। উপন্যাসটা নিয়ে আমার ও লেখার ইচ্ছা আছে। ওটা কলকাতার ‘শাহজাহান’ হোটেলের উপর। উপন্যাসটার প্রতি দুর্বলতা থাকার কারণে পোস্টটা অন্যরকম লাগলো এবং মুভি দেখার ইচ্ছা জাগলো। 🙂

    ‘চৌরঙ্গী’র উপর পরে অবশ্য সত্যজিৎ ও মুভি বানিয়েছে 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।