মাটি থেকে অনেক উপরে, কম করে হলেও এক দেড়শ ফুট উপরে ঝুলে আছি। আরো খানিকটা উপরে থাকলে হয়তো আকাশটাকেই আপন করে নিতাম, তাও পারছি না। মাটির মানুষ, আকাশে কি মন জুড়ায়? না পারছি মাটিটাকে আপন করে নিতে না আকাশটাকে! ঐ মাটিটাকে কেন যে এতো আপন মনে হয়, কেন যে এতো লোভ হয় ঐ মাটিটার উপর, কেন যে বৃষ্টির দিনের কাঁচা মাটির গন্ধের আশায় মনটা উচাটন হয়ে থাকে, বুঝি না।
আকাশ, ছোটবেলা থেকেই ঢাকা শহরে মানুষ, বড়লোক মা বাপের আদরের ছেলে, ধনীর দুলাল যাকে বলে। বন্ধুরা আকাশকে তেমন পছন্দ করে না, সবার ধারণা, আকাশ বেশি আরামে আছে বলেই তার এই রোগ, মাটি মাটি রোগ! উপরের কথাটুকু কোন এক দিন আকাশের নোটবইয়ের কোন এক কোনায় লেখা দেখেছিলাম, অন্যমনস্ক লেখা।
বিশতলা ভবনের ষোলতলায় আকাশদের বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট। আকাশের রুম থেকে ধরতে গেলে পুরো ঢাকা শহরটাই দেখতে পাওয়া যায়। সমস্যা হল, উপর থেকে দেখলে শুধু উঁচু উঁচু ভবনগুলোই চোখে পড়ে। অলি গলি আনাচে কানাচের দুঃখ গুলো চোখে পড়েনা, এই শহরের ভবনের তলায় ঢেকে রাখা দুর্গন্ধটুকু নাকে পৌঁছে না।
আকাশের কোন দুঃখ নেই। অন্তত আমরা- বাসে চড়া, সস্তা রেস্টুরেন্টে খেয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো দুঃখ বলতে যা বুঝি তা নেই আকাশের। আকাশের যা আছে তা হচ্ছে লোভ, কাঁচা মাটির লোভ।
ছোটবেলায় যখন এসি ফিট করা আবদ্ধ গাড়িতে করে আকাশ ঢাকার বাইরে পাড়ি জমাতো, তখন রাস্তার পাশের নানারকম ধান-পাটের ক্ষেত অথবা খোলা মাঠ তাকে বড্ড টানতো, তারচাইতেও বেশি টানতো ক্ষেত শেষে সাগরের বুকে এক টুকরো দ্বীপের মতো জেগে থাকা সবুজ ঝোপঝাড়ের মতো জিনিসটা, যার ফাঁকে ফাঁকে কিনা আবার ঘর বাড়ির কিছু অংশও দেখা যায়! ঠিক যেন National Geography তে দেখা পিঁপড়ার ঢিবিটির মতো, ছোট ছোট ঘরগুলো যেন লাল লাল পিঁপড়া,
মাথা বের করে জানান দিচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব! কি আশ্চর্য! ছোট্ট আকাশের কাছে সেগুলো ধরা দিত একেকটা রহস্য ভাণ্ডার হিসেবে! মনে হত, একেকটা সবুজ ঢিবি হচ্ছে একেকটা অনাবিষ্কৃত রহস্যময় রাজ্য! সেই রহস্য ভেদের আশায়, পিঁপড়ার ঢিবিতে উঁকি মারার নেশায় আকাশ লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো দামী গাড়ির জানলার কাঁচে নাক ঘেঁষে।
আকাশ এখন বড় হয়েছে। সে জানে ঐসব সবুজ ঢিবির ভেতর কোন রহস্য নেই, আছে শুধু হাহাকার। কষ্টের হাহাকার, অভাবের হাহাকার, হীনতার হাহাকার, অন্ধকারের হাহাকার। আর সেই হাহাকার পাতায় পাতায় ভর করে, ঢাকা শহরের অসংখ্য ডাস্টবিন ছুঁয়ে ঠিকই এসে ঘিরে ধরে অট্টালিকা সদৃশ বহুতল ভবন গুলোকে, অতঃপর ভেন্টিলেটর এয়ারকুলার কোন না কোন ফাঁক দিয়ে ঠিকই ঢুকে পড়ে ভেতরে। সবাই হয়তো টের পায় না, কিন্তু আকাশ পায়, আকাশ ঠিকই শুনতে পায় তাদের অভিযোগ, অভিসম্পাত! এখন আকাশ জানে, ঐ মাটিটাকে আপন করে পেতে হলে, অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে, স্বার্থত্যাগের পথ, অনেক হাহাকার কে হাস্যধ্বনিতে রূপান্তরিত করতে হবে, অনেক কিছুকে বদলাতে হবে। এই বহুতল ভবনে বসে আর যাই হোক হাহাকারহীন বাতাস, আর নিশ্চিত এক মুঠো মাটি অন্তত বেঁচে থাকতে পাওয়া যাবে না।।
-ঘাস
মনটা প্রায় খারাপই হয়ে যাচ্ছিলো, শুধু শেষের কথাগুলো নতুন করে আশা জাগালো, ওদের কাছে পৌঁছুতে হলে যে ওদের সাথে মিশতে হবে, এই বোধটা আমাদের সবার মাঝে যেদিন পৌঁছাবে, সেদিনই একটা কিছু হবে, আমার বিশ্বাস……
লিখা চলুক, ভালো লাগলো বেশ……
লেখনী খুবই সুন্দর, অন্যধারার।:) শুরুটা একরকম আর শেষ আরেক রকম। 🙂 পড়ার সময় মাথায়ই আসে নাই শেষ এমন হতে পারে। 😀
ছোট লেখা কিন্তু শক্তিশালী, না বলে অনেক কিছু বলে দিলো……
খুব ভালো লেগেছে :guiter:
ভালো লেগেছে 😀
দারুণ লাগলো! 🙂
তাড়াহুড়ো করে একটা মন্তব্য করে যাব ভাবছিলাম, মনোযোগ দিয়ে পড়তে বাধ্য হলাম। সুন্দর লেখেন তো আপনি! 🙂
পিঁপড়ের ঢিবিতে পৌঁছানোর ভাবনা বেঁচে থাকুক।
ভালো লিখেন আপনি। আরও অনেক পড়োবো আপনার লেখা-অপেক্ষায় রইলাম। 🙂