রবির কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম, কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছি না, খাঁটি বাংলা ভাষায় বলা কথা গুলো খুবই অচেনা লাগছে , এত দিনের পরিচিত মানুষটাকে হঠাৎ করেই খুবই অপরিচিত লাগছে, এই কি সেই রবি!! আমি কিছুই মেলাতে পারছি না ।
আজ সকালে হঠাৎ রবির ফোন পেলাম, মাঝে দুই তিন দিন কথা হয়নি, কিন্তু এত সকালে ফোন পেয়ে কিছুটা অবাক ও অনেক খানি বিরক্ত হলাম, এত সকালে ঘুম একবার ঘুম ভাঙ্গলে আর কি ঘুম আসে? এত স্বাদের ঘুম ছেড়ে কে চায় উঠতে! তা ও যদি হয় রবির মত কারো ফোন, কোন এক রমণীর ফোন হলে ও কথা ছিল! ফোন ধরতেই ঠিক তখনই ওর বাসায় হাজির হতে বলে, আমি চরম বিরক্ত হয়ে বললাম
– পারব না, তোর সমস্যা তুই আমার বাসায় আসবি, আমি ১১ টায় উঠে তারপর তোর সাথে কথা বলব, তার আগ পর্যন্ত তুই আমার রুম এমনকি বাসায় ঢুকবি না, বাসার নিচে বসে থাকবি।
– তুই এই রকম!!………………
আমি কান থেকে ফোন সরিয়ে ফেললাম ,খুব ভাল করেই জানি এখন বন্ধুত্বের উপর বিশাল লেকচার দিবে, আমি ফোন কেটে রবিকে একশ একটা গালি দিয়ে ওর বাসায় যাবার জন্য রেডি হলাম ।বন্ধু বলে কথা!!
বাসায় এসে ওর কথা শুনে আমি রীতিমত আকাশ থেকে পড়লাম, রবি আর আমি সেই ছোটবেলা থেকে বন্ধু,সেই বাল্যকাল , কিশোরকালের যাবতীয় সকল অপকর্ম আমরা দুজন এক সাথে করেছি, আমার সেই আবাল্য পরিচিত বন্ধুটির কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম ।
রবির জীবনের প্রতি আর কোন আগ্রহ নেই, ও মরে যেতে চায়, কাল ও আত্মহত্যা করবে , এবং সেই কারণেই আমাকে ডেকেছে ।
– এত দিন আমি তোকে কিছু বলিনি, জানি তুই অনেক কষ্ট পাবি কিন্তু বিশ্বাস কর আসলে বলতে পারি নি।
– তুই এই বিষয়টা আমার কাছে লুকিয়ে রেখেছিস!! আমি তোর এত কাছের মানুষ হয়ে ও কিছুই জানতে পারলাম না!! তুই না বন্ধুত্ব নিয়ে এত বড় বড় লেকচার দিস!! আর এই তোর বন্ধুত্ব?
– জানি ব্যাপারটা ঠিক হয়নি, কিন্তু যাই হোক আমাকে মাফ করে দিস।
– মাফ না হয় করলাম কিন্তু তুই হঠাৎ মরতে চাচ্ছিস কেন?
– তোর কাছে হঠাৎ মনে হতে পারে কিন্তু বিষয়টা আসলে হঠাৎ হয় নি । আমি জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি, জীবনের কোন কিছুই আমাকে আর আকর্ষণ করে না , জীবনের সব রঙ এখন আমার কাছে সাদা কাল লাগে , কোন কিছুই আর ভাল লাগে না।আমার জীবনের সব রঙ হারিয়ে গেছে, কোন কিছুতেই আর আগ্রহ পাই না, সব কিছুই কেমন যেন একগেয়ে লাগে, এত মানুষের মাঝে ও নিজেকে খুব একা একা লাগে, এই একাকীত্ব আমাকে তিলে তিলে মারছে,এই অবস্থা আমি আর মেনে নিতে পারছি না। জানি তুই ভাবছিস আমি হঠাৎ করে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিন্তু ব্যাপারটা তা না, আমি বেশ কয়েকদিন যাবত চিন্তা ভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি খুব ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে তবেই ঠিক করেছি।
আমি অসহায় বোধ করতে লাগলাম , মাথায় কিছুই আসছে না, এত দিনের পরিচিত মানুষ হঠাৎ করে অপরিচিত কথা বলা শুরু করেছে , এত দিন এক সাথে থেকে ও বুঝতে পারলাম না ওর জীবনের প্রতি আগ্রহ এত কমে এসেছে! নিজেকে কেমন জানি অপরাধী মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে ওর এই অবস্থার জন্য আমি নিজে ও দায়ী। হয়তবা আরও কিছু সময় ওর সাথে থাকলে ও নিজেকে এত একা মনে করত না।
– দেখ , আমি জানি তোর কিছুটা একাকীত্ব আছে কিন্তু তাই বলে তুই আমাদের কথা চিন্তা করবি না ?
– আমি সবার কথাই চিন্তা করেছি , কিন্তু আমি আর পারছি না, এত কষ্ট সহ্য করা আমার পক্ষে আর সম্ভব না , তুই আমাকে কিছু বলে লাভ নেই, তুই আমাকে ভালভাবেই চিনিস, আমি যা বলি তাই করি ।
আমি খুবই অসহায় বোধ করলাম, এত সত্যি ও যা বলে তাই করে, আমি তবু শেষ চেষ্টা করতে থাকলাম
-তোর মা বাবাকে বলেছিস?
-তোর কি কোন দিন বুদ্ধি হবে না? মা বাবা কে বলে কেউ এই কাজ করে? আর মা বাবা কে বললে তোকে ডাকলাম কেন?
আমি কিছুটা অপমানিত বোধ করলাম।
-তো আমাকে কেন ডেকেছিস?
-মা বাবার কাছে সংবাদটা পৌঁছে দেবার জন্য, ঘটনা হবার পর তুই মা বাবাকে গিয়ে বলবি।
আমি আঁতকে উঠলাম, এই কাজ আমি কোন দিনই পারব না!রবির বাবাকে দেখলেই আমার পিলের জ্বর উঠে যায়, তাকে এই কথা বলা, না বাবা, সে আমার পক্ষে সম্ভব না।
– সরি, দোস্ত দরকার হলে তুই তোর সাথে আমাকে আত্মহত্যা করতে বল কিন্তু এই কাজ করতে বলিস না, তা ছাড়া তোর বাবাকে আমি প্রচণ্ড ভয় পাই
– তুই বন্ধু হয়ে………………………
রবির লেকচার শুরু হল, আমি মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম, এই শেষবারের মত ছেলেটা লেকচার দিচ্ছে , কি আর করার। বন্ধু বলে কথা, এত কঠিন কাজটা করতেই হবে।
-এখন যা, আমাকে অনেক কিছু জোগাড় করতে হবে,
বলেই আমাকে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিল।
২. পরদিন দুপুর ৩টা ১৪ মিনিটে আমার প্রান প্রিয় বন্ধু “রবি” আত্মহত্যা করে, মগবাজার কাজী অফিসে সে নিজের হাতে নিজের মৃত্যুর পরোয়ানায় সাক্ষর করে,মেয়েরা অবশ্য একে “বিয়ে” বলে! আমি পাশে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের প্রান প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু দেখলাম, কিছুই করতে পারলাম না, মৃত্যুর পর কাজিসাহেব দোয়া পরলেন, আমি কান্না ধরে রাখতে পারলাম না, এত কাছের একটা মানুষ মরে গেল , নিজেকে কিভাবে সান্ত্বনা দিব বুঝতে পারছি না! আর এই খবর রবির মা বাবাকে কিভাবে দিব তাও জানি না, নিজের সন্তানের মৃত্যু তারা কিভাবে মেনে নিবেন কে জানে!!আমি প্রান ভরে নিজের বন্ধুর জন্য দোয়া করলাম। আহ ছেলেটা কত ভাল ছিল!!
বিঃদ্রঃ পুরুষ মানুষ দুই প্রকার
১) জীবিত ২) বিবাহিত (নচিকেতা)
হাহা!!! ভালো লাগছে।
ফরম্যাটিং এর অবস্থা তো খারাপ ভাইয়া!
তোমার লেখাই তো বাকিরা পড়বে। একটু কষ্ট করে ফরম্যাটিং ঠিক করলে সুবিধা। পড়ে আরাম পাওয়া যায়।
not html সেকশনে গিয়ে প্যারা গ্যাপ ঠিক করা যায়
গ্যাপের অবস্থা এতটা খারাপ কিভাবে হইল বুঝলাম না!!!
এখন ঠিক করলাম।
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
শেষের টুইস্টটা আসলেই টুইস্ট ছিল। 😀
কিন্তু ফরম্যাটিং! এক প্যারা থেকে আরেক প্যারার মধ্যে গ্যাপ বেশি হয়ে গেছে।
ওহ্ আর ক্যাটাগরি ঠিক করে দিয়েন ‘বিবিধ’ বাদ দিয়ে অন্য কিছু।
😀
হা হা!! দুর্দান্ত!!! শেষটা পড়ে পুরাই আউলাইতো এবং পুলকিত হলাম!!! কী বিশাল সত্য কথা বলে দিলেন ভাইজান!! 😛
😛
হা হা! একদমই ভাবতে পারি নি এমন কিছু হবে শেষে……
ভালো লেগেছে বেশ! 😀
😀 🙂
হি হি হি…!!! নির্মল আনন্দ পাইলাম। :balancin:
:happy: