“এতো ভালোবাসি, এতো যারে চাই,
মনে হয় নাতো সে যে কাছে নাই”…….
~একটি ঘাসের উপর একটি শিশির বিন্দু~…… শান্ত, স্নিগ্ধ রূপ নিয়ে তার আগমন, শৈশবের মত। নতুন দিনের নতুন সূর্যের আলোয় লাজুক লাজুক চোখ মেলা – ‘একটি শিশির বিন্দু ‘র মত চকচকে-ঝকঝকে, ঝলমলে শৈশব। হাসি-গল্প আর খেলাধুলায় ভরা শৈশব, জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা শৈশব, অস্পৃশ্য শৈশব, কলুষতা মুক্ত পবিত্র শৈশব, দাগহীন নিরাপদ শৈশব………
সময় গড়িয়ে যায়। পুব দিগন্তে সূর্যটা তার হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি বাড়িয়ে দেয়। বেড়ে যায়ে সূর্যের তেজ। যে সূর্য একদিন নতুন দিনের আলো দেখিয়েছিল তাই কেমন বদলে যায়। কটকটে-খটখটে রোদ- ‘একটি শিশির বিন্দু ‘কে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া রোদ। সেই সাথে জীবনটাকেও।
সম্পর্ক গুলোও কেমন যেন বদলে যায়, সেই চিরচেনা মুখ গুলো এমন কি কখনো হয়ে যেতে পারে! কোথায় আমার সেই শৈশব- কাদামাটি মাখা শৈশব, এক সাথে খেলতে থাকা শৈশব,আপুকে বিরক্ত করা শৈশব, অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা শৈশব, গাল-ফুলানো মান-অভিমানের শৈশব, এক মুঠো বাতাসার শৈশব, হাঁড়ি-পাতিল খেলা ভণ্ডুল করে দেয়া শৈশব, পুকুরে নৌকা ভাসানোর শৈশব, ভোর-সকালে শাপলা তুলতে যাওয়া শৈশব, শৈশবকে ফাঁকি দিয়ে হারিয়ে যাওয়া শৈশব……!
সেই শৈশব এখন আমার শুধুই স্মৃতি, কীভাবে যেন হারিয়ে ফেললাম। এখন সেই শৈশবই আমার বুকে ভার হয়ে চেপে থাকে আর তখন ছিল সব বিছানার চাদরের মত মসৃণ। চাদরের রঙিন রঙিন ফুলের মত ছিল সেইসব দিনগুলি। আদুরীর ছোট্ট হাতের রাঙা মেহেদির মতন শৈশব।
কোথায় যেন হারিয়ে যায়! হেথায়ে খুঁজি, হোথায়ে খুঁজি। খুঁজতে খুঁজতে দেখি আমার কৈশোরের পাতা গুলো আমার হাতে। নতুন পৃথিবী- ঘোর লাগা নতুন চোখের দৃষ্টি, রঙিন রঙিন দুনিয়া…… জীবনের নদীটা যেন কোন দিকে বাঁক নেয়, বোঝা যায় না, আর যখন খেয়াল হয় তখন তখন পিছে পড়ে থাকে শুধু ধানক্ষেত।
কৈশোরের ঘুড়ির সুতায় টান পরে। কৈশোরের দিনগুলি আকাশে মেঘের সাথে খেলা করে বেড়ায়। মাঝে মাঝে জট পাকিয়ে যায়, আবার খুলে যায়। গাছের নতুন কুঁড়ি নিয়ে বসন্ত এলো আর দিনগুলোকে কী এক অজানা, অচেনা, দুশ্ছেদ্য মায়ায় বেঁধে দিলো। মাথায় দিয়ে গেলো একটি লাইন-“ সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা”।
এক অদ্ভুত ঘোরলাগা পরিবেশ চারিদিকে। জীবন-কুঁড়ির একটু একটু পরে পাঁপড়ি মেলা। একসাথে সব গুলো প্রিয় মুখ ঘর থেকে বের হওয়া আর স্কুল-কলেজ শেষে একজন একজনের ফিরে আসা…… প্রিয় মুখ থেকে প্রিয়তর হয়ে উঠা, মনের গহীনে অজানা অপেক্ষায় থাকা, জন্মদিনের সকালে প্রথম উপহারটি হাতে পাওয়া, একসাথে লুডু খেলা, পিকনিক করা। অনাবিল আনন্দে কিছু বছর কাটিয়ে দেয়া……
জীবনে বিচ্ছেদ-পর্ব দেখার শুরুটাও বোধহয় সেখানেই হয়। প্রিয় ও প্রিয়তর মুখগুলোর জীবন ও স্বপ্নের টানে দূরে চলে যাওয়া আর ‘কিছু’র অপেক্ষায় আমার বসে থাকা।
শেষ থেকে নতুন কিছুর সূচনা। একটু একটু করে বড় হওয়া আর মানুষের দুঃখের অংশীদার হওয়া, তারপর কিভাবে যেন তার সাথেই মিশে যাওয়া। প্রিয়তর থেকে প্রিয়তম হওয়া। অপেক্ষার পালা শুরু হওয়া আর প্রতীক্ষার মানে বুঝতে শেখা।
এমন কি চাওয়ার ছিল! নিশ্চয়ই ছিল, নাহয় এমন কেন হলো? বহু দিনের আকাঙ্ক্ষার পাখিটা আকাশে ডানা মেললো, রঙিন দুনিয়ার রঙের উপর আরেক রঙের আস্তরণ পরলো, কত রঙ মিলে-মিশে একাকার হলো…… তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়া কিছু দিন, নিজের অক্ষমতায় গুমড়ে পড়ে কাঁদতে থাকা, তারপর ধীরে ধীরে রঙ গুলো ফিকে হয়ে যাওয়া……
তারপর একদিন সব রঙের উপর কালো রঙ ঢেলে দিয়ে, কালো মেঘে আকাশ ঢেকে, ঘুড়ির সুতা কেটে যায়……! পাঁপড়ি গুলো ঝরা শুরু হয়। না চাইতেও যৌবনের হাওয়া গায়ে লাগে। এখন সবই পরিণত, আগের চেয়ে অনেক সুস্থির আর স্থির ফেলে আসা সময় গুলো। সময় নাকি নদীর স্রোতের মতো, বয়ে চলে যায় সাথে নিয়ে স্মৃতি গুলো, জোয়ারের সাথে আছড়ে পড়ে স্মৃতির বালুকাবেলায়।
একটা সীমা পার হয়ে যাবার পর বয়সের পার্থক্যটা আর তেমন কোন কারণ হয় না, বড় বোনরাই তখন আপন বান্ধবী হয়ে যায়ে, তাঁদের সাথে জীবনটা ভাগ করে নেয়া যায় যা হয়ত কোন কোন অংশে চরমতর কাছের বান্ধবীর সাথেও সম্ভব না। কিন্তু তখন কিসের মোহে যেন সে বোধটি কাজ করে না। আজ পরিণত জীবনে তা চোখে পড়ছে, কিন্তু নদীটা তত দিনে অনেক দূরে চলে গিয়েছে।
চারপাশের জগত আজ বড়ই অন্যরকম। কৈশোরে বোনের বিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি,কেবল আড্ডা মারার উপলক্ষ ছিল মাত্র। আজ পরিণত বয়সে বোনের বিয়ে মাথায় কেবল ‘কাজলা দিদি’র লাইন গুলোকেই ঘুরপাক খায়িয়ে দিয়ে যায়। কাছের মানুষ গুলো দূরে চলে যাওয়া আর দূরের মানুষ গুলো কাছে আসা। সম্পর্কের সুতো গুলো একটি একটি করে ছিঁড়তে থাকা আর বার বার জপতে থাকা-
“একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।”
(শঙ্খনীল কারাগার ঃ হুমায়ূন আহমেদ)
জানালার পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী দেখলে আসলেই বোঝা যায় – জীবন নদীর মতো। আপন গতিতে চলতে থাকে, কখন যেন বাঁক নেয়, আমাদের কারো সাধ্য নেই সে বাঁককে ফেরাবার। তারপর চলতে থাকে, কখনো হয়ত আবার বাঁক নিবে- কিন্তু তাতে তো আর ফেরা হবে না! নদী কি কখনো যে বাঁক থেকে এসেছিলো তার সাথে মিশবে?! জীবন বড়ই আজব! দু’পাশে ধানক্ষেত রেখে যখন নদী বয়ে চলে যায় তখন শুধু পথের পানে চেয়ে থাকি আর আজ পরিণত বয়সে এসে সেই না-দেখা দু’পাশে ধানক্ষেতের জন্য মন কাঁদে। আজ বড় ইচ্ছে করে নৌকায় বসে বৃষ্টিতে ভিজতে…………
জীবনের সাথে মিলে যাওয়া খুব প্রিয় কিছু লাইন-
“কিছুই তো আর যায় না শোনা, কার কথা যে বুঝবে বলো
বুঝতে হলে কথার মানে চেনা পথের বাইরে চলো……
………
তবু কিছু যায় না বলা, শব্দ খেলায় কেবল ফাঁকি
কথার পিঠে কথা সাজাই, আমরা এখন একলা থাকি”……………
চমৎকার লাগলো 🙂
ভালো লাগলো 😀 ধন্যবাদ :beshikhushi:
অনেক ভাল লাগলো, অনেক সুন্দর লেখার স্টাইল তোমার।
বানান বিভ্রাট:
কিভাবে>কীভাবে
পিছে পরে>পড়ে
পাপড়ি>পাঁপড়ি
আকাঙ্খা>আকাঙ্ক্ষা
বামপাশের উইজেট থেকে সরবের ‘বানান বিভ্রাট’ সিরিজে চোখ বুলিয়ে নিতে পারো। 😀
🙂 ধন্যবাদ 🙂 (ভালো লাগার জন্য)
😀 ধনবাদ 😀 (প্রসংসার জন্য)
🙂 ধন্যবাদ (ভুল ঠিক করে দেয়ার জন্য) 🙁 ঠিক করে দিচ্ছি 🙁
আমি বলার অপেক্ষায় ছিলাম- আমার ‘র’ ও ‘ড়’ এর উপর একটা ক্লাস লাগবে 🙁
আপু-
১।আস্তরণ পরলো। পড়লো নাকি পরলো?
২। ‘কিভাবে’ কি সব সময়ই ‘কীভাবে’ হবে নাকি ‘কি’ ‘কী’ এর মতো সময়ভেদে আলাদা হবে?
বানান বিভ্রাট
দুইটার উত্তরই এখানে পাবা। 🙂
:crying: :crying: :crying:
আপু ‘পাপড়ি’তে তো কোথাও চন্দ্রবিন্দু পেলাম না। 🙁
ধরা খাইছি দেখি। 😛
পালাই!
চমৎকার
ভালো লেগেছে 😀
পড়ার জন্য আনন্দিত :happy:
অতি খুশি মন্তব্যে :beshikhushi:
ধন্যবাদ :guiter:
দারুণ লাগল আপু :clappinghands:
অনেক অনেক ধন্যবাদ 😀 আনন্দিত :happy: