শারদীয় শুভেচ্ছা

এবার পূজায় আর কিছু না
চাই গো শুধু মা….
আমার পাণে মায়ার টানে
নেত্র মেলে চা
আমার গায়ের রংটা দেখে
সব মেয়ে দেয় দৌড়ই
তোর গা হতে রং কিছু ঋন
দিস ওগো মা গৌরী
পাওনাদারের ভয়ে ঘরের
বাইরে জেতে পারিনি
ওদের কেন নিস না তুলে
তুই না বিপত্তারিণী??
এই ইদানিং আমারও তো
হচ্ছে বোধন অকালে
ঘুম ভাঙে রোজ দুপুর বেলা
ঘুম ভাঙেনা সকালে
ক্লাসে গেলে স্যারে ধমকায়
বাসায় এলে বাপে
আমি নাকি পাহাড়সম
অলসতার মাপে
কিন্তু আমি সাধ্য থেকে
খাটনি বেশী করি
দুইটি হাতে পাউরুটি চা
সঙ্গে বই পড়ি
দশভুজা মা আমাকে তুই
আর দুটো হাত দিস
আর কতদিন শুনবো গালি
অলস লেবেনডিশ???
এবার পূজায় একটু এদিক
নেত্র মেলে চা…..
তোর কি আছে চোখের অভাব
ত্রিনয়না মা???
দুর্গোৎসবের এ আনন্দ মুখরতায় বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কমনার সঙ্গে সকলকে জানাই আন্তরিক শারদীয় প্রীতি, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা !

(কবিতাটি শ্রদ্ধেয় অনিক খানের লেখা)

বিবিধ তে পোস্ট করা হয়েছে | মন্তব্য করুন

ছুটে চলা…

গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করলাম বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল। সময় খুব দ্রুত কেটে যাচ্ছে। ফোর্থ ইয়ারের শেষ দিকে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ল্যাব প্রোজেক্ট আর থিসিসের চাপে যখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলাম না, তখন নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম, ‘এই তো আর কয়েকটা দিন।’ তারপর র‍্যাগের প্রোগ্রামগুলো একের পর এক চোখের পলকে শেষ হয়ে গেল। র‍্যাগ কনসার্টে জনের ‘আমার পৃথিবী’, জেমসের ‘সুন্দরী তমা’ আর তুহিন ভাইয়ের ‘কফি হাউজের আড্ডা’ শুনতে গিয়ে বারবার আনমনা হয়ে যাচ্ছিলাম। সত্যি এবার ভার্সিটি লাইফটা শেষ হয়ে গেল! যেদিন রেজাল্ট দিল, সেদিন যেমন খুশি হয়েছিলাম, তেমনি মনে হচ্ছিল জীবন থেকে হঠাৎ বড় একটা অংশ হারিয়ে গেল। প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় মুখ, শেষ বিকেলে ক্যাফেতে বেজে ওঠা প্রিয় গান- সব হঠাৎ হারিয়ে গেল। সকালে ঘুম থেকে উঠে বিরক্তি নিয়ে ক্লাসে যাওয়া কিংবা দুপুরের খাওয়া বাদ দিয়ে ল্যাব রিপোর্ট লেখা কিংবা বিকালের ল্যাব দেরিতে শেষ করে বাস ধরার জন্য দৌড়- কোন কিছুরই কোন তাড়া নেই। জীবন থেকে যেন হঠাৎ সব ব্যস্ততা উধাও! যে ব্যস্ততার জন্য এত বিরক্তি, এত রাত-দিন প্রার্থনা ‘কবে এর শেষ হবে?’- সেই ব্যস্ততার সমাপ্তিতে যেন ঠিক ততটাই ফাঁকা, শূন্যতার উদয় হল। তবে নতুন একটা জীবন শুরু হল আর সেই জীবনের নাম অনিশ্চয়তা!

চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটে চলা- এ এক অদ্ভুত মোহ! আপনি একের পর এক চাকরিতে অ্যাপ্লাই করেই যাবেন, একই সিভি সব জায়গায় ড্রপ করতেই থাকবেন- তবে কেউ কোন রিপ্লাই দিবে কিনা তা উপরওয়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারবেন না। তবে এখন বুঝতে পারছি বেকারত্ব বাংলাদেশের কত বড় একটা সমস্যা! তাই স্বপ্ন, লক্ষ্য সব বাদ। একটা চাকরি, মাথা ঠুকবার জন্য একটা ডেস্ক আর মাসে কিছু বেতন- এটাই যখন জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, স্বপ্নকে তখন বিসর্জন দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। তারপরও আশেপাশের সেই প্রিয় মানুষগুলোর অনেককেই দেখছি স্বপ্নের জন্য লড়ে যাচ্ছে। আমি কেন জানি তাদের মত সাহসী হতে পারছি না। আমার শুধু একটাই লক্ষ্য- ‘একটা চাকরি…একটা কিছু হলেই হল।’

মাস চারেক আগে এক সিনিয়রের সাথে কথা হচ্ছিল। উনি তখন মাত্রই একটা কোম্পানিতে এমটিও হিসেবে জয়েন করেছেন। উনাকে একরাশ শুভেচ্ছা জানানোর পর বললাম, ‘এখন তো তাহলে আপনার সব টেনশন শেষ। লাইফে সেটেল হয়ে গেলেন।’ উনি আক্ষেপ নিয়েই বললেন, ‘এই জব তো আমার প্যাশন ছিল না। কত হাই-ফাই স্বপ্ন ছিল। সব বাদ দিয়ে শেষমেশ এই জব জুটল। তাই করছি।’ কথা বলে যা বুঝলাম, উনার পরিবারের প্রত্যাশা আরও বেশি কিছু ছিল। কিন্তু জীবন তো প্রত্যাশার জালে আবদ্ধ থাকে না। লাইফ ইজ ফুল অফ সারপ্রাইজেস। লেটস লিভ ইট।

আর জীবনটা কেমন ধরণের সারপ্রাইজ তা বুঝতে পারলাম যখন একদিন হুট করে চাকরি পেয়ে গেলাম। পার্ট টাইম জব। লেভেল ২, টার্ম ১ এর ছেলেমেয়েগুলোকে পড়াতে গিয়ে নিজের সেই অতীত অস্তিত্বকে আবারও নতুন রূপে আবিষ্কার করলাম। খুব ইচ্ছে হত ওদের সাথে বেঞ্চে বসে পড়ব, লেকচার তুলব, তবে এবার আর কোন বিরক্তি থাকবে না! ক্লাসে যেদিন তাড়াতাড়ি লেকচার কাভার করে ফেলতাম, সেদিনই সুযোগ পেয়ে কথা বলতাম ওদের সাথে। ঘুরেফিরে সেই একই পুরনো আক্ষেপ- ‘কবে পাশ করব? কবে এর শেষ হবে?’ মনে মনে হেসে বলতাম, ‘এখনই ভাল আছ। এর শেষ দেখতে চেও না। এর শেষ কখনই মধুর নয়।’

জীবন এখন শুধুই ছুটে চলা। পার্ট টাইম জব ফুল টাইম হবে কিনা, আদৌ জব থাকবে কিনা, নতুন জব খুঁজব কিনা, দেশে কোন ভবিষ্যৎ আছে কিনা, বিদেশে চলে যাব কিনা- কতশত প্রশ্ন, কত দ্বিধা, কত হতাশা! মনের মধ্যে অবিরাম চলতে থাকা এই যুদ্ধের কবে যে শেষ হবে, কবে যে একটু নিশ্চিন্ত হব, কবে যে বিকেলের খোলা হাওয়ায় রিকশায় একটু একাকী, একটু স্বাধীন, একটু চিন্তামুক্ত মনে নিজের মত করে ঘুরে বেড়াতে পারব জানি না। এই অনিশ্চয়তার কোন সমাপ্তি কি আছে? শুভ সমাপ্তি? জানি না।

বিবিধ, স্মৃতিচারণ তে পোস্ট করা হয়েছে | মন্তব্য করুন

শূন্য থেকে এক: উদ্যোগ নিয়ে কথা কিংবা ভবিষ্যৎ গড়ার নিয়মকানুন – ১

[পিটার থিয়েলের ‘জিরো টু ওয়ান’ বই থেকে অনূদিত]

Image result for entrepreneurship

যে কারো চাকরির সাক্ষাৎকার নেয়ার সময়ে তাকে নিশ্চিতভাবে যে প্রশ্নটা আমি করি: “এমন কী আছে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার ব্যাপারে খুব সীমিত সংখ্যক মানুষ আপনার সাথে একমত হয়?”

প্রশ্নটা সোজাসাপ্টা হওয়ার কারণে শুনতেও সহজ মনে হয়। তবে আসলে এর উত্তর দেয়া খুব কঠিন। বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে প্রশ্নটা কঠিন হওয়ার কারণ, স্কুলজীবনে সাধারণত সবাইকে এমন জ্ঞানের সাথেই পরিচিত করা হয় যা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। আর মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এটা কঠিন, কারণ এর উত্তর হিসেবে কাউকে অবশ্যই অজনপ্রিয় কিছুর কথা বলতে হবে। বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার দেখা পাওয়া ভার, তবে বুদ্ধির চাইতে সাহস গুণ হিসেবে আরো অপ্রতুল।

সে যাই হোক, এই প্রশ্নের উত্তরে আমি সাধারণত নিচের উত্তরগুলো শুনতে পাই:

“আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভগ্নপ্রায়, জরুরি ভিত্তিতে এর পরিবর্তন দরকার।“

“আমেরিকা অন্য যে কোন দেশ থেকে আলাদা।“

“স্রষ্টা বলে কেউ নেই।“

উত্তর হিসেবে এসব তেমন ভালো কিছু নয়। প্রথম আর দ্বিতীয় বাক্যটা সত্য হতে পারে, কিন্তু অনেক মানুষ ইতোমধ্যেই এগুলোর সাথে একমত। অন্যদিকে তৃতীয়টা জনপ্রিয় এক বিতর্কের এক পক্ষের মন্তব্য কেবল। ভালো একটা উত্তর হতে পারে অনেকটা এই ধাঁচের: “বেশিরভাগ মানুষ ‘ক’তে বিশ্বাস করে, যদিও সত্য আসলে ‘ক’এর ঠিক উলটো।” আমার নিজের উত্তরটা আমি এ অধ্যায়ের শেষের দিকে জানাবো।

ভবিষ্যতের সাথে এই বিরুদ্ধ প্রশ্নের সম্পর্ক কী? নিদেনপক্ষে বলতে গেলে, ভবিষ্যৎ তো মূলত এখনো যেসব মূহুর্ত আসে নি সেগুলোর সমষ্টি। ভবিষ্যতের বিশেষত্ব কিংবা গুরুত্বের কারণ এই না যে সে এখনো আসে নি, বরং এর কারণ হলো ভবিষ্যৎ এমন একটা সময় যখনকার পৃথিবী আর আজকের পৃথিবীর মত থাকবে না। এভাবে ভাবলে, আগামী ১০০ বছরে যদি আমাদের সমাজের কিছুই না বদলায়, তাহলে ভবিষ্যৎ আসবে ১০০ বছর পর। যদি আগামী ১০ বছরেই অনেক কিছু আমূল বদলে যায়, তাহলে বলতে হবে ভবিষ্যৎ আমাদের দোরগোড়ায়। ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না সত্য, কিন্তু তার সম্পর্কে অন্তত দুটো বিষয় আমরা জানি: ভবিষ্যৎ হবে বর্তমান থেকে অন্যরকম, অন্যদিকে এর সম্ভাবনার শুরু আজকের পৃথিবীতেই হতে হবে। বিরুদ্ধ সেই প্রশ্নের বেশিরভাগ উত্তরই বর্তমানকে নানান দিক থেকে উল্টেপাল্টে দেখার চেষ্টা করে কেবল: ভালো উত্তর সেগুলোই যেগুলো ভবিষ্যতকে কিছুটা হলেও কাছ থেকে দেখতে পারে।

অনুবাদ, ইতিবাচক, উদ্যোগ, চিন্তাভাবনা তে পোস্ট করা হয়েছে | মন্তব্য করুন

কাছের মানুষ

বিরক্তিতে ভ্রূ কুঁচকে তাকালো আকাশ। পেছন থেকে পাঞ্জাবির কোণায় হ্যাঁচকা টান পড়েছে। মেজাজ আগে থেকেই চড়ে ছিলো। রিকশাওয়ালা ভাড়া নিয়ে অযথা তর্ক করেছে। এখন নোংরা ছেড়া হাফপ্যান্ট পরা ছেলেটাকে দেখে বিরক্তিটা আরও বাড়লো। ঢাকা শহরে এদের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। দেখতে দেখতে আর সমবেদনাও জাগে না। গরম চোখে ছেলেটার দিকে চাইলো সে। চোখ দিয়েই যেন ছাই করে দেবে। ছেলেটার চোখের ভাষায় তাতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন এলো না। দুচোখ ভর্তি অসহায়ত্ব। আরও উৎসাহ নিয়ে সে আকাশের পেছন পেছন আসতে লাগলো।

—‘ভাইজান, দুইদিন ধইরা আমি আর আমার বইন না খাইয়া রইছি। কিছু ট্যাহা দ্যান।’

—‘না খেয়ে মরতে পারিস না! আছিস তো জঞ্জালের মতো। যত্তোসব।’

এইটুকু বলেই আকাশ জিভ কাটলো। এভাবে সে বলতে চায় নি। সকাল থেকেই মেজাজটা খারাপ। তা না হলে এইটুকু বাচ্চা ছেলেটাকে এইভাবে বলতো? আনমনে নিজেকেই প্রশ্নটা করে সে। ভীষণ অনুতাপ হচ্ছে। সেই থেকে সহানুভূতি। তাকাতেই দেখতে পেলো ছেলেটা তাকিয়ে আছে আগের মতোই নির্বিকার। একটুখানি মন খারাপ পর্যন্ত হয় নি। যেন সে পুরোপুরি সচেতন তার জঞ্জালের মতো বেঁচে থাকা নিয়ে। তার বেঁচে থাকা না-থাকায় যে এতো বড়ো পৃথিবীর কিছু আসে যায় না, জানে সে তাও। ডান পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি খুঁটছে। চোখের পাতা মাটির উপর নিবদ্ধ। পারলে সে নিজেও মিশে যায় মাটিতে। ভীষণ মায়া হলো আকাশের। মায়া হলো নাকি প্রায়শ্চিত্ত করতে ইচ্ছে হলো— কে জানে। কাছেই এক চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসলো সে। ‘কিছু খাবি?’ ছেলেটা মাথা নাড়লো। খাবে না। ‘যদি দশটা ট্যাহা দিতেন।’ আকাশ এইবার হেসে ফেললো।

— ‘দশ টাকা দিয়ে কী করবি?’

—‘পঞ্চাশ ট্যাহা হইলে ভাত কিনুম।’

—‘তো এখন খেতে অসুবিধা কী?’

টং দোকান থেকে একটা বাটার বনের প্যাকেট ছিঁড়ে ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিলো আকাশ। প্যাকেটটা হাতে নিয়েও ছেলেটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। দৃষ্টি সেঁটে আছে মাটিতে। ‘আমার কথায় কিছু মনে করিস না। খা এইটা। বস এইখানে।’ আকাশ ছেলেটাকে বেঞ্চের ডান পাশের খালি জায়গাটার দিকে ইশারা করলো। ছেলেটা আড়চোখে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। তার চোখের দৃষ্টিতে অসহায়ত্বের সাথে যোগ হয়েছে অস্বস্তি।

আকাশ ততোক্ষণে এক কাপ চা দিতে বলেছে দোকানদারকে। তারপর ছেলেটার দিকে তাকালো ভালো করে। নাহ, এই চোখের ভাষা পড়বার সামর্থ্য তার নেই।

সে বললো— ‘দশ টাকাও পাবি, এবার খা।’

—‘আমার বইনে না খাইয়া রইসে।’

অকারণে চমকে গেলো আকাশ। ‘তোর বাসায় কে কে আছে?’

—‘একটা ছোডো বইন।’

—‘বাবা মা?’

—‘মা? মা মনো অয় মইরা গ্যাসে। গার্মেন্সে কাম করতো। আমারে অনেক আদর করতো।’

ছেলেটার চোখদুটো চিক চিক করে ওঠে।

—‘মনে হয় বলছিস কেনো?’

—‘লাশ পাই নাই। গার্মেন্সের বিল্ডিং ভাইঙ্গা অনেক লোক মরসে। মায়ের কোনো ছবি আসিলো না। লাশ ঘাইট্টা মায়েরে বাইর করতারি নাই।’

—‘বাবা?’

—‘মার লাশ না পাইয়া পরথম কয়দিন বাপে অনেক কানলো। কয়মাস বাপে রিশকা চালায়া আমগো খাওন জুটাইতো। এহন বিয়া কইরা আলাদা থাহে। দেখতেও আহে না।’

—‘বয়স কতো তোর?’

—‘দশ-বারো হইবো।’

—‘আর বোনের?’

—‘আট-নয় মনো অয়। একলা ঘরে থাকতে ভয় পায়। দিনের বেলা পাশের বাড়ির নাসিমা খালার লগে থাহে।’

কথা বলতে বলতে ছেলেটা কিছুটা সহজ হয়ে এসেছে। বাটার বন খেতে শুরু করেছে। অর্ধেক খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর বাকি অর্ধেকটা সে প্যাকেটে মুড়ে পকেটে রেখে দিতে যাচ্ছিলো। তখন আকাশ বললো, ‘তুই খেয়ে নে পুরোটা। তোর বোনকে আরেকটা কিনে দিবো।’

সাথে সাথে ছেলেটার মুখে আলো খেলে গেলো। এবার খুব আয়েশ করে খেলো সে। খুব নিশ্চিন্ত। এই প্রথম আকাশের মনে হলো কাউকে খাইয়ে অন্যরকম এক তৃপ্তি মেলে। ছেলেটার খাওয়া শেষ হতেই তার হাতে আরেক প্যাকেট বন আর একশ টাকার একটা নোট তুলে দিলো সে। ছেলেটা অবাক চোখে আকাশের দিকে তাকালো। চোখে টলমল করছে কৃতজ্ঞতা। তার দৃষ্টি আকাশের হৃদয়ে ছোট্ট একটা ঝড় বয়ে নিয়ে এলো। সে আর বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো না। দ্রুত ওঠে হাঁটা শুরু করে দিলো। রক্তের টান উপেক্ষা করে বাবা চলে গেছে। কিন্তু ছেলেটা ক্ষুধাপেটেও তার বোনকে ভুলে যায় নি।

ছেলেটার নাম জিজ্ঞেস করা হয় নি! কোথায় থাকে তাও জিজ্ঞেস করতে মনে ছিলো না। কিন্তু এতোক্ষণে অনেক দূর চলে এসেছে আকাশ। একবারও পেছন ফিরে না তাকিয়ে। অবশ্য, নামে কী আসে যায়!

লেখা : ২০১৩

অনুপ্রেরণা, ইতিবাচক, গল্প, সাহিত্য তে পোস্ট করা হয়েছে | 3 টি মন্তব্য

লিবারেল আর্টস শিক্ষার প্রসার কেন প্রয়োজন

[ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের এক্সপার্ট ডেভিড কাল্টের লেখা থেকে অনূদিত। কাল্ট Reverb.comএর প্রতিষ্ঠাতা, শিকাগো মিউজিক এক্সচেইঞ্জের মালিক এবং অপশন্সএক্সপ্রেস নামের অনলাইন ব্রোকারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন সিইও।]

liberal arts

দিন দিন যেভাবে ভালো মানের কম্পিউটার প্রোগ্রামার আর প্রকৌশলীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে যে কারো এমন ধারণা হওয়াই স্বাভাবিক যে আমাদের আসলেই আরো বেশি বেশি কম্পিউটার বিজ্ঞান আর প্রকৌশলের ছাত্র দরকার। তাই না?

কিন্তু আমার কোম্পানিগুলোর টেক টীমের দিকে যখন তাকাই, খুব পরিষ্কারভাবেই দেখতে পাই যে লিবারেল আর্টস ডিগ্রিধারী মানুষগুলোই আসলে সবচাইতে তীক্ষ্ণধী আর দক্ষ সফ্‌টওয়্যার ডেভেলপার আর টেকনোলজি লীডার হতে পেরেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক এই টেকিদের ডিগ্রি থাকে হয় দর্শন, ইতিহাস আর সঙ্গীত – এমনকি রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও, আমার নিজের ক্ষেত্রে যেমন। গত ১০ বছর ধরে সবচাইতে ভালো প্রোগ্রামার নিয়োগ দেয়ার সময় আমি ঠিক এই উপলব্ধিটাই বার বার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে গেছি। তবে ইদানিং মনে হচ্ছে, আমার অভিজ্ঞতা আসলে পুরোপুরি ভিন্ন কিছু প্রমাণ করে।

সেটা কী রকম?

ব্যাপারটা খুবই সহজ। একটা ভালো লিবারেল আর্টস ডিগ্রি ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং-এর ভিত তৈরি করে। ক্রিটিক্যাল থিঙ্কাররা পারেন না এমন কোন কাজ নেই। তারা ফ্রেঞ্চ শিখতে পারেন, রুবি অন রেইল্‌স নখদর্পণে আনতে পারেন, পাইথন কিংবা ভবিষ্যতে যে ল্যাঙ্গুয়েজই আসুক না কেন – সেটায় অসম্ভব দক্ষ হতে পারেন। একজন ক্রিটিক্যাল থিঙ্কার হলেন এমন এক সেল্‌ফ-লার্নিং যন্ত্র যা কমান্ড কিংবা সিন্ট্যাক্স মুখস্থের গলিঘুপচিতে আটকা পড়ে না।

কোড লেখা অনেকটাই গীটার বাজানো কিংবা দাবা শেখার মত উদ্দীপনা জাগানিয়া অভিজ্ঞতা। এ কারণেই, মিউজিশিয়ানরা যেমন, ঠিক তেমনি সবচাইতে ভালো প্রোগ্রামারদের অনেকেও স্বশিক্ষিত। তারা তাদের কোডের প্রথম লাইন কোন ক্লাসরুমে বসে লিখেন নি, বরং স্টারবাক্‌সে বসে খেলাচ্ছলেই ল্যাপটপে রুবি শিখেছেন। বেশিরভাগ লিবারেল আর্টস ডিগ্রির সিলেবাসই বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে তৈরি, যাতে করে শিক্ষার্থীরা মানবিকের সাথে সাথে প্রোগ্রামিং-এর সাথেও পরিচিত হন। দর্শন, সাহিত্য, কলা, ইতিহাস আর ভাষা এসবের শিক্ষার্থীদেরকে ধারণা দেয়, মানুষ কেমন করে তাদের অভিজ্ঞতাকে বাক্সবন্দী করে সে বিষয়ে। শেখায়, প্রযুক্তি আমাদের মানবীয় অভিজ্ঞতার অংশমাত্র, এর প্রতিস্থাপক নয়।

এটা সত্যি যে আমরা অনেক কম্পিউটার বিজ্ঞানের গ্র্যাজুয়েটকেই অতি প্রয়োজনীয় সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি, কিন্তু অন্যান্য ডিগ্রিধারীরাই কেবল আমাদের কাজের পুরো ক্ষেত্রটা বুঝতে পেরেছে। আমাদের চীফ অপারেটিং অফিসার হলেন ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর দর্শনের গ্র্যাজুয়েট একজন মেধাবী, স্বশিক্ষিত প্রকৌশলী। তিনি মামুলি কোডিং-এর বাইরে যেয়ে বিশ্বমানের একটি টীমকে নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন। তার নিষ্ঠা আর ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং-এর দক্ষতা তাকে প্রযুক্তির শক্তির কাছে মাথা নত না করে বরং তাকে কাজে লাগানোর উপায় শিখিয়ে দিয়েছে। তার ব্যাকগ্রাউন্ড তাকে দিয়েছে মানবীয় কিছু দক্ষতা, যার কারণে তিনি গড়পড়তা সবার থেকে আলাদাভাবে চিন্তা করতে পারেন – আমাদের কাস্টোমারদেরকে বুঝতে পারেন আর সবার আগ্রহের মাঝে সমন্বয় করতে জানেন।

আমি বলতে চাইছি না যে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত, দক্ষ প্রকৌশলীদেরকে আমাদের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমার পরামর্শ – প্রযুক্তির কর্মীদের যদি প্রোগ্রামিং-এর পাশাপাশি দর্শন কিংবা ইংরেজিতেও ডিগ্রি থাকতো, তাহলে দিনের শেষে আমরা হয়তো প্রযুক্তি আর সেই সাথে জীবন চলার পথেও আরো ভালো নেতৃত্বের দেখা পেতাম।

অনুবাদ, চিন্তাভাবনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তে পোস্ট করা হয়েছে | ট্যাগ , , , | একটি মন্তব্য

হোয়াইট সেভিওর ন্যারেটিভঃ ইন্ডিয়ানা জোন্স থেকে টারজান

যারা মুভি জগত সম্পর্কে একটু খোঁজ খবর রাখেন তারা দ্যা লেজেন্ড অব টারজান নিয়ে নিশ্চিত আগ্রহী ছিলেন। অনেকে হয়তবা দেখেও ফেলেছেন।

টারজান, এডগার রাইস বারোজ এর লেখা চরিত্র। সেই চরিত্র নিয়ে কত মুভি, কমিক, টিভি শো  এমনকি রেডিও শো পর্যন্ত!
কিন্তু আমাদের মাথায় যে প্রশ্নটি আসে না তা হলোঃ

সাদা চামড়ার একটি লোক  কীভাবে আফ্রিকার জঙ্গলের রাজা হয়?!

এটি কিন্তু একটি ভ্যালিড এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন!
টারজান হতে পারত একজন জাপানিজ কিংবা ভারতীয়! কিন্তু সে একজন হোয়াইট চরিত্র!

আপনার মনে হতে পারে বারোজ যেহেতু আমেরিকান লেখক তাই টারজান হোয়াইট হবে সেটাই স্বাভাবিক! কিন্তু সেটি আর স্বাভাবিক থাকে না যখন সেই আমেরিকান লেখকের গল্প বিশ্বজুড়ে আইকনে পরিণত হয়! সবাই টারজান নামক হলিউড ফিল্ম এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে যে কিনা কালোদের তাদের কলোনিয়াল মাস্টারদের হাত থেকে রক্ষা করে!  আমরা কখনই চিন্তা করি না এই আমেরিকান চরিত্রটি  কীভাবে সবার হয়ে উঠল এত সমস্যার পরও!

 

এই লেখার মূল লক্ষ্য কিন্তু টারজান নয়। আপনি টারজান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলে দেখবেন যে টারজান আমেরিকার সেই রেসিস্ট সময়ের অনেক রেসিস্ট আচরণ এর স্বাক্ষর বহন করে আছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে পাঠক এবং মুভির দর্শকদের কোন আইডিয়াই নেই এই সব রেসিজম এর ব্যাপারে!

দ্যা লেজেন্ড অব টারজান

দ্যা লেজেন্ড অব টারজান

দ্যা লেজেন্ড অব টারজান মুভির গল্পে যদি ফিরে যাই তাহলে দেখব যে এক কালো চরিত্র টারজানকে নিতে এসেছে কঙ্গোর কালোদেরকে বাঁচাতে! আফ্রিকার উপরে ঔপনিবেশিক শক্তির যে রক্তাক্ত অধ্যায় সেটা হতে পারত জর্জ ওয়াশিংটন উইলিয়ামস নামক এক কৃষ্ণাঙ্গ এক্টিভিস্ট এর গল্প। যিনি বেলজিয়ান এর রাজার কাছে কঙ্গোর লোকদের উপর অত্যাচার নিয়ে  খোলা চিঠি লেখার মাধ্যমে জনমত গঠনের কাজ করেছেন। কিন্তু না। টারজান এর বীরত্বের গল্পের জন্য রিয়েল লাইফ হিরো উইলিয়ামস তাই হয়ে গেলেন এক কাল্পনিক সুপারহিরোর সাইডকিক! মুভিতে স্যামুয়েল এল জনসনকে দিয়ে যে চরিত্রটি দেখান হয়েছে তা আসলে হোয়াইট সেভিওর ন্যারেটিভ এর পশ্চাৎদেশ বাঁচানো ছাড়া আর কিছুই না! কেউ যদি বলতে আসে যে আপনেরা তো আবারো সাদা চামড়ার গুণগান গাওয়াইতাছেন কালো চামড়ার মানুষদের উদ্ধ্বার এর মাধ্যমে তাইলে বলা যাবে এই দ্যাখো আমরা তো স্যামুয়েল এর মতো শক্তিশালী অভিনেতা নিছি, শক্তিশালী রিয়েল লাইফের চরিত্র দিছি!

আসল কাহিনী কিন্তু সেই হোয়াইট সেভিওর ন্যারেটিভ। এই ন্যারেটিভ এর মূল থিম হলো একজন সাদা চামড়ার ইউরোপিয়ান কিংবা আমেরিকান কালো/ব্রাউন ব্যক্তি/গোষ্ঠীকে কোন সমস্যা/ বিপদ থেকে উদ্ধার করবে। মাঝে সাঝে এই উদ্ধ্বারপ্রক্রিয়ায় নিজের সম্পর্কে কিছু জানবে কিংবা নিজেকেই কিছুটা বদলাবে। যত যাই হোক, উদ্ধ্বারকর্তা কিন্তু হবে একজন হোয়াইট! এই বিষয়টা অতিরিক্ত কমন! একটু চিন্তা করে দেখুন! অবাক হয়ে যাবেন!

 হোয়াইট চরিত্ররা কখনও সাদা চামড়ার শিক্ষক, কোচ কিংবা প্রমিজড ওয়ান হিসেবে আসে!

 টুয়েলভ ইয়ার্স এ স্লেভ  মুভিটার কথা মনে আছে? যত শক্ত চরিত্রেরই হোক না কেন একজন কৃষ্ণাঙ্গকে বাঁচায় একজন সাদা চামড়ার ব্রাড পিট! কিংবা ব্লাড ডায়মন্ড এর ডিক্যাপ্রিওর কথাই মনে করুন! অথবা ডান্সেস উইদ দ্যা উল্ভস এ কেভিন কস্টনার বাঁচায় রেড ইন্ডিয়ানদের।  অথবা চিন্তা করুন এক সুপারহিরো মুভির কথা! যেখানে এক কৃষ্ণাঙ্গ থাকে মূল নায়ক!  হ্যানকক নামের কালো সুপারহিরোকে হেল্প নিতে হয় এক সাদা চামড়ার কাউন্সেলর এর! তারপরই সেই সুপার হিরো দুনিয়া বাঁচাতে পারে!

শুধু পুরুষ নয়! আপনি মেয়ে হোয়াইটদেরও পাবেন কালোদের উদ্ধার এ! যেমন ধরেন সাম্প্রতিক সময়ের মুভি দ্যা হেল্প এ!

 

শুধু যে কালোদেরকে বাঁচানোর মতো মহত্তম কাজ করে এই সব মুভির চরিত্ররা এমনও কিন্তু না ব্যাপারটা! সাদারা যেখানে যায় সেখানেই তারা নেটিভদেরকে রক্ষা করে, নেতৃত্ব দেয় এবং শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করে মহাবিপদ থেকে!
হোয়াইট সেভিওর ন্যারেটিভ

হোয়াইট সেভিওর ন্যারেটিভ

 

ইন্ডিয়ানা জোন্স এন্ড দ্যা টেম্পল অব দ্যা ডুম এ যেমন হ্যারিসন ফোর্ড অসহায় ভারতীয়দের বলির হাত থেকে বাঁচাতে আসে কিংবা

টম ক্রুজ যখন দ্যা লাস্ট সামুরাই এ কিন্তু তিনি জাপানিজদের নেতৃত্ব দেন! শুধু তাই নয় সাদা চামড়ার লোকেরা এলিয়েনদেরও উদ্ধারকর্তা হয়ে যায়! এভাটার এ যেমন এক হোয়াইট হয়ে যায় নীল এলিয়েনদেরকে উদ্ধ্বারকর্তা!

 

 এই জাতীয় ফিল্মগুলা দেখা থেকে বিরত থাকা উচিৎ কিংবা দেখলেও এর পেছনের ইতিহাস, সমস্যা ইত্যাদি জানা উচিৎ। কারণ এই জাতীয় ফিল্মগুলো আমাদের আইডিয়া দেয় যে সাদাদের ছাড়া বাকিরা নিজেদের বিপদ থেকে উদ্ধ্বার করতে পারে না! আমেরিকান সুপিরিওটির একটা পরোক্ষ প্রভাব কিন্তু মনে পড়েই যায়!

প্রশ্ন আসতে পারে এই জাতীয় ফিল্মগুলার অরিজিন কী?

এই জাতীয় ফিল্মগুলো অরিজিন সেই সাদা চামড়ার কলোনিয়াল/ ইম্পিরিয়ালিস্টিক চিন্তাভাবনা যার আসল প্রকাশ ঘটেছিলরুডইউয়ার্ড কিপলিং এর  কবিতাহোয়াইট ম্যান’স বার্ডেন এ! সাদা চামড়ার মানুষরা তুলনামূলকভাবে অসভ্য, অসংস্কৃত, ভঙ্গুর অশ্বেতাঙ্গদেরকে উদ্ধার করে নিজেদের শক্তি, মেধা, অনুপ্রেরণা কিংবা মানবিকতা দিয়ে!

 

যে সকল ফিল্মে হোয়াইট সেভিওর ন্যারেটিভ আছে তার  পুরো লিস্টের জন্য দেখুন এইখানে। একটু সাবধানে লিস্টটা বিশাল! হাঁপিয়ে যাবেন!
এই বিষয়ে দুর্দান্ত একটি ইউটিউব ভিডিও

 

মুভি নিয়ে আমার আগের পোস্ট
বিবাহিত জীবনে সুখী হইবার সহজ উপায় অথবা রিলেটিভিটির দুষ্ট রসিকতা!
কেন “হোয়াই দিজ কোলাভেরি ডি” এত জনপ্রিয় হলো?
সরব বাপ্পির এভারেস্ট জয় এর সাথে বিল গেটস এর রূপবতী মেয়ের সম্পর্ক কী?!

 

 

সচেতনতা তে পোস্ট করা হয়েছে | ট্যাগ , , , | 2 টি মন্তব্য

জেনেটিক সুপারহিরো

অনেক বছর আগে প্রথম যখন মিউট্যান্ট কথাটা প্রথম শুনি তখন… আমার মনেও নেই যে কোন ক্লাসে পড়ি। এক্স-ম্যান সিরিজের শুরুর দিকের কোন একটা সিনেমাতে শুনেছিলাম। এক্স ম্যান ছাড়াও অনেক গল্প সিনেমাতে সুপার হিরো তৈরির অন্যতম সরঞ্জাম এই মিউটেশন। তবে এখন পর্যন্ত আমরা বাস্তবে যতধরনের মিউটেশন সম্পর্কে জানি তার বেশিরভাগের ফলাফলই ক্ষতিকর। এখন যদি, কোন মানুষের মধ্যে এমন কিছু ক্ষতিকর মিউটেশন থাকা সত্বেও তিনি দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক দিন কাটাতে পারেন, তাহলে কি তাকে একজন সুপারহিরো বলা যায়?

 Genetic Superhero Cartoon

প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের জিন গবেষণা করে খুব অল্প সংখ্যক ব্যাক্তিকে পাওয়া গেছে যারা মারাত্নক রোগ সৃষ্টিকারী মিউটেশন ধারণকারী মিউট্যান্ট, কিন্তু তারা সুস্থ। এই সৌভাগ্যবান ১৩ জনের মধ্যে রয়েছে ৮ ধরনের জিনগত ব্যাধির মিউটেশন। সিস্টিক ফাইব্রোসিস, আটেলোস্টিওজেনেসিস সহ ৮ ধরনের ব্যাধি যেগুলোতে আক্রান্ত শিশু জন্মের বেশি দিন বাঁচেনা।

আইকান স্কুল অব মেডিসিন এর এরিক শাট এবং একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেজ বায়োনেটোয়ার্ক্স এর স্টিফেন ফ্রেন্ড এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। বিখ্যাত বায়োটেকনোলজি কোম্পানি 23andme এবং বেইজিং জিনোমিক্স ইন্সটিটিউট প্রাথমিক ভাবে ৫৮৯,৩০৬ জনের ডিএনএ সিকোয়েন্স যোগান দেয়। এর মধ্যে ৩,৫২৪ জনের ছিল সম্পুর্ন জিনোম সিকোয়েন্স। বাকি গুলো ছিল এক্সোম সিকোয়েন্স কিংবা নির্দিষ্ট কিছু জিনের মিউটেশন পরীক্ষার তথ্য।

ডঃ এরিক, ডঃ ফ্রেন্ড এবং তাদের সহকর্মীবৃন্দ শুধু মাত্র মেন্ডেলিয় ব্যাধির সাথে জড়িত জিনের মিউটেশনের উপস্থিতিকে বিবেচনা করে সিকোয়েন্স সংখ্যাকে কমিয়ে আনেন ১৫,৫৯৭ এ। ওই জিনগুলোতে বিভিন্ন রকম মিউটেশন ঘটলেও যেসব মিউটেশনে সবসময়ই রোগ সৃষ্টি হয় তারা সেগুলোকেই নির্বাচিত করেন। এই ১৫,৫৯৭ জন ১৬৩ টি ব্যাধির সাথে জড়িত মিউটেশনগুলোর অন্তত একটি ধারণ করেন।

এই পর্যায়ে তারা যেসব সিকোয়েন্সে ভুল থাকতে পারে সেগুলো বাদ দেন। এরপরে যেসব মিউটেশন ০.৫ শতাংশে জনগণে পাওয়া যায় সেসবও বাদ দিলেন। কেননা সুলভ ধরনের মিউটেশনে সাধারণত রোগের তীব্রতা মৃদু থাকে। এই অবস্থায় মাত্র ৩০৩ জন অবশিষ্ট থাকে যাদের ডাক্তারি রিপোর্ট বলে তাঁরা সম্পুর্ন সুস্থ এবং একই সাথে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত মারাত্নক সব জিনগত রোগের সাথে জড়িত মিউটেশনগুলো বহন করছেন যেসবে মানুষ বয়ঃপ্রাপ্তির আগেই মারা যায়। গবেষক দল যেসব কেসের জন্য পেরেছেন সেসবের জন্য আবার জৈব স্যাম্পল সংগ্রহ করে ডিএনএ সিকোয়েন্স যাচাই করে দেখেছেন।

শেষ পর্যন্ত অনেক যাচাই বাছাই করে রইলো মাত্র সৌভাগ্যবান ১৩ জন। কিন্তু সমস্যা যেটা এদের প্রত্যেকেরই সিকোয়েন্স হল আংশিক সিকোয়েন্স। তাহলে, পরবর্তী যৌক্তিক ধাপ হতে পারে তাদের সম্পুর্ন ডিএনএ সিকোয়েন্স করে দেখা, কি কারণে এই বিধ্বংসী মিউতেশন, যেগুলো সাধারণের মৃত্যুর কারণ , সেগুলো ধারণ করেও তারা বহাল তবিয়তে আছেন। এমন কোন জিন যদি পাওয়া যায়, যেটা সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সৃষ্টি করছে তাহলে সেটাকে কেটে নিয়ে ল্যাবরেটরিতে আক্রান্ত কোষের ভেতর প্রবেশ করিয়ে পর্যবেক্ষন করা… কি ফলাফল পাওয়া যায়। কিংবা এমনও হতে পারে তাদের জিনোমের অন্য কোন মিউটেশন তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে। আবার এটাও হতে পারে, তারা যেই পরিবেশে বসবাস করছেন সেখানকার কোন উপাদানই হয়তো তাদের আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখছে। অনেক কিছুই হতে পারে, যা সঠিকভাবে জানা গেলে হয়তো নতুন ধরনের চিকিৎসা উদ্ভাবন সম্ভব ওই রোগগুলোর জন্য। হতাশার ব্যপার এটাই যে গবেষকরা এটা করতে পারছেন না। কারণ সাবজেক্টরা, যাদের ডিএনএ নিয়ে গবেষণাটি করা হল তারা সম্মতিপত্রে নিজেদের কোন ঠিকানা কিংবা যোগাযোগের উপায় উল্লেখ করেননি।

তাই এখন পর্যন্ত, এই জেনেটিক সুপারহিরোদের পরিচয় একটি রহস্য।

লেখাটি জিরোটুইনফিনিটি জুন’১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তে পোস্ট করা হয়েছে | মন্তব্য করুন

রাইটারস অফ দ্য ফিউচার – সরব সায়েন্স ফিকশন গল্প লেখা প্রতিযোগিতা

কেমন হবে ভবিষ্যতের পৃথিবী ? কীভাবে করে টেকনোলজি বদলে দিবে মানুষের জীবনযাপনের ধারা? সময় কি একই বেগে ছুটবে নাকি বদলে যাবে এর গতিপথ? মানুষ কে সরিয়ে জায়গা করে নেবে বুদ্ধিমান রোবট ? তোমার কাছেই শুনতে চাই তোমার ভাবনা, গল্পের আঙ্গিকে । বাংলাদেশের সাহিত্যচর্চায় সায়েন্স ফিকশন খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর তারুণ্যের প্ল্যাটফর্ম ‘সরব’ এই জনপ্রিয় ধারাটিকে সব সময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। আমরা অসংখ্য গল্প প্রকাশ করেছি shorob.com এ। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের নতুন প্রজেক্ট – ‘রাইটার অফ দ্য ফিউচার’ ! সায়েন্স ফিকশন গল্প লিখে জিতে নাও সর্বমোট ১০০০০ টাকার বই ।

শুধু তাই নয়! বিজয়ী লেখকরা ভবিষ্যতে “সরব প্রকাশনী”তে বই প্রকাশের সুযোগও পাবেন! তাহলে আর দেরি কেন?!

কীভাবে অংশ নেবে?

১। তোমার লেখা গল্পটি অবশ্যই সায়েন্স ফিকশন ঘরানার হতে হবে । আমরা আসলে একটা চমৎকার গল্প খুঁজছি – যার শুরুটা এঙ্গেজিং , চরিত্রগুলো সাবলীল , প্লটিং দারুণ , শেষটাও কনভিন্সিং আর ভাষাটা সহজ কিন্তু সুন্দর ।
২। গল্পটি সর্বোচ্চ ২৫০০ শব্দের মধ্যে হতে হবে।
৩। তোমার গল্পের সাথে তোমার নাম, ইমেল ও ফোন নাম্বার সহ ইমেইল করতে হবে এই ঠিকানায়- shorob.banglaATgmail.com
৪। গল্প পাঠানোর শেষ তারিখ ২১ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টা।
৫। একজন সর্বোচ্চ ২ টি সাবমিশন করতে পারবে। কিন্তু প্রতিযোগিতার ফাইনাল স্টেজে একটিকেই গ্রহণ করা হবে।
৬। যদি তোমার বয়স হয় ১৫ থেকে ৩২ তাহলে আর দেরি কেন এখনি পাঠিয়ে দাও তোমার গল্প!

যেসব পুরষ্কার অপেক্ষা করছে –

১ম পুরষ্কারঃ ৪০০০ টাকার বই।
২য় পুরষ্কারঃ ২৫০০ টাকার বই।
৩য় পুরষ্কারঃ ১৫০০ টাকার বই।
৪র্থ থেকে ১০ম বিজয়ী পাবে একটি করে বই।

কীভাবে আমরা বিজয়ীকে খুঁজে বের করব?

প্রাথমিক বাছাই এর পর নির্বাচিত গল্পগুলো সরব এর ফেইসুবক পেইজে শেয়ার করা হবে। সেখান থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইক এবং শেয়ার এর ভিত্তিতে শর্টলিস্ট করা হবে। সেই শর্টলিস্ট বিচারকদের কাছে পাঠানো হবে। সর্বমোট ১০০ নাম্বার ধরে প্রতিটি গল্পকে মার্কিং করা হবে। ৭৫ নাম্বার আসবে বিচারকদের থেকে। একাধিক বিচারক লেখকের নামবিহীন গল্পে নাম্বার দেবেন, সেটা গড় করে নেয়া হবে। বাকি ২৫ নাম্বার আসবে ফেইসবুক লাইক এবং শেয়ার থেকে। প্রতিটি শেয়ার ৫ টি লাইক এর সমান পয়েন্ট পাবে। ফেইসবুক লাইক এবং কমেন্ট এর সংখ্যা স্কেলিং করে ২৫ এ রূপান্তর করা হবে।

তোমার গল্পটি বাতিল হতে পারে যে সব কারণে-

১। লেখাটি নকল হিসেবে প্রমাণিত হলে ।
২। কোন ভাবে অসৎ পন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করলে যেমন লাইক বা শেয়ারের ক্ষেত্রে “ফেইসবুক বট ব্যবহার” ইত্যাদি।
৩। লেখায় প্রচুর বানান ভুল থাকলে আমরা সেটিকে প্রাথমিক স্তরেই বাদ দিতে পারি। অনুগ্রহ করে লেখা প্রুফরিড করার ব্যবস্থা করতে হবে।

যে কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে সরব টিমের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

উদ্যোগ তে পোস্ট করা হয়েছে | মন্তব্য করুন

অন্য (বিজ্ঞান কল্পকাহিনী)

মার্স আন্ডারগ্রাউন্ড হিউম্যান সেটেলমেন্ট- সেক্টর ৭০৪:

সেক্টর ক্যাপিটাল সিচুয়েশন-রুমের মাঝখানে গোল টেবিলটা। তার চারপাশে সব মিলিয়ে দশ জন বসার মতো চেয়ার রয়েছে। এর বেশি আর তেমন কোনো আসবাব নেই ঘরে। তাতেই মনে হচ্ছে ঘরে দম ফেলার জায়গা ফুরিয়ে এসেছে।

মাটির তলায় বসবাস করতে থাকায় অতিরিক্ত জায়গা ব্যবহারের বিলাসিতা থেকে সরে এসেছে মঙ্গলের সমাজ। পুরো মঙ্গল গ্রহকে দুই হাজার সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এক একটা সেক্টর মাটির নীচে গড়ে ওঠা এক একটা মেগাসিটির মতো। ছয় বিলিয়ন মানুষ এই মেগাসিটিগুলোতে গড়ে তুলেছে বিজ্ঞানভিত্তিক অভূতপূর্ব এক আধুনিক সমাজ।

সেক্টর ৭০৪ মঙ্গলের সবথেকে এগিয়ে থাকা সেটেলমেন্ট। এর ক্যাপিটাল বিল্ডিঙে মঙ্গলের রাঘব বোয়ালদের যাওয়া-আসা। আর সেইসব রাঘব বোয়ালদের মধ্যে শুধু প্রথম সারির দশজনেরই ঢোকার অধিকার আছে সিচুয়েশন রুমে। যখন মঙ্গলের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পরে, তখনই কেবল সব সেক্টরের সিচুয়েশন রুমে বসে তাদের নিজ নিজ নিরাপত্তা সভা। সেক্টর ৭০৪ এর সিচুয়েশন এবার একটু বেশি উত্তপ্ত।
sci_fi_city_downtown_by_jadrienc-d5olkce
প্রেসিডেন্ট নোমান রডনির দিকে তাকালো জেনারেল কার্ল। তিনি অনুমতি না দিলে কথা বলা যাচ্ছে না। কিন্তু কার্লের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ প্রেসিডেন্ট চুপ করে থাকলে সে আর অনুমতির তোয়াক্কা করবে না।

কার্লকে নিয়ম ভাংতে হলো না। প্রেসিডেন্ট রডনি পরিস্থিতির সাথে সম্পূর্ণ বেমানান ভঙ্গিতে জুটেক্সের জামার হাতা গোটাতে গোটাতে বললেন, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছো? মঙ্গলে কোনো মহাসাগর নেই।‘
কার্লের দিকে তাকিয়ে বাকি কথাটা শেষ করলেন তিনি, ‘আমাদের উচিত একটা মহাসাগর তৈরির প্রোজেক্ট নেয়া, কি বলো কার্ল?’

বিরক্তিটুকু কষ্ট করে গোপন করে জেনারেল কার্ল উত্তর করলো, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমরা এখনই যদি কোনো পদক্ষেপ না নেই তাহলে সেটি পানির মহাসাগরে বদলে হবে মানুষের রক্তের মহাসাগর’।

নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে প্রেসিডেন্ট রডনি বললেন, ‘আচ্ছা, ঘটনা টেবিলে ছাড়ো কার্ল। আমি আগে সবার কথা শুনতে চাই’।

‘ঘটনা সহজ’, বলল কার্ল, ‘সেক্টরের কৃত্রিম খাদ্য তৈরির ফ্যাক্টরি উড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা করছিলো কয়েকজন পৃথিবীবাসী। আমাদের ইন্টেলিজেন্স স্কোয়াড তাদের ধরে ফেলে।’ সভার বাকি সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে কার্ল বলল, ‘আমি গত বছর এই সভাতেই বলেছিলাম বর্বর পৃথিবীবাসীদের মঙ্গলে ক্লিয়ারেন্স কমিয়ে আনা হোক’।

কার্লের শেষ শব্দটার আগেই শুরু করলেন কাউন্সেরল তানিয়া ভেলভেট, ‘সেই সিদ্ধান্ত তোমার নেবার কথা নয় কার্ল। কাকে ক্লিয়ারেন্স দেয়া হবে না হবে সেটা আমরা দেখবো’

কার্ল কিছু বলতে যাচ্ছিলো। তাকে থামিয়ে থমথমে গলায় সিনেটর কিশান লেন্সকি বলল, ‘কতোটুকু দেখেছেন তা তো দেখতেই পাচ্ছি আমরা। গত বছর আমাদের সার্ফেস-জুট-মিলে হামলা, আজ ফুড ফ্যাক্টরিতে হামলার পরিকল্পনা, কাল আমাদের এই ক্যাপিটাল মঙ্গলের সন্তানদের হাতে থাকবে বলে মনে হয় না’।

জাস্টিস জেফ হেরিস এতক্ষণ শুনছিলেন। এবার তার প্রৌঢ় চোখ তুলে বললেন, ‘পৃথিবীর ফোর্থ ওয়ার্ল্ড থেকে সস্তায় আমরা জুট নিয়ে আসি আমাদের কাপড়ের জন্য। কখনো ভেবে দেখেছেন ওদের অবস্থা? আর এই ‘মঙ্গলের সন্তান’ বিষয়টি আমাকে একটু খুলে বলুন তো!’

জাস্টিস হেরিস যথেষ্ট বয়স্ক মানুষ। তাই তার উত্তরে লেন্সকি বেশি উত্তাপ ছড়াতে সাহস করলো না, ‘আপনি যথেষ্ট সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু মঙ্গলের লাল মাটির শপথ, আমরা মঙ্গলের সন্তান। আমি আমার জন্মভূমির প্রয়োজন সবার আগে বিবেচনা করি। এটা আমার অপরাধ? পৃথিবীর নেতারা দুর্নীতিগ্রস্থ আর ওদের চিন্তা প্রাচীনপন্থী। ওদের দুরাবস্থার জন্য আমাদের দায় দেয়াটা কি ঠিক?’।

উত্তর এলো কাউন্সেলর ভেলভেটের মুখ থেকে, ‘ মঙ্গলের লাল মাটির শপথ আমরাও নিয়েছি লেন্সকি। তাই আমরাও মঙ্গলকে বহুজাতিক করে গড়ে তুলতে চাই। কয়েকজন মানুষের আচরণ দিয়ে গোটা সমাজকে বিবেচনা করা যায় না’।

জেনারেল কার্ল সরব হলো এবার, ‘কাউন্সেলর ভেলভেট আশা করি এটুকু তথ্য রাখেন যে মঙ্গলে ঘটা ক্রাইমের অধিকাংশই ঘটে ক্লিয়ারেন্স পাওয়া পৃথিবীবাসীদের দিয়ে। মঙ্গলে বেঁচে থাকার জন্য বিজ্ঞানের বিকল্প নেই। তাই আমাদের আছে সবথেকে উন্নত বৈজ্ঞানিক জীবন ব্যবস্থা। ওরা আসে সেই উন্নত জীবনের জন্য। আর সাথে করে নিয়ে আসে ওদের আদিম প্রবৃত্তি’।

হাই-প্রফেসর আন্ড্রু মাতিন চুপ ছিলেন এতোক্ষণ। কার্লের কথায় যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন বোঝা গেলো। তিনি বললেন, ‘মঙ্গলের ইতিহাস জানেন আপনারা? আজ থেকে ছয়শ বছর আগে সেই পৃথিবী থেকেই কিছু দুঃসাহসী মানুষ এসে আমাদের গোড়া পত্তন করেছিলো এই সুন্দর লাল গ্রহটিতে। এর পর থেকে মঙ্গলের সমাজ বিকাশে মঙ্গলবাসী-পৃথিবীবাসী মিলে মিশে এক সাথে কাজ করেছে। যে কৃত্রিম খাবার আমরা খাচ্ছি তা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদেরই আবিস্কার। অথচ সেই ফর্মূলার উপরে কপরাইট বসিয়ে সেই জ্ঞান আমরা নিজেদের কুক্ষিগত করে রেখেছি। মঙ্গলের সেটেলমেন্টে রেড-ব্লাড, গ্রিন-ব্লাড এই বিভেদ এর আগে কখনোই ছিলো না। হঠাত কি হলো আমাদের, কারো কাছে কি এর উত্তর আছে?’।

টেবিলের শেষ চেয়ারে নীরবে বসে ছিলেন এম-ভি-আর-নিউজের সম্পাদক কিহোতি উশিরো। হাই-প্রফেসরের কথা শেষে মুখ খুললেন তিনি, ‘আমার কাছে উত্তর আছে প্রফেসর। তবে এটা আসলে কাউকেই স্বস্তি দেবে না। গত নির্বাচনে ন্যাশনালিস্ট পার্টির শোচনীয় পরাজয়ের পর তাদের নেতারা একটা ভয়ংকর প্রোজেক্ট হাতে নেয়। মঙ্গলের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজকে বিভক্ত করে একটি প্রতিপক্ষ দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। সেই প্রতিপক্ষকে সমাজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখাতে তাদের বহু টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। সামনের নির্বাচনে এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রচারণা করে তারা ভোটের মাঠে আবার ফিরতে চায়। আমি জানি এই উত্তরে আপনারা কেউ খুশি নন। কিন্তু বাস্তবতা এমনই’।

উশিরোর কথা শেষ হতেই প্রায় খানিকটা হুংকার দিয়ে উঠলেন সিনেটর কিশান, ‘এসবের কোনো প্রমাণ নেই। সব মিথ্যে, বানোয়াট। প্রেসের কাজই এটা। তোমার এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হালে পানি পাবে না উশিরো’।

সন্দেহের চোখে কাউন্সেলর ভেলভেট বললেন, ‘আপনি এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন সিনেটর? আর আপনি এতটা নিশ্চতই বা হচ্ছেন কি করে যে উশিরো মিথ্যে বলছে?’।

জাস্টিস জেফ হেরিস মৃদু হেসে বললেন, ‘আমার বৈচারিক চোখ বলছে আমরা মনে হয় আসল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি’।
—————————-

সেদিন মঙ্গলের আন্ডারগ্রাউন্ড সেটেলমেন্টের ছোটো ছোটো সেলগুলোতে রাতের খাবার খেয়ে যখন পরিবারগুলো দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুমোতে যাবে ঠিক তখনই প্রেসিডেন্ট নোমান রডনিকে রিয়েল-ভিশনে দেখা গেলো। জুটেক্সের মোলায়েম জামার হাতা গোটাতে গোটাতে কথা বলছেন একজন তরুণ প্রেসিডেন্ট,

‘প্রিয় মঙ্গলবাসী, আমরা আমাদের এই লাল গ্রহটিকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি এর লাল আকাশ। আপনাদের মতো আমিও আমার শৈশবে অনেক সময় পার করেছি সার্ফেসের ধুলিঝড়ে গ্লাইডার উড়িয়ে। এই ধুলি-মাটি আমার অনেক প্রিয় আপনাদের মতোই। জানি, সময় বড্ডো বেসুরো। তারপরেও আমি আপনাদের একটা গল্প বলি। একবার কিরিটিনা গিরিখাদের মাঝে পথ ভুলে হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি। দুই সপ্তাহ আমি একা একা ঘুরে বেরিয়েছি মঙ্গলের গভীরতম গিরিখাদে। খাবার বিহীন, অক্সিজেন প্রায় শেষ। যখন শরীরে আর একটুও শক্তি অবশিষ্ট ছিলো না, মৃত্যুর পর্দাকে প্রায় চোখের সামনে দেখছি ঠিক তখনই সেই পর্দা ছিঁড়ে এগিয়ে এসেছিলো একজন মানুষ। হ্যাঁ, মানুষ, কোনো ঈশ্বর নয়। তার নিজের রিজার্ভ অক্সিজেন ট্যাঙ্ক কখনো আমাকে দিয়ে কখনো নিজের পোশাকে লাগিয়ে তিনি আমাকে দীর্ঘ পথ বয়ে নিয়ে এসেছিলেন। আমার হৃদয় ভেঙে গেছে যখন জেনেছি সেই মানুষটিকে শেষ বয়সে আমাদের হাসপাতালে সেবা দেয়া হয় নি কারণ সে ছিলো একজন পৃথিবীবাসী। সেদিন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবোই। আজ আমি আপনাদের প্রেসিডেন্ট। তাই আমি আপনাদের আস্বস্ত করতে চাই আমরা আসলে এক-অভিন্ন মানব সম্প্রদায়। পৃথিবী, মঙ্গল কিংবা প্রক্সিমা, বার্নার্ড- যেখানেই আমাদের জন্ম হোকনা কেন আমরা সবাই মানব সন্তান। একটি নদীর ধারা থেকে বেশি কিছু পাওয়া যায় না। অনেক নদীর ধারা মিলেই তৈরি করে মহাসাগর। এখন সময় মঙ্গলে একটি মহাসাগর তৈরির। সেই মহাসাগর তৈরির স্রোতে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ’।

-সোবহানী সৌরভ

গল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সচেতনতা, সায়েন্স ফিকশান তে পোস্ট করা হয়েছে | মন্তব্য করুন

বাংলাদেশ: উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা (দ্বিতীয় কিস্তি)

বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চ শিক্ষা প্রদান করা সহ বিভিন্ন ধরনের গবেষনামূলক কাজকর্ম করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বর্তমানে পাবলিক আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে সর্বমোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ১৩০ টি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কত?  বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান তৈরি হয়, সেই জ্ঞান বিতরণ করা হয়। গবেষণা হয়, এমন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কয়টি আছে? যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু না কিছু হলেও গবেষণা হয়, সেখানে গবেষণার মান কেমন?

আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথাই বলি। বর্তমানে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭ টি। এর মাঝে ১১ টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে গবেষণার জন্যে কোন অর্থ বরাদ্দই নেই! একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্যে একটা টাকাও বরাদ্দ নেই, ভাবা যায়!

আমাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষনাখাতে ব্যয়, সেই ব্যয়ে কেমন কাজ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রতিবছর ইউজিসি বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একটু চেষ্টা চরিত্র করে সেখান ২০১৪-১৫ সালে গবেষণা কর্মের যে তথ্য পেলাম, তা নিচের টেবিলে মোটামুটিভাবে তুলে ধরবার চেষ্টা করছি (২০১৫-১৬ বছরের রিপোর্ট এখনও তারা সম্পূর্ণ প্রকাশ করে নি)-

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে ব্যয় ও প্রকাশিত আন্তর্জাতিক প্রকাশনা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে ব্যয় এবং প্রকাশিত আন্তর্জাতিক প্রকাশনা

 

আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কর্মের কী হাল;, সেটা এই টেবিলের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের নামের আগে টাইটেল হিসেবে ‘Research University’ লাগিয়ে নিয়েছে, তাদের অবস্থাও যে করুণ, তা আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়। যাও বা এরা কিছু আন্তর্জাতিক গবেষনাপত্র প্রকাশ করে, তার অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। নেচারইনডেক্সের হিসেবে ২০১৪-১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে সবমিলিয়ে মাত্র ১৮ টি উচ্চমানের (High Impact) গবেষনাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যার সাতটিই প্রকাশ করেছে International Centre for Diarrheal Disease Research, Bangladesh (icddr,b)।

অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়/গবেষণাপ্রতিষ্ঠান/গবেষকদের সাথে কোলাবোরেশানে গবেষণা কাজেও বাংলাদেশের অবস্থান যথেষ্টই নড়বড়ে। সম্ন্বিত গবেষণার ক্ষেত্রে ১৫৮ টি উচ্চমানের গবেষণা পত্র প্রকাশকারী দ্দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান, ৮৪ তম।

চিন্তাভাবনা, বিবিধ, সচেতনতা তে পোস্ট করা হয়েছে | ট্যাগ , , , , , , , | 2 টি মন্তব্য