এলোমেলো চিঠি

(ঘুমের ঘোরে কী না কী লিখে ফেলেছি কে জানে? জানি, সাহিত্যের স-ও হয়নি। আগেই বলে দিচ্ছি পড়ে সময় নষ্ট হলে কিন্তু আমি দায়ী নই।)

এখন তিনটের বেশি বাজে। শরীরটা খুব বেশি একটা ভালো নেই। মাত্র জ্বর থেকে উঠলাম, বুঝতে পারছি, হিলিং প্রসেস এখনও শেষ হয়নি। ধকল সামলাতে আরও দু একদিন লাগবে। সকালে কিছুটা শরীরচর্চার প্রয়োজন ছিল, এখন আর হবে বলে মনে হচ্ছে না। একটু আগে আবার শুনলাম নীল আর্‌মস্ট্রং মারা গেছেন। আরও কী শুনতে হবে কে জানে!?

আজ কিছুদিন ধরে কিছু লেখছি না। হয়তো লেখা আসছে না। ভাবছি কী লেখা যায়। তাও বুঝতে পারছি না। অনেকক্ষণ শুয়েছিলাম। পুরনো কথাগুলোই মনে আসছিলো। কিছু চাওয়া, কিছু না পাওয়া আর কিছু পেয়েও না পাওয়ার হিসেব মেলাচ্ছিলো মন। অনেক ভেবেছিলাম এই চিন্তাগুলো বাদ দিই। কিন্তু আজ কী হল কে জানে, মন কিছুতেই কথা শুনছে না। মাথার ভেতর অনেকগুলো স্মৃতি একসাথে উঁকি দেয়ার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু ঐ জানালাটা বোধহয় বড় ছোট। তাই জট বেঁধে যায়।

কী করা যায়?

একটা চিঠি লেখা যায়। হুম, একটা চিঠি। কিন্তু কার কাছে লিখব? কে পড়বে আমার চিঠি? কেই বা পৌঁছে দেবে? কেউ আবার ছিঁড়ে ফেলে দেবে না তো?

সব চিঠি কী পড়তে হয়? কোনো চিঠি কী নিজের কাছে রাখা যায় না?

হয়তো না, অথবা হয়তো মানুষ রাখতে চায় না। হয়তো সব চিঠি পাঠাতেও হয় না। হয়তো সেই প্রাপক মানুষটি আড়াল থেকে দেখে ফেলে।

নাহ্‌, আবারো জট ধরে যাচ্ছে মাথায়। একসাথে এতো কিছু ভাবা কি সম্ভব? আমার ছোট্ট মাথায় আবার এতো কিছু ধরে না।

তবু কেন যেন চিঠি লিখতেই ইচ্ছে করছে। সেই চিঠি, যে চিঠি লিখে পাঠানোর দুশ্চিন্তা থাকবে না, চিঠি ছিঁড়ে ফেলার ভয় থাকবে না, পড়ার তাগাদা থাকবে না। অবচেতনার জগতে কেউ এসে টুক করে পড়ে নেবে। আচ্ছা, নীলকে লিখলে কেমন হয়? সে তো এখন মুক্ত, বন্ধনহীন…

শ্রদ্ধাস্পদেষু নীল,

নীল বললাম বলে রাগ করবেন না। অবশ্য করলেই বা কী করতে পারি? আমি এমন নই যে শুধু …… থাক্‌। আমাকে অহংকারী ভাবার কোনো কারণ নেই। ভালোবেসে তো কত মানুষই আপনাকে নীল বলে ডাকে। আমি নীল বললেই দোষ? কী বলব বলুন, আপনার বাবা মা যে নাম রেখেছে, তাতে নীলের পরেরটুকু অত কষ্ট করে বলতে পারবো না।

কী করবো বলুন, ভালো লাগছে না। ভাবনাগুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে আসছে! ঠিকমত গুছিয়ে লিখতেও পারছি না। আসলে কখনো লিখিনি তো, তাই লেখার হাত এত কাঁচা। জানেন তো, আজকাল আর চিঠি লিখতে হয় না। সব মেইল করলেই হয়ে যায়। তাই কবুতরগুলোও আকাশে আর উড়ে বেড়ায় না। ওরা বড্ড অভিমানী। আজকাল সব কিছুই কেমন যেন অভিমানী হয়ে উঠছে। ঐ যে পদ্মা, কেমন অভিমান করে শুকিয়ে যাচ্ছে। ফেলানীটাও অভিমান নিয়ে গিয়েছিলো। আমাদের হুমায়ূন, মিশুক, তারেক, ফরিদী – ওরাও কী অভিমান করেছিলো? অথবা সেই শিশু দুটোও কি এখনো অভিমান করে আছে, যাদের বাবা তাদের নদীতে ফেলে দিয়েছে? তুমিও কি অভিমান করেছো?

অভিমান করাটাই তো মানুষের স্বভাব। আচ্ছা মানুষ কেন অভিমান করে?

ছোটবেলায় একবার অভিমান করেছিলাম এক বন্ধুর উপর। দীর্ঘ ১০ বছর পর আজও সেই অভিমান ভাঙ্গিনি। সে ভেঙ্গেছে কিনা জানিনা। আমি নিজেই কী অনেক অভিমানী? আজ খুব দুঃখ হচ্ছে। বন্ধু, আর অভিমান করিস না। কাল যখন তোদের ছেড়ে চলে যাব, তখন সবাই অভিমান ঝেড়ে ফেলে দিবি। তাহলে আজ কেন নয়?

দেখতো নীল, কথা বলছি তোমার সাথে, আর চলে গেলাম কোথায়! তুমি কিন্তু অভিমান করো না বলে রাখলাম। আজ সারাদিন সবাই তোমাকে শ্রদ্ধা জানাবে, তোমার অনেক গুণকীর্তন করবে। গম্ভীর গলায় বলবে “May you rest in peace….”, বড় বড় প্ল্যাকার্ডে তোমার উক্তি লেখা থাকবে, “One little step for a man………”। তোমার ছবির নিচে থাকবে তোমার কথা, “আমার বিশ্বাস, প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক হৃদস্পন্দন বরাদ্দ থাকে। আমি এর একটিও নষ্ট করতে চাই না।” আমি কিন্তু এর কোনোটাই বলবো না, বিশ্বাস করো এর কোনোটাই করবো না।

জানো, অভিমান করে আর লাভ নেই। কারণ কেউ তোমার জন্য দাঁড়াবে না। পৃথিবী তোমার জন্য থেমে থাকবে না। এই তো দুদিন, তোমাকে নিয়ে কান্নাকাটি অথবা খারাপ লাগা; এই শেষ। সাগর রুনি- ওদের জন্য কথা বলাও সেই দুদিন। তোমাকের এঁদের কথা বলে কী হবে? খামোখা সময় নষ্ট। তার চেয়ে আমার দেশের কথা বলি। আমার দেশের মানুষ, মুখস্তবিদ্যায় কিছুটা কাঁচা। বেশিদিন মনে রাখতে পারে না। এই দেখোনা, যাদের কথা বললাম,তাদেরকে কী কেউ মনে রেখেছে। আপন বাবাই তো তার সন্তানকে ভুলে যায়। শামসুর রাহমানের ফটোগ্রাফ পড়নি তো, জানবে কেমন করে…

ভালো থেকো। অভিমান করো না।
বিদায় নীল বিদায়…

মারুফ আহমেদ সম্পর্কে

মহাজ্ঞানী অথবা দার্শনিক নই...... সব কিছু দেখি আমার সরল খোলা চোখে...... আজ তারুণ্যের সাথে একাত্মতা ...... পরিবর্তনের স্লোগান ধারণ করি সত্যের নিরিখে......
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ, সাহিত্য, হাবিজাবি-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

3 Responses to এলোমেলো চিঠি

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    নিয়মিত লিখছেন – এটা ভাল লাগছে। আরও ভাল ভাল লেখা আশা করছি আপনার কাছ থেকে। 🙂

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    শুরুতেই এত ভনিতা করলে আসলেই কে পড়বে?! 😛

    খুব একটা ভালো হয় নাই। আরও পোস্ট আশা করি। আগেরটা বেশ ভালো হয়েছিলো

    • মারুফ আহমেদ বলেছেনঃ

      ভাইয়া, পোস্ট কীভাবে ডিলিট করতে হয়? খুঁজে পাচ্ছি না।

      এই পোস্ট টা ডিলিট করা দরকার। আমি নিজেই বুযতে পারছি না, এই খিচুড়ি মার্কা পোস্ট আমি কিভাবে লিখলাম। এভাবে সরবের লেখার মান খারাপ করায় আমি নিজেই লজ্জিত। এই লজ্জা দূর করার জন্য পোস্ট ডিলিট করা জরুরী।

      প্লিজ হেল্প মি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।