ছোটবেলা বছর শেষে যখন নতুন ক্লাসে উঠতাম, তখন বাংলা বই হাতে নিয়ে বড্ড অবাক হয়ে যেতাম। আমার বন্ধুরা যেখানে নতুন নতুন গল্প পড়ায় ব্যাস্ত তখন আমি বসে বসে পাতা উল্টাই। আমার কাছে কোনকিছুই নতুন মনে হয়না, কি করে হবে! বইয়ের সকল গল্পই যে আমার জানা।
তখনকার বিকেলবেলাটা আমার কাছে ছিল অসাধারণ একটি সময়। বিকেলবেলা সারা পাড়া ঘুরে বেড়ানো, সমবয়সী ডানপিটে ছেলেমেয়েদের সাথে সারাক্ষণ ছুটোছুটি মাতামাতি। অথবা আপুর কাছে গল্পের বায়না ধরা।
আমার আপু আমার থেকে চার বছরের বড়। আপু অসাধারণ গল্প বলতে পারত। আর আমি ছিলাম গল্পের পোকা। বড় ভাইবোন থাকলে সাধারনত ছোটরা তাদের মুখ থেকে গল্প শোনার পরিবর্তে তাদের বইগুলোই পরে নেয়। কিন্তু আমি যখন ওর বইগুলো দেখতাম আমার ভয় হত, মনে হত এতো মোটা মোটা বই! কি করে পড়ে মানুষ এসব। এ সকল বই এর মাঝে যে এতো অসাধারণ সব গল্প থাকতো তা আমার ধারনাতেও ছিল না। তাই আমি যখন গল্প শুনতে চাইতাম, আর আপু মজার মজার সব গল্প বলে যেত, আমি অবাক হয়ে ভাবতাম ‘আপু এত্ত সুন্দর গল্প বলতে পারে কিভাবে!’ আপু যে আমাকে শুধু পাঠ্যবইয়ের গল্পগুলোই বলত এমন নয়, ও আমাকে অনেক গল্প শুনিয়েছে। গল্পের বই পড়ার মতো আমার ধৈর্য্য ছিলনা বলেই হয়তো শুনে আমি বেশি আনন্দ পেতাম, অবাক হতাম, আর ও আগ্রহ নিয়ে আমাকে শোনাত। গল্প শুনতে শুনতে কতদিন দুজনে মিলে মন খুলে হেসেছি, আবার মন খারাপ করে বসেও থেকেছি।
খুব সম্ভবত ক্লাস নাইনের পাঠ্যবইতে একটি গল্প ছিল দুটো চড়ুই পাখিকে নিয়ে, পাখি দুটো একটি ভাঙ্গা বাড়ির পাঁচিলে খড়কুটো দিয়ে বানানো বাসায় থাকতো, ঘটনাক্রমে মানুষের নিক্ষেপ করা বোমায় তাদের বাড়িটি ভেঙ্গে যায়, বাবা পাখিটি বেঁচে যায় কিন্তু মা ও বাবু পাখি গুলোকে সে আর কখনই খুঁজে পায় না। এই গল্পটি যখন আপুর কাছে আমি প্রথম শুনি তখন আমি অনেক ছোট, ফোর ফাইভে পড়ি হয়তো। কি যে কষ্ট পেয়েছিলাম, অনেক অনেক মন খারাপ হয়ছিল সেদিন। অনেকদিন পরে যখন আমি আমার নিজের বইতে সেই গল্পটি আবার আবিষ্কার করলাম, তখন খুবই ভালো লেগেছিল! গল্পটা নতুন করে পড়ে আমি দুটো আনন্দ একসাথে পেয়েছিলাম, একটি হল অসাধারণ এই গল্পটি পড়ার আনন্দ, আরেকটি হল আমার অনন্য একটুকরো স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়ার আনন্দ। এমন হয়েছে অনেকবার।
এখন আমি অনেক বড়, আমার আপার বিয়ে হয়ে গেছে অনেকদিন, আমার এখন একটা ছোট ভাগ্নেও আছে, দুঃখের বিষয় সে গল্প শুনতে একেবারেই পছন্দ করে না! তবে সে কবিতা শুনতে খুবই পছন্দ করে, আমার আপা সবসময় ওঁকে কবিতা শুনিয়ে ঘুম পারায় কিনা।
জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত, বর্তমানের প্রত্যেকটি সেকেন্ড আমি অনেক সুন্দরকরে উপভোগ করার চেষ্টা করি, তা সেই মুহুর্ত যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন! বলাতো যায়না, ভবিষ্যতের কোন এক সময় কোন এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, হয়তো তুচ্ছ কোন ছুতোর উছিলায় বর্তমানের এই সামান্য মুহুর্তটি একখণ্ড মিষ্টি স্মৃতি হয়ে ধরা দেবে, অতীতের আমিকে রঙিন করে উপস্থাপন করবে ভবিষ্যতের সেই আমির সামনে! যেমনটি হয়েছিল চড়ুই পাখিদের সেই গল্পটি পড়তে গিয়ে। বলাতো যায়না…
– ঘাস
এক ঝলক মজার স্মৃতি। ভাল লাগল।
🙂
সেই গল্পটি। মহাপতঙ্গ- আবু ইসহাক।
আমি পড়েছিলাম ক্লাস সিক্স কি সেভেনে থাকতে। পড়ার শুরুতে বুঝি নি, এটি বিমানের কথা। ভেবেছিলাম রূপকথা জাতীয় কিছু। পরে বুঝেছি এবং প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি। আবছা মনে পড়ে, কোন এক রাতে এই গল্পের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েছি, সেই বাবা চড়াইয়ের কথা ভেবে। নিজের প্রিয় আব্বুকে সেই চড়াইয়ের স্থানে ভেবে চোখে পানি চলে এসেছে।
গল্পটি ক্লাস নাইএর ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটু আধুনিক ধরনেরই ছিল। বিজ্ঞান নিয়ে তখন চরম আগ্রহ। ড: মু. জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশনগুলো গিলছি। তখন, বিজ্ঞানের অভিশাপ নিয়ে এই গল্পের পটভূমি দারূণ নাড়া দিয়েছিল মনে।
ঘাস’এর উচিত সরবে নিয়মিত হয়ে যাওয়া। অনেক ভাল লাগলো পড়ে। :love:
অনেক ভালো লেগেছে 😀
নিয়মিত লিখবেন আশা করি 🙂
আরে, আগে থেকেই বাংলা বইয়ের গল্প পড়ে শেষ করার অভ্যাস তো আমারও ছিল! 😀 তবে প্রবন্ধ আর কবিতাগুলি পড়তাম না, একদম ভাল লাগতো না পড়তে। 😛
তবে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’টা আগে থেকে পড়ে ফেলার চেষ্টা করার সময় কিঞ্চিৎ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলুম আর কি। :babymonkey: 8)
গল্প শোনার অভ্যাস অনেক ছোটবেলায় ছিল, বিশেষ করে ইংরেজি গল্পের বই নিজে পড়তে কষ্ট হত দেখে অনেক কাকুতি-মিনতি করতাম পড়ে শোনানোর জন্য। নাহলে বসে বসে ছবি দেখতাম শুধু। 🙁
আপনার কাছ থেকে আরও ভাল ভাল লেখার আশায় থাকলাম। 🙂
খানিকটা স্মৃতিকথন………… সুন্দর লেগেছে……… 🙂
আমিও বড়দের বই পড়ে ফেলতাম……… :happy:
স্মৃতিকথন! সবসময়ই নাড়া দেয় অন্যরকম করে! কেন জানি ভীষণ মনে পড়ে ছেলেবেলাটা!! ভীষণ রকম মনে পড়ে…… 🙁